আমার হাই স্কুলের নাম চালনা কেসি পাইলট কলেজিয়েট হাই স্কুল। বাসা থেকে স্কুলের দুরত্ব আনুমানিক দুই কিলোমিটার হবে। আমরা হেঁটেই স্কুলে যেতাম। আমাদের ক্লাসের ফার্স্ট বয়ের নাম কল্লোল। ওর আরেকটা নাম ছিলো সাগর। মানুষের যে দুইটা নাম রাখা যায় প্রথম আমি জানতে পারি কল্লোলের সাথে পরিচিত হবার পর। আমার পরিচিত জগতে সবার একটা করে নাম থাকতো। বেশ বড়সড় নাম। সবাই অবশ্য ডাকার জন্য বাড়তি অংশ ছেঁটে ছোট করে নিত। যেমন মোঃ নজুরুল ইসলাম সরদার নামে আমাদের গ্রামে একজন লোক আছেন। সবাই তাকে ডাকে নজু বলে। কল্লোল শুধু লেখাপড়ায় ভালো ছিলো তাই না। বাদরামিতেও ভালো ছিলো। বাড়ী আর স্কুলের মাঝামাঝি জায়গা বউমার গাছতলায় ভিডিও গেমসের দোকান ছিলো।
স্কুলের ছুটির পর ফেরার পথে আমরা চুপিসারে ভিডিও গেমসের দোকানে ঢুকে পড়তাম। মোস্তফা গেমসের পোকা ছিলাম আমরা। এক কয়েন গেমের জন্য দুই টাকা দিতে হত। আমাদের ছেলেবেলায় দুইটাকা নিতান্ত ফেলনা ছিলোনা। দুই টাকায় ভালো মানের ইকোনো ডেক্স কলম কেনা যেত। কল্লোল ভিডিও গেমস ভালো খেলত। আমি কিছুক্ষনের মধ্যের মারা পড়তাম মানে খেলার লাইফ হারাতাম। স্কুল জীবনে আমি কখনো মোস্তফা গেমসের শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। যারা পারত তাদের প্রতি আমার অন্য রকম একটা ইয়ে কাজ করত। ডেক্সটপ কম্পিউটার কেনার পর আমি মোস্তফা গেম খেলে পুরোটা শেষ করেছি ২০১১ সালে। ছেলেবেলার সেই চিত্তজয়ী আনন্দ কিন্তু অনুভব করতে পারলাম না। সব কিছুরই বয়স থাকে।
১৯৫৮ সালের কথা। ব্রুকহেভেন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরী’র ইন্সট্রুমেন্টেশান ডিভিশানের প্রধান উইলিয়াম আলফ্রেড হিগিনবোথাম। তিনি নিউক্লিয়ার নন প্রোলিফারেশান নিয়ে গবেষনা করতেন। নানাপ্রয়োজনে গবেষনাগারে মাঝে মাঝে কিছু দর্শনার্থীর সমাগম ঘটত। গবেষণাগার বিজ্ঞানীদের জন্য বেহেশত খানা হলেও স্বাধারন লোকের জন্য চরম বোরিং একটা জায়গা। দর্শনার্থীদের কথা বিবেচনা করে হিগিনবোথাম একটা কম্পিউটার গেম আবিষ্কার করলেন যাতে আগতদের সময়টা ভালো কাটে। হিগিনবোথামের আবিষ্কৃত টেনিস গেমটিই পৃথিবীর প্রথম নির্মিত কম্পিউটার গেম। ১৯৬৮ সালে র্যা লফ বেয়ার ভিডিও গেমসের উপর কাজ শুরু করেন এবং ১৯৭১ সালে তিনি টিভি গেমস এপ্যারেটাসের প্যাটেন্ট অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে ম্যাগানাভক্স “ব্রাউন বক্স”র লাইসেন্স অর্জন করেন এবং ম্যাগানাভক্স ওডেসি নামে বাজারে ছাড়েন। একই বছরে আর্কেড গেম “পং” গেম আবিষ্কার করেন নোলান বুশনেল।
হাজারো ভিডিও গেম বাজারে এসেছে। তাদের ইতিহাস লেখা কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। আপনারও পড়তে ভালো লাগবে না। জাস্ট শুরুর গল্পটা বললাম। সনির প্লে স্টেশান তো আমাদের যুগের কথা। ভিডিও গেমের জায়গা দখল করে নিয়েছে মোবাইল গেম। মোবাইল গেমে পূর্নতা দিয়েছে এন্ড্রয়েড সেটগুলো। এংরি বার্ড যে একবার খেলেছে সে এই গেমের প্রেমে না পড়ে পারে না। আমিও ভাবতাম লোকে একটা মোবাইল গেম নিয়ে কেন এত মাতামাতি করে। আমি প্রথম কয়েকবার এই গেমটা খেলার পর নতুন একটা এন্ড্রয়েড মোবাইল কিনে ফেললাম। স্যামসাং গ্যালাক্সি ওয়াই ডুয়োস।
হিগিনবোথাম তার আবিষ্কৃত টেনিস গেম সম্পর্কে বলেছিলেন, মানুষ আমার নিউক্লিয়ার গবেষনার কথা মনে রাখবে না কিন্তু আমার এই ভিডিও গেমের কথা মনে রাখবে। আজকালকার মোবাইল ফোন, ইমেইলের যুগের সহপাঠিরা অনেক সৌভাগ্যবান। ক্লাস নাইনে ওঠার পর কল্লোলের বাবা বদলি হয়ে যায়। কল্লোলরা বাবার সাথে চলে যায়। তারা এই এলাকার নয়। বাবার চাকরীসূত্রে এসেছিলো। প্রথম দিকে চিঠি চালাচালি হত। পরে একসময় থিতু হয়ে যায় সব। হারিয়ে গেছে কল্লোল। কোন খোঁজ জানিনা তার। স্কুলের বন্ধুরা যখন এক হই তখন মাঝে মধেই আমরা কল্লোলের কথা বলি। কল্লোল কি আমাদের কথা মনে করে একবারও!
আমি সরদার ফেরদৌস। Asst Manager, Samuda chemical complex Ltd, Munshiganj। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 94 টি টিউন ও 463 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ফেরদৌস। জন্ম সুন্দরবনের কাছাকাছি এক জনপদে। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ থেকে লেখাপড়া করেছি এপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এরপরে চাকরি করছি সামুদা কেমিকেল কমপ্লেক্স লিমিটেডের উৎপাদন বিভাগে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে। এছাড়া আমি বাংলা উইকিপিডিয়ার একজন প্রশাসক।
আরে বাহ!আমি ভেবেছিলাম আপনি পরের টিউনটা ভিডিও গেম নিয়ে টিউন করবেন।টিটিতে এসে দেখছি আমার ভাবনাটাই কারেক্ট। 😀 😉