“হেই সিরি”, “ওকে গুগল”, “হ্যালো করটানা”, “অ্যালেক্সা, হেল্প”, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের কল্যাণে এই কমান্ডগুলো এখন পৃথিবীজুড়ে বেশ জনপ্রিয়। ন্যাচারাল লার্নিং প্রসেস নিয়ে প্রযুক্তিবিদদের অক্লান্ত গবেষণার ফলে ক্রমাগত বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আধুনিক ডিভাইসগুলোর অন্যতম আকর্ষণীয় অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট। ক্লাউড ব্যবহার করে বিশাল বিশাল সব ডাটাবেজ থেকে তথ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বর্তমান সময়ে যা অন্য এক মাত্রা লাভ করেছে।
শুরুটা হয়েছিল অ্যাপলের হাত ধরে। ২০১১ সালে আইফোন ৪-এস এ প্রথমবার ডিজিটাল ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট ‘সিরি’ রিলিজ হয়। সিরির সাফল্যে পরবর্তীতে অন্যান্য টেক জায়ান্ট গুগল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, স্যামসাং তাদের নিজস্ব ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট রিলিজ করে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঁচটি ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট হল অ্যাপলের সিরি, গুগলের গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, মাইক্রোসফটের করটানা, অ্যামাজনের অ্যালেক্সা এবং স্যামসাঙের বিক্সবি।
সিরির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গুগল ২০১২ সালে নিয়ে আসে গুগল নাউ, পরবর্তীতে ২০১৬ সালে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট রিলিজ হয়। অন্যদিকে মাইক্রোসফটের ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ২০১৪ সালে আবির্ভূত হয় করটানা। একই বছর অ্যালেক্সা নিয়ে হাজির হয় অ্যামাজন। এছাড়া ২০১৭ সালে স্যামসাং বিক্সবি রিলিজ করে।
মূলত সব ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজের পরিধি প্রায় কাছাকাছি। সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে তথ্য অনুসন্ধান, অডিও ও ভিডিও প্লে করা, রিমাইন্ডার সেভ করা, ফোনকল করা, মেসেজ ও মেইল পড়া এবং পাঠানো, কোনো অ্যাপ বা সফটওয়্যার ওপেন, কন্ট্রোল কিংবা ডাউনলোড করা ইত্যাদি কাজগুলো বর্তমান প্রজন্মের ডিজিটাল ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টগুলো কেবল মানুষের ভয়েস কমান্ড অনুসরণ করেই সহজে করতে পারে।
তবে নিজস্ব প্লাটফর্মের বাইরে স্বাভাবিকভাবেই তাদের কার্যকারিতা কমে যায়। যেমনঃ সিরি বা করটানা ইউটিউব বা জিমেইল অপারেট করতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ নয়, তেমনি অ্যালেক্সা বা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের সেরা ফলাফল পেতে তাদেরকে অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যামাজন ফায়ার ডিভাইসে ব্যবহার করতে হয়।
থার্ড পার্টি অ্যাপ অ্যাক্সেসের ক্ষেত্রে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট সবচেয়ে সুবিধাজনক। এছাড়া অ্যাপলের ন্যাটিভ মনোভাবের পরিপন্থী হলেও এক্ষেত্রে অন্যান্য ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের তুলনায় সিরি বেশ এগিয়ে।
ক্রস প্লাটফর্মে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের বিচরণ তাকে অন্যান্য ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে রাখলেও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অ্যাপস নিয়ন্ত্রণে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের ক্ষমতা সীমিত। এক্ষেত্রে অ্যাপলে সিরি এবং উইন্ডোজে করটানা ন্যাটিভ ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে থাকায় অপারেটিং সিস্টেমের ওপর তাদের অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকে।
আবার ব্রাউজার ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং বিক্সবি বেশি কার্যকরী। কারণ অন্যান্য ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট বিং ব্যবহার করলেও তথ্য অনুসন্ধানে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও বিক্সবি গুগল ব্যবহার করে থাকে। এদিক থেকে সিরির আরেকটি অসুবিধা হল এটি টাইপিং সার্চ সমর্থন করে না।
ভয়েস কমান্ড অনুসরণের ক্ষেত্রেও গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট বেশ প্রশংসনীয়। একই ধরণের ভয়েস কমান্ড ভিন্ন ভিন্ন বাচনভঙ্গি কিংবা পরিস্থিতিতে যে আলাদা অর্থ প্রকাশ করে তা নিরুপণে অন্যান্য ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের চেয়ে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের সফলতার হার বেশি। এক্ষেত্রে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের পরই করটানার অবস্থান।
ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট কাস্টমাইজেশন করতে অ্যালেক্সার জুড়ি নেই। অন্যান্য টেক জায়ান্ট তাদের ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের সব ফিচার প্রকাশ না করলেও অ্যামাজন অ্যালেক্সার জন্য আলাদা আলাদা স্কিল ফিচার ব্যবহারের সুযোগ দেয় যা অ্যালেক্সাকে অনেক ইউজার ফ্রেন্ডলি করে তুলে।
আইওটি, হোম ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস কিংবা রিমোট কন্ট্রোলিংয়ের দিক দিয়েও আলেক্সার পারদর্শিতা অনেক বেশি। অ্যামাজনের ই-কমার্স ব্যবসা প্রসারেও এর ভুমিকা দিন দিন বাড়ছে। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টও এক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে। তবে সিরি এবং করটানার আইওটি বিষয়ক কার্যক্রম বেশ সীমিত।
বিভিন্ন ধরণের ডিভাইসে কাজ করতে পারার সক্ষমতার দিক থেকে করটানার নাম উল্লেখযোগ্য। করটানা একাধারে উইন্ডোজ পিসি, উইন্ডোজ ফোন এবং এক্স বক্স-১ এ সমর্থন করে। করটানা অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএসের জন্য থার্ড পার্টি অ্যাপ হিসেবেও পাওয়া যায়। এছাড়া সিরি এবং গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের মাল্টি ডিভাইস সাপোর্ট থাকলেও অ্যালেক্সা ও বিক্সবি সাপোর্টেড ডিভাইসের সংখ্যা তুলনামূলক কম।
সবচেয়ে পুরনো ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট হওয়ার পাশাপাশি ন্যাটিভ ডিভাইস সাপোর্টের ক্ষেত্রেও সিরি বেশ স্থিতিশীল ও টেকসই। প্রথম প্রজন্মের আইফোন থেকে শুরু করে হালের আইফোন এক্স, সবাই সিরির ফিচারগুলো সাপোর্ট করে।
অপেক্ষাকৃত নতুন হলেও ব্যবহারকারীর সাথে মিথষ্ক্রিয়ার দিক দিয়ে বিক্সবি বর্তমানে সিরি কিংবা করটানার মতই সমাদৃত হচ্ছে। হোম স্ক্রিন অ্যাক্তিভিটি এবং ভিশন বিক্সবিকে বাস্তবিক অর্থেই একটি সহকারি ভাবমূর্তি দেয়। তবে অন্যান্য ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট অপেক্ষা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট অনেকটা যান্ত্রিক।
প্রত্যেক ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টেরই নিজস্ব কিছু বিশেষত্ব থাকলেও সব মিলিয়ে বর্তমানে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টকেই সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট বলা যায়। তবে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়ে টেক জায়ান্টদের বিশাল সব কার্যক্রম এটিকে আরও কতখানি উন্নত ও কর্মোপযোগী করে তুলতে পারে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
আমি আসিফ রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 7 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি আসিফ রহমান। ভালবাসি প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে ও জানাতে। তাই সবসময়ই প্রযুক্তির সাথে সখ্যতা রাখতে চাই।