হ্যালো টিউন পাঠক বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সবাই ভালোই আছেন। বরাবরের মতো আজকেও নিয়ে এসেছি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত একটি টিউন। আশাকরি আপনাদের কাছে টিউমটি ভালো লাগবে। তো স্বাগতম বন্ধুদেরকে আবার আমার একটি নতুন টিউনে।
আমরা জানি যে দেশে বিদেশে বিভিন্ন জাতের মুরগি আছে। তার মধ্যে অনেক মুরগিই আছে যেগুলো একটু অন্যরকম। আমরা হয়তো অনেকেই শুনেছি যে কৃত্রিম ডিম বাজারে এসেছে। আবার এটাও জানি যে বাজারে কৃত্রিম চাল ও চলে এসেছে।
কিন্তু আপনারা কি এটা জানেন যে বাজারে কৃত্রিম মুরগির মাংস চলে এসেছে?
হয়তো অনেকেই জানেন আবার অনেকেই জানেন না। অনেকেই হয়তো ভাবছেন এ কি করে সম্ভব। অবাক হওয়ার কিছু নেই বিজ্ঞানীরা এই অসম্ভবকে ও সম্ভব করেছে।
চলুন জেনে নেই বিজ্ঞানীরা কি করেছে। মার্কিন স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ইট জাস্ট এর গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি মুরগির মাংস বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাজারজাতের অনুমতি দিয়েছে সিঙ্গাপুর। গবেষণাগারে সরাসরি প্রাণীর কোষ থেকে তৈরি উচ্চমানের এ মুরগির মাংস খেতে সুস্বাদু এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ। নাগেট হিসেবে প্রিমিয়াম মুরগির মাংসের দামে ক্রেতারা বিশেষ এ মাংস কিনতে পারবেন।
মানুষের মুখগহবরের দুইপাশে তিন জোড়া লালাগ্রন্থি থাকে। এসব লালা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস কে লালা রস বলে। একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক ১২০০-১৫০০ মিলি লালা ক্ষরণ করে। তাহলে আপনারা বুঝতে পারছেন যে কি পরিমাণ লালা মানুষ ক্ষরণ করে। যাদের কখনো কখনো ঘুমের ঘোরে লালায় বিছানার বালিশ ভিজে যায় তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারন এটা সুস্থতার পরিচয়। তবে প্রতিদিন হলে সেটা আরেক বিষয়। লালা ঈশৎ অম্লীয় ফলে সব সময় মুখগহ্বরে আম্লিক অবস্থা বিরাজ করে। লালায় প্রায় ৯৬.৫% পানি।
খাদ্যের স্বাদ অনুভব এবং পরিপাকের সময় বিক্রিয়া ঘটানোর জন্য পানি বিভিন্ন খাদ্যের দ্রাবক হিসেবে খাদ্যকে সিক্ত ও নরম করে। পানি মুখ অভ্যন্তরকেও আদ্র করে ফলে স্বাদ অনুভব সহ খাদ্য চর্বণে এবং গলাধঃকরণে সুবিধা হয়। জিহব্বার স্বাদকুঁড়িগুলো শুকনো খাদ্যে প্রভাবিত হয়না। লালায় সিক্ত হয়ে খাদ্যকণা মুক্ত হলে তা থেকে স্বাদকুঁড়িগুলোর অনুভূতি গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্যের স্বাদ বোঝা সম্ভব হয়।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সুস্থ মানুষের মুখের লালায় এমন একটি জিনের সন্ধান পেয়েছেন, যা যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ডি-সাইক্লোসেরিন নামের এমন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়ােটিকের কার্যকারিতাকে নষ্ট করে দিতে পারে। ডি-অ্যালানিন-ডি- অ্যালানিন লাইগেজ নামক এ জিনটি প্রথমবারের মতাে ইন্টেগ্রন জিন ক্যাসেট নামক এক ধরনের ক্ষুদ্র ভ্রাম্যমাণ জেনেটিক উপাদানের মধ্যে শনাক্ত হয়। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দুটি আলাদা আলাদা নমুনা সেটের প্রায় সব সুস্থ স্বেচ্ছাসেবকের লালায় এ ভ্রাম্যমাণ জিনের সন্ধান পান লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ, কিংস কলেজ ও বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
আমরা জানি যে সুর্য্য একটা নক্ষত্র যা আমাদের ছায়াপথের সব গ্রহতে শক্তি দিয়ে থাকে। যা সৃষ্টিকর্তার এক অমুল্য আবিষ্কার। কিন্তু আপনাকে কেউ যদি চীনে সুর্য্য তৈরি করা হয়েছে তাহলে আপনি কি ভাববেন?
আপনি হয়তো ভাববেন এটা একটা বানোয়াট কথা। কিন্তু এটা সত্যি। চিনের কিছু গবেষকরা পরমানু শক্তি ব্যবহার করে একটা সুর্য্যের মতো কাজের কিছু একটা তৈরি করেছে। যা কৃত্রিম সুর্য্য নামে পরিচিত।
চীন উদ্ভাবন করেছে পরমাণু শক্তিযুক্ত কৃত্রিম সূর্য, যা মূলত একটি নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাক্টর। নতুন এ রিঅ্যাক্টরের নাম HL2M টোকামাক। চীনের বৃহত্তম ও আধুনিক এ নিউক্লিয়ার ফিউশন এক্সপেরিমেন্টাল রিসার্চ ডিভাইসের মাধ্যমে দূষণহীন শক্তিশালী এ শক্তির উৎস উন্মুক্ত করা সম্ভব। গরম প্লাজমা দ্রবীভূত করতে এ রিঅ্যাক্টর ব্যবহার করে একটি শক্তিশালী চৌম্বকীয় ক্ষেত্র, এর ফলে তাপমাত্রা ১৫০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে। অর্থাৎ সূর্যের থেকে উষ্ণতা ১০ গুণ বেশি। চীনের দক্ষিণ পশ্চিম সিচুয়ান প্রদেশে। ২০১৯ সালে শেষ হয় এ রিঅ্যাক্টর তৈরির কাজ।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শব্দটির সাথে আপনারা সবাই পরিচিত।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে এক ধরনের যন্ত্রপাতির ক্ষমতা যা যন্ত্রপাতি কে শেখায় কিভাবে মানুষের মতো করে চিন্তাভাবনা করতে হবে।
আপনাকে আমি একটা জিনিস বোঝাই যে একটা মানুষকে যদি বলা হয় যে তুমি সোজা পথে হেটে যাও তাহলে সে সোজা পথে হেঁটে যাবে এবং সামনে যদি কোন গর্ত থাকে তাহলে সে গর্তটা এড়িয়ে যাবে।
কিন্তু কোনভাবে যদি যন্ত্রপাতিকে কমান্ড দেওয়া হয় এবং যন্ত্রটিকে বলা হয় যে তুমি সামনে এগিয়ে যাও তাহলে যন্ত্রটির সামনে এগিয়ে যাবে এবং গর্তটি এড়ানোর চিন্তাভাবনা তার থাকবে না।
তো মানুষ যেভাবে এগিয়ে যায় এবং গর্ত কে এড়িয়ে চলে এইরকম চিন্তাভাবনা যেন যন্ত্রপাতিতে থাকে এটা নিয়েই কাজ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
যুগ যুগ ধরে গবেষকরা বিভিন্ন ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করছে এবং সফল হচ্ছে নানা বিষয়ে। তেমনই একটি সফলতার গল্প আজ আপনাদের জানাবো।
জীববিজ্ঞানের বড় একটি রহস্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সমাধান করা হয়েছে। প্রােটিন একটি কীভাবে স্বতন্ত্র ত্রিমাত্রিক আকারে ভাঁজ হয়ে থাকে, তা নিয়ে অনুমানের ধাধাতেই অর্ধশতক কাটিয়ে দেন বিজ্ঞানীরা।
লন্ডনভিত্তিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ল্যাব ডিপমাইন্ড এ সমস্যাটি বৃহৎ অংশে সমাধান করেছে। প্রােটিনের আকার সম্পর্কে আরাে ভালাে বােঝাপড়া এবং রােগের চিকিৎসায় নতুন ওষুধের বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রােটিনের আকারকে দ্রুত এবং যথার্থভাবে খুঁজে বের করতে পারা জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব ঘটানাের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
আপনারা হয়তো একটা বিষয় নিশ্চয়ই জানেন যে আমরা যে ফোনগুলো ব্যবহার করি সেগুলোতে অসংখ্য জীবাণু থাকে। যে জীবাণুগুলো কখনো কখনো হয়ে থাকে উপকারী আবার কখনও কখনও অপকারী। যাই বলুন না কেন উপকারের চেয়ে অপকারই জীবাণুর সংখ্যায় বেশি। ফলে প্রতি নিয়ত অসুস্থ হচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। আর এখান থেকেই চিন্তার সৃষ্টি আর এভাবেই তৈরি হয়েছে জীবাণু-প্রতিরোধী স্মার্টফোন।
বিশ্বের প্রথম জীবাণু প্রতিরােধক স্মার্টফোন ক্যাট এস৪২ নিয়ে আসছে রিডিংভিত্তিক সংস্থা বুলিট। ফোনটিতে ব্যবহৃত সিলভার আয়ন ২৪ ঘণ্টায় ৯৯.৯% জীবাণুর বিস্তার রােধ করে। এর উপাদানগুলােতে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল টেকনােলজি। ফোনটি অসমতল, টেকসই এবং সম্পূর্ণ ওয়াটারপ্রুফ। ফোনটি বায়ােমাস্টার অ্যান্টিমাইক্রেবায়াল প্রযুক্তিতে সজ্জিত হয়ে ২০২১ সালে বিশ্ব বাজারে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশি টাকায় এর দাম পড়বে প্রায় ২৬, ০০০ টাকা। তাহলে বুঝে নিন কতখানি অবাক করা তথ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আপনাকে দিতে পারে। তবে যাই বলুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুবিধা আমরা আগে নিয়েছি, এখনো নিচ্ছি, ভবিষ্যতেও নিব।
আপনারা হয়তো জানেন যে কম্পিউটার নামক যন্ত্রটি আমাদের জীবনে কিভাবে এসেছে। মূলত হিসাব-নিকাশের প্রয়োজনীয়তা থেকেই এই কম্পিউটারের আবিষ্কার। তবে যাই বলুন যুগের পরিবর্তনে কম্পিউটার শক্তিশালী থেকে আরো শক্তিশালী হচ্ছে। প্রথম দিকের কম্পিউটারগুলো যেরকম শক্তিশালী ছিল তারচেয়ে এখনকার কম্পিউটার গুলো অনেক শক্তিশালী। তবে এসব কম্পিউটার গুলোর মধ্যে সুপারকম্পিউটার নামক কম্পিউটার গুলো আরো শক্তিশালী চীনের বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতাে।
তবে বিজ্ঞানীরা আলােকনির্ভর কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির দাবি করেন। বিশেষ এ কোয়ান্টাম কম্পিউটারের নাম দেয়া হয়েছে জিউঝ্যাঙ। এটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটারের চাইতেও ১, ০০০ কোটি গুণ দ্রুততার সাথে গণনা করতে পারে বলে তারা দাবি করেন। তুলনামূলক ছােট আকৃতির এ কোয়ান্টাম কম্পিউটার অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করতে
পারবে। বর্তমানে কোনাে সুপার কম্পিউটারই এতটা শক্তিশালী নয়। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটারের যে হিসাব কষতে ২০০ কোটি
বছর লাগতে পারে, ২০০ সেকেন্ডে তা সারা যাবে এ কম্পিউটারে। আপনারা সবাই একবার ভাবুনতো বিজ্ঞানীরা কত মূল্যবান জিনিস আবিষ্কার করে ফেলেছে।
বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের গবেষণার মাধ্যমে নানা কিছু উদ্ভাবন করছে। এই প্রভাব যেমন পড়েছে টেকনোলজি বিষয়ে তেমনি পড়েছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে। আমরা অনেকেই জানি যে বাবা-মার শুক্রাণু ও ডিম্বানু অন্য কারো পেটে বা টেস্টটিউবে শিশু জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছে।
কিন্তু আপনারা কি এটা জানেন যে অনেক আগের ভ্রূণ থেকে শিশু জন্মানোর সম্ভব?
আপনারা জানেন যে একটা শিশু জন্ম দিতে এক বছর দেড় বছর সময় লাগে। কিন্তু এই শিশুর ভ্রূণের বয়স এতটাই পুরনো যে আমি আপনাদেরকে বলে বোঝাতে পারবো না। আপনারা জেনে নিন কিভাবে এটি সম্ভব।
১৯৯২ সালের অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইমব্রায়াে ডােনেশন সেন্টার (NEDC) হিমায়িত অবস্থায় রাখা ছিল একটি ভ্রুণ। ফেব্রুয়ারি ২০২০ টিনা ও বেন গিবসন নামের এক দম্পতি এটিকে দত্তক নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে ভ্রণটি থেকে অক্টোবর ২০২০ আলাের মুখ দেখে এক শিশু। আর এর মধ্য দিয়ে তৈরি হয় বিশ্বের সবচেয়ে পুরােনাে ভ্রণ থেকে জন্ম নেয়ার বিশ্ব রেকর্ড। এর আগে ২৪ বছরের পুরােনাে ভ্রণ থেকে একটি শিশু জন্ম নেয়ার ঘটনা ঘটেছিল। সেই জ্বণটিও টিনা ও বেন দম্পতিই দত্তক নিয়েছিলেন। সদ্য জন্ম নেয়া মেয়ে শিশুটির নাম রাখা হয় মলি গিবসন। কি অবাক করা সব তথ্য তাইনা বন্ধুরা।
তো বন্ধুরা এই ছিল আজকের টিউন। এরকম অবাক করা বিভিন্ন তথ্য বা জ্ঞান আপনারা পেতে চাইলে অবশ্যই আমার টিউন একটি জোসস দিবেন। আর কেউ আমার টিউনে কোন মন্তব্য করতে চাইলে টিউমেন্টে জানাতে দ্বিধা করবেন না। এতক্ষণ পর্যন্ত টিউনটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আসলামু আলাইকুম।
আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।