প্রোপেন হচ্ছে তিন কার্বন বিশিষ্ট একটি এলকেন যার আনবিক সংকেত {{chem|C|3|H|8}}, সাধারনত একটি গ্যাসীয় পদার্থ কিন্তু উচ্চচাপে বহনযোগ্য তরলে রুপান্তর করা সম্ভব। পেট্রোলিয়াম শোধন এবং প্রাকৃতিক গ্যাস প্রক্রিয়াকরণের সময় এটি উপজাত হিসেবে উৎপন্ন হয়। এটা ইঞ্জিনের জ্বালানী হিসেবে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।
প্রোপেন তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস গ্রুপের সদস্য। এই গ্রুপের অন্য সদস্যরা হলো বিউটেন, প্রোপিলিন, বিউটাডিন, বিউটিন, আইসোবিউটিলিন এবং তাদের মিশ্রণ।
অতিমাত্রায় প্রোপিন (এর আরেকটা নাম প্রোপিলিন) সমৃদ্ধ প্রোপেন গ্যাস যানবাহনের জ্বালানী হিসেবে উপযোগী নয়। প্রোপেনে সর্বোচ্চ ৫% প্রোপিন থাকতে পারবে।
সকল প্রোপেনের একটি সুগন্ধি যৌগ বা এরোমেটিক কমপাউন্ড থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইথেন থাই অল থাকে। তাই কোন কারণে সিলিন্ডার লিক হলে মানুষ সহজেই গ্যাসের গন্ধ টের পায়।
১৯১০ সালে ওয়াল্টার স্নেলিং গ্যাসোলিনের মাঝে উদ্বায়ী পদার্থ হিসেবে প্রোপেনের উপস্থিতি সনাক্ত করেন। এই হালকা হাইড্রোকার্বনের উদ্বায়ী স্বভাবের জন্য এটাকে বুনো গ্যাসের পরিচিতি এনে দেয়। ৩১ মার্চ নিউ ইয়র্ক টাইমস স্নেলিং এর কাজের উপর প্রতিবেদন ছাপায়। "...a steel bottle will carry enough gas to light an ordinary home for three weeks."
এই সময়ে স্নেলিং ফ্রাংক পিটারসন, চেস্টার ক্যার এবং আর্থার ক্যার এর সহায়তায় প্রাকৃতি গ্যাসোলিন শোধনের সময় এলপি গ্যাসকে তরল করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তারা একত্রে আমেরিকান গ্যাসোলিন কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১১ সালে স্নেলিং বিশুদ্ধ প্রোপেন আবিষ্কার করেন এবং ১৯১৩ সালের ২৫ মার্চ এলপি গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ এবং উৎপাদন ইস্যু করা হয়।
ফ্রাঙ্ক পিটারসন এলপি গ্যাস উৎপাদনের আরেকটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যা ১৯১২ সালে প্যাটেন্ট লাভ করে।
আইইউপিএসি অনুসারে প্রোপেনের নামকরণ করা হয়েছে। এখানে প্রপ দ্বারা যৌগে তিন কার্বনের উপস্থিতি বোঝানো হয়েছে।
প্রোপেনের সংকেতঃ C<sub>3</sub>H<sub>৮</sub>
গাঠনিক সংকেতঃ CH<sub>3</sub>- CH<sub>2</sub>- CH<sub>3</sub>
প্রোপেন একটি বর্ণহীন গ্যাস।
প্রোপেনের প্রধান উৎস প্রাকৃতি গ্যাস এবং পেট্রোলিয়াম। এই দুই ক্ষেত্রে প্রোপেন উপজাত বা বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে উৎপন্ন হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস প্রক্রিয়াকরণের সময় কাঁচামাল থেকে বিউটেন, প্রোপেন এবং ইথেন|ইথেনের বড় অংশ আলাদা করা হয়। এই উদ্বায়ী গ্যাসগুলো আলাদা করা না হলে পাইপলাইন জমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রোপেন অন্যান্য এলকেনের মত দহন বিক্রিয়ায় অংশ নেয়। অক্সিজেনের উপস্থিতিতে প্রোপেনের দহনে পানি ও কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়
➡ C<sub>3</sub>H<sub>8</sub> + 5 O<sub>2</sub> → 3 CO2</sub > + 4 H<sub>2</sub>O + তাপ
: প্রোপেন + অক্সিজেন → কার্বন ডাই অক্সাইড + পানি + তাপ
অক্সিজেনের স্বল্পতার কারণে পূর্ণ দহন সংঘটিত হয় না। তারফলে পানি , কার্বন মনোক্সাইড এবং কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়।
➡ C<sub>3</sub>H<sub>8</sub> + 4.5 O<sub>2</sub> → 2 CO<sub>2</sub> + CO + 4 H<sub>2</sub>O + তাপ
: প্রোপেন + অক্সিজেন → কার্বন ডাই অক্সাইড + কার্বন মনোক্সাইড + Water
তবে প্রোপেন অন্যান্য প্রাকৃতিক গ্যাসের তুলনায় বাতাসের চেয়ে ভারী। পূর্ণ দহনে প্রোপেন ৫০ MJ/kg তাপ উৎপন্ন করে।
প্রোপেন বিষাক্ত নয়।
প্রোপেন গ্যাসের দহন এনথালপি হচ্ছে (−২২১৯.২ ± ০.৫) kJ/mol বা (৫০.৩৩ ± ০.০১) MJ/kg ।
২৫ °C (৭৭ °F) তরল প্রোপেনের ঘন্ত্ব ০.৪৯৩ g/cm<sup>3</sup> ।
নিম্ন গলনাংকের কারণে প্রোপেন খুব সহজেই বাষ্পীভূত হতে পারে। একারণে প্রোপেন বারবিকিউ এবং বহনযোগ্য চুলায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেক বাস, ট্যাক্সিক্যাব এবং ফর্কলিফটে প্রোপেনকে জ্বালনী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
শিল্প কারখানার বাইরে প্রোপেনের ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলেছে। কাঠ এবং অন্যান্য জ্বালানীর স্থান দখন করছে প্রোপেন গ্যাস। অনেক জায়গায় প্রোপেন ‘“রান্নার গ্যাস”’ নামে পরিচিত। মূলত প্রোপেন এবং বিউটেনের মিশ্রণ জ্বালানী হিসেবে বিক্রি করা হয়।
যেসকল হাইড্রোকার্বন দহনযোগ্যবহন করে সেগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং মোটরচালিত যানবাহনে ব্যবহার নিরুৎসাহিত বা নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ এই সকল ক্ষেত্রে বিষ্ফোরণের ঝুঁকি থাকে।
প্রোপেন বাতাসের চেয়ে ভারী। যদি কখনো প্রোপেন বহনকারী সিলিন্ডার বা পাইপ লাইন ফেটে যায় সেক্ষেত্রে প্রোপেন কাছাকাছি নিচু জায়গায় জমা হয় এবং বিষ্ফোরণের ঝুঁকি তৈরী করে।
আমি সরদার ফেরদৌস। Asst Manager, Samuda chemical complex Ltd, Munshiganj। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 94 টি টিউন ও 463 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ফেরদৌস। জন্ম সুন্দরবনের কাছাকাছি এক জনপদে। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ থেকে লেখাপড়া করেছি এপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এরপরে চাকরি করছি সামুদা কেমিকেল কমপ্লেক্স লিমিটেডের উৎপাদন বিভাগে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে। এছাড়া আমি বাংলা উইকিপিডিয়ার একজন প্রশাসক।