ল্যাসিক – এক সর্বাধুনিক চক্ষু চিকিৎসা পদ্ধতি এবং আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা

Laser আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এই Laser এর মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রের ধ্বংসাত্মক কাজ করা হয়, হেভি মেটাল মাখনের মত করে কাটা যায় আবার এই Laser দিয়ে চোখের মত সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল অঙ্গের চিকিৎসাও করা যায়।

LASIK এধরনের আধুনিক একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। Laser ব্যবহার করে কোন প্রকার রক্তপাত ছাড়াই চোখের এক প্রকার বিশেষ সার্জারিই হল ল্যাসিক।
আমি আমার উভয় চোখে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ল্যাসিক সার্জারি করিয়েছি। তখন অন্তর্জালে অনেক খুজেও বাংলায় এ সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য খুজে পাইনি। তাই ল্যাসিক সম্পর্কে কিছু তথ্য ও আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই এই লেখা।

LASIK - LASER assisted in situ keratomileusis
এক কথায় লেসার ব্যবহার করে চোখের চিকিৎসা। তো আগে জানতে হবে লেসার কি?

LASER – Light amplification of stimulated emission of radiation
লেসার এক প্রকার আলোক রশ্মি। তবে এই আলোকের বৈশিষ্ট হল এটি সাধারন আলোর চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয় এবং এটি সাধারন আলোর মত ছড়িয়ে পরে না। খুব সুক্ষ্ম একটি পথে Light Beam আকারে সে যেতে পারে ছড়িয়ে পরা ছাড়াই। এই বৈশিষ্টদ্বয়ই মুলত লেসারের বহুমুখী কার্যকারিতার জন্য ব্যবহৃত হয়। এধরনের লেসার এর সাহায্যেই ল্যাসিক সার্জারি করা হয়।

ল্যাসিক সার্জারি কী এবং কেন?

সাধারনত দৃষ্টি জনিত সমস্যা অর্থাৎ দুরের বা কাছের বস্তু দেখতে সমস্যা হওয়া বা ঝাপসা দেখা এধরনের চক্ষু সমস্যার সমাধানের জন্যই ল্যাসিক সার্জারি করা হয়ে থাকে। যারা দেখার সমস্যার কারনে (+) বা (-) চশমা ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রেই বেশীরভাগ সময় চিকিৎসকগণ ল্যাসিক সার্জারি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে ঠিক এগুলো ছাড়াও আরো কিছু চিকিৎসায় ল্যাসিক সার্জারি করা হয়।
ল্যাসিক সার্জারিতে Laser এর সাহায্যে মুলত চোখের কর্নিয়ার পুরুত্ব পরিবর্তন করে ঝাপসা দেখা বা কম দেখার সমস্যা দূর করা হয়। যাতে রোগীকে চশমা ব্যবহার করতে না হয় বা ভারী চশমার পরিবর্তে খুব অল্প পাওয়ারের চশমা হলেই চলে।

ল্যাসিক একটি ব্যথাহীন, রক্তপাতহীন এবং প্রায় ঝুকিহীন চক্ষু সার্জারি।

ল্যাসিক যাদের জন্য প্রযোজ্য

সাধারনত যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ এর মধ্যে এবং যাদের চশমার পাওয়ার বিগত এক বছর স্থিতিশীল রয়েছে তাদেরকেই চিকিৎসকগণ ল্যাসিকের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

Laser Machine এর মডেল ও সফেস্টিকেশনের উপর নির্ভর করে এর ত্রুটি নিরাময়ের মাত্রা নির্ধারিত হয়।
আমি OSB Laser Vision Center, Mirpur, Dhaka তে ল্যাসিক করিয়েছিলাম। সেখানে NIDEK EC-5000 মডেলের লেসার মেশিন ব্যবহৃত হয়। তার উপর ভিত্তি করে এই মেশিনের নিরাময় যোগ্যতা তুলে ধরা হল। মেশিনের সফেস্টিকেশনের উপর নির্ভর করলেও ত্রুটি নিরাময়ের মাত্রা অল্পই ভেরিয়েশন হয়। মূল নিরাময় ক্ষমতা প্রায় সব মেশিনের একই রকম।

১. মাইওপিয়া – দুরের বস্তু কম/ঝাপসা দেখা। যাদের চশমার ক্ষমতা -১.০ থেকে -১২.০ তাদের জন্য। তবে যাদের চশমার পাওয়ার -৮.০ এর বেশী তাদের পরিপূর্ন নিরাময় সম্ভব নয়। সার্জারির পরেও সল্প পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করতেই হবে। আমার চশমার ক্ষমতা ছিল -১২.০ এখন আমি -৩.৭৫ ক্ষমতার একটি চশমা ব্যবহার করছি।
২. হাইপারমেট্রোপিয়া – কাছের বস্তু কম/ঝাপসা দেখা। যাদের চশমার ক্ষমতা +১.০ থেকে +৫.০ তাদের জন্য। এক্ষেত্রেও বেশি ত্রুটির চোখে সার্জারি পরবর্তী সময়ে অল্প ক্ষমতার চশমা প্রয়োজন হতে পারে।
৩. এস্টিগমেটিজম – কর্নিয়ার সুষমতা না থাকা কিংবা লেন্সের বক্রতা এধরনের ত্রুটির জন্য কম দেখা। যাদের চশমার ক্ষমতা +০.০৫ থেকে +৫.০ তাদের জন্য। এক্ষেত্রেও বেশি ত্রুটির চোখে সার্জারী পরবর্তী সময়ে অল্প ক্ষমতার চশমা প্রয়োজন হতে পারে।
৪. PRK – যাদের কর্নিয়াল পুরুত্ব ঠিক ল্যাসিকের উপযুক্ত নয় তাদের জন্য।
৫. PTK – কর্নিয়াল ডিসট্রপি ত্রুটি নিরাময়।
৬. ল্যাসিক সার্জারীর পর কোন ত্রুটি দেখা গেলে তা নিরাময়ের ব্যবস্থাও রয়েছে।

ল্যাসিক সার্জারির কার্যপ্রনালী

সার্জারি পূর্ব কার্যক্রম (Pre-Lasik Test)
আপনাকে কোন একজন চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোন একটি ল্যাসিক সেন্টারে যেতে হবে। ল্যাসিক সেন্টারের কর্তব্যরত চিকিৎসকগন আপনার চোখ পুনরায় পরীক্ষা করে দেখবেন, আপনার চোখে ল্যাসিকের উপযুক্ত কিনা। যদি উপযুক্ত হয় তবে তারা ল্যাসিকের পরামর্শ দেবেন।

যদি আপনার চক্ষু সমস্যা ল্যাসিক সার্জারির উপযুক্ত হয় এবং আপনি ল্যাসিকে ইচ্ছুক হন তবে আপনাকে Pre-Lasik Test করতে হবে।
এই টেস্টে আপনার চোখের কয়েকটি বাহ্যিক পরীক্ষা করা হবে। আপনার চোখের বর্তমান সমস্যার পরিমান (চশমার পাওয়ার) নির্ধারণ করা হবে। কর্নিয়ার পুরুত্ব নির্ণয় করা হবে। কর্নিয়াল টপোগ্রাফি নামে আরেকটি ভিজুয়াল টেস্ট করা হবে। এগুলো সবগুলোই সাধারন টেস্ট। এর জন্য চোখে কোন ছোট অস্ত্রপচারও করতে হবে না বা আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হবে হবে না। ৩০ মিনিটের ভেতরেই এই টেস্টগুলো সম্পন্ন করে বাসায় ফিরে যেতে পারবেন। প্রি-ল্যাসিক টেস্ট এর পর আপনাকে অপারেশনের দিন জানানো হবে এবং অপারেশনের জন্য চোখকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে আই-ড্রপ প্রেসক্রাইব করা হয়। এসকল আই-ড্রপ নির্দিষ্ট সময় পরপর অবশ্যই পরামর্শ মত ব্যবহার করতে হবে।

সার্জারি পদ্ধতি
সার্জারির দিন সংগে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র ও একটি কালো চশমা নিয়ে যেতে হবে।
সার্জারির ঘন্টাখানেক আগে আপনাকে প্রি-সার্জারি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হবে। সার্জারির জন্য চোখকে পরিপূর্নভাবে প্রস্তুত করার জন্য আই-ড্রপ ব্যবহার করা হবে এবং সার্জারী পরবর্তী সময়ে সম্পুর্ন সুস্থ হবার পূর্ব পর্যন্ত আপনার করনীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে নির্দেশ দেয়া হবে।

যথা সময়ে রোগীকে নির্ধারিত পোশাক পরিধান করিয়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হবে।

সার্জারি

  • আপনাকে সার্জারি মেশিন বেডে সহজ অবস্থায় শোয়ানো হবে।
  • আপনি শোয়ার পর মেশিনের একটা অংশ নেমে আসবে আপনার চোখের উপর। সেটি আপনার চোখের পাতা ধরে রাখবে যাতে সার্জারি চলাকালীন চোখে বন্ধ না হয়ে যায়। তারপর আপনার চোখের উপরে কয়েকফোটা তরল দেয়া হবে যাতে সার্জারী চলাকালীন চোখ শুকিয়ে না যায়।
  • এরপর আপনার চোখের কর্নিয়ার উপরের খুবই পাতলা একটি অংশ ফ্লাপ আকারে আংশিক কেটে বইয়ের কভারের মত উল্টিয়ে রাখা হবে।
    এই কেটে উঠানোর জন্য কোন রক্তপাত হয় না এবং কোন এনেসথেসিয়া দেয়া হয় না। ইনফ্যাক্ট এনেসথেসিয়ার কোন প্রয়োজনই নেই। যে অংশটা কাটা হয় সেটা আমাদের ত্বকের চেয়ে অনেকগুন পাতলা। শরীরে ইঞ্জেকশন পুশ করলেও এর চেয়ে অনেক বেশী ব্যথা অনুভুত হয়।
    এই কাটার কাজটি বর্তমানে দুই ভাবে করা হয়ে থাকে।
    Microkeratome নামক যান্ত্রিক অতিসুক্ষ্ম একটি ব্লেড ব্যবহার করে
    ii. Femtosecond নামে এক ধরনের Laser ব্যবহার করে। এতে কোন ব্লেড ব্যবহৃত হয় না বিধায় অধিক নিরাপদ।
  • তারপর নির্ধারিত পরিমানের লেসার প্রয়োগ করা হবে সেই কাঁটা অংশ দিয়ে। এই লেসার বীম কর্নিয়া থেকে কিছু টিস্যু অপসারন করে কর্নিয়ার পুরুত্ব পরিবর্তন করবে। আপনি এসময় একটা পোড়া গন্ধ অনুভব করবেন। আসলে এই অংশটাই আপনার মূল চিকিৎসা। এই কাজটুকুর জন্যই এত আয়োজন।
    এই কাজের জন্য এক্সাইমার লেসার মেশিন সাধারনত ১৯৩ ন্যানোমিটার (193×10-9 m) তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ঠান্ডা ultraviolet light লেসার আকারে প্রেরন করে, যা কর্নিয়া থেকে সর্বনিন্ম ০.২৫ মাইক্রন অর্থাৎ এক মিলিমিটারের চার হাজার ভাগের একভাগ পর্যন্ত পুরুত্ব পরিবর্তনে সক্ষম।
    আপনার চোখের ত্রুটি অনুযায়ী লেসার প্রয়োগে প্রয়োজনীয় পরিমানে টিস্যু অপসারন করে কর্নিয়া নতুন শেপ এ আনা হয়।
  • এই লেসার প্রয়োগ অংশে সর্বোচ্চ দশ-পনেরো সেকেন্ড সময় লাগবে। আপনার কর্নিয়া নির্ধারিত মাপে চলে আসলে লেসার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কর্নিয়ার উপরের কেটে রাখা কভারের মত ফ্লাপ অংশটি পুনরায় আগের স্থানে প্রতিস্থাপন করা হয়। এখানে কাঁটা অংশ জোড়া লাগানোর জন্য কোন সেলাই করা হয় না। এটা এক সপ্তাহের মধ্যেই মোটামুটি প্রাকৃতিকভাবে জোড়া লেগে যায়।
    কর্নিয়ার উপরের ফ্লাপ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সার্জারি শেষ হয়। সর্বসাকুল্যে সার্জারীতে দশ-পনেরো মিনিট সময় লাগে।

সার্জারি পরবর্তী কার্যক্রম
সার্জারী শেষে আপনাকে আবার বিশ্রাম কক্ষে নিয়ে যাওয়া হবে। সার্জারী শেষ হবার পর অনেকটা সময় চোখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। বিশ্রাম কক্ষে আপনার অপারেশন পরবর্তী করনীয় ও চোখের সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী আবার বলে দেয়া হবে।

কিছুক্ষন বিশ্রামের পর চোখে কালো চশমা পরে আপনি সেদিনই বাসায় ফিরে যেতে পারবেন। আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। প্রকৃতপক্ষে শুধু ল্যাসিক সেন্টার বা ল্যাসিক হাসপাতালে ভর্তি হবার কোন ব্যবস্থাই নেই।

রোগীর সার্জারি পরবর্তী সতর্কতা এবং করনীয়

সার্জারি হিসাবে ল্যাসিক সহজ, সল্প সময়ে সম্পন্ন এবং প্রায় ঝুকিহীন হলেও সার্জারি পরবর্তী সময়ে রোগীর নিরাপত্তা, সতর্কতা ও সুস্থ হয়ে ওঠার ধাপগুলো এতটা সহজ নয়। অন্য একটি চক্ষু অস্ত্রোপচারের চেয়ে সেটা বেশী না হলেও কোন অংশে কম বলা যাবে না। ডাক্তারের নির্দেশিত সতর্কতা ছাড়াও নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে সেই পদক্ষেপ গুলো তুলে ধরছি।

  • ল্যাসিক সার্জারি শেষে চোখ বন্ধ করে থাকতে বলা হয়। ডাক্তারদের নির্দেশ প্রদান শেষে সাথে আসা ব্যক্তির সহায়তায় বাড়ি ফিরে যায় রোগী কিছুটা বিশ্রামের পরেই। ঐদিন যতটা সম্ভব চোখ বন্ধ করে থাকাই উত্তম। যতটা সম্ভব ঘুমিয়ে থাকা বাঞ্চনীয়।
  • প্রথম করনীয় হল ডাক্তারের নির্দেশমত ঔষধ সেবন করতে হবে এবং প্রতিটা আই-ড্রপ যথাসময়ে ব্যবহার করতে হবে।
  • এক সপ্তাহ চোখে অবশ্যই উজ্জ্বল আলো রোধী কালো চশমা পরিধান করতে হবে। সুর্যের আলো, টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন বা অন্য কোন আলোক উৎসের দিকে সরাসরি তাকানো যাবে না।
  • চোখে পানি দেয়া যাবে না, চোখ কচলানো যাবে না। চোখে ধুলাবালি, ধোয়া ঢোকা যাবে না।
  • ঘরের বাইরে না যাওয়াই উত্তম। কারন ধুলোবালি চোখে গেলে সেটা পানির ঝাপটা দিয়ে বের করা সম্ভব না। তখন এটি বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
  • ধুমপায়ীদের এই এক সপ্তাহ ধুমপান ও অন্য ধুমপায়ীদের থেকে দূরে থাকতে হবে। একান্ত প্রয়োজনে পেছনে স্ট্যান্ড ফ্যান চালানো অবস্থায় চোখ বন্ধ করে ধুমপান করতে হবে। কোন অবস্থাতেই চোখ খোলা রেখে ধুমপান করা যাবে না।
  • এক সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসক দুইবার রোগীকে পর্যবেক্ষন করতে পারেন। সপ্তাহের শেষ দিন চোখে পানি দিয়ে চোখের অবস্থা পর্যবেক্ষন করে পরবর্তী চিকিৎসা প্রদান করেন।
  • প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত ধারাবাহিক পর্যবেক্ষনে রোগী মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠবেন।

আমার ল্যাসিক সার্জারি ও সুস্থ হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা থেকে

ল্যাসিক সেন্টারের চিকিৎসকগণ রোগীকে সহজ ও স্বাভাবিক রাখার জন্য সার্জারির আগে বলে থাকেন সপ্তাহখানেকের মধ্যেই আপনার চোখ আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। আপনি স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবেন।
তবে আসলে সেটা সম্পুর্ন সঠিক নয়। বিশেষ করে যাদের চোখের সমস্যা অনেক বেশী ও শেষ সীমার কাছাকাছি তাদের জন্য।

যাদের চশমার ক্ষমতা -৮.০ এর বেশী তারা আমার মত অভিজ্ঞতাই অর্জন করবেন।

এক সপ্তাহ পর আপনি খালি চোখে আগে যা দেখতে পেতেন না তা দেখবেন তবে একটা blurry vision সৃষ্টি হবে। আপনি স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবেন না। আমি কম্পিউটার অপারেট করতাম অপারেটিং সিস্টেমের বিল্ট-ইন ম্যাগনিফাইং টুল ব্যবহার করে।

প্রতিদিন অল্প অল্প করে এই blurry vision দূর হবে। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠবে আপনার চারপাশ। এই ঘটনা অপারেশনের কোন ত্রুটি নয়। সার্জারির পর আপনার চোখ আগের মত প্রাকৃতিক ভাবে ভেজা থাকে না। Dry eye এর জন্য এই সমস্যা হয়। আপনার চোখ আস্তে আস্তে সুস্থ হবে সাথে সাথে Dry eye সমস্যা দূর হবে। এটি একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া।

যাদের চশমার পাওয়ার -৮.০ এর বেশি তাদের আরেকটা সমস্যা হবে। তাদের পুরো ত্রুটিতো ঠিক হয়নি। আবার এ অবস্থায় চোখের ক্ষমতা খুব দ্রুত পরিবর্তন ঘটে যার দরুন চিকিৎসক চশমা দেননা। ফলে চোখের সমস্যা + ব্লারি ভিশন নিয়ে তখনও তারা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন না।

সার্জারির ১ মাস পর আপনি কিছুটা স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপে ফিরে আসতে পারবেন। টেলিভিশন দেখতে তেমন সমস্যা না হলেও কম্পিউটারে কাজ করতে সমস্যা থাকবে, বইয়ের ছোট লেখা পড়তে সমস্যা হবে।

৪৫ দিন থেকে দুই মাস পর মোটামুটি পড়ালেখার কাজটা চালাতে পারবেন। কম্পিউটারেও কিছুটা সমস্যা হলেও কাজ করতে একেবারে অপারগ থাকবেন না।

সার্জারির ৩ মাস পর এমন একজন রোগী মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন। দৃষ্টিগ্রাহ্য ব্লারি ভিশন ও ড্রাই আই সমস্যা থাকলেও নতুন অস্থায়ী অল্প ক্ষমতার চশমা ব্যবহার করে আপনি স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারবেন অন্তত।

সার্জারির ৬ মাস পর আপনি একটা দীর্ঘস্থায়ী সল্প ক্ষমতার চশমা নিতে পারবেন এবং কোন দৃষ্টিগ্রাহ্য সমস্যা উপলব্ধি করবেন না।

তবে আরো অনেকদিন নিয়মিত বিরতিতে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। সার্জারী পরবর্তীতে কমপক্ষে এক বছর ভিটামিন জাতীয় ঔষধ ও Sterile eye drop ব্যবহার করতে হবে চোখ ভেজা রাখতে।

যারা ল্যাসিক করাতে চাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্য

  • অবশ্যই একজন আই স্পেশালিস্ট এর পরামর্শ ব্যতিত ল্যাসিক করাতে যাবেন না।
  • আপনার চোখের ত্রুটির উপর নির্ভর করে সুস্থ হবার সময় কেমন লাগবে তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করুন।
  • বাংলাদেশে কয়েক স্থানে ল্যাসিক সার্জারি করানো যায়, যে চিকিৎসকের কথায় ল্যাসিক করাবেন তার রেফারন্সকে গুরুত্ব দিন। যেখানে সার্জারি করাতে চান সেখানে আগে করিয়েছেন এমন কারো অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করুন।
  • প্রায় ঝুকিহীন হলেও কিছুটা ঝুকি থাকবেই। ল্যাসিক ত্রুটির কারনে স্থায়ী ড্রাই আই, ব্লারি ভিশন হতে পারে তবে এরকম ত্রুটির সংখ্যা একেবারেই নগন্য। ১% এর থেকেও অনেক কম।
  • সার্জারির পর ছয় মাস অতিক্রান্ত হবার আগে নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে যাবেন না যে আপনার সার্জারি ত্রুটিপুর্ন হয়েছে। সার্জারি ত্রুটিপূর্ন হলে তা নিয়মিত চেক-আপ এ ধরা পরবে।
  • অনেক দুর্বল চিত্তের রোগী অপারেশন টেবিলে যাবার আগে কান্নাকাটি করে। এটা কোনভাবেই করা যাবে না। তাহলে চোখ তার স্বাভাবিক অবস্থা থেকে একটা অস্বাভাবিক অবস্থায় পৌছে যায় যেটা সার্জারির সময় ক্ষতিকর হতে পারে।
  • দুই চোখে একসাথে বা আলাদা আলাদা একচোখে একদিন আরেক চোখে আরেকদিন এভাবে করাতে পারেন। তবে আলাদা করলে অসুবিধা হল প্রতি চোখের জন্য আলাদা আলাদা নিয়মে ঔষধ সেবন এবং আই-ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। যা যথেষ্ট ঝামেলাপুর্ন। এছাড়া দুই চোখের অগ্রগতি আলাদা আলাদা হচ্ছে বলে আপনি ঠিক আপনার চোখের অগ্রগতি ধরতে পারবেন না। আপনার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগতে পারে।

ল্যাসিক পরবর্তী ত্রুটি সম্পর্কিত দুটি ওয়েব অ্যাড্রেস –
১. http://www.lasikcomplications.com/
২. http://www.lasikfailures.com/

যারা ল্যাসিক করাতে চাচ্ছেন তারা এই লেখা থেকে ল্যাসিক সার্জারি পদ্ধতি সম্পর্কে জানবেন এবং এটা তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহনে সহায়ক হবে বলে আশা করি।

তথ্যসূত্র -
১. OSB Laser Vision Center, Mirupr এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
২. http://www.allaboutvision.com/
৩. ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

Level 0

আমি এস এ খান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 24 টি টিউন ও 268 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

আমি গতবছর হারুন আই ফাউন্ডেশন থেকে ল্যাসিক করিয়েছিলাম।

    আপনার কি অপারেশন পরবর্তী কোন জটিলতা দেখা দিয়েছিল?
    দেখতে কোণ সমস্যা আছে এখন?

অনেক ধন্যবাদ পোস্ট করার জন্য…………

ধন্যবাদ

Level New

ভাই লেসিক করাতে কত টাকা লাগে ? একটা আনুমানিক ধারণা যদি দেন তাহলে উপকৃত হবো

    OSB Lasik Center, Mirpur এ প্রতি চোখে ২১,০০০ লাগে। দুই চোখে ৪২,০০০ ।
    হাসপাতাল ভেদে কিছু এদিক সেদিক হতে পারে।

ভাই কত টাকা লাগছে?

    OSB Lasik Center, Mirpur এ প্রতি চোখে ২১,০০০ লাগে। দুই চোখে ৪২,০০০ ।
    হাসপাতাল ভেদে কিছু এদিক সেদিক হতে পারে।

ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য

thnx for useful tune

Level 3

তথ্যবহুল পোস্ট। ধন্যবাদ।

অনেক দিন পর এই ব্যাপারটা সম্পর্কে অনেকটাই ধারনা পেলাম । ধন্যবাদ ভাই আপনাকে এমন একটি প্রয়োজনীয় পোস্ট শেয়ার করার জন্য ।

Level 2

Eto details jana silo na. Thanks Bro. 🙂