আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু। প্রথমে কিছু আবেগের কথা বলি। এরপর মূল টিউনে আসি। সর্বশেষ টেকটিউনসে টিউন করেছিলাম আজ থেকে ৭ মাস আগে, এর পূর্বে ১ বছর ১ মাস আগে। অথচ একটা সময় ছিলো, যেখানে সপ্তাহে কয়েকটা করে টিউন করতাম। আমার এই আইডি থেকে এটা ১১৪তম টিউন।
এখন আর টেকটিউনসে আসা হয় না প্রায়। তবুও আবেগে যতবার আসি দুঃখ লাগে। এটা কি সেই টেকটিউনস, যেটা একসময় বুকের বাঁ পাশের বড় একটা অংশ জুড়ে ছিলো? যেখানে দিনে কয়েকবার করে আসতাম বাংলা ভাষায় চমৎকার সব লেখাগুলো পড়তে? যাক, আবেগ সাইডে রাখি। শুরু করা যাক!
হয়ত কখনো পৃথিবীর জীবন আপনাকে বিরক্ত বিতৃষ্ঞ করে তুলেছে আর আপনিও ভেবেছেন, আর থাকবো না, এবার বিদায় পিতিবি বলে মঙ্গলে চলে যাব। যদি তা সত্যিই হয়ে থাকে, তবে দুঃখিত, বিজ্ঞানীরা আপনাকে এ বিষয়ে কোন সুসংবাদ দিতে পারছেন না। গবেষণা বলছে, আপাতত মঙ্গলকে বসবাসযোগ্য করার মত প্রযুক্তি মানুষের নেই।
মঙ্গল গ্রহে মানুষের থাকা নিয়ে বিভিন্ন কনসেপ্ট দেওয়া হয়েছে। এর একটি হলো টেরাফর্ম, যার দ্বারা বোঝায় মঙ্গলের এমন পরিবর্তন আনা যেন পরিবেশ পৃথিবীর মত হয়। অর্থাৎ, কোন বিশেষ ডিভাইস ছাড়া-ই মানুষ বেঁচে থাকতে পারে, যেমনটা আমরা পৃথিবীতে আছি।
প্লানেটারি সায়েন্টিস্ট ব্রুস এম. জ্যাকস্কি আর নর্থ অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির প্লানিটারী সায়েন্টিস্টের সহকারি অধ্যাপক ক্রিস্টোফার এডওয়ার্ডস মঙ্গলের টেরাফর্ম ঘটানোর সম্ভাব্যতা নিয়ে একটি গবেষণা চালান। এবং তাদের গবেষণায় আমরা জানতে পেরেছি, কেন আপাতত পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে মঙ্গলে থেকে যাওয়ার সুযোগ নেই।
মঙ্গলকে পৃথিবীর মত গ্রহ বানাতে দরকার হবে তরল অবস্থায় পানিকে স্থিতিশীল রাখা, আরো বেশি তাপমাত্রা ও বায়ুমন্ডলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করা। গবেষকরা বলছেন, থিউরিটিকালি, শেষের দুটি আমরা তা করতে পারি সেখানকার গ্রিন হাউজ গ্যাসকে ব্যবহার করে।
যাই হোক, যদি আমরা মঙ্গল গ্রহকে পৃথিবীর মত একটি গ্রহে রূপান্তর করতে চাই, তাহলে আমাদের এর তাপমাত্রা বাড়াতে হবে, তরল অবস্থায় পানিকে স্থিতিশীল করতে হবে এবং বায়ুমন্ডলের ঘনত্ব তথা চাপ বৃদ্ধি করতে হবে। জ্যাকস্কি এবং এডওয়ার্ডস ব্যাখ্যা করেছেন, তাত্ত্বিকভাবে আমরা মঙ্গল গ্রহের গ্রিন হাউজ গ্যাসগুলোকে ব্যবহার করে সেখানকার তাপমাত্রা বাড়াতে পারি এবং বায়ুমন্ডলীয় চাপকে পরিবর্তন করতে পারি যেন তা পৃথিবীর মত হয়।
মঙ্গল গ্রহে প্রচুর কার্বন ডাইঅক্সাইড রয়েছে পাথরে আর পোলার আইস ক্যাপসে। আমরা জানি, কার্বন ডাই অক্সাইড একটি গ্রিন হাউজ গ্যাস, তাই, এটি আমাদের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে এবং বায়ুমন্ডলের ঘনত্বও এটি বৃদ্ধি করতে পারে।
মার্সে বিভিন্ন সোর্সে প্রচুর কার্বন অক্সাইড সঞ্চিত আছে ঠিকই, কিন্তু, সেখানে এতটাও কার্বন ডাইঅক্সাইড নেই, যেটা একে পৃথিবীর মত পরিবেশে নিয়ে আসবে। তাছাড়া, সঞ্চিত সব কার্বন ডাইঅক্সাইড একসেস করা মানুষের পক্ষে সম্ভব হবে না।
গবেষক দুজন গত ২০ বছরে মঙ্গল গ্রহকে অবজার্ভ আর স্টাডি করা বিভিন্ন রোভার আর স্পেসক্রাফটের তথ্য ব্যবহার করে মঙ্গল গ্রহের কার্বন ডাইড স্টোরেজের তালিকা করেছেন। তারা মঙ্গল গ্রহের ভূ-পৃষ্ঠ ও ভূ-গর্ভের সব কার্বন ডাইঅক্সাইড নথিভুক্ত করেদেখেছেন গ্রহটির বায়ুমন্ডলকে পরিবর্তন করার মত ঠিক কতটা কার্বন ডাইঅক্সাইড সেখানে আছে।
মার্সে কার্বন ডাইঅক্সাইডের প্রাচুর্য রয়েছে, কিন্ত এ কাজের জন্য যতটা কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করা মানুষের পক্ষে সম্ভব হতে পারে, তা গ্রহটির বায়ুমন্ডলীয় চাপকে শুধুমাত্র তিনগুণ করতে সক্ষম।
তিনগুণ শুনে মনে হচ্ছে অনেক, তাই না? কিন্তু, মাথায় রাখতে হবে, পৃথিবীর প্রায় 101, 325 Pa চাপের বিপরীতে মার্সের বায়ুমন্ডলীয় চাপ মাত্র 610 Pa। তাই তিনগুণ চাপ আসলে যথেষ্ট হবে না। স্পেসশ্যুট ছাড়া মানুষের হাঁটা সম্ভব করতে অন্তত আরো ১৫ গুণ কার্বন ডাইঅক্সাইডের প্রয়োজন ছিল।
মঙ্গল গ্রহে তাপমাত্রা বৃদ্ধির মত যথেষ্ট পরিমাণে থাকা একমাত্র গ্রিনহাউজ গ্যাস হলো কার্বন ডাইঅক্সাইড। মঙ্গল গ্রহে পাথর আর পোলার আইস ক্যাপসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু, তারা দেখেছেন, আসলে সেখানে এতটাও কার্বন ডাইঅক্সাইড নেই, যেটা একে পৃথিবীর মত গ্রহে পরিণত করতে পারবে।
আবার, এই পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড মার্সের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়াতে পারবে না। আর যেহেতু সেখানে গড় তাপমাত্রা শূন্যের নিচে অর্থাৎ মাইনাস ষাট ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি, এবং শীতকালে তা যথেষ্ট পরিমাণে আরো কমে যায়, কাজেই গবেষকরা বলছেন এতে তেমন কাজ হবে না।
তাছাড়া, যদি মার্সে আরো কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকতো, তবুও এদের অধিকাংশকে পাওয়া খুব কঠিন হত। উদাহরণস্বরূপ, পোলার আইস ক্যাপগুলো থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড বিমুক্ত করতে বিস্ফোরক ব্যবহার করা যেতে পারে।
মঙ্গল গ্রহে সঞ্চিত কার্বন ডাইঅক্সাইড বিমুক্ত করার বিভিন্ন থিউরিটিকাল মেথড দেওয়া হয়েছে, যাদের অনেকগুলো খুবই কঠিন, আর জ্যাস্কি এবং এডওয়ার্ডেস গবেষণায়, যদি অনন্ত জলিল টাইপের কেউ তা সম্ভবও করে ফেলে, তবুও তাতে কাজ হবে না।
Space.com এর কাছে অবশ্য তারা আশা প্রকাশ করেছেন, হয়ত ভবিষ্যতে নতুন কোন প্রযুক্তিতে মার্সের টেরাফর্ম সম্ভব হতেও পারে। কিন্তু যাইহোক, অন্তত এখন, বর্তমান প্রযুক্তিতে তা সম্ভব না।
মানুষের দ্বিতীয় বাসস্থান হিসেবে মঙ্গল গ্রহকে দেখা হয়েছে বহু বছর ধরে বহু কারণেই। হয়ত, ভবিষ্যতে আজকের বিজ্ঞানের কাছে অসম্ভব এই কাজটি সম্ভব হতেও পারে। কিন্তু, মার্সকে দ্বিতীয় গ্রহ বানানোর পরিবর্তে আমাদের প্রচেষ্টা বরং বেশি হওয়া উচিৎ পৃথিবীর মনোমুদ্ধকর পরিবেশকে নিশ্চিত রাখা, জ্যাকস্কি মনে করেন।
মূল লেখা: https://www.space.com/41318-we-cant-terraform-mars.html
সহায়তা: https://en.wikipedia.org/wiki/Atmosphere_of_Mars
আমার ব্লগে ঢুঁ মারতে পারেন, আশা করি ভালোই লাগবে। আমার ব্লগ: হযবরল.বাংলা
আরো দেখুন: কেন চাঁদ পৃথিবীতে পড়ে যাচ্ছে না?
সবশেষে একটা রিকুয়েস্ট থাকবে, সম্ভব হলে অবশ্যই টিউমেন্ট করবেন। ধন্যবাদ।
আমি তাহমিদ হাসান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 288 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
সুন্দর টিউন।