সপ্তম এবং দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া দুই ভাগ্নির গণিত পড়াবার দায়িত্ব পড়েছে আমার ঘাড়ে। মামা হিসেবে হয়ত আমি ততটা খারাপ না, কিন্তু শিক্ষক হিসেবে যাচ্ছেতাই। আমার চেহারার মাঝে কি যেন আছে,পিচ্চি গুলোকে পড়াতে গেলে আগে সবগুলো দাত একসাথে বের করে হেসে তারপর পড়তে বসে। অনেক কষ্টে কিছুটা গম্ভীরতা এনে পড়াতে বসলাম, দেখলাম ছোট ভাগ্নিটা বই নিয়ে বর্গক্ষেত্র নিয়ে কি জানি পড়ছে।আমি সেই দিকেই গেলাম না,বই বন্ধ করে খাতায় ঝটপট চিত্র আঁকলাম।
প্রশ্ন করলাম, এই বর্গের প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য a= 1 হলে কর্নের দৈর্ঘ্য কত হবে?
উত্তর পাবার জন্য ছোট ভাগ্নির দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলাম, তার ঠোটে কেমন যেন অবজ্ঞার হাসি। সে কোনো হিসাবের কিতাবের ঝামেলায় না গিয়ে বলল, ” তোমার মত গাধা ত আর দেখি নাই,স্কেল দিয়ে মেপে নিলেই ত হয়ে গেলো,এটার জন্য প্রশ্ন করার লাগে নাকি?” উত্তর শুনে টাশকি খেলাম। বহু কষ্টে গাম্ভীর্য ধরে রেখে ছোট টাকে ধমক মেরে তাকালাম বড়টার দিকে। সে অবশ্য একটু মাপঝোকে আগ্রহ দেখালো, খাতার মাঝে পীথাগরাসের সুত্র বসিয়ে লিখল-
উত্তর দিয়ে সে আমার দিকে একটু ভাব নিয়ে তাকালো, গাধাটা সঠিক উত্তর দিয়েও এটার কোনো বিশেষত্ব খুজে পেলো না। আমি ওদের বুঝিয়ে দিলাম এই ভাবে-
√2 আসলে একটা অমূলদ সংখ্যা, তার মানে হচ্ছে √2 এর মান যদি আমরা দশমিক ভগ্নাংশে লিখতে চাই তাহলে লেখার মত যথেষ্ট বড় খাতা কখনো পাওয়া যাবে না, কারন এর মান দশমিক এর পর কখন শেষ হবে না, চলতেই থাকবে। তার মানে প্রকৃত মানটা নির্দিষ্ট কিন্তু অনির্নেয়। তাহলে দেখা গেলো, বর্গক্ষেত্রের বাহুগুলো নির্দিষ্ট ও নির্নেয় হলেও এর কর্ণ কিন্তু অনির্নেয়। এইটুকু বলে ওদের দিকে তাকালাম, ওরাও আগ্রিহী হয়ে উঠেছে। ছোট টার মাথায় এখনো স্কেল ঘুরপাক খাচ্ছে মনে হয়, সে প্রশ্ন করলো, “মামা, মনে কর, আমি এই স্কেল দিয়ে মেপে আগে কর্ণটা আঁকি, তারপর কর্নটাকে কেন্দ্র করে বর্গ আঁকি, তাহলে ত এখন কর্ণ আর অনির্নেয় না, এর মান আমি জানি”। আমি বললাম, ঠিক আছে, মনে কর তুমি স্কেল দিয়ে কর্ণটা আঁকলে 1m, বর্গের বাহুগুলো মনে কর a, তাহলে আগের মত পীথাগরাসের সুত্র দিয়ে লিখা যায়,
অর্থাৎ এখন বাহুগুলো অনির্ণেয়, ছোট টা মনে হয় একটু গম্ভীর ভংগিতে মাথা ঝাকিয়ে বলল, তার মানে বর্গের বাহুগুলো নির্নেয় হলে কর্ণ অনির্নেয় আর কর্ণ নির্নেয় হলে বাহুগুলো অনির্নেয়। ২টা একিই সাথে কখনো জানা যাবে না। আমি বললাম, “একদম ঠিক”, আর এই √2 সংখ্যাটা একটা বিশেষ সংখ্যা, কারন এই সংখ্যাটাই মানুষের পর্যবেক্ষিত প্রথম অমূলদ সংখ্যা। তার চেয়ে ভয়ঙ্কর কথা হচ্ছে গিয়ে, এই সংখ্যাটা বের করার জন্য প্রান দিতে হয়ছিল আবিস্কারক কে। বড়টা প্রশ্ন করল,” কেন মামা?” ” আসলে, পীথাগরাসের সময় বিশ্বাস করা হত, সব পূর্ণ সংখ্যারই একটা দৈব ক্ষমতা আছে, জাগতিক সব কিছুকেই পূর্ণ সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যায়। যেমন, তিঁনি ছেলেদেরকে 2এবং মেয়েদের 3 দিয়ে প্রকাশ করেন, তাহলে বিয়ের সংখ্যা হয় 2+3=5। এভাবেই তিনি সব কিছুকে পূর্ণ সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করতেন। কিন্তু, √2 সংখ্যাটা এসে ভেজাল শুরু করল,কারন এটাকে কোনোভাবেই পুর্ণ সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যায় না। এটা মানুষের বিশ্বাসে আঘাত দিলো, যার ফলে মৃত্যু বরণ করতে হল হতভাগা আবিস্কারক কে।
পুর্বে প্রকাশিতঃ গণিত পাঠশালা.কম
=====================================================================================
সবাই মনে করতে পারেন টেকটিউনস এ গনিত নিয়ে পোস্ট দেওয়ার মানে কি ?আসলে আমার মনে হয় যারা টেকনোলোজি পছন্দ করে তারা গনিতও পছন্দ করে।আমি জানি না আমার ধারনা কতটুকু ঠিক।স্কুল কলেজে পড়ার সময় দেখেছি গণিত নামক এক ভীতি পেয়ে বসেছে আমাদের সকলকে।গণিত বিষয়টা যতটা না ভীতিকর, তার চেয়ে ব্যাপারটা বেশি ভীতিকর করে উপস্থাপিত হয় প্রচলিত শিক্ষা ব্যাবস্থা এবং শিক্ষকদের সদিচ্ছার অভাবে। গণিত এ ভালো করতে হবে, এই তাগিদে শিক্ষার্থীদের দৌড়াদৌড়ি কোচিং সেন্টারে কিংবা প্রাইভেট টিচারের কাছে। সেখানেও আবার প্রতিযোগিতা কার চেয়ে কে কত কম অংক করিয়ে দেখিয়ে দেবে A+ পাওয়ানোর পথ।যার সাজেশন যত বেশি কমন পড়ে,সে তত ভাল শিক্ষক, এই হল মনোভাব। আর ফলাফল? ফলাফল শূণ্য না, ফলাফল হচ্ছে প্রতিবছর প্রায় ৫০০০০ A+, এবং তার মাঝে অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থীদের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়ে হতাশ হওয়া।
বর্তমানে অবস্থা বদলাচ্ছে। গণিত নিয়ে মোটামুটি একটা আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ নিয়মিত ভাবেই আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহন করছে। স্থানীয় ভাবে নিয়মিত ভাবে গণিত বিষয়ক প্রতিযোগিতা হচ্ছে। কায়কোবাদ স্যার, জাফর ইকবাল স্যারের মত আরোও অনেক বড় বড় মানুষ গণিত নিয়ে লিখছেন, গণিতকে ছড়িয়ে দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন,আমাদের পথ দেখাচ্ছেন। আমরাও সেই পথের পথিক।
গণিতের মজার বিষয়গুলো সুন্দর ভাবে সবার কাছে উপস্থাপন করা এবং সবাইকে গণিতে আগ্রহী করে তোলার জন্যই গণিত পাঠশালা.কম ।গণিত পাঠশালা.কম বাংলা ভাষায় প্রথম এবং একমাত্র গণিত বিষয়ক পূর্নাঙ্গ ব্লগ সাইট।আমাদের প্রচেষ্টা টা হয়ত অনেক বড় কিছু না, তবুও এটাই হচ্ছে শুরু।একজন মানুষকেও যদি আমরা গণিতে আগ্রহী করে তুলতে পারি তাহলে সেখানেই আমাদের সার্থকতা। আপনার চিন্তাগুলোও যদি একই হয়, তবে আজই চলে আসুন না আমাদের সাথে , নতুন একটি সংস্কৃতির শুরু করার আন্দোলনে, গণিত চর্চার সংস্কৃতি।
বিঃদ্রঃ সকল টেকটিউনার ভাইদের কে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে গণিত পাঠশালা.কম সম্পর্কে মতামত জানানোর জন্য।
আমি মামুন হক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 18 টি টিউন ও 107 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভালো লাগলো ………মজা কতো কিছুতেই না আছে……