এইতো কিছুদিন আগেই ওয়ানপ্লাস নিয়ে আসলো তাদের ফ্ল্যাগশিপ সিরিজ ওয়ানপ্লাস ৮ ও ৮ প্রো। এই সিরিজ কয়েকদিন ধরেই রয়েছে সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে তার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার যুক্ত হলো টেক জায়ান্ট 'অ্যাপল' এর আকর্ষণীয় বাজেট স্মার্টফোন, আইফোন এসই (২০২০)।
আমার মতে, চাইনিজ মোবাইল কোম্পানিগুলোকে বাজেট ক্যাটাগরিতে হারানোর জন্যেই অ্যাপল নিয়ে এসেছে এই ফোনটি। আমরা দেখেছি ২০১৬ সালের মার্চে তাদের প্রথম স্পেশাল এডিশন বা SE রিলিজ করে। সেই ফোনটি এখনো অনেকেই ব্যবহার করছে। তো এতদিন পরে এই ২০২০ সালে এসে অর্থাৎ ৪ বছর পর অ্যাপল এর রিলিজ হওয়া স্পেশাল এডিশনের এই নতুন স্মার্টফোনটিতে কি কি থাকছে তা এক নজরে দেখে নেয়া যাক।
আলোচনার শুরুতেই এই স্মার্টফোনের ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে কথা বলি। ফোনটিতে ক্লাসিক ডিজাইন দেয়া হয়েছে, দেখতে প্রায় আইফোন ৮ এর মতোই, বলতে গেলে এটি আইফোন ৮ এর রিব্রান্ডেড ভার্সন। ফ্রন্ট এবং ব্যাক-সাইড পুরোটাই গ্লাস এর তৈরি এবং ফ্রেম থাকছে অ্যালুমিনিয়াম এর, থাকছে না কোনো হেডফোন জ্যাক। ব্যাক-সাইডে আমরা পেয়ে যাচ্ছি অ্যাপলের বিখ্যাত লোগো এবং সিংগেল ক্যামেরা সেট-আপ।
আর ফোনটি আইপি ৬৭ রেটিং যুক্ত, আমরা জানি এই আইপি রেটিং যেকোন ফ্ল্যাগশিপ গ্রেডের ফোনের জন্যে খুবই জরুরী। অতএব বৃষ্টিতে ভিজলে অথবা ১ মিটার পানির মধ্যে থেকে ছবি তুললেও সমস্যা হবে না। আর সেই সাথে এর বেজ-ভ্যারিয়েন্ট মূল্য মাত্র ৩৯৯ ডলারে আমরা পেয়ে যাচ্ছি ওয়ারলেস চার্জিং সুবিধা, আর বক্সে থাকছে মাত্র 5W এর একটি চার্জার। তবে ফোনটিতে 18W এর ফাস্ট চার্জিংও সাপোর্ট করবে। তখন ৫০% চার্জ করা যাবে ৩০ মিনিটের মধ্যেই। সাথে ফোনটিতে সেকেন্ড জেনারেশনের টাচ আইডি সেন্সর ও থাকছে।
ডিসপ্লে হিসেবে আমরা পাচ্ছি ৪.৭ ইঞ্চির এইচডি+ এলসিডি প্যানেল। ৪.৭ ইঞ্চি এবং এলসিডি ডিসপ্লে থাকাতে সমালোচনাও কম হচ্ছে না এই ফোনটি নিয়ে। তবে ফোনটিতে যেহেতু ৬২৫ নীট ব্রাইটনেস থাকছে এবং সেই সাথে এর পিক্সেল ডেনসিটি ৩২৬ পিপিআই। তো আশা করা যায় ইউজার রা তেমন একটা আশাহত হবেন না।
এবার আসি একটি মেইন পাওয়ার কনজ্যুমার প্রসেসর প্রসঙ্গে। আমার কাছে মনে হয় এই ফোনটির মেইন সেলিং পয়েন্ট হবে এর প্রসেসর, কারণ এখানে থাকছে আইফোনের লেটেস্ট এ১৩ বায়োনিক প্রসেসর। এটি হচ্ছে ৭ ন্যানোমিটার আর্কিটেকচারে তৈরি করা একটি হেক্সা-কোর প্রসেসর, পূর্বে এই চিপসেটটি অ্যাপল ব্যবহার করেছিল তাদের আইফোন ১১ প্রো এবং ১১ প্রো ম্যাক্স এ। এত কম বাজেটের একটি স্মার্টফোনে এই ফ্ল্যাগশিপ প্রসেসর সত্যিই অবাক করার মতো, কারণ যেখানে স্ন্যাপড্রাগন ৮৬৫ প্রসেসর দেয়া ফোনের দাম রাখা হয় ৫৫০ ডলারের চাইতেও বেশি সেখানে অ্যাপল দিচ্ছে এত কম বাজেটে এ১৩ বায়োনিক চিপসেট।
এবার ক্যামেরা সেক্শনে আমরা পাচ্ছি ফ্রন্টে ৭ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা যার অ্যাপার্চার ২.২ এবং রিয়ার ক্যামেরা হিসেবে পাচ্ছি ১২ মেগাপিক্সেলের একটি ওয়াইড-এংগেল ক্যামেরা যার অ্যাপার্চার হচ্ছে ১.৮। এক কথায় আমরা ক্যামেরা সেকশনটি থাকছে আইফোন ১০ এর মতই। আইফোনের ক্যামেরা কোয়ালিটি নিয়ে বলার কিছু নেই, কারণ তারা কখনোই আশাহত করেনি।
আর ব্যাটারি হিসেবে পাচ্ছি ১৮২১ এমএএইচ এর নন রিমুভেবল ব্যাটারি, এটি অনেকেরই হতাশার কারণ। তবে অ্যাপলের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে যে, এই ফোনটিতে একবার ফুল-চার্জ দিয়ে ভিডিও প্লে করতে পারবেন ১৩ ঘন্টা পর্যন্ত এবং অডিও প্লে করা যাবে ৪০ ঘন্টা পর্যন্ত। তবে আমার কাছে মনে হয় গেমিং এর জন্যে এই ফোনটি ভালো একটা অপশন হবে না।
এই ফোনটি পাওয়া যাবে তিনটি রঙে। সাদা, কালো এবং লাল। এর মধ্যে লাল রঙের ফোনটির লভ্যাংশের কিছু অংশ পৌঁছে যাবে কোভিড-১৯ এর জন্যে গঠিত গ্লোবাল ফান্ডে। আর আইফোন এসই ২০২০ তে থাকছে ৩টি ভ্যারিয়েন্ট, যার মূল্য যথাক্রমে ৬৪ জিবি (৩৯৯ ডলার), ১২৮ জিবি (৪৪৯ডলার), ২৫৬ জিবি (৫৪৯ ডলার)। ডলার রেট বাংলাদেশি টাকায় কনভার্ট করলে প্রাইস অনেক বেশি মনে হলেও, আইফোনের লেটেস্ট প্রসেসর এবং স্পেসিফিকেশন দেখে বলা যায় নিম্নে ৪ বছর ভালোভাবেই ব্যবহার করা যাবে।
আমার এই লেখা ভালো লেগে থাকলে আমার ইউটিউব চ্যানেলে ঘুরে আসতে পারেন। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ! এই ফোনটি সম্পর্কে আপনার মতামত জানাতে পারেন টিউমেন্টের মাধ্যমে।
আমি শাহ্নাজ আক্তার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 26 টি টিউন ও 4 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।