আশাকরি আল্লাহ তায়ালার দয়ায় আপনারা ভালোই আছেন। ভালো থাকার কারনেই না হয় একবার পড়ে নেই আলহামদুলিল্লাহ। বরাবরের মতো নিয়ে এসেছি শুধু আপনাদের জন্য একটি ভিন্নধর্মী টিউন।
ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আকর্ষণীয় ভাবে আপনাদের জানানোর জন্যই আজকের এই টিউন। আজে বাজে কথা আর না বলি। আশাকরি আপনারা মনোযোগী হয়েই টিউনটি পড়বেন।
গ্রিক Bacteria=little rod থেকে ব্যাকটেরিয়া শব্দটির উৎপত্তি। ব্যাকটেরিয়া এক ধরনের ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক জীব।
ব্যাকটেরিয়া হল কোষ প্রাচীর বিশিষ্ট এককোষী, প্রাককেন্দ্রিক অণুজীব যা সাধারণত ক্লোরোফিল বিহীন এবং প্রধানত দ্বিভাজন প্রক্রিয়ায় বংশ বৃদ্ধি করে। ৩৬০ কোটি বছর পূর্বে আর্কিওজয়িক যুগে আদিকোষী জীবের উৎপত্তি ঘটেছিল। প্রচন্ড ঠান্ডা -১৭ ডিগ্রী থেকে ৮০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় বাঁচতে পারে ব্যাকটেরিয়া।
আন্টনি ভ্যান লিউয়েনহুক ব্যাকটেরিওলজি ও প্রটোজুওলজির জনক।
লুই পাস্তর ব্যাকটেরিয়া তত্ত্ব কে প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি আধুনিক ব্যাকটেরিওলজির জনক।
এরেনবার্গ অনুুুজীবটিকে ব্যাকটেরিয়া নামকরণ করেন।
রবার্ট কক (Robert Koch) যক্ষা রোগের জন্য দায়ী Mycobacterium tuberculosis ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেন।
Lederberg এবং Tatum বিজ্ঞানীদ্বয় Escherichia coli ব্যাকটেরিয়ার যৌন প্রবণতা আবিষ্কার করার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৫৮ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
বিজ্ঞানের যে শাখায় ব্যাকটেরিয়ার গঠন, আবাস, রোগতত্ত্ব, বংশবিস্তার ইত্যাদি নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা করা হয় তাকে ব্যাক্টেরিওলজি বলে।
মানুষের দেহে যতগুলো কোষ আছে তার চেয়ে ১০ গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া আছে। মানুষের অন্ত্রও ত্বকে সর্বাধিক সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া থাকে। এদের বেশিরভাগই কোন ক্ষতি করে না।
মানুষের দেহে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগের মধ্যে যক্ষা রোগ বেশি ভয়ানক এবং এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় 2 মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের AIDS সংক্রমনে যত মানুষ মারা যায় তার চেয়ে বেশি মারা যায় Methicillin-resistant Staphylococcus aureus (MRSA) ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে।
ব্যাকটেরিয়া মাটিতে, পানিতে, বাতাসে, জীব দেহের বাইরে এবং ভেতরে অর্থাৎ প্রায় সর্বত্রই বিরাজমান। মানুষের অন্ত্রে ও ব্যাকটেরিয়া বাস করে।
Escherichia coli (E. coli) নামক ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্সের যোগান দিয়ে থাকে।
যে মাটিতে জৈব পদার্থ সবচেয়ে বেশি সাধারণত সে মাটিতে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
মাটির যত গভীরে যাওয়া যাবে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণও তত কমতে থাকে এবং সাথে সাথে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাও কমতে থাকে। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ জলাশয়েও প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া বাস করে।
বায়ুতে ও ব্যাকটেরিয়া আছে তবে বায়ুস্তরের অনেক উঁচুতে ব্যাকটেরিয়া থাকে না। এক গ্রাম মাটিতে প্রায় 40 মিলিয়ন এবং 1 মিলিমিটার মিঠাপানিতে প্রায় এক মিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া থাকে।
ব্যাকটেরিয়া থেকে সাবটিলিন (Bacillus sutilis হতে), পলিমিক্সিন (Bacillus polymyxa হতে), স্ট্রেপটোমাইসিন (Actinomycetes হতে) ইত্যাদি জীবনরক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হয়।
কতিপয় ব্যাকটেরিয়া থেকে যক্ষা, ডিপথেরিয়া, কলেরা, টাইফয়েড রোগের টীকা বা ঔষধ তৈরি হয়। ডি.পি.টি. (ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি ও ধনুষ্টংকার) রোগের ঔষধ ও ব্যাকটেরিয়া থেকে সৃষ্টি হয়।
মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে। নাইট্রোজেন সংবন্ধনে। পতঙ্গনাশক হিসেবে। ফলন বৃদ্ধিতে।
দুগ্ধজাত শিল্পে দুগ্ধ বৃদ্ধি করতে। পাটশিল্পে পাটের ফলন বৃদ্ধি করতে। চামড়াশিল্পে এর অবদান কম নয়। চা কফি ও তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণে। জৈব গ্যাস তৈরিতে। টেস্টিং লবণ তৈরিতে।
সেলুলোজ হজমে ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহৃত হয়। ভিটামিন তৈরিতে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়। যেমন- মানুষের অন্ত্রে E.coli ও অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া ভিটামিন বি, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-বি২, ফলিক এসিড, বায়োটিন ইত্যাদি তৈরি করে ও সরবরাহ করে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়।
আবর্জনা পচনে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়। তেল নিস্কাশনে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়। বায়োগ্যাস উৎপাদনে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়।
মানুষের যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, কলেরা, ডিপথেরিয়া, আমাশয়, ধনুষ্টংকার বা টিটেনাস, হুপিং কাশি ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ। এছাড়াও সিফিলিস, গনোরিয়া, এনথ্রাক্স, মেনিনজাইটিস, লেপরসি বা কুষ্ঠরোগ, আনডিউলেটেড ফেভার ইত্যাদি রোগও ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হয়ে থাকে।
গরু-মহিষের যক্ষা, আনডিউলেটেড ফেভার, ভেড়ার এনথ্রাক্স, ইদুরের প্লেগ, হাস-মুরগির কলেরা, গিলাফোরা রোগ ইত্যাদি রোগও ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হয়ে থাকে।
গমের টুন্ডুরোগ, ধানের পাতা ধবংসা, আখের আঠা ঝরা রোগ, লেবুর ক্যাংকার, আলুর স্ক্যাব, ভুট্টার বোটা পচা রোগ, টমেটোর ক্যাংকার, আপেলের ফায়ার ব্লাইট, তামাকের ব্লাইট, সিমের লিফ স্পট রোগও ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হয়ে থাকে।
কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া খাদ্যে বিষাক্ততা সৃষ্টি করে। এতে মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। একে বটুলিজম বলে।
কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া সাধারণত মল দিয়ে পানিকে পানের অযোগ্য করে থাকে।
কতিপয় ব্যাকটেরিয়া মাটিস্থ নাইট্রোজেন কে ভেঙে মুক্ত নাইট্রোজেনে পরিণত করে এবং মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস করে ফলে ফসলের উৎপাদন কমে যায়।
যুদ্ধে ক্ষতিকারক জীবাণু অস্ত্র ব্যবহৃত হয়।
ব্যাকটেরিয়া কাপড়-চোপড়, কাঠের আসবাবপত্র সহ অনেক দ্রব্যের ক্ষতিসাধন করে থাকে। যেমন- Desulfo vibriosp. লোহার পাইপের ক্ষতের সৃষ্টি করে পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায়।
ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে উদ্ভিদের সাধারণত ব্লাইট, উইল্ট, গল ও রট (blight, wilt, gall, rot) রোগ হয়ে থাকে। এখানে ব্যাকটেরিয়াজনিত ধানের ব্লাইট রোগ এবং মানুষের কলেরা রোগ সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।
Xanthomonas oryzae নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ধানের এ রোগ হয়।
Takaesi সর্ব প্রথম প্রমাণ করেন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়। সাধারণত আগস্ট সেপ্টেম্বর মাসের দিকে এ রোগের সূচনা হয়। বীজই রোগ-জীবাণুর প্রধান বাহন। ব্লিচিং পাউডার (১০০ mg/ml) এবং জিংক সালফেট (2℅) দিয়ে বীজ শোধন করলে রোগাক্রমণ বহুলাংশে কমে যায়। হাইডাথোড বা পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে জীবাণু গাছের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং সেখানে সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
Vibrio cholerae কলেরা নামক ব্যাকটেরিয়ার কারনে এই রোগ হয়। এই ব্যাকটেরিয়ার আকৃতি একটু বাকা কমার মত। এর দৈর্ঘ্য ১-৫ মাইক্রোন এবং প্রস্থ ০.৪-০.৬ মাইক্রোন এবং এর এক প্রান্ত একটি ফ্লাজেলাম থাকে। কলেরা ব্যাকটেরিয়া একটি গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া। কলেরাজেন একটি এন্টারোট্রক্সিন। বন্ধুরা এই কলেরা একসময় ছিলো মহামারী। জখন যে গ্রামে আসত তখন সে গ্রাম ফাঁকা বা আধা ফাকা করে ছাড়ত। মানুষ ভয়ে মাটি পর্যন্ত দিতে যেত না। আজ এর উপযুক্ত চিকিৎসা রয়েছে। তাই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন আর কেউ মরে না। সবি আল্লাহর নিলা খেলা।
তো বন্ধুরা এই ছিলো আজকের টিউন। ভালো লাগলে জোসস 👍 দিতে ভুলবেন না। মন্তব্য থাকলে টিউমেন্ট 🖌️ এ জানতে ভুলবেন না। এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।
প্রিয় ট্রাসটেড টিউনার,
আপনার টিউনটি ‘টেকটিউনস ক্যাশ’ এর জন্য প্রসেস হতে পারছে না।
কারণ:
টিউনে লো-রেজুলেশনের ইমেইজের ডাইমেনশন রিসাইজ করে বা লো-রেজুলেশনের ইমেইজের পিছনে অতিরিক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড যোগ করে ইমেজকে বড় ডাইমেনশনের বানিয়ে টিউনে যোগ করা হয়েছে। টেকটিউনস টিউন গাইডলাইন অনুযায়ী টিউনে লো-রেজুলেশনের ইমেইজের ডাইমেনশন রিসাইজ করে বা লো-রেজুলেশনের ইমেইজের পিছনে অতিরিক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড যোগ করে ইমেজকে বড় ডাইমেনশনের বানিয়ে টিউনে যোগ করা যায় না।
করনীয়:
‘টেকটিউনস কপিরাইট ম্যাটেরিয়াল গাইডলাইন’ অনুযায়ী টিউনে হাই-রেজুলেশনের ইমেইজ যোগ করুন। সেই সাথে হাই-কোয়ালিটি, টিউনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক, Copyright Free ও Royalty-Free ইমেইজ Full Size এ যোগ করুন।
উপরের নির্দেশিত সংশোধন করে এই টিউমেন্টের রিপ্লাই দিন।