বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে অনেক ভাল আছেন। আজকের টিউনটি আমার অন্যান্য টিউন এর চাইতে আরো অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং হতে যাচ্ছে। বন্ধুরা, আজকের এই টিউনে আমি আলোচনা করব ন্যানো টেকনোলজি নিয়ে।
আমি যদি এবার আপনাকে বলি ভবিষ্যতে আমরা যেসব বাড়ি করব, সেগুলোতে যে রং করা হবে সেটি কাজ করবে সোলার প্যানেল হিসেবে এবং সেই বাড়িতে যেসব ইট গুলো ব্যবহার করা হবে সেগুলো কাজ করবে ব্যাটারি হিসেবে; তবে আপনি কি এই কথাটিকে বিশ্বাস করবেন? এই বিষয়টিকে শুনতে অনেক অবাক লাগলেও আমরা কিন্তু সেই ভবিষ্যৎ থেকে বেশি দূরে নেই। আর এ সবকিছুই হতে চলেছে ন্যানোটেকনোলজি এর জন্য। এজন্য অবশ্যই টিউনটি শেষ পর্যন্ত দেখবেন। এতে করে আপনি জানতে পারবেন ন্যানো টেকনোলজি কি এবং এই ন্যানো টেকনোলজি কি কি করে আমাদের ভবিষ্যৎ পৃথিবী কে পাল্টে দিতে পারে।
আমাদের পৃথিবী তো আগের মতই রয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে যেন মনে হচ্ছে, পৃথিবীর ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যাচ্ছে। যেখানে আমাদের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে না। বরং আমরা আমাদের বাড়িতে বসে থেকেই পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থাকা মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারছি। যেখানে কিছুদিন আগেও আমাদের কাছে এই বিষয়টি ছিল কল্পনা মাত্র। কিন্তু বর্তমানে সেই ধারণাটি আমাদের কাছে একটি সাধারণ ধারণা মাত্র কিভাবে বর্তমানে আমাদের মনেই হয় না যে আমরা কি সব প্রযুক্তি ব্যবহার করছি এবং কিছুদিন আগেও আমরা কি সব প্রযুক্তি ব্যবহার করতাম।
আমরা যে এসব প্রযুক্তির ব্যবহার করছি, সেখানে আমরা শুধু এর বাহ্যিক দিক গুলি দেখতে পারছি। কিন্তু এর পেছনে যে সব বিষয়গুলো কাজ করছে সেগুলো আমাদের হয়তো বা জানার বাহিরে। এই পৃথিবীতে খুবই সহজ এবং অজানা একটি জগত রয়েছে যেটি মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। মাইক্রোস্কোপিক জগতের ক্ষমতা আছে সত্যিই আমাদেরকে আশ্চর্য করে দেবার মত। কিন্তু আমরা আজকে মাইক্রোস্কোপিক জগৎ এর চাইতে আরো গভীরে যাবো এবং আমরা আজকে জানার চেষ্টা করব ন্যানো স্কপিক (Nanoscopic) জগতকে।
আপনারা আমাদের দৈনন্দিন কাজে যে সমস্ত জিনিস গুলো ব্যবহার করে কিংবা যেসব বিষয় গুলো নিয়ে কাজ করি সেগুলো এর তুলনায় ন্যানো স্কপিক জগত কয়েক বিলিয়ন গুন ছোট। আর এটিই হচ্ছে ন্যানো টেকনোলজি। ন্যানো টেকনোলজি এর অর্থ হচ্ছে এটিকে ন্যানো স্কেলে ডেভলপ করা হয়েছে এবং এর ব্যবহার আমরা বাস্তব জীবনে করতে পারি। এর মানে হচ্ছে অনেক ক্ষুদ্র বস্তুকে জানা এবং সেগুলো কে ব্যবহার করা। যেখানে এগুলো ক্ষুদ্র মানে অনেক অনেক বেশি ক্ষুদ্র।
এবার আপনি যদি জানতে চান যে, এই ন্যানো স্কপিক জগত কতটা পরিমাণে ছোট, তবে এটিকে বোঝানোর জন্য উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে হবে। সোজাসুজিভাবে কেউই বুঝবে না আমি কত ছোট বস্তুর কথা বলছি। যেখানে ন্যানোটেকনোলজি বলতে এতই ছোট বস্তুর কথা বুঝানো হয়েছে যা আমাদের চারপাশে কোন বস্তুর সংজ্ঞা ও উদাহরণ দিয়ে মিলানো সম্ভব নয়। তবুও আপনাকে যদি ন্যানোমিটার এর তুলনা দিতে গেলে একটি কলমের পিন এর কথা যদি চিন্তা করা হয় তবে এটি কয়েক মিলিয়ন ন্যানো মিটার চওড়া হয়। যেখানে আমরা ন্যানোমিটারের কাছাকাছি যেতে পারলাম না এবং আর এজন্য আমরা কলমের লেখাকেও ন্যানোমিটার এর সঙ্গে তুলনা করতে পারলাম না।
কোন একটি কাগজ প্রায় 75 হাজার ন্যানোমিটার মোটা হয় এবং মানুষের চুল 50000 ন্যানোমিটার মোটা। যেখানে আমরা চুলকে সবচাইতে চিকন বস্তু হিসেবে দেখে থাকি সেখানে ন্যানোমিটার এর উদাহরণ দেবার ক্ষেত্রে এটিকেও নেওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং ন্যানোমিটার এর উদাহরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এইসব উদাহরণগুলো কে বাদ দিয়ে কাল্পনিক উদাহরণে যেতে হবে। কেননা যদি ন্যানো স্কপিক জগতের উদাহরণ দিতে হয়, তবে আমাদের চারপাশের বস্তুগুলো দিয়ে এটির উদাহরণ দেওয়া সম্ভব নয়। যেখানে ন্যানো স্কপিক জগত আমাদের চারপাশের বস্তুগুলোর চাইতে অনেক বেশি পরিমাণে ক্ষুদ্রতর।
এজন্য আমাদেরকে ন্যানোমিটার বুঝতে হলে অন্য ভাবে বিষয়টিকে দেখতে হবে। যদি ন্যানোমিটার একটি ফুটবল এর মত হয়, তবে করোনাভাইরাস একটি মানুষের মত বড় হবে। সেভাবে করে দেখলে একটি রুটি নিউজিল্যান্ড এর মত বড় হবে এবং একটি মুরগি পৃথিবীর মতো বড় হবে। এই ন্যানোমিটার কে যদি আরো ভালো ভাবে বলা যায়, তবে প্রত্যেকটি মানুষের যদি ন্যানোমিটার এর মত হয়, তবে পৃথিবীতে যত মানুষ রয়েছে তাদেরকে একটি গাড়ির মধ্যে ভরে দেওয়া যাবে। যেখানে তাও আবার একটি খেলনা গাড়ির মধ্যে, বাস্তব গাড়ির মধ্যে নয়।
আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন যে, ন্যানোটেকনোলজি বলতে আমি কত ছোট বস্তুর কথা বলছি। যেখানে ন্যানোটেকনোলজি এর উদাহরণ দেবার ক্ষেত্রে আমাদেরকে কাল্পনিক উদাহরণ দিয়েই বোঝাতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ন্যানো টেকনোলজি তে যদি এত ক্ষুদ্র লেভেলে কাজ হয়, তবে এটি আমাদের জীবনকে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে?
পৃথিবীর সমস্ত কিছুই অণু দিয়ে তৈরি। আমরা যে খাবারটি খাই, যে কাপড় পরিধান করি, যে বাড়িতে আমরা থাকি এবং আমাদের নিজেদের শরীর ও সবকিছু অণু দিয়েই তৈরি। এবার আপনি কল্পনা করে দেখুন একটি গাড়ি কিভাবে কাজ করে। গাড়ি চলাচল করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইঞ্জিন এর পার্টস গুলো থাকলেই হয় না। সেগুলোকে সঠিক জায়গামতো এবং সঠিক স্টেপেই কাজ করতে হয় এবং তবেই একটি গাড়ি চলতে পারে।
আমাদের চারপাশের সমস্ত বস্তুগুলোর মূলভিত্তি তো অনু। কিন্তু সেই অণুগুলোকে সঠিকভাবে স্থাপন করার মাধ্যমেই তো সেগুলো দেখতে বস্তুর মতো লাগছে। তো ঠিক একইভাবে আপনার চারপাশে যে সমস্ত বস্তু রয়েছে সেগুলো যে অনু দিয়ে তৈরি হয়েছে এবং সেই অণুগুলো যেভাবে আছে সেটিই নির্ধারণ করে সেই বস্তুটি কি কাজ করবে। ন্যানোটেকনোলজি কে ব্যবহার করে আমরা সেই অনু-পরমানুর ব্যবস্থাকে Manipulate করতে পারব এবং আমাদের ইচ্ছামত সেই সমস্ত জিনিসকে কাজে লাগাতে পারবো। ঠিক যেমন, একই ধরনের ইট এবং বালি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের বাড়ি তৈরি করা যায়।
ন্যানোটেকনোলজি কে ব্যবহার করার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব। শুনতে এই জিনিসটিকে সাধারণ মনে হলেও মোটেও কিন্তু এই জিনিসটি সাধারণ না। কোন বস্তুর Property-ও পরিবর্তন হয়ে যায় যখন সেই বস্তুটিকে ছোট করা হয়, যাকে Quantum effects বলা হয়ে থাকে। এই Quantum effects টি নির্ধারণ করে কোন বস্তুকে ছোট করলে বা খুবই ছোট করলে সেই বস্তুটির ব্যবহার কেমন ধরনের হতে পারে। অতএব এই Quantum effects-কে কাজে লাগিয়ে আমরা বুঝতে পারি কোন পদার্থ ন্যানো স্কেলে কিভাবে কাজ করবে।
সাইন্টিস্টরা এই ন্যানো স্কেলে কোন পদার্থের Property-কে সামঞ্জস্য পূর্ণ করতে পারে এবং তারা কিছু বছর আগে থেকে এই কাজটি করেও আসছে। এভাবেই সম্ভব হয় কোন পদার্থের Melting point-কে পরিবর্তন করা; যেমনঃ Fluorescence, এমনকি Electrical conductivity-কেও পরিবর্তন করা যেতে পারে। কিন্তু সায়েন্টিস্টরা যদি এই সমস্ত কিছু নিয়ে কাজ করে থাকে তাহলে বাস্তব জীবনে আমরা এর উদাহরণ কেন দেখতে পাই না?
আপনার জানার জন্য বলে দেই, আপনি হয়তো প্রত্যেকদিনই এমন কোন জিনিস ব্যবহার করে যেটা ন্যানো টেকনোলজি সাহায্যেই বানানো সম্ভব হয়েছে। যেমন ক্লিয়ার ন্যানো স্কেলে ফিল্ম, যেটাকে কাঁচের উপর কিংবা অন্য কোন সার্ফেসের ওপর লাগানো থাকে, যাতে সেগুলো Water-resistant, Scratch-resistant, Anti reflective হতে পারে। এরূপ দামি গাড়ি, প্লেন, জাহাজ এমনকি স্পেসক্রাফট কেও অনেক লাইটওয়েট মেটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করতে হয়, যেখানেও ন্যানো টেকনোলজি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা আমাদের নিত্যদিনকার ব্যবহার্য জিনিসপত্র এর মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহার প্রতিদিনই করে থাকি। কিন্তু এই স্মার্টফোন তৈরি করার ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা না হলে আপনি হয়তো বা যতসব ফিচারসমৃদ্ধ কম ব্যবহার করতে পারতেন না।
আমাদের বাড়িতে থাকা কম্পিউটার ল্যাপটপ কিংবা আমাদের হাতে থাকা স্মার্টফোন সব ডিভাইসে প্রসেসর লাগানো রয়েছে। যেখানে প্রসেসরকে আমরা মানুষের ব্রেনের সঙ্গে তুলনা করে থাকি। আমরা যেভাবে করে কোন একটি কাজ করার জন্য প্রথমে আমাদের ব্রেইন থেকে অনুমতি নেই এবং সেই কাজটি কিভাবে করতে হবে সেটি জেনে নেই; সেভাবে করে কোন একটি ডিভাইস এর প্রসেসর ও আমাদের ডিভাইসকে সর্বদা চালাচ্ছে। যেখানে দিন যাবার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ডিভাইস এর সমস্ত চিপগুলো আস্তে আস্তে ছোট হয়ে যাচ্ছে এবং এগুলোর কার্যক্ষমতা আগের চাইতে অনেক বেশি পরিমাণে হচ্ছে। যেমনভাবে আমাদের কম্পিউটারে থাকা মেমোরি চিপ এবং আমাদের ডিভাইসে থাকা প্রসেসর আস্তে আস্তে ছোট হয়ে যাচ্ছে এবং এগুলোর পারফরম্যান্স আগের চাইতে অনেক বেশি ফাস্ট দেখতে পাচ্ছি।
আমাদের স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটারে থাকা প্রসেসরগুলোর দিনকে দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। কয়েকবছর আগেও যেখানে আমরা শুধুমাত্র ফিচার ফোন গুলো ব্যবহার করতাম, সেখানে বর্তমানে ন্যানো টেকনোলজির কারণে সেই প্রযুক্তিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আমাদের ডিভাইস এ ব্যবহৃত চিপগুলো এতটাই ছোট হয়েছে যে, একটি হাতের আংগুলের সমান জায়গার মধ্যে কোটি কোটি ট্রানজিস্টর লাগানো সম্ভব। আর এসব করা হয়েছে ন্যানোটেকনোলজি কে ব্যবহার করে। যেখানে কয়েক দশক আগেও আমরা ধারণাও করতে পারতাম না ভবিষ্যতে এমন সব প্রযুক্তি আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে; সেখানে কল্পনাই করা যায় না যে ভবিষ্যতে ন্যানোটেকনোলজি কে ব্যবহার করে আরো কি কি পরিবর্তন আসতে চলেছে।
আমরা আমাদের স্মার্টফোনকে আরো বেশি স্মার্ট বানাচ্ছি। যেখানে আমাদের হাটার থেকে যে শক্তিটি উৎপন্ন হবে সেটি ন্যানো জেনারেটর এর সাহায্যে আমরা আমাদের ডিভাইসকে চার্জও করতে পারি। বর্তমানে আমরা যে কিছুক্ষণ পর পর এই মোবাইলে চার্জ হয়ে গেলে চার্জ দেই, দেখে হয়তো বা ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে আর করতে হবে না। কেননা তখন আপনার হাতে থাকায় স্মর্টফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সোলার সিস্টেম থেকে চার্জ হবে। অর্থাৎ আপনার মোবাইলে সোলার সিস্টেম কে ব্যবহার করা হবে ন্যানোয়টেকনোলজির মাধ্যমে।
এছাড়া আমরা ন্যানোটেকনোলজি কে ব্যবহার করে কোন মেডিসিন কে ঠিক সেই জায়গায় প্রয়োগ করতে পারি যেখানে রোগ আক্রান্ত করেছে। অর্থাৎ, দেহের যে কোষে রোগ বাসা বেধেছে সেখানে ন্যানোটেকনোলজি কে ব্যবহার করে মেডিসিন পাঠানো সম্ভব। এই টেকনোলজির সাহায্যে ঠিক সেই জায়গায় মেডিসিন পোঁছে দেওয়া সম্ভব যে জায়গায় ট্রিটমেন্ট এর প্রয়োজন রয়েছে এবং এতে করে চিকিৎসা পদ্ধতি আরো বেশী কার্যকর করা সম্ভব।
যেখানে বর্তমানে আমাদের সার্জারি করে কোন একটি রোগের চিকিৎসা করার প্রয়োজন পড়ছে। কিন্তু ভবিষ্যতের পৃথিবীতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করার মাধ্যমে হয়তোবা এই ধারণাতেও পরিবর্তন আসতে পারে। আর তখন, শরীরে ন্যানো টেকনোলজি দিয়ে তৈরি রোবট কে প্রবেশ করে দেয়া হবে যেটি শিরার মাধ্যমে সেই জায়গা দেখতে গিয়েই ঔষধ পৌঁছে দিবে যেখানে চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। যেখানে এই দিনটি আমাদের আর বেশি দূরে নয়। যেখানে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বর্তমানে ও এই অনেক প্রয়োজন প্রযুক্তি আমরা লক্ষ্য করতে পারছি। কেননা এখানে ঔষধের পরিমাণটি ও কম লাগে এবং সাইড ইফেক্ট ও কম আসে।
উপরের গুলো হচ্ছে শুধুমাত্র কয়েকটি উদাহরণ। বর্তমানে পরিস্থিতি যদি আমরা বিবেচনা করি তবে আপনি একটি ল্যাপটপকে ব্যাগের ভেতরে করে নিয়ে যেতে পারছেন। যেখানে এটি আমাদের কাছে মোটেও কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় এবং এটি আমাদের কাছে বর্তমান সময়ে একটি সাধারণ বিষয় মাত্র। কিন্তু কয়েক দশক আগেও এইটাই ছিল অনেক অবাস্তব একটি কাজের মত। তখন সেসব কম্পিউটার ছিল সেগুলো তো বর্তমানে কম্পিউটার এর চাইতে কয়েক লক্ষ গুণ ধীর গতির ছিল।
তবে সেসময়ের কম্পিউটারে রাখার একটি ঘরের মতো ছিল। আর সেই সময় মানুষ ভাবেনি যে, একটি কম্পিউটারকে ব্যাগের ভেতরে করে নিয়ে যাওয়া যাবে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের কাছে সেই জিনিসটি মোটেও আর কোনো অসাধারণ কিছু মনে হচ্ছে না। বরং, বর্তমানে আমরা কল্পনা করছি ভবিষ্যতে হয়তো বা আমরা এর চাইতে ও আরো অনেক ভালো ব্যবস্থা দেখতে পাবো। আর এটি সম্ভব হয়েছে মাইক্রোপ্রসেসর কে ছোট করার ফলে।
এর উদাহরণস্বরূপ আমরা যদি ট্রানজিস্টর এর দিকে দেখি, যার সাহায্যে এই মাইক্রোপ্রসেসর গুলো তৈরি হয়; এগুলো কয়েক বছরের মধ্যে এত ছোট হয়ে গিয়েছে তা আমাদের কল্পনারও বাইরে। যেখানে আমরা কয়েক দশক আগে চিন্তাও করতে পারতাম না যে এত বড় ট্রানজিস্টার গুলোকে কিভাবে এত ছোট করা সম্ভব। যেখানে ন্যানোটেকনোলজি কে ব্যবহার করে প্রত্যেকটি চীপকে আরো ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করা হয়েছে।
মাত্র 2000 সালে যেসব ট্রানজিস্টার গুলো ব্যবহার করা হতো, সেগুলোর সাইজ ছিল 250 ন্যানোমিটার। কিন্তু 2016 আস্তে আস্তে আমরা যে ট্রানজিস্টার গুলো ব্যবহার করি, সেগুলোর সাইজ ছিল মাত্র ১ ন্যানোমিটার। যেখানে ট্রানজিস্টার গুলো এত ছোট হবার পরও এগুলো কার্যক্ষমতা আগের চাইতে অনেক বেশি পরিমাণে। পূর্বের কম্পিউটারগুলোকে রাখার জন্য দরকার হতো একটি বিশাল বড় ঘরের এবং সেগুলোর কার্যক্ষমতাও ছিল অনেক কম। বলতে গেলে বর্তমান কম্পিউটার এর চাইতে সেগুলোর গতি ছিল লক্ষ গুণ কম।
কিন্তু এই কয়েক দশকের মধ্যে কিভাবে করে এত পরিবর্তন চলে আসলো এই প্রযুক্তিতে। যেখানে এগুলোর সবকিছু সম্ভব হয়েছে ন্যানোটেকনোলজি কে ব্যবহার করার মাধ্যমে। ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে প্রত্যেকটি পার্টস কে আরো বেশি ছোট এবং আরো বেশি কার্য ক্ষমতা সম্পন্ন করে তোলা হয়েছে। যেখানে এর ধারাবাহিকতা এখনো চলছেই। যেগুলোর সমস্ত গুলোই হচ্ছে ন্যানোটেকনোলজি কে ব্যবহার করার মাধ্যমে।
ইন্টারনেটে আপনি অনেক সময় দেখে থাকতে পারেন, মোবাইলের স্কিন যেটিকে ভাঁজ করা যায়, অর্থাৎ, Flexible mobile screen (নমনীয় মোবাইল স্ক্রিন)। যেখানে এগুলোকে আপনার অবাস্তব মনে হতে পারে। কিন্তু না, এসব দৃশ্য আসলে সত্য। আর এই স্ক্রিন গুলো তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয় সেমিকন্ডাক্টর ন্যানো মেমব্রেন। বর্তমানের স্মার্ট টিভি গুলো হয়ে গিয়েছে দেওয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারের মত। এসব উদাহরণ তো ছিল শুধুমাত্র ডিজিটাল এবং মেডিকেল টেকনোলজি এর ব্যাপারে। কিন্তু আমরা এই ন্যানো টেকনোলজি কে ব্যবহার করে পৃথিবীকে বাড়তে থাকা সমস্যার সমাধানও করতে পারি।
এটি মনে করা হয় যে, ন্যানোটেকনোলজি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে পরিবেশ এবং জলবায়ু ক্ষেত্রে। এছাড়া এই টেকনোলজি কে ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন কাঁচামাল, পানি এবং শক্তি কে বাঁচাতে পারবো। এমনকি বায়ুমণ্ডল থেকে গ্রীনহাউজ গ্যাস কেও কমানো যেতে পারে। ন্যানোটেকনোলজি কে ব্যবহার করি আমরা যদি কোন পদার্থের উন্নতি করতে পারি তবে সেগুলোর স্থায়িত্ব ও অনেক বেশি হবে এবং সেগুলো অনেক দিন পর্যন্ত ও চলবে। ফলে কোন ইন্ডাস্ট্রিতে কাঁচামাল খুবই কম ব্যবহার হবে।
আমাদের ব্যবহৃত ৯৫% সোলার প্যানেল গুলো, যেগুলো ব্যবসায়ীক কাজে ব্যবহার করা হয়, সেগুলো তৈরি করার জন্য ন্যানোটেকনোলজি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর ভবিষ্যতে এই টেকনোলজিতে ব্যবহার করে এমন পেইন্ট তৈরি করা যেতে পারে, যে রং টিকে আপনি আপনার বাড়ির বাইরে লাগালে সেটি সোলার প্যানেল এর মত কাজ করতে পারে। আর আপনার পুরো বাড়িটি সোলার এনার্জি কে ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি তে কনভার্ট করতে পারবে। এই বিষয়টিকে শুনতে অনেক আশ্চর্য মনে হলেও, কিছু বিজ্ঞানীরা এই টেকনোলজিকে ব্যবহার করে কিছু কৃষ্টাল তৈরি করেছে। যেটিকে কোন লিকুইড এর মধ্যে মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
তবে প্রশ্ন হল, এইরম তাহলে মার্কেটে এখনো উপলব্ধ নয় কেন বা আমরা এখনো কিনতে পারিনা কেন? কেননা এই ন্যানো কৃষ্টাল কে তৈরি করার জন্য এমন একটি ম্যাটারিয়াল কে ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি হলো Cadmium। যেটি খুবই বিষাক্ত একটি ধাতু। তাই এই রঙ কে বাজারে ছাড়ার জন্য কোন সরকার ই অনুমতি দিবে না। তাই বিজ্ঞানীরা এমন নতুন কোন পদার্থ খুঁজছে যার সাহায্যে এই রং কে বানানো যেতে পারে, যা সাধারণ মানুষের কাছে ঝুঁকিহীন হবে।
তাহলে আপনার পুরো বাড়িটি একটি সোলার প্যানেল হিসেবে কাজ করতে পারে; তবে আপনি সেই সোলার প্যানেল থেকে উৎপন্ন শক্তিকে জমা করবেন কোথায়? আর এর জন্য তখন একটি স্পেশাল ব্যবস্থা থাকতে পারে। তখন নানোটেকনলজি কে ব্যবহার করে একটি ইটকে এমনভাবে তৈরি করা যেতে পারে যেটা ব্যাটারি হিসেবে কাজ করতে পারে। যেখানে ব্যাটারিও নয়, বলতে পারেন সুপার ক্যাপাসিটর। আর এই টেকনোলজি টি কে বলা হয় Rust assisted vapour phase polymerization।
যেখানে আমি এই বিষয়ে বেশি কোন তথ্য দিতে পারব না। কারণ এটি ডেভলপমেন্ট এর খুবই নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু যদি এটি সকল হয়, তবে পৃথিবীর অনেক কিছুই পাল্টে যেতে পারে। আর মানুষ যেভাবে দ্রুতগতিতে টেকনোলজিকে ডেভেলপ করছে, আমার মনে হয় না যে আমরা ভবিষ্যতের পৃথিবী থেকে অনেক বেশি দূরে রয়েছি। ভবিষ্যতের পৃথিবীতে ন্যানোটেকনোলজি কে ব্যবহার করে হয়তো বা এমন সব টেকনোলজি আসতে চলেছে যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। যেভাবে করে আমরা কয়েক দশক আগেও বর্তমানের এসব প্রযুক্তি সম্বন্ধে কল্পনা করতে পারতাম না।
তো বন্ধুরা, আজ এ পর্যন্তই। যদি আজকের টিউনটি ভাল লেগে থাকে তবে একটি জোসস এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে একেবারেই ভুলবেন না। আর এখন পর্যন্ত আমাকে ফলো না করে থাকলে ফলো করে নিবেন। আবার দেখা হবে পরবর্তীতে টিউনে; আর ততক্ষণ পর্যন্ত আমার প্রোফাইল থেকে অন্যান্য টিউন গুলো দেখতে থাকুন। আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)