হ্যালো” প্রিয়” রিডার! আপনাদের সবাইকে TechZoa.com এ স্বাগতম। এই মহাবিশ্বে যে আমরা একা নই তা আমরা সবাই জানি। না, আমি এলিয়েনদের কথা বলছিনা, তবে আমাদের যে গ্যালাক্সি, অর্থাৎ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই প্রায় ১০০ বিলিয়নের বেশি নক্ষত্র বা তারা আছে। আর আমাদের গালাক্সির বাইরে সম্পূর্ণ বিশ্বজগতের কথা তো বাদই দিলাম। সম্ভবত এই সম্পূর্ণ ইউনিভার্সে যত নক্ষত্র আছে তাদের সংখ্যা পৃথিবীর যেকনো সমুদ্রসৈকতে মোট যতগুলো বালুকণা আছে তার থেকেও অনেক বেশি হতে পারে। আমরা এই সম্পূর্ণ ইউনিভার্সের একটি খুবই ক্ষুদ্র গ্রহে বসবাস করে মহকাশ সম্পর্কে এতদিন যা যা জানতে পেরেছি এবং যা যা গবেষনা করতে পেরেছি তা সত্যিই মানুষ হিসেবে আমাদের কাছে অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। যাইহোক, মহাকাশের এমন কয়েকটি তথ্য আছে যেগুলো হয়তো আপনি এতদিন জানতেন না। এর মধ্যে কয়েকটি হয়তো আপনি জানতেন না শুনেছেন, আবার হয়তো কয়েকটি শুনলে অবাকও হবেন। আজকে মহাকাশ সম্পর্কে এমন কয়েকটি ফ্যাক্ট নিয়েই আলোচনা করবো।
লিস্টটি শুরু করা যাক সবথেকে কমন ফ্যাক্টটি দিয়েই। আমরা অনেকেই মনে করি যে স্পেস বা মহাকাশ আমাদের পৃথিবীর থেকে অনেক অনেক দূরে। স্পেসে কি আছে না আছে তা ভালোভাবে দেখতে হলে আমাদের টেলিস্কোপের দরকার হয়। তাই এটা ধারনা করা স্বাভাবিক যে স্পেস আমাদের থেকে অনেক দূরে। আপনি যদি আগে থেকে না জেনে থাকেন, তাহলে জানলে অবাক হবেন যে, আমাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং স্পেসের শুরুর যে সীমানাটি আছে, সেটি আমাদের পৃথিবীর মাটির থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার ওপরে। কিছুটা দূর ঠিকই, তবে এতোটা নয় যতটা আমরা ভেবে থাকি। একবার ভেবে দেখুন, আপনি যদি একটি গাড়ী ওপরের দিকে হাই স্পিডে ড্রাইভ করতে পারতেন, তাহলে পৃথিবীর থেকে স্পেসের শুরুর সীমানার পৌঁছাতে আপনার সময় লাগত ১ ঘণ্টারও কম।
শনি গ্রহকে তো আমরা সবাই চিনি। এটি আমাদের সৌরজগতের ৮ টি প্ল্যানেটের মধ্যে ষষ্ঠ এবং একটি মেজর প্ল্যানেট বলা যায়। শনি গ্রহটি হচ্ছে সেই গ্রহ যেটির চারপাশে একটি রিং এর মতো আছে। আপনি হয়তো জানেন না যে, শনি গ্রহটিকে যদি আপনি একটি বিশাল বড় পানির টাবে রাখতে পারতেন, তাহলে এটি পানির ওপরে ভাসতো। এর কারন হচ্ছে, শনি গ্রহটি তেমন কোন ভারী ম্যাটেরিয়াল দ্বারা তৈরি নয়। এই প্ল্যানেটটি মুলত গ্যাসীয় পদার্থ দিয়েই তৈরি। তাই এটিকে বিশাল বড় কোন পানির টাবে প্লেস করা সম্ভব হলে এটি পানিতে নিজের ওজনের তুলনায় বেশি পানি অপসারিত করতে পারবে এবং বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী এটি পানিতে ভেসে থাকবে।
জানলে অবাক হবেন যে, আমাদের এই সম্পূর্ণ ইউনিভার্সের প্রায় মাত্র ৫ শতাংশ সাধারন ম্যাটার, অর্থাৎ যে ম্যাটার সাধারনত আমরা সবাই চিনি, সেই ম্যাটারের তৈরি। এছাড়াও আমাদের ইউনিভার্সের আরও ২৬ শতাংশ ডার্ক ম্যাটারের তৈরি এবং আরও ৬৯ শতাংশ তৈরি ডার্ক এনার্জির সাহায্যে। ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি হচ্ছে দুটি টার্ম যেগুলো মহাকাশচারীরা ব্যবহার করেন সেইসকল ম্যাটার এবং এনার্জি ব্যাখ্যা করার জন্য যেগুলোকে তারা আইডেন্টিফাই করতে পারেনা। মহাকাশচারীদের মতে তারা এসব ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জিকে কাছ থেকে পরীক্ষা করে দেখতে পারেনি, তবে তারা এগুলোর অস্তিত্ব অনুভব করতে পেরেছে।
আপনি যদি স্পেসে দুটি মেটালের খণ্ড একসাথে রাখেন এবং সেই দুইটি একে অন্যকে স্পর্শ করে, তাহলে সেইদুটি একসাথে স্টিক হয়ে থাকবে। এর কারন হচ্ছে, স্পেস ভ্যাকিউম চেম্বারের মতো কাজ করে। এই পদ্ধতিটিকে বলা হয় কোল্ড ওয়েল্ডিং। আমাদের পৃথিবীতে অক্সিজেন আছে বলে এমনটা কখনোই সম্ভব হয়না। আমাদের পৃথিবীতে দুটি মেটাল একসাথে জোড়া দেওয়ার জন্য ওয়েল্ডিং ম্যাশিনের দরকার হয় যেগুলো ম্যানুফ্যাকচারিং কাজের সময় ব্যবহার করা হয়। তবে এই মেটাল একসাথে জোড়া লেগে থাকার কারনে মহাকাশচারীদের কোন সমস্যা হয়না। কারন, তাদের স্পেসসুট এবং অন্যান্য ইন্সট্রুমেন্টে অক্সিজেনের লেয়ার থাকে। তাই সেগুলো একসাথে লেগে যায়না।
প্লুটো কোন গ্রহ কিনা এবং গ্রহ না হলে ঠিক কি কারনে এটিকে গ্রহ বলা যাবেনা এই নিয়ে পূর্বের বছরগুলোতে স্পেস রিসার্চার কমিউনিটিগুলোর মধ্যে অনেক আর্গুমেন্ট হয়েছে। অধিকাংশই দাবী করেছে যে, প্লুটোকে তার সাইজের কারনে গ্রহ বলা যায়না। আবার অনেকে বলেছে এটিকে গ্রহ বলা যায়। তবে অবশেষে প্লুটো নিয়ে এই আর্গুমেন্ট শেষ হয়েছে এবং সবশেষে এই সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে যে, প্লুটো কোন প্ল্যানেট নয়, বরং এটি একটি ডর্ফ প্ল্যানেট (Dwarf Planet)। ডর্ফ প্ল্যানেট সেগুলোকেই বলা হয় যেগুলো প্ল্যানেটের মতো বিহেভ করে তবে কিছু ফিচার কম থাকার কারনে সেটিকে পরিপূর্ণ প্ল্যানেটের ক্যাটাগরিতে রাখা যায়না।
আপনি যদি অ্যাপোলো মিশন অর্থাৎ মানুষের চন্দ্রভ্রমনের মিশনটির ছবি দেখে থাকেন, তাহলে আপনি চাঁদের মাটিতে আর্মস্ট্রং, অ্যাল্ড্রিন এবং কলিনস এর পায়ের ছাপগুলোও দেখেছেন। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই পায়ের ছাপগুলো কখনোই মুছে যাবেনা চাঁদের মাটি থেকে। আমরা সবাই জানি চাঁদের কোন বায়ুমণ্ডল নেই বা সহজ কথায় বললে চাঁদে কোন বাতাসের অস্তিত্বই নেই। অর্থাৎ, চাঁদে এসব পায়ের ছাপ মুছে ফেলার মতো কোন বাতাস বা কোন পানি কিছুই নেই। অ্যাপোলো মিশনে চাঁদে যেসব পায়ের ছাপ পড়েছিল, সেগুলো সেখানে ১০ থেকে ১০০ মিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে অবিকৃত অবস্থায় থাকবে। ১০০ মিলিয়ন বছরের পরে কিছু কারনে সেগুলো মুছে যেতে পারে, তবে আমাদের বর্তমান প্রজন্মের লাইফস্প্যান হিসাব করলে সেটাকে সারাজীবনই বলা যায়।
টাইটান হচ্ছে শনি গ্রহের সবথেকে বড় উপগ্রহ। এই উপগ্রহের মাটিতে অনেকসময় মিথেন গ্যাস তরল হয়ে বৃষ্টির মত পড়ে। এর কারন হচ্ছে, টাইটানের সার্ফেসের তাপমাত্রা অনেক কম। এর ফলে যখন মিথেন গ্যাস টাইটানের সার্ফেসের কাছাকাছি চলে আসে, তখন গ্যাসটি এই ঠাণ্ডায় গ্যাসীয় থেকে তরল পদার্থে রুপান্তরিত হয় এবং আমাদের পৃথিবীতে যেমন বৃষ্টি হয়, ঠিক তেমনি বৃষ্টির মত ঝরে পড়ে।
আমরা প্রায় সবাই ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে কম-বেশি জানি। তবে আমরা অনেকেই যা জানি না তা হচ্ছে, আমাদের পৃথিবীর সবথেকে কাছে যে ব্ল্যাক হোলটি আছে, সেটি আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় মাত্র ১৬০০ আলোকবর্ষ দূরে। আলো ১ বছর পরিমান সময়ে যতটা দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে তাকে ১ আলোকবর্ষ বলা হয়। এমন ১৬০০ আলোকবর্ষ দুরেই আছে আমাদের সবথেকে কাছের ব্ল্যাক হোল। এটি শুনতে অনেক অনেক দূর মনে হলেও, আমাদের ইউনিভার্সের তুলনায় এই দূরত্ব আমাদের পৃথিবী থেকে অবিশ্বাস্যরকম কাছে। কারন, মহাবিশ্বের কোন শেষ নেই।
আমি মো শিমুল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।