এমেরিকার ফ্লোরিডার ওয়েস্থিমার ইন্সটিটিউট ফর সাইন্স এন্ড টেকনোলজির প্রফেসর স্টিভেন ব্যানার নতুন তথ্য দিয়েছেন যে, পৃথিবীর সাথে তুলনা করলে বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গলে প্রথম প্রাণের কোষ গঠনের জন্য অনেক উপযোগী ছিল। এ থেকে অনেকে এমনটা বিশ্বাস ও যুক্তি সম্পন্ন মনে করছেন যে লাল গ্রহ মঙ্গলেই প্রথমে প্রাণের শুরু হয় এবং পরবর্তীতে উল্কার আকারে পৃথিবীতে আসে।
পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের ইতিহাস জানতে গেলে প্রাপ্ত বিভিন্ন ফসিলের তথ্য থেকে জানা যায় যে আমাদের এই গ্রহে প্রথম প্রাণের আবির্ভাব ঘটে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে। কিন্তু কিভাবে প্রথম প্রাণী কোষ পৃথিবীতে এলো সে বিষয়ে আমাদের জ্ঞানের পরিধি খুবই সীমিত।
বিজ্ঞানীদের তথ্যানুসারে গরম পৃথিবী ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়, এ সময় সাধারণ জৈব যৌগ গঠন হয় যা ধীরে ধীরে একত্রিত হয়ে অধিক জটিল জৈব যৌগের তৈরি হয়। মহাসাগরিয় স্রোত ও সমুদ্রতলের জলবিদ্যুতের প্রভাবে সমুদ্র তলদেশে অধিকতর বৃহত্ যৌগ একত্রিত হয়ে শেষ পর্যন্ত প্রথম প্রোটোসেল গঠন করে।
ক্রমবর্ধমানের প্রমান থেকে দেখা যায় যে, প্রথম কোষে DNA এর পরিবর্তে RNA অস্তিত্ব রয়েছে এবং পরে DNAতে পরিবর্তন হয় যা যুক্তিসঙ্গত কিন্তু অর্জন সত্যিই খুব কঠিন, এটা ঘটে বির্বতনের
ইতিহাসের অনেক পরে। আর এটা বিশ্বাস করার জন্য প্রমান হলো অনেক গুরুত্বপূর্ন যৌগ কোষ যার গঠন বেশিরভাগ বা সম্পূর্নটা RNAদারা গঠিত যার বিবর্তন অনেক ধীরে ঘটে।
ব্যানার মনে করেন RNA অনুমান সঠিক হলে বেশি দূর এগো-বেনা। বিঞ্গানীরা মনে করেন প্রথম যখন পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাব ঘটে তখন পৃথিবী পানির নীচে ডুবন্ত ছিল এবং ডাই-অক্সিজেন ছিল খুব স্বল্পমাত্রায়। ব্যানার বলেন এই অবস্থায় প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়, কারণ RNA গঠনের জন্য দুইটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক বোরেট ও মলিবডেট যা অত্যন্ত বিরল।
তিনি বলেন যদি আদি পৃথিবী সত্যিই "পানির দুনিয়া" হয়ে থাকে, তাহলে বোরেট ঘনীভূত হওয়া সত্যিই কঠিন আর মলিবডেট এর জন্য সমস্যা হলো এটা অত্যন্ত জারিত (অক্সিডাইজড)। অর্থাৎ প্রতি মলিবডেট পরমাণুর জন্য চারটি অক্সিজেন পরমাণু প্রয়োজন এবং সম্ভবত প্রাচীন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এত পরিমাণ অক্সিজেন ছিল না।
ব্যানার বলেন যখন সহজ জৈব অণু পানিতে দ্রবীভূত হয় তখন শক্তির উৎস পাওয়া যায় কিন্তু কোন বোরেট ও মলিবডেট এর উপস্থিতি নাই, সুতরাং শেষ ফলাফল হল আলকাতরা- RNAনা। RNAএর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল্ডিং ব্লক তৈরির জন্য- বোরেট খনিজ সহজ জৈব অণুকে কার্বোহাইড্রেট রিং তৈরিতে সাহায্য করে আর মলিবডেনাম তখন রিংগুলোকে পুন:রায় সাজিয়ে রিবোস তৈরি করে। প্রাচীন পৃথিবীর জন্য দুটি খনিজই অত্যন্ত অপ্রতুল, কিন্তু মঙ্গলে এর পরিমাণ প্রচুর।
অদ্যাবধি ১২০ টি মঙ্গলিয় উল্কা থেকে সংগৃহিত তথ্যানুসারে ব্যানারের তত্ত্বের প্রতিশ্রুতিময় প্রমান পাওয়া যায়। ব্যানার বলেন সম্প্রতি মঙ্গলিয় উল্কা পরীক্ষা করে মঙ্গলে বোরন এর অস্তিত্ব ছিল বলে প্রমান পাওয়া যায়। আমরা এখন বিশ্বাস করতে পারি যে সেখানে প্রচুর জারিত মলিবডেনাম ছিল। উপরন্তু সাম্প্রিক গবেষণা থেকে জানা যায় প্রাণের উত্পত্তির এই পরিবেশ এখনও মঙ্গলে বিদ্যমান।
এটা প্রত্যাশা করা কষ্টকর যে উল্কার ভিতরে এক্সট্রিমফিল ব্যাকটেরিয়া জীবিত অবস্থায় পৃথিবীতে এসেছে।
ব্যানার বলেন- মঙ্গলে উত্ক্ষেপন যানে যাতে পৃথিবীর কোন ব্যাকটেরিয়া না থাকে যা মঙ্গলকে সংক্রমিত করতে পারে এ জন্য 'গ্রহ সুরক্ষার' বিষয়ে অনেক সময় ব্যয় করা হয়। কিন্তু এধরনের যাত্রায় অনেক ব্যাকটেরিয়া যেমন- রেডিওডোরান্স বেঁচে থাকতে পারে, বিশেষ করে মহাকাষ যানের ভিতর যদি স্থাপন করা হয়, উল্কা পরীক্ষা করে যেমনটা পাওয়া যায়।
প্রফেসর ব্যানারের প্রদর্শিত প্রমানকে সত্য বা মিথ্যা প্রমানিত করার জন্য যদিও আমাদের কাছে কোন কষ্ঠি পাথর এই মুহূর্তে নাই তবুও আমরা ধারনা করতে পারি যে হয়তো পৃথিবীর আগে মঙ্গলেই প্রথম প্রানের উদ্ভব হয়েছিল। এটা আমরাদের আরও আশান্বিত করে যে আমরা সত্যিই লাল গ্রহ মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাব এবং সম্ভবত সৌর জগতের অন্য কোথাও!! প্রথম প্রকাশ এখানে:
আমি ফজলুর রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 14 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
We share science, technology and idea.