বর্তমান সময়ে এটি কোন লুকানোর মত বিষয় নয় যে আমরা প্রতিনিয়ত টেকনোলজির উপরে আরো বেশি করে আসক্ত এবং নিরভরশীল হয়ে পড়ছি। প্রতিনিয়তই আমরা আরো নতুন নতুন টেকনোলজির দেখা পাচ্ছি এবং ব্যবহার করছি। আমরা এখন যেসব টেকনোলোজির সাথে ভালভাবে পরিচিত এবং প্রায় প্রত্যেকদিনই ব্যবহার করছি, সেসব টেকনোলজি এখন থেকে আর ২০-২৫ বছর আগেও প্রায় একটি অসম্ভব কল্পনা বা একটি সপ্নের মত ছিল। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিও আরো বেশি উন্নত হচ্ছে এবং হতে থাকবে।
তাই, এখন আমরা যেসব প্রযুক্তির কথা কল্পনাও পারিনা, সেসব প্রযুক্তি যে আগামী দিনে দেখা যাবে না এবং সবাই ব্যবহার করবে না এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। আজকের টিউনে দেখা যাক, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের টেকনোলজি ঠিক কতটা উন্নতি করতে পারে বা আমরা আর কি কি নতুন প্রযুক্তি দেখতে পারি আগামী ১০-১২ বছরের মধ্যে।
বিঃদ্রঃ এখানে লেখা সব ধরনের প্রযুক্তি বা সব ধরনের ডিভাইসের কথা শুধুমাত্র একটি অনুমান। এই প্রযুক্তিগুলো যে ২০৩০ সালের মধ্যেই আসবে এবং আদৌ কোনদিন আসবে কিনা এমন কোন নিশ্চয়তা নেই।
রোবট নামটির সাথে আমরা সবাই এখনই বেশ ভালভাবেই পরিচিত। কারন, রোবটের ব্যবহার করতে আমাদের ২০৩০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবেনা এবং হয়নি। আমরা এখনই আমাদের বিভিন্ন কাজে রোবট ব্যবহার করছি। রোবট আমাদের পৃথিবীতে এখনই এতোটাই জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে যে, এখন আমরা অনেক ওয়েবসাইট ভিজিট করার আগে আমাদের প্রমান করতে হয় যে " আমি রোবট নই "। এখন আমরা বিভিন্ন কাজে যেসব রোবট ব্যবহার করি সেসব খুবই স্বল্প ক্ষমতার রোবট। ভবিষ্যতে আমরা যেসব রোবট ব্যবহার করব সেসব রোবট হতে পারে বর্তমানে ব্যবহার করা রোবটের থেকে অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। এখনো একটি পরিপূর্ণ মানুষের অনুরুপ রোবট একটি কল্পনার মত।
এখন আমরা যেসব রোবট ব্যবহার করি সেসব রোবট মানুষের থেকে বেশি কাজ করতে পারলেও কোনভাবেই একটি মানুষের অনুরুপ নয়। কল-কারখানায় বিভিন্ন ভারী কাজ করতে বা কোন প্রোডাক্ট তৈরি করতে বিভিন্ন প্রকারের শক্তিশালী রোবট ব্যবহার করা হয় কিন্তু তা কোনভাবেই মানুষের মত নয়।
কিন্তু ২০৩০ সালের মধ্যে হয়ত আমরা এমন ধরনের রোবট দেখতে পারি যেগুলো আরো অনেক বেশি কাজ আরো কম সময়ের মধ্যে করতে পারবে এবং আরো বেশি শক্তিশালী হবে। এবং এসব রোবটের মধ্যে থাকতে পারে মানুষের মত চালচলন, ব্যবহার এবং মানুষের মত না হলেও মানুষের কাছাকাছি বুদ্ধিমত্তা এবং নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিজে কাজ করার ক্ষমতা যেটি একটি উন্নত রোবট এর জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করার মাধ্যমে এসব রোবট অনেকটাই মানুষের অনুরুপ হতে পারবে।
চালকবিহীন গাড়ির পরিকল্পনাটি আজকের নয়। এই পরিকল্পনাটি অনেক আগে থেকেই আছে মানুষের মনে এবং পরিকল্পনাটির বাস্তবায়নও হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে চালকবিহীন গাড়ি পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। যদিও একেবারেই নেই এমনটা নয়। বর্তমানেও পৃথিবীতে অনেক চালকবিহীন গাড়ি রয়েছে। চালকবিহীন গাড়ির পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হয়েছে Auto Pilot সেন্সরের মাধ্যমে। বর্তমানে Tesla একটি চালকবিহীন গাড়ির একটি ভাল উদাহরণ।
কিন্তু সত্যি কথা বলতে, বর্তমানে যেসব গাড়িতে এই ধরনের বেবস্থা রয়েছে, তা একেবারে নিখুঁত নয় এবং চালকবিহীন গাড়ি একেবারেই সহজলভ্য নয়। কিন্তু আশা করা যায় আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই চালকবিহীন গাড়ি আরো বেশি নিখুঁত ও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে যাবে এবং আরো বেশি সহজলভ্যও হবে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে সাধারন গাড়ির থেকে চালকবিহীন গাড়িই রাস্তায় বেশি দেখা যাবে। এর ফলে মানুষের চলচল এবং জীবন-যাপন হবে আরো অনেক সহজ এবং নিয়ম-মাফিক। এছাড়া Uber এবং Olacabs এর মত অনলাইন ট্যাক্সি সার্ভিসগুলো আরও বিস্তর হবে এবং মানুষ এগুলোর ওপরে আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। ২০৩০ সালের আগেই মানুষ প্রাইভেট কারের থেকে কার শেয়ারিং এর ওপরে বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে এবং অনলাইন কার শেয়ারিং সার্ভিস আরো বৃদ্ধি পাবে।
আমরা এখন যে ধরনের স্মার্টফোন চিনি বা বর্তমানে ব্যবহার করছি, সেসব স্মার্টফোন এখনই যথেষ্ট উন্নত। আজ থেকে আর কিছু বছর আগেও এই ধরনের স্মার্টফোন বা এই ধরনের ফিচারস কোন ফোনে থাকবে এটা ছিল একটি কল্পনার মত। প্রত্যেক বছরই কিছু নতুন নতুন ইউনিক ফিচারস যুক্ত হয় স্মার্টফোনে। যেমন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন পাওয়ারফুল প্রোসেসর, সেন্সর, ডিসপ্লে ইত্যাদি। আশা করা যায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে যে জিনিসটির সবথেকে বেশি উন্নতি হবে সেটি হচ্ছে আমাদের হাতের স্মার্টফোন।
গত সপ্তাহেই RED নামক একটি কোম্পানি একটি নতুন স্মার্টফোন রিলিজ করে যেটি তদের মতে পৃথিবীর প্রথম সম্পূর্ণ হোলোগ্রাফিক স্মার্টফোন। এই ধরনের ফিচার আর ৫ বছর আগেও প্রায় একটি স্বপ্নের মত ছিল। এভাবেই প্রত্যেক বছরই স্মার্টফোনের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে এবং হতে থাকবে। হয়ত আগামী ১০ বছর পরে এই ধরনের উচ্চ প্রযুক্তির হোলোগ্রাফিক স্মার্টফোন আরো সহজলভ্য হবে এবং এই ধরনের উচ্চপ্রযুক্তির স্মার্টফোনের ব্যবহার আরো বাড়বে। এছাড়া আগামী ১০-১২ বছরের মধ্যে আরো অনেক নতুন নতুন ফিচারস এর স্মার্টফোন দেখা যাবে।
বর্তমানে আমরা যতটা দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করি, তাও আজ থেকে ১০ বছর আগেও প্রায় কল্পনাতীত ছিল। প্রথমে 1G, এরপর 2G, এরপর 3G এবং বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশে 4G ইন্টারনেটও চালু হয়ে গিয়েছে। ইন্টারনেট এর সূচনার পড়ে থেকে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর ইন্টারনেট ব্যাবস্থার কল্পনাতীত পরিবর্তন এবং উন্নয়ন হয়েছে। অনেক গবেষকরা মনে করেন যে, আগামী ২০১৪ সালের মধ্যে ইন্টারনেট মানুষের মৌলিক চাহিদা এবং মৌলিক অধিকার এর মত হয়ে যাবে। এছাড়া আগামী কিছু বছরের মধ্যে ইন্টারনেট হবে আরো অনেক বেশি দ্রুতগতিসম্পন্ন। ইতোমধ্যেই কয়েকটি দেশে 5G ইন্টারনেট নিয়ে পরিকল্পনা চলছে। আশা করা যায় আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে 5G ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে যা হবে অস্বাভাবিক রকমের দ্রুতগতির।
বর্তমানে মেডিক্যাল বা চিকিৎসাক্ষেত্রে যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তাও খুব কম স্মার্ট নয়। কিন্তু চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা এখনও অনেকটাই পিছিয়ে আছি অন্যান্য ক্ষেত্রের থেকে। কিন্তু ২০২৪ সালের মধ্যে চিকিৎসাক্ষেত্রেও দেখা যাবে আরো বিভিন্ন ধরনের উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। থ্রিডি প্রিন্টিং এবং এই ধরনের আরো অনেক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে মানুষের হার্ট এর সার্জারি এবং অরগ্যান ট্রান্সপ্লান্টের কাজে।
সেন্সর জিনিসটা আমরা সবাই কমবেশি চিনি। প্রায় বর্তমানে প্রত্যেকটি স্মার্ট ডিভাইসেই বিভিন্ন ধরনের সেন্সর থাকে। যেমন, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেটে লাইট সেন্সর, গ্র্যাভিটি সেন্সর ইত্যাদি, ফিটনেস ব্যান্ড বা স্মার্টওয়াচে কম্পাস সেন্সর এবং হার্টরেট সেন্সর ইত্যাদি। সেন্সর ছাড়া স্মার্ট ডিভাইসগুলো প্রায় অচল। বর্তমানে পৃথিবীতে যেসকল সেন্সর আছে সেগুলো যথেষ্ট নয়। আমাদের জীবনকে আরো সহজ করতে হলে এবং প্রযুক্তিকে আরো উন্নত করতে হলে আমাদের দরকার আরো নতুন নতুন সেন্সর যাতে আমরা সব ধরনের কাজ আরো সহজ এবং স্বয়ংক্রিয় ভাবে করতে পারি।
গবেষকদের মতে, প্রায় ১ বিলিয়ন নতুন নতুন সেন্সর তৈরি হতে পারে এবং কাজ করা শুরু করতে পারে আগামী ১০ বছরের মধ্যে। এসব সেন্সর থাকতে পারে আমাদের স্মার্টফোন থেকে শুরু করে আমাদের সব ধরনের ডিভাইস এবং এমনকি আমাদের পরার জামা বা প্যান্ট ইত্যাদিতেও। এমনকি সুদূর ভবিষ্যতে এমন সেন্সরও তৈরি হতে পারে যা আমাদের মস্তিস্ক থেকে তথ্য নিয়ে স্বয়ংক্রিয় ভাবে আমাদের ডিভাইসগুলোকে পরিচালনা করতে পারে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা AI নামটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। এটি হচ্ছে কম্পিউটারের ব্রেইন যা অনেকটা মানুষের মস্তিষ্কের মতই কাজ করে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমেই কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইস স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে। ডিভাইসটি নিজে থেকেই পূর্বের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিজে থেকে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে অনেকটাই মানুষের মস্তিষ্কের মত। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর এই বিষয়টি লক্ষ্য করা যায় গুগল এসিসট্যান্ট বা সিরি বা করটানার মত পারসোনাল এসিসট্যান্টগুলোর মধ্যে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স হবে আরো বেশি বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এবং আরো বেশি শক্তিশালী। গবেষকরা মনে করেন, ২০২৬ সালের মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির কর্পোরেট বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের মধ্যে দেখা যাবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সি বা AI।
তো এই ছিল আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের টেকনোলজির কি কি উন্নয়ন ঘটতে পারে তার একটি অনুমান। আজকের মত টিউনটি এখানেই শেষ করছি। আশা করি টিউনটি আপনাদের ভাল লেগেছে। টিউন সম্পর্কে কোন ধরনের প্রশ্ন বা কোন মতামত থাকলে অবশ্যই টিউনমেন্ট করে জানাবেন।ভাল থাকবেন।
You can contact me on : Facebook
আমি সিয়াম একান্ত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 40 টি টিউন ও 82 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমার নাম সিয়াম রউফ একান্ত। অনেকে সিয়াম নামে চেনে আবার অনেক একান্ত নামে। যাইহোক, পড়াশুনা একেবারেই ভাল লাগেনা আমার। ভাল লাগার মধ্যে দুইটা জিনিস , ফটোগ্রাফি আর প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির প্রতি ভাললাগা থেকেই টেকটিউন্স চেনা এবং টেকটিউন্সে আইডি খোলা। দেখা যাক কতদূর কি করা যায়......
nice post