এই পোস্ট পড়বার পূর্বে লার্জ হেড্রন কোলাইডার নিয়ে আগের লেখা পোস্ট দুটি পড়াটাকে সহায়ক হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে!
একবৃদ্ধের গল্প দিয়ে শুরু করি। খুব ভালো ফিজিক্স পারতেন। কিন্তু বৃদ্ধকালে মৃত্যুকে বেশ ভয় পেতেন, কারন মৃত্যু এমনই এক সত্য যেটাকে আমরা প্রতিদিন ভুলবার চেস্টা করি হাসি মুখে। সে ভাবলেন এমন কি রাস্তা আছে যার মাধ্যমে মৃত্যুকে সময়ের ফেরে ফেলানো যায়। হয়তো পেরেছিলেনও এরকম কোনো ক্যালকুলেশন করতে কিন্তু মৃত্যুকে আটকাতে পারেনি। আবার সেসময় আইনস্টাইনের রিলিটিভিটির জয়জয়কার সর্বত্র। তার মৃত্যুর পর এক পদার্থবিদ তার ঘুণে ধরা দলিল দস্তাবেজ ঘাটতে শুরু করেন, যেগুলো পান সেগুলো ছাপিয়ে দেন জার্নালে একটু দলাই মলাইয়ের পর। প্রচন্ড সমালোচনার মুখে পড়লেন কারন তার তত্ব অনুসারে (হাবল এক্সপানশনকে ইগনোর করে এই তত্ব দাড় করানো হয়েছিলো), এই মহাবিশ্ব ঘূর্নায়মান আর ফলে এর মৌলিক কেন্দ্রমুখী বলসমূহ বাউন্ডারী কন্ডিশন অনুসরন করতে হবে। (যদিও ঘটনাটা অবিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া) অনেকেই তখন প্রত্যাখ্যান করলেও সে এটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন আইনস্টাইনের রিলেটিভিটিকেও বাইপাস করা যায়। লোকটার নাম ছিলো কার্ট গোডল আর তার এই সল্যুশনটার নাম ছিলো "গোডল সল্যুশন"! এখন অনেকেই বলছে LHCহয়তো সেরকম মহাবিশ্বের পরিবেশ দেখাতে চাচ্ছে।
আধুনিক যুগে মানব সভ্যতা তার ভাগ্য সম্পর্কে এমন কিছু ভাবছে হয়তো যেটা শন্কামূলক হতে পারে কি না জানি না তবে বর্তমান আলামত দেখে কাউকেই খুব একটা স্বস্তিতে মনে হচ্ছে না(জি8 সম্মেলন)। অবশ্য আমি নিজেও স্বস্তিতে নেই কারন লার্জ হেড্রন কোলাইডারের লেখাটা আমি এখনও শেষ করতে পারছি না আবার কখনো করতে পারবো কি না সেটাও নিজের কাছে রহস্যময় মনে হচ্ছে। তবে আজকে একটা পিলে চমকানো জিনিস লিখবো, কিন্তু এটা বুঝতে পারছি না আমার লেখাটা পড়ে কেউ বুঝতে পারবে কি না সেটা নিয়েও বেশ ডিপ্লোম্যাটিক সন্দেহ রয়েছে!
কিছু একটা জটিল জিনিস নিয়ে লিখবো বলে বেশ সময় নিলাম। কারন সবকিছু আবিস্কার বা ধারনার পিছনে অনেক সূক্ষ্ম চিন্তাভাবনা আর ক্যালকুলেশন নিহিত থাকে বলেই সবচেয়ে কঠিন জিনিসকেই মানুষ চ্যালেন্জ্ঞ হিসেবে নেয়। কেউ কখনো বসে থাকে না যখন দেখে অভীস্ঠ লক্ষ্যে পৌছানোর একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখা যায়। তখন যা বা যারা ওটা বিশ্বাস করে তারাই উঠে পড়ে লাগে। এডিসন যখন বলেছিলো একটা কাচের গোলকে আলোকে ধরে রাখা যাবে তখন তাকে সবাই পাগল ঠাউরেছিলো। আমার মনে হয় আসলেই সে পাগল ছিলো কারন সর্বোচ্চ ১২০০ আবিস্কারের প্যাটেন্ট নিয়ে সব সমালোচকের মুখে কুলুপ এটে দিয়ে সবার কাছে প্রমান করেছিলো সে পাগল নয়, আর একমাত্র পাগলই বলে,"আমি পাগল নই!"
পদার্থবিজ্ঞান একটা বেসিক ধারনার উপর প্রতিস্ঠিত: কার্যকারন। তার মানে জগতে যাই ঘটুক না কেন প্রতিটা কাজের জন্য একটা কারন থাকতেই হবে। তার মানে যুক্তিময় বিশ্ব। এটাই কার্যকারন বা কজালিটি। আমার আগের লেখা গুলো লার্জ হেড্রন কোলাইডার নিয়ে সংক্ষিপ্ত একটু ছোয়া দিয়েছি যেখানে মূলত কি হবে এবং কি জন্য করা হবে আর কেনই বা কিভাবে হবে সেটার সম্পর্কে সামান্য ধারনা দেয়া হয়েছে। তার মানে এখানে যেটা করা হবে অতিউচ্চমাত্রার চার্জ যুক্ত (টেরা ইলেক্ট্রনভোল্ট স্কেলের) প্রোট্রন-প্রোটনের সম্মুখ সংঘর্ষ ঘটানো হবে। তবে এখানে আশংকা করা যায় প্রতিটা সংঘর্ষে ওয়ার্মহোল সৃস্টির সম্ভাবনা বেশ উজ্জল। তবে এসব ওয়ার্মহোলগুলো যখন সৃস্টি হবে এর সাথে ক্ষুদ্রতর স্হান কাল স্হানাংকের মধ্যে আবদ্ধ সময়সদৃশ্য বক্রতার সৃস্ট হবে যেটা উপরোক্ত কার্যকারন তত্বের বিরোধী হয়ে যায়।
আমার আলোচনার মূল বিষয় বস্তু এটাই হবে যে এগুলো কিভাবে এবং কেন?
এককালের মুরতাদ পরবর্তীর সোনার ছেলে কাদিয়ানী ধর্মাবলম্বী আব্দুস সালাম, স্টিভেন উইনসবার্গ আর শেলডন গ্লাসগো দুর্বল তড়িৎ বলের তত্বের কারনে ১৯৭৯ সালে নোবেল পান। এই মৌলিক দুর্বল তড়িৎ শক্তির স্কেল ছিল mEW = 103GeV লেভেলের এবং আরেকটা ক্ষুদ্রতর প্লান্কের স্কেল হচ্ছে MPl = GN-1/2 ~ 1018GeV লেভেলে যেখানে অভিকর্ষ বল গজ ইন্টারেকশনের মতোই শক্তিশালী হয়ে যায়।
সেক্ষেত্রে Tevস্কেলের গ্রাভিটি মডেলে যদি স্পেস টাইম স্হানাংকের ৪র্থ মাত্রার কথা চিন্তা করি তাহলে এখানে একটা একীভূতকরনের সম্ভাবনা প্রবল ভাবে দেখা যাবে এই এ্যাক্সিলারেটরের নিউট্রিনো, কসমিক রে এর এক্সপেরিমেন্টে। এখন শুরু করি এটা নিয়েই ধানাই পানাই!
থিওরী অব রিলেটিভিটি বাপ আইনস্টাইন প্রথমদিকে প্রমানের চেস্টা করেছিলেন শোয়ার্জচাইল্ডের অনন্যতার (পরে যেটি ব্লাক হোলের স্বীকৃতি পায়) অস্তিত্ব সম্ভব না। ১৯৩৯ সালে তিনি এই আইডিয়াকে পুরোপুরিভাবে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ঐ সময়ে অপেহাইমার আর তার এক শিষ্য স্নাইডার (যিনি আসলে ঠেকায় পরে তার পিএইচডি পেপারে একটা সীলের জন্য পিছে পিছে ঘুরছিলেন) আইস্টাইনের থিওরী অব রিলেটিভিটি দিয়ে দেখিয়েছিলেন একটা প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভরসম্পন্ন মৃতবস্হার তারা ব্লাকহোলে রুপান্তর হতে পারে।শুরু হলো ব্লাক হোলের পদযাত্রা আর আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের এই ব্লাক হোলের ধারনা গুলোই এখন শুধু থিওরী অব রিলেটিভিটিই নয় আইনস্টাইনের অন্যান্য কাজের উপরই প্রতিষ্ঠিত। একেই বলে কপালের নাম গোপাল, আর বেচারা ক্ষণজন্মা শোয়ার্জচাইল্ডের এসব জিওম্যাট্রিক্যাল ক্যালকুলেশনের জন্য এতটুকু শ্রদ্ধা!
এখন ব্লাকহোল সম্পর্কে যে ধারনা গুলো বর্তমান সেগুলো নিয়ে বলি, আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরী অব রিলেটিভিটি অনুসারে বলা যায় একটা বস্তুকে যদি ভালোভাবে কম্প্রেস করা যায় (এখানে সাধারন ধারনার কম্প্রেসর বলা হয় নি, এ্যটামিক লেভেলের সাংঘর্ষিক কম্প্রেশন), এর মধ্যকার গ্রাভিটী শক্তিশালী হতে হতে এর স্হানিক পরিসরকে বক্র করে ফেলে যেখান থেকে কোনোকিছুই আর অবমুক্ত হতে পারে না। ঐ স্হানের পরিসীমাকে বলা যায় ব্লাকহোলের ইভেন্ট হরাইজন: যেখানে বস্তু পড়লে আর ফিরে আসতে পারে না।সাধারন ভাবে বলা যায় যে স্হানে কোনো লুকায়িত মাত্রা নেই অথবা উক্ত মাত্রাগুলো নগন্যভাবে ক্ষুদ্র, তখন এর আয়তন হবে ভরের সমানুপাতিক। উদাহরন স্বরুপ সূর্য্যকে চিপিয়ে চাপিয়ে (এখানে বিকিরণ জনিত ক্ষয়ের ব্যাপারটাকে বলা হয়েছে) এর ব্যাসার্ধ ৩ কিলোমিটারে ঠেকাতে পারলে এটা একটা ব্লাকহোলে পরিণত হবে (এর ক্যালকুলেশন বা ম্যাথমেটিক্যাল মডেলের হিনটস ইন্টানেটে অহরহ পাওয়া যাবে)। পৃথিবীকে যদি সেরকম কন্ডিশনে ফেলতে হলে এর ব্যাসার্ধকে ৯ মিলিমিটারে আনতে হবে।
তাহলে ব্লাকহোলের আকার যত ছোট হবে, চিপাচিপির মাত্রাটাও তত বেশী হবে।যে ঘনত্বতে বস্তুটাকে চিপানো হবে সেটা আবার ভরের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক। তাহলে সূর্যমামাকে গহ্বরে পরিণত করতে গেলে এর ঘনত্ব হবে প্রতি ঘনমিটারে ১০১৯ কিলোগ্রাম।
তবে জনসাধারন্যে আমাদের প্রচলিত কিছু ভ্রান্ত ধারনা আছে। যেটা হলো ব্লাকহোলকে সর্বদা দৈত্যাকৃতির হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তত্ব অনুসারে এদেরকে আসতে হবে প্রচুর বৈচিত্র্যপূর্ণ্য আয়তনের বস্তু বা নক্ষত্র থেকে, এমনকি সাবএ্যাটোমিক লেভেলের কণা হলেও চলবে।ক্ষুদ্রাকৃতির গহ্বরগুলো কোয়ান্টাম এ্যাফেক্টের কারণে বিকৃত হবে এবং এসব ক্ষদ্রতর গুলো তৈরী হবার সাথে সাথেই বিস্ফোরিত হবে। এরকম ছোট ছোট ব্লাক হোলের বিস্ফোরণে বিগ ব্যাংএর প্রথম দিকেই ঘটেছিলো এবং আজকাল এগুলোই এ্যস্ট্রোনোমাররা দেখতে পাচ্ছে।
তবে কিছু শর্তাবলী আছে যেটা হকিং বের করে দিয়েছেন যেগুলো প্রাগৈতিহাসিক কৃষ্ঞ গহ্বর হিসেবে পরিচিত। পদার্থবিজ্ঞানের তত্ব ঘেটে বলে দেয়া যায় একটা বস্তুর ঘনত্ব প্লান্কের মানের সমান অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটারে ১০৯৭ কিলোগ্রামের সমান হতে হবে যার ফলে বস্তুর গ্রাভিটীর আকর্ষণ ক্ষমতা এতই শক্তিশালী হবে যেখানে স্হানকালের কোনো প্যারামিটার কাজ করবে না। এই পরিমান ঘনত্ব একটা বস্তুকে ব্লাকহোলের পরিণত করতে সক্ষম ১X১০-৩৫ মিটার দূরত্বে (এটাকে প্লান্কের দৈর্ঘ্য বলে) এবং এর ভর হতে হবে ১X১০-৮ কিলোগ্রাম। অভিকর্ষ বলের তত্ব অনুসারে একটা বস্তুকে এসব প্যারামিটার দিয়ে
চালনা করলে ব্লাকহোলে পরিণত করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী।
আচ্ছা এধারনাটাকে আরেকটু এগুতে দেই। বৃহত্তকার প্রাগৈতিহাসিক কৃষ্ঞ গহ্বর তৈরী হতে পারে যদি কসমিক ঘনত্ব অতিক্রম করানো যেতে পারে। .......
তবে হকিং ১৯৭৪ সালে সালের শেষের একটা ফাটাফাটি উদাহরন টানেন সেটা হলো ব্লাকহোল শুধু খায় না কিছু দেয়ও। তারমানে ধরা যাক একটা মেয়ে শুধু অশ্রু দিয়ে ভালোবাসতেই জানে না, বাস্তবতার পাল্লায় পড়ে আঘাতও দিতে পারে, হতে পারে সেটার মনের বিরূদ্ধে অথবা দেবতার তুস্টির জন্যে। হকিং ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন একটা ব্লাক হোল গরম কয়লার মতো বিকিরণ করতে পারে। একটা ১০১২ কিলোগ্রামের সমান ভর সম্পন্ন পর্বতসম গহ্বরের তাপমাত্রা হতে পারে ১০১২ কেলভিনের সমান- যেটা এতই উত্তপ্ত যে ভরহীন কনা যেমন ফোটন এবং বিশাল পরিমানের ইলেক্ট্রন আর পজিট্রনসমূহ নির্গমন করে।
এই নির্গমনের হার বিশাল পরিমানের শক্তির বিচ্ছুরন ঘটায়, ফলে উক্ত গহ্বরের ভর বাড়তে থাকে (ডিটেলস জানতে হলে ব্রীফ হিস্টোরী অব টাইম)। তখন ব্লাক হোল কি চীজ সেটা সটাই দেখার বিষয়! যখন এটা সংকুচিত হতে থাকে, তখন এর তাপামাত্রা স্হিরহারে বাড়তে থাকে এবং সাথে সাথে প্রচন্ড শক্তিসম্পন্ন কণাসমূহের নির্গমনের হার সংকোচনের হারের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। যখন গহ্বরটির ভর ১০৬ কিলোগ্রামের কাছাকাছি হয়, তখন এটার ভবলীলা সাঙ্গ হবার টাইম হয়, এবং এক সেকেন্ডের মধ্যে বিস্ফোরন ঘটে। অবশ্য আমি যত তাড়াতাড়ি বললাম এই সম্পূর্ন কাজটি সম্পন্ন হতে লাগতে পারে ধরা যাক আজকে থেকে সৌরভরের একটা ব্লাক হোলের এরকম ডায়রিয়া শুরু হলে মোটামুটি ১০৬৪বছরের মতো লাগবে।
পার্টিক্যাল এক্সিলাটরে ব্লাক হোলের তৈরী হওয়াটা একটা দারুন ঘটনা: অনেকটা ৪০ বছর বয়সী কন্যার হঠাৎ ফাটাফাটি বিবাহ হওয়া। এখান থেকেই শুরু হোক আমার আলোচনা। এখানে প্রথমেই বলেছি সালাম-উইনসবার্গ-গ্লাসগো তত্বের ডরিভেশন করলে অভিকর্ষ বলের অবস্হা সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়।যখন উচ্চ ঘনত্বের পরিবেশ তৈরীর কথা আসে তখন সবার মুখে দুটো নাম LHC আর Batavia তে Fermi national Accelerator Labrotary এর Tevatron III। এই মেশিন গুলোর কাজ হলো সাবএ্যাটোমিক লেভেলের কণাগুলোকে উত্তেজিত করে এদের গতিকে আলোর গতির কাছাকাছি নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত করানো। তখন এসব কণাগুলোর গতিশক্তি হয় প্রচন্ডরকমের বেশী। আর এলএইচসিতে কি করানো হয় তা আগের পোস্টে মোটামুটি সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু ছিটেফোটা আকারে বলা হয়েছে ওগুলো আবারো আউড়াই।এলএইচসিতে উত্তেজিত অবস্হায় একটা ফোটনের এ্যানার্জী হয় সর্বোচ্চ ৭ টেরাইলেক্ট্রন ভোল্টের (গণনা অনুযায়ী) সমান। তাহলে আইনস্টাইনের বিখ্যাত E=mc2অনুসারে ভর হবে ১০-২৩ কিলোগ্রাম।যখন এরকম ভরের দুটো কণা খুব কাছ থেকে পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন এদের সকল এ্যানার্জী একটা ক্ষুদ্র স্হানের স্হানাংকের ক্ষুদ্রতম জায়গায় একীভূত হয়। তখন সহজেই অনুমেয়, কোন না কোন সময়ের স্হানাংকে সংঘর্ষে লিপ্ত কনাসমূহ একটা ব্লাক হোল তৈরী করবে (এটার জন্যই এতো কিছু বলা, কারন সময়ের কিছু অল্প সময়ের জন্য এখানে অভিকর্ষ বলের পরিমাণ আর ঘনত্ব বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে)।
তবে এখানে একটু সমস্যা আছে: ১০-২৩ কিলোগ্রামের প্লান্কের ভরের মন হতে বহু দূরে যেটা মূলত প্রথাগত তত্ব মতে সবচেয়ে হালকা গহ্বরের সৃস্টি করবে।এটা অবশ্য কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্সের অনিশ্চিয়তার সূত্রকেই নির্দেশ করে।কারন কণাসমূহের আচার আচরন অনেকটা তরঙ্গের মতো ফলে ১০-১৯ মিটার দুরত্বের মধ্যেই তাদের চার্জের ক্ষয় হয়ে যায় যেটার ফল এ্যানার্জীর বাড়ার হারকে কমিয়ে ফেলা।তাই এটা সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম জায়গা হবে যেখানে একটা কণার এ্যানার্জী সমূহকে প্যাকেটের মতো জমা রাখার জন্য। এটার ঘনত্ব হয় সে অনুসারে প্রতি কিউবিকমিটারে ১০৩৪ কিলোগ্রাম যেটা খুব বেশী কিন্তু গহ্বর তৈরী করার জন্য এতোটা বেশী নয়। গ হ্বর বানাতে হলে অবশ্য প্লান্কের মান গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
তবে একটা বাস্তবিক উদাহরন হলো নিউইয়র্কের ব্রুক হ্যাভেনের হেভী আয়ন কোলাইডারে এমানের প্যারামিটারে প্রোটনকে উত্তেজিত করানো গেছে খুব অল্প সময়ের জন্য আর এলএইচসি এর মানের সংঘর্ষ ঘটানোর অনেকটাই উপযোগী!
বিগত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছিলেন প্লান্কের ঘনত্বের জন্য প্রয়োজনীয় মান খুব বেশী উচ্চতর মনে হচ্ছে।স্ট্রিং থিওরীর তত্ব অনুসারে স্হানের তিন মাত্রার বাইরেও আরো মাত্রা আছে। অন্যান্য বলের মত না হয়েও অভিকর্ষের বিস্তার ঘটবে এই মাত্রাগুলোর দিকেই এবং এর ফলে অতি অল্প দূরত্বেই অভিকর্ষ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তিন মাত্রার স্হানাংকে অভিকর্ষ চারগুণ হয়ে যায় দুটো বস্তুর দূরত্বকে অর্ধেক করে ফেলা হয়। কিন্তু নয় মাত্রার স্হানাংকে অভিকর্ষ ২৫৬ গুণ বেশী শক্তিশালী হয়ে যাবে। এই প্রভাব আসলেই খুব গুরুত্বপূর্ণ কেননা এই অতিরিক্ত মাত্রা গুলো সত্যিকারার্থেই বেশ বড় এবং এগুলো বিগত কয়েক দশক ধরেই পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষাগারে।
অভিকর্ষেরর এই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অবস্হা যেটা বুঝায় সেটা হলো নিখুত শক্তির স্কেলটা কম হতে পারে যেটা প্রথাগত ভাবে চিন্তা করা হয়েছিলো এবং এই পরিস্হিতিতে অভিকর্ষের সূত্র আর কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্সের মধ্যে একটু দন্দ্ধের সৃস্টি হয়, ফলে কৃষ্ঞ গহ্বরের সৃস্টি হতে পারে। ২০০১ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে দু গ্রুপ মিলে একটা কর্মশালার আয়োজন করে যেখানে গিডিংস আর স্কট থমাস এবং ব্রাউন ইউনিভর্সিটির গ্রেগ ল্যান্ডসবার্গ আর সাভাস ডিমুপিউলাস উপস্হিত ছিলো। তারা বর্ণনা করেন পর্যবেক্ষনকৃত উপাত্ত আর এলএইচসিতে কিভাবে ব্লাক হোলের সৃস্টি করা যায় তার সম্ভাবনা গণনা করার জন্য। কিছু ক্যালকুলেশনের পর যে ফলাফল পাওয়া তা রীতিমত অবিশ্বাস্য যে প্লান্ক স্কেলের সর্বনিম্ন মাত্রা ধরে এবং আরো তাত্বিক সম্ভাবনা বাদ দিলে এলএইচসিতে প্রতি সেকেন্ডে একটি ব্লাকহোল তৈরী করা সম্ভব যেটার ফলে পদার্থবিজ্ঞানীরা পরে এলএইচসিকে একটা ব্লাক হোল ফ্যাক্টরী হিসেবে বর্ণনা করে।
স্হান-কাল কে যদি আমরা ডাইমেশনাল কনসপ্টে চিন্তা (এটা এজন্য যে একে ম্যাথমেটিক্যাল মডেলে আনতে হবে) করি তাহলে এভাবে চিন্তা করা যায় স্হানের থাকবে তিনটি ডাইমেনশন আর সময়ের থাকবে একটি। আমরা সবাই যেহেতু ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতির সাথে পরিচিত সেহেতু বলা যায় সময়ের এই অক্ষটি এখানে একটা ধ্রবক এবং স্বতন্ত্র।
কিন্তু ব্যাপক আপেক্ষবাদের একটু পাল্টে যাবার কথা বলেছে। এক্ষেত্রে এটা কথা বুঝতে হলে একটা উদাহরনের সাহায্য নেয়া যেতে পারে!পৃথিবীর মতো গুরু ভর সম্পন্ন কোনো বস্তুপিন্ডের সন্নিকটে সময়ের গতি স্লথ মনে হবে। তার কারন আলোকের ম্পন্দান্ক এবং আলোকের শক্তির ভিতরে একটি সম্পর্ক আছে। শক্তি যত বেশী হবে ম্পন্দান্ক তত বাড়বে। আলোক পৃথিবীর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের ভিতর দিয়ে যত উপরে যাবে ততই তার শক্তি ক্ষয় হবে। সুতরাং কম্পান্ক কমে যাবে। তার মানে হল একটি তরঙ্গ শীর্ষ হতে পরবর্তী শীর্ষের মধ্যবর্তী কালের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে। খুব উচ্চে অবস্হিত কোনো লোকের মনে হবে নীচের সব ঘটনাই একটু দেরীতে ঘটছে। এটা পরীক্ষা করা হয়েছিলো ১৯৬২ সালে। ডিটেলস হকিং এর ব্রীফ হিস্টোরী অফ টাইমে আছে। তার মানে দেখা যাচ্ছে রিলেটেভিটিতে এসে টাইম ডোমেইন বা কম্পোনেন্ট ভেরিয়েবল হয়ে যাচ্ছে অভিকর্ষিয় ত্বরনের কারনে।
এটার জন্য আরো একটা উদাহরনের আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। একটি বস্তু যখন দূর হতে একটা বৃহৎ নক্ষত্রের পাশ দিয়ে ভ্রমন করতে যাবে তখন ঐ বস্তুর চলমান অক্ষের উপর অভিকর্ষের টান অনুভূত হবে তার মানে আরেকটু সহজ ভাষায় বলতে গেলে ঐ বস্তুর বৈশ্বিকপাতে একটা প্রভাব পড়বে যেহেতু অভিকর্ষ শক্তি ঐ বস্তুকে টানতে চাইবে। এর ফলে আমরা স্হান-কাল ডায়াগ্রাম আকতে যাই তাহলে দেখা যাবে বক্র স্হান কালে আলোকশন্কু একটু চোখা বা বক্রের ন্যায় হয়ে যাবে। যদি কোনো বস্তু মুক্তভাবে পতিত হতে চায় তাহলে দেখা যাবে ঐ বস্তুটি তার t অক্ষাংশে পরিভ্রমন করছে, কিন্তু বাইরের একজন পর্যবেক্ষকের কাছে মনে হবে ঐ বস্তুটির ত্বরণ ঘটবে স্হান-কাল অক্ষাংশে।
তাহলে CTC তৈরী হবে তখনই যখন এরুপ একাধিক আলোকশন্কু ধারাবাহিকভাবে এমন ভাবে তৈরী হতে থাকবে যেগুলো আবার পুনরায় ঘুরে আবার আগের জায়গায় ফিরে এসে একটা লুপের সৃস্টি করে।তাহলে এর মানে এটাই হচ্ছে যে একটা বস্তু তার অক্ষে পরিভ্রমন করে একটু ঘুরে ফিরে এসে আবার এমন ভাবেই ফিরে আসছে যেটা ছিলো তার স্হান এবং কালের প্রারম্ভিক স্হান।এরকম অক্ষের একটি বস্তু যদি মুক্তভাবে পতিত হতে থাকে তাহলে স্হান-কালের একই পয়েন্টে বার বার ফিরে আসবে। স্হান কালের আসল পয়েন্টে ফিরে আসার ব্যাপারটা একটা সম্ভাবনাকেই দাড় করায় সেটা হলো ঐ বস্তুর ভবিষ্যৎ আলোক শন্কু স্হান-কালের t অক্ষাংশের সামনের দিকে এবং পিছনের দিকে উভয়ই নির্দেশ করে।
এখন LHC তে যদি টেরাইলেক্ট্রন ভোল্টের মডেল সত্যি হয় (এখানে যদি বলা হয়েছে এজন্য যে এখনো ফুল ফ্লেজে এটা চালু হয় নি বা প্রাথমিক পরীক্ষা গুলো দিয়ে এর বিভিন্ন প্যারামিটারের মান গুলো নির্ণয় করা হচ্ছে) তাহলে মিনি ব্ল্যাক হোল তৈরী হবার সম্ভাবনা বেশ প্রবল। আর যদি প্লান্কের প্যারামিটার গুলো সব ঠিক রেখে সংঘর্ষ ঘটানো যায় তাহলে এসব ব্ল্যাক হোল গুলোকে স্ট্যাবল হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে।আর LHC এর জিওম্যাট্রিক্যাল গঠন অনুসারে খুব ডীপলি চিন্তা করা যায় (গোডলের ঘূর্নায়মান মহাবিশ্বের মডেল কি মনে পড়ে?) তাহলে প্রতিটা সংঘর্ষের ফলে যে পরিমান অভিকর্ষীয় শক্তির সৃস্টি হবে যেটা বার বার একটি বৃত্তাকার পথে সংঘটিত হতে থাকবে এর ফলে CTC তৈরী হবার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।এখানে যখন মিনিব্লাক হোল তৈরী হবে তখন ওটা হকিং রেডিয়েশন ফলো করবে কিন্তু যখন ওটা মিনি ওয়ার্মহোলের মতো কাজ করা শুরু করবে তখন স্বভাবতই ক্লাসিক্যাল ফিজিক্স বা কার্যকরনের তত্ব মার খেয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকবে। তবে হকিং এর ক্রোনোলজিক্যাল প্রোটেকশন কনজেকচারকে ধরে নিলে ফিজিক্সের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব।
এটা ঠিক ওয়ার্মহোলের ভিতর যদিবা একটা অনু বা কণাও প্রবেশ করে তখনই ওটা এই কনজেকচার ফলো করবে। তবে এখানে ওয়ার্মহোলের স্ট্যাবিলিটি নিয়ে যে প্রশ্নটা আসে সেটাকে এ্যাক্সোটিক ম্যাটার দিয়ে বাইপাস করা যায় এবং এটা এমন যে ওয়ার্মহোলের মধ্যে যদি প্রয়োজনীয় পরিমান এ্যাক্সোটিক ম্যাটারের অস্তিত্ব থাকে আর ব্লাক হোল থেকে ওয়ার্মহোলের পরিণত হবার কার্নেল ট্টানজিশন এ্যামপ্লিচুডের মান (অবশ্য কচির সারফেসে ক্যালকুলেট করতে হবে) হুইলার-ডি উইট ফরমালাইজেশনকে অনুসরন করে। এখানে ওয়ার্মহোলের যদি জিওম্যাট্রিক প্রস্হচ্ছেদের কথা চিন্তা করি তাহলে এর ফর্ম ফ্যাক্টরগুলো কিছু তত্বিয় অনিশ্চিয়তাকেই একীভূত করে, যেমন প্রারম্ভিক ভরকেন্দ্রিয় শক্তি যেটা ওয়ার্মহোলের মধ্যে বিদ্যমান আর ওয়ার্মহোলের ছড়িয়ে থাকা ফর্ম ফ্যাক্টরসমূহ যেটা মূলত এ্যানর্জির ফাংশন রুপে পরিগণিত হয়। এই কারেকশনগুলো ব্লাক হোলের কারেকশনের অনুরূপ (যেটা D-ডাইমেনশনের সোয়ার্জচাইল্ড সল্যুশনে সোয়ার্জচাইল্ডের ব্যাসার্ধ বের করা হয় অন্যান্য ডাইমেনশনের অস্তিত্বকে বাদ দিয়ে)।
শেষের দিকে ম্যাথমেটিক্যাল ইন্টারপ্রিটেশন গুলো বাংলায় তর্জমা করতে গিয়ে কেমন যেনো ভজঘট হয়ে গেলো। হয়তো সামনে এটাকে আরো সরল ভাবে ব্যাখ্যা করার চেস্টা করবো!
কার্যকারন তত্ব হচ্ছে পদার্থবিদ্যার একটা মৌলিক তত্ব। কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরীতে কার্যকারন আর উচ্চ মাত্রার শক্তির স্হানকালে যেখানে CTC বিদ্যমান পরস্পরকে বিরোধিতা করে।কিন্তু যদি LHC তে টেরাইলেক্ট্রনভোল্টের মডেলের সংঘর্ষের ঘটনা সত্যি হয় আর যদি ব্লাক হোল তৈরীর প্রস্হচ্ছেদের ক্লাসিক্যাল জিওম্যাট্রিকের ক্যালকুলেশন সত্য হয় আর তার সাথে লবন হিসেবে এ্যাক্সোটিক ম্যাটারের অস্তিত্ব ঠিক থাকে, তাহলে ব্লাক হোলের তৈরীর মতোই এ্যাক্সোটিক ম্যাটার সম্বলিত ওয়ার্মহোলের সৃস্টি হতে পারে টেরাইলেক্ট্রন ভোল্টের প্রোটন-প্রোটন সংঘর্ষের মাধ্যমে।তবুও যেহেতু এ ঘটনা ক্লাসিক্যাল ফিজিক্সের নীতি বিরুদ্ধ সেহেতু আমরা হকিং এর ক্রোনোলজিক্যাল প্রোটেশন কনজেকচার মডেলটা অনুসরন করা যেতে পারে যেটাতে ক্লাসিক্যাল ফিজিক্সের সাথে কিছুটা সামন্জ্ঞস্য আনার চেস্টা করা হয়েছে।তবে এটা ঠিক যে ব্লাক হোল আর ওয়ার্মহোল তৈরীর মধ্যকার যে ট্টানজিশনটা থাকবে সেখানে কিছু পরীক্ষিত স্বাক্ষর বিদ্যমান থাকবে অবশ্যই। আর মজার বিষয় হলো সংঘর্ষে লিপ্ত কোয়ান্টাম কণাসমূহ আর ব্লাক হোল/ ওয়ারমহোলের মধ্যকার এই ট্রানজিশন এম্প্লিচুডকে ওয়ার্মহোলের ওয়েভ ফাংশনের মধ্যেই সন্নিবেশিত করার ঘটনা।
তবে একটা স্ট্যাবল ব্লাকহোল থেকে ওয়ার্মহোল তৈরীর হবার সম্ভাবনা ততটুকুই নির্ভর করে যতটা না নির্ভর করে ব্যাপক আপেক্ষবাদের মধ্য দিয়ে অন্যান্য ডাইমেনশনগুলোর অস্তিত্ব আর সক্রিয়তার সম্ভাবনা। তবে যাবতীয় পরীক্ষার সম্ভাবনার ফলাফল আসতে সময় লাগতে পারে আরো 3-4 বছর যখন হয়তো পদর্থবিজ্ঞানীরা বুকে হাত দিয়েই বলতে পারবে প্রচলিত পদার্থবিদ্যাতেই লুকিয়ে ছিলো টাইম মেশিনের সম্ভাবনার গল্প আর প্রকৃতিও এটা মানে!
অনেক এ্যাডভান্স চিন্তার ফসল বলে ফেললাম আজ!
আমি অশ্রুগুলো রিনকে দেয়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 18 টি টিউন ও 104 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ছেলেটি পথে নেমেছিলো একদিন নীল মায়ার হাতছানিতে। নিঃসঙ্গতায় হেটে যেতে আবিস্কার করে নিঃশব্দ চাদ তার একান্ত সঙ্গী। এখন সে হাতড়ে বেড়ায় পুরোনো সুখস্মৃতি, ঘোলা চোখে খুজে ফেরে একটি হাসি মুখ!
রিন ভাইয়া ফিরে এলেন চমৎকার একটা পোষ্ট দিয়ে……..অনেকক্ষন লেগে থেকে পড়লাম। একবার না দুইবার না তিন তিন বার…..পোষ্ট টা এখন অনেকটা ক্লিয়ার….CTC এর ব্যাপারটা আমার অনেক চমৎকার মনে হয়েছে……….যদিও ওইরকম লুপ বানানোটা হয়ত অনেক কষ্টকরই হবে বৈকী।
ধন্যবাদ লেখককে ।