বাংলাদেশি পদার্থবিজ্ঞানীর বহুল প্রতীক্ষিত অধরা ফার্মিয়ন কণা (ভরহীন কণা) আবিষ্কার। দীর্ঘ ৮৫ বছরে যেটা কেউ পারেনি। পেতে পারেন নোবেল পুরষ্কারও!

দীর্ঘ ৮৫ বছরে যেটা কেউ পারেনি, সেটা করে দেখিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী জাহিদ হাসান। বহুল প্রতীক্ষিত অধরা কণা ফার্মিয়ন, ভাইল ফার্মিয়ন অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন তিনি।

অনন্য এ অবদানের জন্য তৈরী হয়েছে তার নোবেল প্রাপ্তির সম্ভাবনা। গত কয়েকবছরে যারা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন, তাদের অবদানের সাথে এম জাহিদ হাসানের অবদানের তুলনা করেও এ সম্ভাবনার কথা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের একদল গবেষক পদার্থবিদ জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে পরীক্ষাগারে এই কণা খুঁজে পেয়েছেন। এই আবিষ্কার এখনকার মোবাইল ফোন, কম্পিউটারের মতো ইলেকট্রনিক সামগ্রীর গতি বাড়াবে। এতে সাশ্রয় হবে শক্তির।

এই কণা খুঁজে পাবার ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স-এ ভাইল ফার্মিয়নের পরীক্ষামূলক প্রমাণের বিষয়টি বিস্তারিত ছাপা হয়েছে। এই আবিষ্কারের গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে জাহিদ হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ভাইল ফার্মিয়নের অস্তিত্ব প্রমাণের মাধ্যমে দ্রুতগতির এবং অধিকতর দক্ষ নতুন যুগের ইলেকট্রনিকসের সূচনা হবে।

কেমন হবে সেই নতুন যুগের ইলেকট্রনিক সামগ্রী—জাহিদ হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, এই আবিষ্কার কাজে লাগিয়ে তৈরি নতুন প্রযুক্তির মুঠোফোন ব্যবহারের সময় সহজে গরম হবে না। কারণ, এই কণার ভর নেই। এটি ইলেকট্রনের মতো পথ চলতে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে না।’

আদতে গ্রহ-নক্ষত্র থেকে শুরু করে মানুষ পর্যন্ত সব কিছুই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার পিণ্ড। এসব বস্তুকণাকে বিজ্ঞানীরা দুই দলে ভাগ করেন। একটি হলো ফার্মিয়ন, যার একটি উপদল হলো ভাইল ফার্মিয়ন। ১৯২৯ সালে হারম্যান ভাইল এই কণার অস্তিত্বের কথা প্রথম জানালেও সম্প্রতি প্রথমবারের মতো এর পরীক্ষামূলক প্রমাণ হাজির করলেন জাহিদ হাসান।

আরেক জাতের কণা হলো ‘বোসন’, যার নামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তাঁর আবিষ্কারের ৯১ বছর পর ভাইল ফার্মিয়নের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়ে পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে যুক্ত হলেন আরেক বাঙালি জাহিদ হাসান।

জাহিদ হাসান জানান, মোট তিন ধরনের ফার্মিয়নের মধ্যে ডিরাক ও মায়োরানা নামের বাকি দুই উপদলের ফার্মিয়ন বেশ আগেই আবিষ্কৃত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা ভেবেছেন, নিউট্রিনোই সম্ভবত ভাইল ফার্মিয়ন। কিন্তু ১৯৯৮ সালে নিউট্রিনোর ভরের ব্যাপারটা নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে আবার ভাইল ফার্মিয়নের খোঁজ শুরু হয়।

এই বিশ্বজগৎ যত ধরনের কণা দিয়ে তৈরি, তার মধ্যে যেগুলোর আচরণ বোস-আইনস্টাইন সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়, সেগুলোকে বলা হয় বোসন কণা। আর ফার্মি-ডিরাক সূত্র দিয়ে যেসব কণার আচরণ ব্যাখ্যা করতে হয়, সেগুলোকে বলা হয় ফার্মিয়ন।

নোবেলজয়ী ব্রিটিশ পদার্থবিদ পল ডিরাক ১৯২৮ সালে কেটি সমীকরণের অবতারণা করেন, যার মাধ্যমে প্রথমবারের মত এন্টি ইলেকট্রন বা পজিট্রনের অস্তিত্বের আভাস পাওয়া যায়। ১৯৩২ সালে আমেরিকান বিজ্ঞানী কার্ল অ্যান্ডারসন সেই সমীকরণের সমাধান করেন।

জার্মান গণিতজ্ঞ ও পদার্থবিদ হেরম্যান ভায়েল ১৯২৯ সালে ডিরাক সমীকরণের আরেকটি সমাধান প্রস্তাব করেন, যাতে ভরহীন একটি কণার অস্তিত্বের সম্ভাবনার কথা বলা হয়, যা পরে পরিচিতি পায় ভায়েল ফার্মিয়ন কণা নামে।

তিন ধরনের ফার্মিয়ন কণার মধ্যে ডিরাক ও মায়োরানা ফার্মিয়ন কণার অস্তিত্বের প্রমাণ বিজ্ঞানীরা আগেই পেয়েছিলেন। আর ৮৫ বছর ধরে নানা তর্ক-বিতর্কের পর অধ্যাপক জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে গবেষকরা পরীক্ষাগারে কৃত্রিমভাবে তৈরি ট্যান্টালুম আর্সেনাইড নামের এক ধরনের ধাতব স্ফটিকের মধ্যে ভায়েল ফার্মিয়নের সন্ধান পান।

অধ্যাপক হাসানকে উদ্ধৃত করে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ভায়েল ফার্মিয়নের আচরণ খুবই অদ্ভুত। এই কণা থেকে এমন অনেক কিছুই বেরোতে পারে যা কল্পনা করার ক্ষমতা আমাদের এই মুহূর্তে নেই।”

তিনি বলছেন, ভায়েল ফার্মিয়ন ব্যবহার করে ভরহীন ইলেকট্রন তৈরি করা সম্ভব, যা প্রতিফলিত না হয়ে বাধাহীনভাবে দ্রুত ছুটতে পারবে। ফলে এখনকার ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মতো তাপ উৎপাদন হবে না, কাজের গতি বাড়বে বহুগুণ।

নতুন ধরনের কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির ক্ষেত্রেও এই কণা সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছেন অধ্যাপক হাসান।

দীর্ঘদিন ধরে ফার্মিয়ন নিয়ে কাজ করছেন কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী আন্তন ভার্খব। আন্তর্জাতিক জার্নাল আইইইই স্পেকট্রামকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উচ্ছ্বসিত ভার্খব বলেন, তত্ত্বীয় জগতের জিনিসপত্র বাস্তব জগতে খুঁজে পাওয়ার মতো আনন্দের বিষয় আর কিছুই নেই।

পেতে পারেন নোবেল পুরষ্কারও

অনন্য এ আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরষ্কারের জন্যও মনোনীত হতে পারেন এ বিজ্ঞানী। তার এ আবিষ্কারের ফলে কেবল তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানই পাল্টে যাবে না, বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে ইলেকট্রনিক ও কম্পিউটারের বাস্তব জগতেও। ইলেকট্রনিক আর কম্পিউটারের জগৎটা এমনিতেই বদলে যাচ্ছে দ্রুত, প্রতিনিয়ত উন্নতি হচ্ছে এ ক্ষেত্রে, কিন্তু এম জাহিদ হাসানদের আবিষ্কার এটাকে কী যে গতি দেবে, মসৃণতা দেবে, তা কল্পনা করতে গিয়ে হইচই পড়ে গেছে বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে।

গত কয়েকবছরে যারা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন, তাদের অবদানের সাথে এম জাহিদ হাসানের অবদানের তুলনা করেও এ সম্ভাবনার কথা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

২০১৪ সালে পরিবেশবান্ধব বিকল্প আলোর উৎস নীল লাইট ইমিটিং ডায়োড (এলইডি) আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন দুই জাপানি ও এক জাপানি বংশোদ্ভূত মার্কিন গবেষক। এরা হচ্ছেন জাপানের গবেষক ইসামু আকাসাকি, হিরোশি আমানো ও জাপানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক শুজি নাকামুরা।

২০১৩ সালে ‘হিগস বোসন’ বা ঈশ্বর কণার অস্তিত্বের তাত্ত্বিক ধারণা দেওয়ায় ব্রিটিশ বিজ্ঞানী পিটার ওয়ের হিগস ও বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী ফ্রাঁসোয়া এংলার্ট পদার্থবিদ্যায় যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ‘হিগস বোসন’ কণা সম্পর্কে এমন ধারণা, যা ব্যাখ্যা করে, কীভাবে কোনো বস্তুর ভর সৃষ্টি হয়। এছাড়া এই তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে, ‘ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্স’র তুলনায় কেন ‘উইকফোর্স’র ব্যাপ্তি ক্ষুদ্র। এর ফলে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে ধারণা পেতে সাহায্য করবে।

আর ২০১২ সালে আলোর মৌলিক একক (ফোটন) বিশুদ্ধ কোয়ান্টাম অবস্থা পরিমাপের পদ্ধতি আবিষ্কারের স্বীকৃতি হিসেবে ফ্রান্সের সার্জ হারোশে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড ওয়াইনল্যান্ডকে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

ঢাকার ছেলে জাহিদ হাসান পদার্থবিদ্যায় লেখাপড়া করেছেন অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ট্যানফোর্ডে পিএইচডি করার পর থেকে তিনি প্রিন্সটনে অধ্যাপনা করছেন।

 

Level 0

আমি জাহিদুল নাদিম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 39 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

অসাধারন আবিষ্কার। মানবকল্যানে বিজ্ঞানের ব্যবহার সব সময়ই সাধুবাদ পেয়েছে। আর সেই কাজটা যখন নিজের দেশের কেউ করে তবে তো কথাই নেই। অনেক ধন্যবাদ অমর চেস্টার জন্য। আমাদের দেশে মেধা আছে এটি তার প্রমান।

যারা মুভি ভালবাসেন তারা আমার মুভি সাইটটি ভিজিট করতে পারেন।  এখানে হিন্দি, ইংলিশ, তামিল সব ধরনের নতুন পুরাতন ছবি পাবেন।

হক সাহেব গেলাম আপনার সাইটে , ভালো লাগলো তবে আপনার কাছে থেকে কিছু ইংরেজি ছবি হিন্দি ডাবড হলে ভালো হত, আপনি তো দেখছি সবেতে আছেন

wish him best of LUCK