অবাক হয়েছেন নিশ্চয়, এমন আজব টাইটেল দেখে? আপনি আরো অবাক হবেন, এটা শুনে যে পিঁপড়াদের সত্যি সত্যি ভাষা রয়েছে। হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন। পিঁপড়াদের ভাষা আছে। এর চেয়ে আরো অবাক করা অনেক তথ্য আমার এই টিউনে আপনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে😉😁 তো চলুন শুরু করি। তার আগে একটা সালাম, আসসালামু আলাইকুম।
পিঁপড়ারা সামাজিক জীব। কীটদের যত প্রজাতি আছে, তার মধ্যে শুধুমাত্র ৪ টি প্রজাতি সামাজিক জীবনযাপন করে। পিঁপড়া তার মধ্যে একটি প্রজাতি। পিঁপড়াদের সমাজ এক একটি কলোনি নিয়ে গঠিত। একটি কলোনি মিলিয়ন মিলিয়ন পিঁপড়া থাকতে পারে! প্রত্যেকটি পিঁপড়ারই সেই কলোনিতে একটি নির্দিষ্ট দায়িত্ব বা কাজ রয়েছে। যেমন- কিছু পিঁপড়া খাবার সংগ্রহ করে, কিছু পিঁপড়া লার্ভার যত্ন নেয়, কেউ কেউ কলোনিকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে ইত্যাদি ইত্যাদি। পিঁপড়াদের কলোনিতে পিঁপড়ারা জন্মগতভাবে ওই দায়িত্বগুলো পেয়ে থাকে। পিঁপড়ার ভাষা সম্পর্কে জানতে হলে আগে এর প্রকারভেদ সম্পর্কে একটু ধারণা রাখতে হবে।
পিঁপড়ার সব কলোনিতেই তিন ধরনের সদস্য থাকে। এরা হচ্ছে, রাণী, পুরুষ ও কর্মী পিঁপড়া। রাণী সদস্যদের কাজ হচ্ছে শুধু ডিম পাড়া। পুরুষ পিঁপড়াদের কাজ হচ্ছে রাণীর সাথে মিলিত হয়ে ডিম পাড়াতে সাহায্য করা। আর কর্মী পিঁপড়ারাও স্ত্রীজাতের, তবে বন্ধ্যা। এরাই কলোনির সব ধরনের কাজ করে থাকে। লার্ভার যত্ন করা, বাসা বানানো, কলোনি রক্ষা ইত্যাদি। কোনো লার্ভা বা পিউপা বা পিঁপড়া বিপদে পড়লে এরাই তাদের সাহায্য করে।
প্রতিটি পিঁপড়ার জীবন প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত - লার্ভা→ পিউপা → পিঁপড়া। পিউপা হচ্ছে লার্ভা এবং পিঁপড়ার মধ্যবর্তী দশা। এটা মনে রাখুন, আজকে পিউপা নিয়ে মোটামুটি কথা হবে। পিঁপড়া সম্পর্কে যথেষ্ট জানা হয়েছে, আর লাগবে না। এখন এদের ভাষা শিখার পালা!
আপনার কী মনে হয়, এত জটিল কলোনি যেখানে মিলিয়ন মিলিয়ন পিঁপড়া থাকে সেখানে ভাষা ছাড়া চলে? না, চলে না। পিঁপড়াদের সমাজ সুশৃঙ্খলভাবে চলতে প্রয়োজন ভাষা। আমি কিন্তু শুধু সশব্দ ভাষার কথা বলছি না; আমি পিঁপড়ার যোগাযোগ পদ্ধতিটাকে ভাষা বলছি।
পিঁঁপড়া কয়েকটি পদ্ধতিতে যোগাযোগ করেঃ
কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা এটা জানে যে, পিঁপড়া ফেরোমনের মাধ্যমে একে অন্যের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে তাদের নিজ নিজ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে। পিঁপড়ারা তাদের বিশেষ অঙ্গের (ফেরোমন ককটেইল) সাহায্যে ফেরোমন নিঃসরণ করে। এর মাধ্যমে তারা খুব দূর থেকে গন্ধভিত্তিক ডাটা আদান-প্রদান করতে পারে। পিঁপড়া তাদের এন্টেনার দ্বারা সেই ডাটা রিসিভ করে বা গন্ধ শুঁকে, অনেকটা আমাদের নাকের মতো। আসলে পিঁপড়ার এন্টেনাই পিঁপড়াদের যোগাযোগের মূল হাতিয়ার।
প্রত্যেকটি কলোনির একটি ইউনিক ফেরোমন সেট থাকে; যার ফলে তারা শত্রু-মিত্র আলাদা করতে পারে। পিঁপড়ার জন্য এই কাজটি করা কয়েক মিলিসেকেন্ডের ব্যাপার!
আর যদি ফেরোমনের আরেকটি উদাহরণ চান, তাহলে আমি বলব আপনি নিজেই সেটা নিজ চোখে দেখেছেন। ওই যে, পিঁপড়াদের লাইন; পিঁপড়ার লাইনে পিঁপড়ারা ফেরোমন ছড়িয়ে যায়, যাতে করে লাইনটা ঠিক থাকে এবং অন্য পিঁপড়াগুলো সেটা খুঁজে পায়। আপনি চাইলে পিঁপড়ার লাইনের মাঝে একটা ঘষা দিয়ে দেখতে পারেন। দেখবেন পেছনের পিঁপড়াগুলো কিছুক্ষণের জন্য পথভ্রষ্ট হয়ে যায়, মজা না?😍
মারমিকোলজিস্ট বার্ট হোলডোবলার এবং এডওয়ার্ড ও. উইলসন তাঁদের "জার্নি টু দ্য অ্যান্টস" বইটিতে ওয়েভার পিঁপড়ার (Oecophylla longinoda) যোগাযোগের একটা পর্যবেক্ষণ লিপি দেন। উদাহরণের জন্য বলা যেতে পারে, যখন একটি কর্মী পিঁপড়া কোনো খাদ্যের উৎস খুঁজে পায়, তখন সে আবার তার কলোনিতে ফিরে যায়। ফেরার সময় পথে ফেরোমনের ফোঁটা ছিটিয়ে ছিটিয়ে যায়, যাতে করে অন্য পিঁপড়াগুলো রাস্তা খুঁজে পায়। মারমিকোলজিস্টরা বলেছেন যে, পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে পিঁপড়ারা এই সিগন্যালকে আলাদা ও একত্রিত করতে পারে। যখন একটি পিঁপড়া তার কলোনি অন্য কোনো পিঁপড়ার সাথে মিলিত হয়, তখন সে তার সাথে মুখ লাগিয়ে, এন্টেনা লাগিয়ে বা একটি নির্দিষ্ট ম্যানারে শরীর নাচিয়ে বার্তা আদান-প্রদান করে। তারপর ওই অন্য পিঁপড়াটি মোটামুটি একটি স্পষ্ট ধারণা পায় যে, ট্রেইল বা লাইনের শেষে কী থাকতে পারে। যদি প্রথম পিঁপড়াটি কোনো খাবার কিছুর সন্ধান পেয়ে থাকে, তবে বেশিরভাগ সময়ই সে অন্য পিঁপড়াটিকে তার মুখ থেকে খাবারটির একটি নমুনা বের ট্যাস্ট দেবে।
মানুষের মতো পিঁপড়াও বডি ল্যাঙ্গুয়েজের সাহায্যে যোগাযোগ করে। তারা ফেরোমন সিগন্যাল ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ মিক্স করে একটি সুস্পষ্ট বার্তা প্রেরণ করতে পারে, যা সত্যিই জটিল! একটা খুবই অদ্ভূত উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, যেমন - কোনো পিঁপড়া যদি অন্য পিঁপড়ার মাথার কোনো একটা অংশে হালকা বাড়ি দেয়, তাহলে অন্য পিঁপড়াটি প্রথম পিঁপড়াটিকে তার খাদ্যের স্বাদ নিতে দেয়। খাদ্য সঞ্চয়ের জন্য এই জিনিসটা পিঁপড়াদের ক্ষেত্রে খুব একটা আনকমন নয়।
আসলে আজকের লেখাটা পিঁপড়ার শাব্দ যোগাযোগ নিয়েই লিখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কীভাবে যেন এটা পিঁপড়ার সার্বিক যোগাযোগের টিউন হয়ে গেল!😮 পিঁপড়ারা শব্দের মাধ্যমেও যোগাযোগ করতে পারে। পিঁপড়া তার পা দিয়ে কোনো শক্ত কিছুতে বাড়ি দিয়ে শব্দ উৎপন্ন করে, যেমন ধরুন তাদের বডির কোনো অংশে। এভাবে তারা বিভিন্ন শব্দ উৎপন্ন করতে পারে। পিঁপড়ার যোগাযোগের এই পদ্ধতিটি খুবই আশ্চর্যজনক ও আকর্ষণীয়। আমরা এই শব্দ শুনতে পারি না, কারণ এই শব্দটা 20-40 Hz এর নিচে। তবে আপনি কিন্তু চাইলে শুনতে পারি, যদি আপনার কান খুবই তীক্ষ্ণ হয়। আপনি একটি পিঁপড়াকে আপনার কানের খুব কাছে এনে শুনতে পারেন পিঁপড়ার কথা। (আপনিও চাইলে আপনার মনের কথা পিঁপড়ার সাথে কইতে পারেন😁)
এই সাউন্ডটা পিঁপড়া বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারে। যেমন - কোনো পিঁপড়া কোনো বিপদে পড়েছে বা কোথাও ফেঁসেছে যেখান থেকে সে একা উঠতে পারছে না, তখন সে তার অবস্থান জানিয়ে একটি সাউন্ড সিগন্যাল অন্য পিঁপড়াদের নিকট পাঠাতে পারে। অন্য পিঁপড়ারাও সাউন্ডটি শুনতে পেলে জবাবে একটি সাউন্ড সিগন্যাল পাঠিয়ে, তাকে সাহায্যের জন্য আশ্বস্ত করবে। এই কাজটি কিন্তু ফেরোমনের মাধ্যমে সম্ভব নয়। কী জটিল, না?
পিঁপড়াদের শাব্দ যোগাযোগ কিন্তু একেবারে নতুন আবিষ্কার। এটা নিয়ে আরেকদিন বিস্তারিত লিখব।
আর একটি কথা, কুরআনে ১৪০০ বছর আগেই পিঁপড়ার শাব্দ যোগাযোগের কথা বলা হয়েছে। নিচের আয়াতটি দেখুন -
27:18
حَتّٰۤی اِذَاۤ اَتَوۡا عَلٰی وَادِ النَّمۡلِ ۙ قَالَتۡ نَمۡلَۃٌ یّٰۤاَیُّہَا النَّمۡلُ ادۡخُلُوۡا مَسٰکِنَکُمۡ ۚ لَا یَحۡطِمَنَّکُمۡ سُلَیۡمٰنُ وَ جُنُوۡدُہٗ ۙ وَ ہُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ ﴿۱۸﴾
Bengali - Bayaan Foundation
অবশেষে যখন তারা পিপড়ার উপত্যকায় পৌঁছল তখন এক পিপড়া বলল, ‘ওহে পিপড়ার দল, তোমরা তোমাদের বাসস্থানে প্রবেশ কর। সুলাইমান ও তার বাহিনী তোমাদেরকে যেন অজ্ঞাতসারে পিষ্ট করে মারতে না পারে’।
দেখেছেন, এখানে একটি পিঁপড়া কথা বলেছে, মানে শব্দ করেছে। আগে ইসলাম বিরোধীরা বিশেষ করে নাস্তিকরা এটা নিয়ে হাসাহাসি করত, বলত গাল-গল্প। কিন্তু তাদের মাথায় বাজ পড়ে, যখন পিঁপড়ার শাব্দ যোগাযোগ আবিষ্কার হয়। এখন তাদের নিয়ে আমরা হাসাহাসি করলে কেমন হয়?
আসসালামু আলাইকুম। আর এই ভিডিওটা দেখতে পারেন, দারুণ লাগবে😊
Source: https://www.saifiyo.xyz/2019/08/blog-post_21.html (আমার ব্লগে প্রথম প্রকাশিত। চাইলে আমার ব্লগেও ঘুরে আসতে পারেন😊)
আমি সাইফ মোহাম্মাদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 5 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।