গোল্ডেন ফাইবার বা সোনালী আঁশ বাংলার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছিলো। নানাবিধ প্রতিকূলতায় পাটের চাষ বাংলাদেশে এখন বিলুপ্তপ্রায়। নিন্দুকেরা বলে থাকে বিদেশে রপ্তানীর সময় ওজন বাড়ানোর জন্য পাটের বান্ডিলে ইট ভরে দেয়া হত। কথাটার সত্য মিথ্যা জানিনা। কিন্তু বাংলাদেশের পাট যে বাজার হারিয়েছে একথা সত্য। বাংলাদেশের অর্থনীতির হাল ধরেছিলো সাদা সোনা বাগদা চিংড়ী। দক্ষিণ বঙ্গের ছেলে হিসেবে আমার তো গর্ব হওয়ার কথা। কিন্তু আমি গর্বিত নই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিংড়ী ঘের গুলো মাঝারী ধনিক শ্রেনীকে সাহায্য করেছে। চিংড়ী ঘের পুরো দক্ষিন বঙ্গকে করেছে বিদ্ধস্ত। আইলা সিডার এখন খুব সহজেই কাবু করতে পারে এই এলাকাকে। নিজের চোখে দেখেছি ওজন বাড়াতে ইনজেকশানের সিরিঞ্জ দিয়ে বাগদায় পুশ করতে। এই খাতও মার খাওয়ার পথে প্রায়। এখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রেখে চলেছে তৈরী পোশাক খাত। সারি সারি সেলাই মেশিনে বসে গার্মেন্টস কর্মী ভাই বোনেরা দিন রাত জেগে বাংলার চাকাকে সচল রেখেছে। অথচ তাজরীন ফ্যাশান হাউসে আমরা তাদের পুড়িয়ে মারছি, রানা প্লাজার কংক্রিটে চাপা দিয়ে মারছি। নেতারা সংসদে এসির বাতাসে বসে গলাবাজি করছো। মনে রেখো অর্থনীতি পঙ্গু হলে তোমাদের আর নেতাগিরি ফলাতে হবে না। শাড়ী লুঙ্গি কাঁছা মেরে মাঠে গিয়ে পাটের বীজ বুনতে হবে তখন, ঘেরে গিয়ে সকাল বিকাল চিংড়ীর খাবার ছিটাতে হবে। ওভার টাইমের আশায় আরো বেশী সময় সেলাই মেশিন চালাতে হবে। সময় থাকতে সাধু সাবধান হও।
১৮০০ সালের শুরুর দিকের কথা। সাধারন মানুষের হাতে তখন খুব একটা টাকা পয়সা থাকতো না। চাইলেই দোকানে গিয়ে নিজেদের জন্য পরিবারের জন্য পোশাক পরিচ্ছদ কেনা যেত না। আমরা তো এক ছুটেই নিউ মার্কেট পৌঁছে যাই। পকেট গরম থাকলে বসুন্ধরা শপিং মল ছাড়া কথা নাই। তখনকার সময়ে মানুষ নিজেদের পোশাক নিজেরাই তৈরী করত। বিত্তশালী লোকেরা অবশ্য দর্জিবাড়ী যেত। জামা প্যান্ট সব বাড়িতেই তৈরী হত সুই সুতার সাহয্যে। বাঙালী মেয়েরা যে স্টাইলে শাড়ী পড়ে তা চালু হয়েছে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ীর মেয়েদের মাধ্যমে। তার আগে মেয়েরা শেমিজ ব্যবহার করত। ১৮৪৬ সালে এলিয়াস হোউই বিরাট পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন। তিনি সেলাই মেশিনের প্যাটেন্ট করেন। যদিও সেলাই মেশিনের ধারনা নতুন কিছু নয়। এই একই ধরনের মেশিন ১৭৫৫ সালে ইংল্যান্ডে, ১৮১৯ সালে আমেরিকায় এবং ১৮৩০ সালে ফ্রান্সে প্যাটেন্ট লাভ করে। প্রথম দিকের মেশিনগুলোর নকশা এমনভাবে করা হয়েছিলো যা শুধু শিল্প কারখানায় ব্যবহার করা যেত।
১৭৫৫ সালে আমেরিকার উদ্ভাবক চার্লস টি উইজেনথায়ল দুই সুচের সেলাই মেশিন উদ্ভাবন করেন। ১৮২৬ সালের ১০ মার্চ ফিলাডেলফিয়ার হেনরি লাই চামড়া সেলাইয়ের মেশিনের প্যাটেন্ট অর্জন করেন। কিন্তু আজকের দিনে তাদের কাজের কোন মডেল অথবা রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যায় না। ফ্রান্সের সেইন্ট এটিনের বার্থেলেমি থিমোনিয়ার ১৮৩০ সালে ডাবল পয়েন্টেড নিডল ব্যবহার করে সেলাই কল তৈরী করেন। তিনি চাকার সাথে সংযুক্ত একটা দন্ডের সাথে সুঁইটিকে সংযুক্ত করতে সক্ষম হন যা সুইটিকে উপর নিচে করতে পারে, ১৮৩৪ সালে আমেরিকার ওয়াল্টার হান্ট দুই সুতার শাটল মেশিনের নকশা আঁকেন। ১৮৪৯ সালে হান্ট তার আবিষ্কারের প্যাটেন্ট করেন। কিন্তু ব্যবসায় মুনাফা করতে ব্যর্থ হলেন।
এলিয়াস হোউই (Elias Howe) ম্যাসাচুসেটসের স্পেনসারে ১৮১৯ সালের জুলাই মাসে ১০ তারিখে জন্মগ্রহন করেন। লেখাপড়া শেষে এলিয়াস একজন মেশিনবিদ হিসেবে চাকুরীজীবন শুরু করেন। বোস্টনে আরি ডেসিসের কাছে কাজ করার সময় এলিয়াস প্রথম সেলাই মেশিনের কথা শোনে। আমেরিকা এবং বাইরের দেশের মানুষ অর্ধ শতাব্দী ধরে এরকম একটি যন্ত্র তৈরী করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু বড় ধরণের কোন সফলতা এখনো আসেনি। বিষয়টা এলিয়াসকে ভাবনায় ফেলে দিলো। সেও চেষ্টা শুরু করলো। তার মেধা, শ্রম, হাত সবই ব্যস্ত থাকলো এই গবেষনায়। পাঁচ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ১৮৪৫ সালে এপ্রিল মাসে সে সফলতার আলো দেখতে পেলো। প্রথম স্বয়ংক্রিয় সেলাই কল তৈরী হলো। প্যাটেন্ট অফিসের কাগজ পুরোন করা হলো ১৮৪৫ সালের অক্টোবর মাসের ২২ তারিখ। ১৮৪৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর এটার অনুমোদন দেয়া হয়।
১৮৫১ সালে ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনের যন্ত্রবিশারদ আইজ্যাক মেরিট সিংগার বাসায় ব্যবহারকারীদের জন্য সেলাই কলে স্কেল সংযোজন করেন। সিংগারের প্যাটেন্ট নম্বর US 10, 975। সিংগার মূলত এলিয়াসের সেলাই মেশিনের সামান্য পরিমার্জন সাধন করেছেন। ১৮৫০ সালের পরে একাধিক সেলাই মেশিন কোম্পানী গড়ে ওঠে। তারা একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করে। এলিয়াস সিঙ্গারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন প্যাটেন্ট আইন ভঙ্গের। তিনি মামলায় জিতে যান। সিঙ্গার এবং অন্য কোম্পানীগুলোকে রয়ালিটি দিতে বাধ্য করেন। ১৮৫৬ সালে সিঙ্গার, হোউই, হুইলার ও উইলসন এবং গ্রুভার ও বেকার মিলে সুইং মেশিন কম্বিনেশান গঠিত হয়। এই চার কোম্পানী তাদের প্যাটেন্ট এক করেন। তার ফলে অন্য ম্যানুফাকচারিং কোম্পানীগুলোকে লাইসেন্স পেতে হবে এবং প্রতিটি যন্ত্র বাবদ ১৫ ডলার পরিশোধ করতে হবে। ১৮৭৭ সালে এই চুক্তি শেষ হয়ে যায়।
সিঙ্গার সেলাই মেশিনের পরিবর্ধন পরিমার্জনের কাজ করেই চললেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন সিঙ্গার সেলাই মেশিন কোম্পানী। কোম্পানীটি পৃথিবীর বৃহত্তম ব্যক্তিগত সেলাই কল তৈরীর প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থান দখল করে নিয়েছে। ১৮৮৯ সালে প্রথম ইলেকট্রিক সেলাই কল বাজারে আনে সিঙ্গার। হোউই ১৮৬৭ সালে মারা যান। মৃত্যুর আগে প্রত্তি স্পতাহে তিনি চার হাজার ডলারের মত রয়্যালিটি পেতেন। তিনি আনুমানিক সর্বমোট ২,০০০,০০০ ডলার রয়্যালিটি অর্জন করেন।
যোগাযোগঃ এবং ।
আমি সরদার ফেরদৌস। Asst Manager, Samuda chemical complex Ltd, Munshiganj। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 94 টি টিউন ও 463 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ফেরদৌস। জন্ম সুন্দরবনের কাছাকাছি এক জনপদে। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ থেকে লেখাপড়া করেছি এপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এরপরে চাকরি করছি সামুদা কেমিকেল কমপ্লেক্স লিমিটেডের উৎপাদন বিভাগে সহকারী ম্যানেজার হিসেবে। এছাড়া আমি বাংলা উইকিপিডিয়ার একজন প্রশাসক।
ভাই আপনি কোখায়?