বাঙালী স্বভাব ডাক্তার। কারো কোন অসুখ হলে দুই চারটা ওষুধের নাম সে বিনা টেনশানে প্রেসক্রাইব করে দিতে পারে বিনা ফিসে। ধরেন, আপনার মাথা টিস টিস করছে। পাশ থেকে সাজেশান পাবেন, যান বাসায় গিয়ে নাপা খেয়ে একটা ঘুম দেন, সেরে যাবে। জ্বর মাথাব্যাথার ট্যাবলেট প্যারাসিটামল এসপিরিন বাঙালীর ঘরে পাওয়া যাবে। প্রাচীন রোমানেরা এসপিরিনের মত এক জিনিসের সন্ধান জানত। রোমানরা যোদ্ধা জাতি। তারা বাহুবলে শত্রুপক্ষকে পরাস্ত করত আর জ্বর বিমার হলে সাহায্য নিত এই জ্বর যোদ্ধার। তাদের জ্বর যোদ্ধা ছিলো উইলো গাছের ছাল-বাকল। উইলো গাছের পাতা ও ছালে এক ধরনের উপদান বিদ্যমান যার নাম স্যালিসিন। স্যালিসিন প্রাকৃতিক ভাবে তৈরী একটি উপাদান যার ধর্ম প্রায় এসিটাইলিক এসিডের মত। আর এসপিরিনের রাসায়নিক নাম হলো এসিটাইলিক এসিড।
খ্রিষ্ট্রপূর্ব চারশো সালে হিপোক্রিট বর্ণনা করেছেন, হলুদ পাতা থেকে তৈরী চা জ্বর নিবারন করতে পারে। ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা ছিলো উইলো পাতায় কোন উপাদানের উপস্থিতির জন্য জ্বর এবং ব্যাথা প্রশমিত হয়। উপাদানটি আবিষ্কার করা হয় আঠারোশ শতাব্দীর দিকে। উপাদানটি পুর্বপরিচিত স্যালিসাইলিক এসিড। কিন্তু মানুষ যখন জ্বরের ওষুধ হিসেবে স্যালিসাইলিক এসিড গ্রহন করতে লাগলো তাতে বিরূপ ফলাফল দেখা দিলো। মানূষ অন্ত্রের পীড়া ও মুখে ঘা রোগে ভূগতে লাগলো। ১৮৩২ সালে সাঁইত্রিশ বছর বয়স্ক ফরাসি রসায়নবিদ Charles Gergardt অন্য একটি রাসায়নিক পদার্থের সাথে স্যালিসাইলিক এসিড মিশিয়ে ভালো ফল পেলেন। কিন্তু ফর্মুলা এত জটিল আর সময়সাপেক্ষ ছিলো যে চার্লস হাল ছেড়ে দিলেন।
পয়ষট্টি বছর পরে, জার্মানীর রসায়নবিদ ফেলিক্স হফম্যান তার পিতার আরথ্রাইটিস রোগ নিরাময়ের উপায় অনুসন্ধান করছিলেন। তিনি চার্লসের গবেষণা নিয়ে গবেষণা করলেন। ফেলিক্স পূণরায় স্যালিসাইলিক এসিড আবিষ্কার করেন। ফেলিক্সের আবিষ্কৃত স্যালিসাইলিক এসিডকে আমরা এসপিরিন নামে জানি।
এসপিরিন ব্যবহারে হার্ট এট্যাকারের ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছিলো। ১৯৪৮ সালে ক্যালিফোর্ণিয়ার ডাক্তার লরেন্স ক্রাভেন লক্ষ্য করলেন যে ৪০০ লোককে তিনি এসপিরিন ব্যবহার করতে বলেছেন তাদের কেউই হৃদঘটিত রোগে ভোগে নাই। এরপর তিনি প্রতিদিন তার রোগী ও সহকর্মীদের একটি করে এসপিরিন গ্রহনের জন্য নির্দেশণা দিতেন।
১৮৯৯ সালে বেয়ার এসপিরিন পাউডার তৈরী করে ডাক্তারদের মাঝে বিতরন করেন যাতে তারা তাদের রোগীদের এটা সরবরাহ করতে পারে।
১৯০০ সালে বেয়ার বিক্রির জন্য পানিতে দ্রবনীয় এসপিরিন ট্যাবলেট তৈরী করেন।
১৯১৫ সালে বিনা প্রেসক্রিপশানে বাজার থেকে এসপিরিন ট্যাবলেট বিক্রি শুরু হলো।
১৯৭১ সালে জন ভেন আবিষ্কার করেন, প্রোস্টাগ্লান্ডিনের বিস্তারে বাধা দিয়ে এসপিরিন জ্বর নিবারণ করে।
যোগাযোগঃ
এবং
আমি সরদার ফেরদৌস। Asst Manager, Samuda chemical complex Ltd, Munshiganj। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 94 টি টিউন ও 463 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ফেরদৌস। জন্ম সুন্দরবনের কাছাকাছি এক জনপদে। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ থেকে লেখাপড়া করেছি এপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এরপরে চাকরি করছি সামুদা কেমিকেল কমপ্লেক্স লিমিটেডের উৎপাদন বিভাগে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে। এছাড়া আমি বাংলা উইকিপিডিয়ার একজন প্রশাসক।
ঘুরাঘুরি করতে করতে আপনার টিউন চোখে পড়লো।দারুণ এবং একইসাথে মজার কিছু তথ্য জানলাম।উইলো গাছের দেখা যাচ্ছে নানা অংশ উপকারি ! ধন্যবাদ আপনাকে