বন্ধুরা সকলেই কেমন আছেন? আশাকরি সকলেই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। বরাবরের মতো আজকেও হাজির হলাম নতুন একটি টিউন নিয়ে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এই শব্দটি হয়তোবা আপনাদের মধ্যে অনেকেই শুনে থাকবেন। আজকে আপনারা জানবেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? এবং প্রাত্যহিক জীবনে এর প্রভাব সমূহ।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হলো কল্পনা বা কল্পনা বাস্তবতা। এটি প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয় তবে বাস্তবের মতো চেতনা উদ্রেককারী বিজ্ঞানের কল্পনা বা কল্পনা বাস্তবতা। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে সংক্ষেপে VR বলা হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এটি মূলত কম্পিউটার প্রযুক্তি ও সিমুলেশন তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পর্কে আপনাকে একটি ছোট্ট উদাহরণ দেয়া যাক।
মনে করুন, ঢাকার একটি স্কুলের শিক্ষক কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে ছাত্রদের বিস্তারিত বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনভাবেই কিছু শিক্ষার্থী সেটি বুঝতে পারছে না। এক্ষেত্রে শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কম্পিউটার ল্যাব এ নিয়ে গেলেন এবং সেখানে সবাইকে মাথায় বিশেষ হেলমেট এবং হাতে বিশেষ গ্লাভস, পায়ে বিশেষ যন্ত্রপাতি সম্পূর্ণ জুতা পরিয়ে দিলেন। এরপরে ছাত্ররা প্রত্যেকে দেখল তারা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এসেছে এবং সামনে বিশাল সমুদ্র সমুদ্রের ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। তারা সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছে এবং সাগরের ঠান্ডা পানির অনুভূতি তাদের হাতে পাচ্ছে। তারা সেই ক্লাসরুমে হাঁটছে, অথচ তাদের মনে হচ্ছে যেন সমুদ্র সৈকতে হেঁটে বেড়াচ্ছে।
উপরের এই অভিজ্ঞতাই হল ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। যেটি বাস্তব নয় তবে বাস্তবের মতোই সত্য। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরীর মাধ্যমে প্রতি অসম্ভব কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে। যে কেউ ইচ্ছে করলে তার কল্পনা বা স্বপ্নে ভর করে যেতে পারে চাঁদের মাটিতে, কিংবা প্রশান্ত সাগরের গভীরতম অঞ্চলে, কিংবা কোনো সমুদ্র সৈকতে। এটি একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ, যেখানে কোনো ব্যক্তি সেই পরিবেশের সাথে বাস্তবের মতোই শ্রবণানুভূতি, মানসিক দৈহিক অনুভূতি বাস্তবের মতোই অনুভব করতে পারে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে, ডেটা গ্লাভস, বডি স্যুইট, উচ্চমানের অডিও ব্যবস্থা, রিয়েলিটি ইঞ্জিন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
দৃষ্টিঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য সেই ব্যক্তিকে একটি বিশেষ চশমা এবং হেলমেট পড়ানো হয়। সেই চশমা কিংবা হেলমেট এর মধ্যে ছোট আকারের পর্দা থাকে এবং তাতে বহুমাত্রিক ডিসপ্লে ব্যবহৃত হয়। এতে করে ব্যবহারকারী একেবারে বাস্তবের ন্যায় অথচ পরাবাস্তব দৃশ্য অবলোকনে সক্ষম হয়।
শব্দঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে শব্দ কোন বিশেষ স্থান থেকে উৎসারিত বা পরিবর্তনশীল মনে হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ত্রিমাত্রিক শব্দ যুক্ত করার কারণ হলো, যাতে করে শব্দের কারণে একধরণের বাস্তব ত্রিমাত্রিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ওই ব্যক্তির কাছে মনে হয় যেন শব্দটি বাস্তব কোন উৎস থেকেই আসছে।
স্পর্শঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের জুতা, গ্লাভস, শরীরের বিশেষ পোশাক একজন ব্যক্তিকে কৃত্রিমভাবে প্রকৃত বাস্তব অবস্থার কাছাকাছি নিয়ে যায়। এর কারণ হলো এসব যন্ত্রের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে বাস্তবের নেয় স্পর্শের অনুভূতি পাওয়া যায়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি একজন ব্যক্তিকে কোন রকম শারীরিক ঝুঁকি বা বিপদ ছাড়াই বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদান করে। যার ফলে কেউ কোন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না গিয়েও সেই স্থানের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। যার মাধ্যমে বিভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের জন্য পেশাজীবীদের বাস্তবসম্মত ও নিরাপদ প্রশিক্ষণে এ প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে চিকিৎসা, গাড়ি বা বিমানচালনা, সামরিক যুদ্ধ প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রগুলোতে বিভিন্নভাবে শারীরিক কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এসব ক্ষেত্রগুলোতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে সেটি সম্পূর্ণ নিরাপদ করে তোলা সম্ভব।
যেমন বাস্তবে বিমানচালনা বা গাড়িচালনায় দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। তবে যদি এসব ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয় তাহলে এ পরিবেশে কোন দুর্ঘটনা হওয়ার আশঙ্কাই নেই, কেননা এখানে সম্পূর্ণ কৃত্রিম পরিবেশ ব্যবহার করে বাস্তবের নেয় অবিকল দৃশ্য এবং মডেল তৈরি করা হয়েছে। একজন পাইলট বাস্তবের ন্যায় সেখানে বিমান উড়ানো প্রশিক্ষণ নিতে পারে। এছাড়া একজন গাড়িচালক এখানে কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই সম্পূর্ণভাবে গাড়ি চালানো শিখতে পারে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিঃ উন্নত বিশ্বে ডাক্তারদের আধুনিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে সার্জিক্যাল প্রশিক্ষণে 'এমআইএসটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ল্যাপারোস্কপিক' প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। যার ফলে খুব সহজেই একজন ডাক্তার বাস্তবে অপারেশন থিয়েটার এর কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। জটিল সব অপারেশন, অঙ্গ-প্রতঙ্গের ক্ষুদ্র বিষয়গুলোর গঠন ও কার্য পরিচালনা, ডিএনএ পর্যালোচনা প্রভৃতি সম্পর্কে ব্যাপকভাবে জানাও গবেষণা চালানো সম্ভব ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এর মাধ্যমে।
কার ড্রাইভিং প্রশিক্ষণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে খুব সহজেই ড্রাইভিং শেখানো সম্ভব। এর মাধ্যমে একজন প্রশিক্ষণার্থী বাস্তবের মত গাড়ি চালিয়ে খুব সহজেই বাস্তবে গাড়ি চালানোর দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এর ফলে এক জন প্রশিক্ষণার্থী কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই গাড়ি চালানো শিখতে পারে।
মহাশূন্য অভিযান প্রশিক্ষণেঃ মহাশূন্য অভিযান এর প্রতিটি পর্বে রয়েছে নানা ধরনের ঝুঁকি। একজন নভোচারীর মহাকাশে যাবার পূর্বে নভোযান পরিচালনা সম্পর্কিত যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রশিক্ষণের বাস্তব জ্ঞান সম্পর্কে জানা দরকার। আর এই নভোযান পরিচালনার প্রশিক্ষণের জন্য যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়গুলো শেখানো হয় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে। যার মাধ্যমে একজন নতুন নভোচারী পৃথিবীতে বসেই নভোযান চালানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করে। পৃথিবীতে বসেই কাল্পনিক পরিবেশে মহাকাশে গবেষণা পরিচালনার বিষয়গুলো এবং মহাশূন্যে খাপ খাওয়ানোর মতো বিষয়গুলো পূর্বেই প্রশিক্ষণ নিতে পারেন নভোচারীরা।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব থাকলেও এর পাশাপাশি রয়েছে নেতিবাচক প্রভাবও। নেতিবাচক প্রভাব এর মধ্যে রয়েছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সরঞ্জামাদির চড়া দাম, স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর দিক, মনুষ্যত্ব হীনতা ও কল্পনার জগতে বিচরণ এর প্রভাব।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সরঞ্জামাদি এর দাম অনেক চড়া হওয়ার কারণে এটি সর্বসাধারণের জন্য ব্যবহার করা হয়ে ওঠে না। এছাড়া এ প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এটি মানুষের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি এর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারের ফলে মানুষ বাস্তবিকের চেয়ে ভালো পরিবেশ ও মনের মতো সঙ্গী খুঁজে পাবে। যার ফলে মানুষের মাঝে পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও মনুষত্বহীনতা বেড়ে যাবে। যার ফলে ক্রমেই মানবসমাজ বিলুপ্ত হতে থাকবে। তাই বলাই যায়, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এর ব্যাপক ব্যবহার হলে মানুষের মাঝে এসব নেতিবাচক দিকগুলো পরিলক্ষিত হবে।
বন্ধুরা এই ছিল ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সম্পর্কে আজকের টিউন। আশা করছি টিউনটি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে। সম্পূর্ণ টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)