শুক্র গ্রহ-পৃথিবীর জমজ ও সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ।

শুক্রগ্রহ (Venus): শুক্রগ্রহ সৌর জগতের দ্বিতীয় গ্রহ। এটি  224.7 দিনে সূর্যকে একবার প্রদিক্ষন করে। সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশে এবং ভোরের পূর্ব আকাশে আমরা শুক্রগ্রহকে তারার মতো দেখি। কিন্তু এটি একটি গ্রহ।

চিত্রঃসত্যিকারের শুক্র গ্রহ।

এটি সূর্য উঠার সময় এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় বেশি উজ্জ্বলতা পায়। তখন একে আমরা দেখি। তাই একে Morning Star বা Evening Star বা শুক তারা বলা হয়।

যারা কম্পিউটাররে সামনে থেকে উঠে বা কাজ পেলে রেখে  এ সব প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পারেন  না তারা উপরের চিত্র দেখে একটু মনের স্বাদ মেটান। চাদের পাশে দেখুন ছোট্ট একটি বিন্দু এটি ই শুক্র গ্রহ।

রাতের আকাশে চাদের উজ্জ্বলের পর এর উজ্জল্য বেশি। এটি সূর্য থেকে ১০.৮২ কোটি কিলোমিটার আর পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

শুক্র পৃষ্ঠের কাছাকাছি চাপ ও তাপ অনেক বেশি  এর তাপমাত্রা 47.8

Venus মানে হলো ভালোবাসার দেবী। তবে শুক্র হলো গ্রহ বিপর্যয়ের একটি উদাহরণ। প্রচণ্ড তাপ, আবহমণ্ডলের চাপ, ক্ষতিকর গ্যাস, আতঙ্কজনক বর্ষণ, লালাভ উজ্জ্বলতাসহ শুক্রকে দেখলে ভালোবাসার দেবী মনে না হয়ে বরং নরকই মনে হয়।শুক্রগ্রহ বাইরের জগতের কাছে পুরু মেঘের ও বিষাক্ত আবহমণ্ডল দ্বারা সম্পূর্ণভাবে ঢাকা।

রাডারে দেখা শুক্র গ্রহ।

গবেষণায় জানা গেছে, শুক্রগ্রহের পাহাড়-পর্বত থেকে এক ধরনের রাডার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়, যা কোনোক্রমে শিলারাশি থেকে প্রতিফলিত হওয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের রাডার তরঙ্গ কেবল বরফাবৃত্ত বা ধাতব পদার্থে মোড়ানো ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হওয়া সম্ভব। কিন্তু শুক্রগ্রহে প্রচণ্ড তাপের কারণে বরফের অস্তিত্ব অকল্পনীয়।

এছাড়াও গ্রহের ভূমি সমতল থেকে ৩ মাইল উঁচু পাহাড়-পর্বত থেকে প্রতিফলিত রাডার তরঙ্গ বেশি শক্তিশালী। এসব তথ্য বিশেল্গষণ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন শুক্রগ্রহের এসব পাহাড়-পর্বত ধাতব পদার্থে আবৃত। শুক্রগ্রহের ওপর তোলা ছবি দেখলেও ধাতবপৃষ্ঠে আবৃত পাহাড়-পর্বতের ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

নাসার বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শুক্র গ্রহেও নাকি এক সময় প্রাণের অস্তিত্ব ছিল।  পৃথিবীর মতো শুক্র গ্রহে ও  সমুদ্র ও নদী ছিলো। ১৯৯০ সালে মহাকাশে পাঠানো নাসার মহাকাশ যান “Magellan”' শুক্রগ্রহ পৃষ্ঠের যে সব ছবি পাঠিয়েছিল সেই ছবিগুলোতে নদীর প্রবহমান খাদের মতো অসংখ্য শুকনো ও মরা চ্যানেল লক্ষ্য করা যায়।

ছবিগুলো দেখে প্রাথমিক ভাবে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের ধারণা হয়েছিল আজ থেকে ৫ লক্ষ বছর আগে শুক্র গ্রহ পৃষ্ঠে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে যে বিপুল পরিমাণে লাভার উদীরণ ঘটে ঐ লাভা স্রোতের ফলেই চ্যানেলগুলোর সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানীদের এই ধারণার পক্ষে আরও যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে সালফিউরিক এসিড যুক্ত ঘন বায়ু মণ্ডলের এই গ্রহের বর্তমান তাপমাত্রা ৪০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস যা প্রাণ সৃষ্টি বা প্রাণধারণের ও বিকাশের কোন সম্ভাবনাই নাই। কিন্তু কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশ ও উন্নতির কারণে শুক্রগ্রহ পৃষ্ঠর ছবিগুলো নতুন করে পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। নতুন পর্যালোচনায় বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, শুক্রগ্রহ পৃষ্ঠে যে মরা বা শুকনো চ্যানেলগুলো রয়েছে সেগুলো খুবই দীর্ঘ। বিজ্ঞানীদের ধারণা লাভা স্রোতের কারণে এত দীর্ঘ চ্যানেল হওয়া সম্ভব নয়। তবে পানি প্রবাহ বা নদী প্রবাহের জন্য এত দীর্ঘ ও লম্বা চ্যানেল হওয়া সম্ভব। তাই বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন শুক্রগ্রহেও এক সময় প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল। তবে শুক্রগ্রহ পৃষ্ঠ খুবি শুষ্ক।

Project Magellan   দ্বারা ১৯৯০-১১৯১ শুক্র গ্রহ পূর্ণ ভাবে ম্যাপিং হয়। শুক্র গ্রহ পৃথিবীর মত স্থলজ গ্রহ। এটির দৈহিক গঠন পৃথবীর মত শক্ত ।এর ভর পৃথিবীর ০.৮২ গুণ আর ব্যাস পৃথিবীর ০.৯৫ গুণ। এর গড় ঘনত্ব ৫.১ যা পৃথিবীর ঘনত্বের চেয়ে সামান্য কম। এটি গঠন পৃথিবীর গঠনের মত।এটাকে অনেক সময় পৃথিবীর বোন বা যমজ বলা হয়। এর বায়ুমণ্ডল প্রধানত কার্বনডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন দিয়ে গঠিত।কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ শতকরা ৯৬.৫% আর নাইট্রোজেনের পরিমাণ শতকরা ৩.৫% মাত্র। এতে অতি সামান্য পরিমাপ জলীয়বাষ্প, আর্গন, কার্বন মনোক্সাইড প্রভৃতি আছে।কার্বনডাই-অক্সাইড ও জলীয়বাষ্প থাকার দরুন শুক্রের মতো পৃথিবীরও একটি গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া আছে।

Level 0

আমি জাকির হোসাইন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 224 টি টিউন ও 1487 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

পৃথিবীতে অল্পকয়েক দিনের জন্য অনেকেই আসে, হেঁটে খেলে চলে যায়। এর মধ্যে অল্প কয়েক জনই পায়ের চাপ রেখে যায়।ওদের একজন হতে ইচ্ছে করে। প্রযুক্তির আরেকটি সেরা ব্লগ টেকটুইটস। আপনাদের স্বাগতম, যেখানে প্রতিটি বন্ধুর অংশ গ্রহনে গড়ে উঠেছে একটি পরিবার। আপনাদের পছন্দ হবে আশা করি। ফেসবুকে আমি - ?জাকির!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

সুন্দর ও অনেক তথ্যবহুল একটি টিউন ।

ধন্যবাদ ।

Level 0

ধন্যবাদ।

গ্রহের গায়ে লাগছে আগুন আর বলে ভালোবাসার দেবী 😉
আসলেই তথ্য বহুল পোস্ট।
ধন্যবাদ

দারুন লাগল ।

    আমার ভালো লাগলো। ধন্যবাদ

চমৎকার তো!

তথ্যবহুল এমন একটা সু্ন্দর টিউনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

দারুন হয়েছে।

    আপনি তো এসব টিউনের বস।

    আমিতো মাত্র একটা বহিঃর্বিশ্বের টিউন করলাম, তাও এলিয়েন নিয়ে। গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে কোন টিউনই আমি করিনি। টিউন না করে বস হলাম কিভাবে!? 😯

    একটাই ফাটাফাটি হয়েছে

Level 0

আপনাকে ধন্যবাদ ………..

জাকিল ভাই……………..সুন্দর হয়েছে………….অনেক কিছু জানতে পারলাম…………..++++

সুন্দর ও তথ্য বহুল টিউন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

    আপনাকে ও ধন্যবাদ আতাউর রহমান ভাই

এমন ধরনের টিউনই তো চাই টেকটিউন্সে।আসলে সব কিছুরই প্রয়োজন আছে।সবাইকে এই বিষয়টা নিয়ে উপলব্ধি করতে হবে।এক জিনিস আর কত?ধন্যবাদ জাকির ভাই তথ্যভূল টিউনটি করার জন্য/

    আপনাকে ও ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান কমেন্টের জন্য। তাই, এ জন্য সবার ই সচেতনতা থাকা উচিত,।
    পাইরেসির টিউন হলে সবাই কীবোর্ড নিয়ে জাপিয়ে পড়ে, কিন্তু মূল্যবান কোন টিউন ভিজিট করে ও দেখে না। তাই আমাদের সবার ই একটু এ দিক গুলোতে নজর দিতে হবে মনে হয়।