২০১৭ সালের মার্চ মাস থেকেই গ্রাফিক্স কার্ডের দাম উপরে উঠতে উঠতে এখন একেবারে মঙ্গল গ্রহে চলে যাবার পথে। এমনকি মার্কেট প্রাইস ইউরেনাস পার হয়ে গেলেও আমরা আর অবাক হব না। কিন্তু কেন চলছে এই হাহাকার? আর এর থেকে মুক্তি পাবার উপায়ই বা কি? আজ এইসব নিয়ে কিছুটা ক্লেরিফাই করার চেস্টা করব এই আর্টিকেলে।
শুরুতেই সবার জানা সবচেয়ে কমন এবং আলোচিত কারণ! তা হল ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং। ক্রিপ্টোকারেন্সি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। ইথিরিয়াম, লাইটকয়েন, ডোজকয়েন, টেদার, ওমনি ইত্যাদি।
এই বিষয়ে আমাদের করা ভিডিওটি দখতে পাবেন এই লিংকে।
তবে এদের মধ্যে একেবারে সবচেয়ে পুরানো এবং মোস্ট প্রফিটেবল হচ্ছে বিটকয়েন। ভয়েস রেকর্ডিঙের সময় এক বিটকয়েনের দাম ছিল প্রায় ১১ হাজার ৫০০ ডলার, তবে এর দাম প্রতি সেকেন্ডেই চেঞ্জ হচ্ছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং নিয়ে কথা বলে ভিডিও দীর্ঘায়িত করব না। ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে যা কিছু জানতে চান সব জানতে পারবেন আমাদের আপকামিং আর্টিকেলে।
তবে সোজা কথায় বলা যায় যে কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইন করার জন্য অত্যাবশ্যকীয় কম্পোনেন্ট হচ্ছে গ্রাফিক্স কার্ড। বিটকয়েন মাইন করার জন্য মাইনাররা বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করে দেখতে পায় এ এম ডির RX সিরিজের জিপিউ সবচেয়ে বেশি এফিশিয়েন্টলি বিটকয়েন মাইন করতে পারে। তাই এক এক জন প্রাইভেট মাইনার একসাথে ১৫/২০/২৫ টি করে গ্রাফিক্স কার্ড কিনতে থাকে। এমনকি চায়না, রাশিয়া, ইউ এস এ সহ বেশ কয়েকটি দেশে বিটকয়েন মাইনিং ফার্ম পর্যন্ত দেখা গেছে যেখানে এক সাথে ৩/৪ হাজার টি এ এম ডির RX সিরিজের জিপিউ ব্যবহার করা হচ্ছে।
এতে করে এ এম ডি লাভবান হলেও গেমারদের জন্য বাজারে একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি হয় যা এখনো চলছে। আর ডিমান্ড বেশি কিন্তু সাপ্লাই কম থাকার কারণে ভেন্ডররাও সুযোগ বুঝে এবং কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি প্রেক্ষিতে গ্রাফিক্স কার্ডের দাম বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং আপনি যদি এ এম ডির গ্রাফিক্স কার্ড কিনতে চান কিন্তু বাজারে একদম চড়া দাম দেখছেন অথবা স্টকেই পাচ্ছেন না তার জন্য ইন্টারন্যাশনাল বিটকয়েন মাইনারদের দায়ি করতে পারেন।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসবে বিটকয়েন মাইনিং এর জন্য হয়ত এ এম ডির গ্রাফিক্স কার্ডের দাম বাড়তে পারে কিন্তু এনভিডিয়ার গ্রাফিক্স কার্ডের দাম বাড়ল কেন? এক্ষেত্রে ২০% দোষ হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনারদের কারণ তারা বাজারে এ এম ডির জিপিইউ না পেয়ে এনভিডিয়ার যা এভেলেবল আছে সব কিনে নিচ্ছে। তাহলে বাকি ৮০% দোষ কাদের?
বাকি ৮০% দোষ হচ্ছে চাইনিজ গেমার এবং প্লেয়ারস আননোউন ব্যাটলগ্রাউন্ড গেমটির।
আপনারা যারা জানেন না পিইউবিজি হচ্ছে একটি লাস্ট ম্যান স্ট্যান্ডিং থার্ড পারসন শুটার ব্যাটল রয়্যাল গেম যেখানে একটি সার্ভারে একসাথে ১০০ জন প্লেয়ার একে অপরকে মেরে ফেলার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকে। খালি হাতে ল্যান্ড করার পর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও আরমর পাওয়া যায় এবং তা নিয়েই টিকে থাকতে হয়। শেষ পর্যন্ত যে বেচে থাকে সে হয় চ্যাম্পিয়ন। এছাড়াও গেমটি আপনি সর্বচ্চো ৩ জন বন্ধু নিয়ে একসাথে খেলতে পারবেন স্কোয়াড করে।
বর্তমান সময়ে পিইউবিজি হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় গেম এবং স্টিমচার্ট অনুযায়ী প্রতি ঘন্টায় গড়ে সাড়ে আট লাখ প্লেয়ার এই গেম খেলতে থাকে।
পিইউবিজির অনালাইন প্লেয়ার বেইজের প্রায় ৪২% হচ্ছে চায়নার। অর্থাৎ প্রতি মিলিয়ন অনলাইন গেমারদের মধ্যে ৪ লাখ ২০ হাজারই হচ্ছে চাইনিজ গেমার। এছাড়া গেমটির প্রায় সাড়ে ৩২ মিলিয়ন সেলসের মধ্যে ৫৩% সেলস হচ্ছে চাইনিজ গেমারদের কাছেই। আর এই গেমটির এ এম ডির গ্রাফিক্স কার্ডের অপটিমাইজেশন অনেকটাই খারাপ।
বিভিন্ন বেঞ্চমারকের মধ্য দিয়ে দেখা গেছে পিইউবিজি গেমটি এনভিডিয়ার হার্ডওয়ারেই তুলনামূলকভাবে বেশি ভাল চলে। এছাড়াও সারা বিশ্বের স্টিম ইউজারদের ৫৭.৪% ইউজার হচ্ছে কেবল মাত্র চায়নায়। আর কম্পিউটার ম্যানুফ্রেকচারারদের মেইন মার্কেটও চায়নায়। ইন্টারন্যাশনাল শিপিঙ্গের আগে সকল ব্র্যান্ড চায়নায় তাদের প্রোডাক্ট এলোকেট করে থাকে। আর পিইউবিজির গেমটির কারণে চায়নায় এনভিডিয়ার গ্রাফিক্স কার্ডের এতটাই ডিমান্ড বেড়ে গিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটের জন্য খুব সামান্য পরিমাণ জিপিউ এলোকেট করতে পারছে ব্র্যান্ড। যার কারণে সকল জিপিউর ইন্টারন্যাশনাল দাম হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
এছাড়াও গত বছর খবর পাওয়া যায় GDDR5 মেমোরি মডিউলের দাম ৫ থেকে ৭% বৃদ্ধি পাওয়ায় জিপিউর দামও ১০/১৫% বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া মেমোরি মডিউলের সাপ্লাইয়ের শরটেজ থাকার কারণে জিপিউ মেনুফ্রেকচার করার খরচও অনেকাংশে বেড়ে যায়। তবে এই ক্ষেত্রে এটির ভূমিকা ইগ্নোরেবল।
তাহলে এক্ষেত্রে নব্য বা আপগ্রেড ইচ্ছুক পিসি গেমারদের করণীয় কি? সকল গেমারদের প্রতি আমাদের একটাই পরামর্শ। ধৈর্য ধরে রাখুন। ধৈর্যই পারবে আপনাদের পকেট সেফ রাখতে। কারণ আগামি ২ মাসের মধ্যেই এনভিডিয়া তাদের নতুন জেনারেশনের গেমিং জিপিউ 'এম্পিয়ার' আনতে যাচ্ছে বাজারে। এই সিরিজের জিপিউগুলো তৈরি করা হবে দ্রুততর GDDR6 মেমোরি মডিউল দিয়ে যাতে আপনি গত জেনারেশনের গ্রাফিক্স কার্ড হতে তুলনামূলকভাবে ভালই পারফর্মেন্স পাবেন। আর এদের দাম অন্তত ইউরেনাসের পথে থাকা বাজারের দামের মত হবে না।
এছাড়াও এ এম ডির পক্ষ থেকে নতুন জেনারেশনের গ্রাফিক্স কার্ড বের করার গুজব রয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে আপাতত এ এম ডির রাইজেন ভেগা এপিইউ গুলো নেই। নয়তো রেকমেন্ড করতাম আপনারা আপাতত সেই এপিইউগুলো কিনে তার ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্সে গেম খেলুন কারণ তাতে একটি I5 7400 + এনভিডিয়ার GT 1030 এর কম্বিনেশনের থেকে ভাল গেমিং পারফর্মেন্স পাওয়া যায়।
তবে বাংলাদেশের বাজারে আসলে যারা নতুন কম্পিউটার কিনতে চাচ্ছেন অবশ্যই বলব এ এম ডির রাইজেন এপিইউ নেবার জন্য। লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে এখানে।
অতঃপর আপনাদের মত আমিও দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আজ চলে যাচ্ছি। আমাদের ইনফরমেশনে যদি কোন ভুল থেকে থাকে এবং আমাদের নিয়ে আপনার সকল অভিযোগ, পরামর্শ ও মতামত টিউমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আপনারা সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন আর সঙ্গে থাকুন পিসিবি বিডির সাথেই।
আমি পিসি বিল্ডার বাংলাদেশ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।