আইসক্রিম পছন্দ করেনা এরকম মানুষ পৃথিবীতে বিরল। বয়স যতই হোক না কেন অন্যের হাতে আইসক্রিম দেখলে জিভে পানি চলে আসে। শতবর্ষ ধরে মানুষ কোন আইসক্রিম খেয়ে আসছে। আজ তোমাদের শোনাবো কোন আইসক্রিম প্রচলনের গল্প। ১৯ শতকের দিকে ফ্রান্স, জার্মানী এবং ব্রিটেইনে আইসক্রিম খাওয়ার জন্য কাগজ, কাঁচের পাত্র, কাপ এবং পাত্র ব্যবহার করত। ১৭৭০ সালে প্রাপ্ত এক রান্নার বইয়ে গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন প্যাস্ট্রি এবং কেক একই রেসিপিতে তৈরী করা হয়। কিন্তু সেখানে আইসক্রিম কোন তৈরীর কোন পদ্ধতি বর্ণনা করা হয় নাই। তখনকার দিনে আইসক্রিম সবাই খেতে পারত না। এটা দামী ডেজার্ট হিসেবে বিক্রি হত। এক মাত্র ধনীরাই আইসক্রিম খেতে পারত। আর ধনীরা হাতে ধরে কিছু খেত না। ১৮০৭ সালে আঁকা এক চিত্রকর্মে দেখা যায় এক রমনী কিছু খাচ্ছেন। তার হাতে ধরা বস্তুটি কোনাকৃতির।
১৮০০ সালের শেষ দিকে এসে আইসক্রিমের দাম কমা শুরু হয় এবং ১৯০০ সালের দিকে আইসক্রিম সস্তা হয়ে যায়। ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ায় রাস্তাঘাটে আইসক্রিম বিক্রি শুরু হয়। অধিকাংশ আইসক্রিম উৎপাদনকারীরা কাঁচের গ্লাসে করে বিক্রি করত। এই ধরনের আইসক্রিমকে বলা হত “পেনি লিকস”। কারণ এটার দাম ছিলো এক পেনি এবং কাঁচের গ্লাস থেকে চেটে খেটে হত। তবে এটার কিছু খারাপ দিক দেখা দিলো। সাধারণ লোক আইসক্রিম খেয়ে যত্রতত্র কাঁচ পাত্র ফেলা শুরু করল। আর কিছু লোক যেমন কলার খোঁসায় পা পিছলে পড়ে তেমনি কাঁচের পাত্র মাড়িয়ে দিলো। গ্লাস ভাঙলো, পা কেটে রক্ত বের হলো। বাচ্চারা আইসক্রিম কেনার সময় হাতে নিয়ে দেখা গেলো কাঁচপাত্র ভেঙে ফেলেছে। বিক্রেতারা ভাবিত হলো। স্বাভাবিক ভাবে এই অবস্থায় মানুষ ভাবে , ব্যবসা না চললে খাবো কি! বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে তো পথে বসতে হবে। তারা কিছু একটা করার চেষ্টা করলেন। দুজন বিক্রেতা আলাদা ভাবে আইসক্রিমের জন্য এডিবল কনটেইনার আবিষ্কার করে ফেললেন। ১৮৯৬ সালে আইসক্রিম বিক্রেতা ইতালো মারসিনারি আরো চল্লিশজন বিক্রেতাকে সাথে নিয়ে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় ঠেলাগাড়িতে করে প্রথম এডিবল কন্টেইনারে আইসক্রিম বিক্রি করেন। ১৯০৩ সালে তিনি আমেরিকায় এডিবল কন্টেইনার উৎপাদনের যন্ত্রের স্বত্ব বা প্যাটেন্ট লাভ করেন। ১৯০১ সালে এন্টোনিও ভালভোনা A.Valvona & Co. Ltd নামে আইসক্রিম কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০২ সালের শেষের দিকে ইংল্যান্ডের ম্যানচেষ্টার শহরের এনটোনিও ভালভোনা এডিবল বিস্কুট কাপ তৈরীর স্বত্ব অর্জন করেন। ১৯০১ সালে এন্টোনিও ভালভোনা A.Valvona & Co. Ltd নামে আইসক্রিম কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮৮৮ সালের দিকে মি. মার্শাল এর রান্নার বইয়ে প্রথম আইসক্রিম পরিবেশনের জন্য কোন এর কথা বলা হয়। ১৯০৪ সালে সেন্ট লুইস মিশোরিতে তিনটি বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশ্ব মেলা, লুইজিয়ানা ক্রয় প্রদর্শনী (একশ এক বছর পূর্বে ফ্রান্সের কাছ থেকে লুইজিয়ানা অংগরাজ্য কিনে নেয়া হয়।)এবং অলিম্পিক গেমস। মেলা মানেই খাবার বিক্রেতাদের আনাগোনা। অধিকাংশ সুত্র বর্ণনা করেছেন সেই অনুষ্ঠানে ৫০ জনের মত আইস্ক্রিম বিক্রেতা ছিলেন। ডজন খানেকের মত ওয়াফেল প্যাস্ট্রি বিক্রেতাও ছিলেন। আর্নল্ড ফর্নাকও আইস্ক্রিম বিক্রি করতে এসেছেন। তিনি কাগজের পাত্রে আইসক্রিম বিক্রি করছেন। একসময় তার এই কাগজের পাত্র ফুরিয়ে গেলো। কি করবেন তিনি। ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কিবা করা আছে। মেলা হলো ব্যবসায়ীদের কাছে ঈদের দিন। আর্নল্ডের পাশে বসে ওয়াফেল প্যাস্ট্রি বিক্রি করছেন আর্নেস্ট হাম্বি। আর্নল্ড হাম্বির সাথে তার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করল। সিরীয় অভিবাসী আরনেস্ট হাম্বি তার প্যাস্ট্রি কার্ট থেকে কিছু জালাবিয়া তুলে নিলেন। জালাবিয়া হচ্ছে ওয়াফারের মত কুড়কুড়ে মুড়মুড়ে প্রশস্ত প্যাস্ট্রি যা সিরাপের সাথে বিক্রি করা হয়। সিরিয়া, লেবানন, তুরষ্ক এবং ইরাকের কিছু এলাকায় জালাবিয়া দারুন জনপ্রিয়। তিনি জালাবিয়াগুলোকে পাকিয়ে কোন আকৃতির তৈরী করেন। আর্নল্ড সেই কোনগুলোতে আইসক্রিম ভরে বিক্রি করতে শুরু করল। মেলায় আসা মানুষ নতুন এই খাবার খুব পছন্দ করলেন। মেলায় ছড়িয়ে পড়লো এই আইসক্রিমের কথা। প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলো। অন্য বিক্রেতারাও ওয়াফেল কোনে করে আইস ক্রিম বিক্রি শুরু করলো।
মেলা শেষ হয়ে গেলো। কিন্তু কোন আইসক্রিমের জনপ্রিয়তা কমলো না। হাম্বি মেলা শেষে জে পি হেকেলের সাথে যোগ দিয়ে কর্নুকোপিয়া ওয়াফেল কোম্পানী তৈরী করলেন। আর্নেস্ট আমেরিকায় চলে গেলেন এবং সেখানে আইস ক্রিম খাওয়ার নতুন পদ্ধতি বিশ্ব মেলা কর্নুকোপিয়া বিক্রি করতে লাগলেন। কর্নুকোপিয়ার সাথে বিরোধ এড়াতে ১৯১০ সালে হাম্বি মিসোরি কোন কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করলেন।
লেখা আর দীর্ঘায়িত করব না। ১৯০৪ থেকে আমাদের ২০১৪ সালে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। এই শতবছরে মানুষ কয়েক কোটি কোন আইসক্রিম খেয়ে ফেলেছেন। বর্তমান পৃথিবীর সবথেকে বড় আইসক্রিম কোম্পানী হচ্ছে পেনসিলভানিয়ার হার্মিটেজের “জয় কোন কোম্পানী”। এই কোম্পানী বছরে ১.৫ বিলিয়ন কোন তৈরী করে। আলবার্ট জর্জ পরিবারের কয়েকজন সদস্যের সাথে মিলে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড কোন ছাকার (ভাঁজার) মেশিন কেনেন। ১৯১৮ সালে জর্জ এন্ড থমাস কোন কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করা হয়। শত বছর পেরিয়ে সেই কোম্পানীর নাম এখন জয় কোন কোম্পানী। এই কোম্পানীর মালিকানা এখনো জর্জ পরিবারের হাতে রয়েছে।
আমি সরদার ফেরদৌস। Asst Manager, Samuda chemical complex Ltd, Munshiganj। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 94 টি টিউন ও 463 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ফেরদৌস। জন্ম সুন্দরবনের কাছাকাছি এক জনপদে। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ থেকে লেখাপড়া করেছি এপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এরপরে চাকরি করছি সামুদা কেমিকেল কমপ্লেক্স লিমিটেডের উৎপাদন বিভাগে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে। এছাড়া আমি বাংলা উইকিপিডিয়ার একজন প্রশাসক।
এটা ঠিক হল?রাত বিরাতে খুদা লেগে গেল!এখন আইসক্রিম কে কেনে দেবে? 🙁 😛