বন্ধুরা সবাইকে আমার শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের পোস্টটি লেখতে বসলাম।মৃত্যু নিয়ে আমাদের কতই না ভয়। বেহস্ত-দোজখের ব্যfপার তো আছেই। যারা সেটা মানেন না, তাদেরও মৃত্যুভয় কম নয়। কারণ মৃত্যুই যদি শেষ কথা হয়, তাহলে ভয়ের কথাই বটে। কিন্তু নতুন একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলছে মৃত্যুই জীবনের চূড়ান্তরূপ নয়।
কোয়ন্টাম পদার্থবিদ্যা বলছে, কোনো ঘটনার সবদিক একবারে হিসাব করা যায় না। বরং কয়েকটি ভিন্ন সম্ভবনায় ভাগ করে একটাকে অনির্দিষ্ট ধরে আরেকটা সম্ভাবনা যাচাই করতে হয়।
বিজ্ঞানের বহুল চর্চিত একট বিষয় হলো, মাল্টিভার্স তত্ত্ব। এ তত্ত্বের মূল বিষয় যেকোনো বস্তুর যেকোনো অবস্থার বিপরীতে আরেকটি অবস্থা দাঁড় করানো। এই অবস্তানটা হবে তার বর্তমান অবস্থার ঋণাত্মক। উদাহরণ হিসেবে আমরা প্রতি-পদার্থর কথা ভাবতে পারি। ধরা যাক প্রোটনের কথা। তত্ত্বানুযায়ী ধনাত্মক প্রোটনের বিপরীতে ঋণাত্মক প্রোটন থাকার কথা। সেটাকে পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় এন্টি-প্রোটন বা প্রতি-প্রোটন। প্রতিপদার্থ যে শুধুই কোনো থিয়োরি নয়, তার প্রমাণ বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন পরীক্ষাগারে প্রতি-পদার্থ হাজির করে । যেহেতু প্রতি-ইলেক্ট্রন (পজিট্রন), প্রতি-নিউট্রনেরও হদিস পাওয়া গেছে, তাই প্রতি-পরামাণু যে থাকবে তাতে আর সন্দেহ কি! প্রতি-পরামাণু মানেই প্রতি-মৌল। আরে একাধিক প্রতি মৌলের মিশ্রণে তৈরি হয় প্রতি-যৌগ। ষোল কলা পূর্ণ হয়ে গেল প্রতি-পদর্থের। আর প্রতি-পদার্থ আছে নিশ্চয় প্রতি পদার্থের একটা জগৎও আছে। আর সেই জগৎ হবে আমাদের জগৎ অর্থাৎ এই মহাবিশ্বের বিপরীত একটা মহাবিশ্ব। এই মহাবিশ্বের খুব জনপ্রিয় নাম প্যারালাল ইউনিভার্স। আমাদের এই মহাবিশ্বই আর এর সমান্তরাল মহাবিশ্বই কি শেষ। আর কিছু নেই? বিজ্ঞান বলছে আছে। তাই যদি হয়, সেগুলো কোথায়, কেমন, আমরা দেখতে বা পাই না কেন। আমাদের এই মহবিম্বের যা কিছু আমরা দেখি সবই ত্রিমাত্রিক দৃষ্টিতে। মিনেকোস্কি-আইনস্টাইন এই দৃষ্টিটাকে একটু প্রসারিত করে যোগ করেছিলেন আরেকটি মাত্রা। সময়ের মাত্রা। কিন্তু বিজ্ঞান একই সাথে আরেকটি কথাও বলে, চারমাত্রার মধ্যেই আবদ্ধ নয় আমাদের মহাজগৎ। আরো বহুমাত্রা আছে। আসলে আমাদের এই চারমাত্রার মগজ দিয়ে এখনি সেই মাত্রাগুলো দেখার সক্ষমতা আমরা এখনো অর্জন করতে পারিনি। তাই বলে হচ্ছে, বহুমাত্রা যখন আছে তখন আরো মহাবিশ্বও আছে। আর তার সংখ্যা অসীম। আমাদের ত্রিমাত্রিক জগতের প্যারালাল জগতে যদি আমাদের প্রতি-অবস্থাগুলো থাকে তাহলে অন্য মহবিশ্বগুলোতে কী অবস্থা থাকবে? এইখানেই বিজ্ঞানীরা দেখছেন নতুন সম্ভবনা।
এখন যদি প্রশ্ন করা হয় আমাদের মহাবিশ্বে যখন একটা বস্তুর জন্ম হচ্ছে তখন প্যারালাল মহাবিশ্বে সেই বস্তুটির কী ঘটছে। ধরে নিলাম তার সেখানে তার প্রতি-বস্তুর জন্ম হচ্ছে। এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু অন্যমাত্রার অন্য মহাবিশ্বগুলোতে কী ঘটছে? এখানেই কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলছে, যদি আমাদের চারমাত্রিক জগতের জন্ম বা মৃত্যুর কথা হিসাব করি তবে তবে অন্যমাত্রার অন্য মহাবিশ্বগুলোতে একই হিসাব খাটবে না। ধরা যাক, আমাদের মহাবিশ্ব (একই সাথে প্যারালাল মহবিশ্বে) কেউ মৃ্ত্যুবরণ করছে তাহলে আমাদের মহাগতের জন্য এই মৃত্যু নির্দিষ্ট ঘটনা। তাহলে অন্য আরেকটি মহাবিশ্বগুলোর জন্য এই মৃত্যু কোয়ান্টামের ভাষায় নির্দিষ্ট নয়। তখন এরটা হিসেব করতে গেলে অসীম কোনো মানে চলে যাবে। তেমনি অন্য আরেকটি মহাবিশ্বে যদি ওই বস্তুটার মৃত্যুঘটে তবে আমাদের মহাবিশ্বের এই মৃত্যুর হিসাব আসবে অসীম। অর্থাৎ জীবিতও আসতে পারে। এই বিষয় নিয়েই তৈরি হয়েছে নতুন তত্ত্ব। এর নাম ‘বায়োসেন্ট্রিজম’ (biocentrism) তত্ত্ব। সহজ হিসাব যেহেতু মহাবিশ্বের সংখ্যা অসীম সুতরাং জীবন-মৃত্যুর সংখ্যাও অসীম। কোথাও হয়ত সে মৃত। অন্য অসংখ্য মহাবিশ্বে তার জীবিত অবস্থা বিদ্যমান। ‘আমি কে?’—শুধু এই অনুভূতিই মস্তিষ্কে ২০-ওয়াট শক্তি সঞ্চালন করতে পারে। এই শক্তি কি মৃত্যুর সময় বিলুপ্ত হয়ে যায়? মোটেই নয়! নতুন এই তত্ত্ব বলছে, এই শক্তি এক মহবিশ্ব থেকে আরেক মহাবিশ্বে সঞ্চালন হয়। আর এই তত্ত্বের সবচেয়ে বড় ভিত্তি শক্তির নিত্যতা সূত্র। এই সুত্র মতে সূত্রের অবিনশ্বর। তাহলে মস্তিষ্কের ওই শক্তি ঝর্না মৃত্যুর পরে কোথায় যায়? দামি প্রশ্ন।
এই প্রশ্নের আপত সমাধান এই ‘বায়োসেন্ট্রিজম’ তত্ত্ব। সম্প্রতি ‘সায়েন্স’ নামের এক জার্নালে এই তত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে। এই তত্ত্বে দেখানো হয়েছে, কিভাবে কোনো শক্তির বা বস্তুর বিপরীতমুখী পরিবর্তন ঘটতে পারে। ধরা যাক একটা কণা, সে একটি একটা বিমের প্রক্ষিপ্ত একটা কণাকে আপনি পর্যবেক্ষণ করছেন। যখন কণাটা প্রক্ষিপ্ত হচ্ছে আপনি তখন কণাটার দিকে তাকিয়ে আছেন। মানে কণাটার অবস্থান দেখছেন। যে অবস্থান দেখলেন কণার সেই মুহূর্তের আচরণ পর্যবেক্ষণ বা হিসাব করা আপনার জন্য অসম্ভব। আবার এখন কণাটির আচরণের কথা আপনাকে ভাবতে গেলে আপনাকে কণাটিকে থামিয়ে তার আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে, তখন কিন্তু কণার সেই অবস্থান অতীত হয়ে গেছে। আবার কণাটির আচরণ যদি প্রক্ষিপ্ত অবস্থায় পর্যবেক্ষণ করতে যান, তখন দেখবেন কণাটির একটি নির্দিষ্ট অবস্থানের দিকে আর খেয়াল রাখতে পারেন নি। বায়ো সেনট্রিজমের ধারণা আমরা, সময় ও স্থান আসলে কঠিন বা জড় নয়। আপনি দূরের কোন জিনিস হাত বাড়িয়ে নিন, তাহলে অবশিষ্ট কী থাকে? কিছুই নয়। একই ব্যাপার মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করুন। আপনি নিশ্চয়ই কোনো বস্তুকে হাড় বা অন্যকোনো বস্তুর সাহায়্যে দেখছেন না। দেখার বিষয়টা হচ্ছে, কোনো ঘটনা থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আপনার আপনার মস্তিষ্কে প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করবে তখনই কিন্তু দেখার ব্যাপারটা ঘটে। তার মানে আপনি যা কিছু দেখছেন তা জড় পদার্থ নয়। বরং আপনার মস্তিষ্কের ভেতর পূর্ব অভিজ্ঞতা আর মনের প্রতিক্রিয়ার ফসল এই দেখার বিষয়টা। এখানে জড়ের কোনো স্থান নেই। অভিজ্ঞতা বললাম এই কারণে কোনো ঘটনা আপনি যখন দেখবেন তা কিন্তু একেবারে তরতাজা কোনো ঘটনা নয়। কিছুটা অতীতের। কোন ঘটনা থেকে আরো এসে আপনার চোখে না পড়া পর্যন্ত আপনি দেখতে পাবেন না। আলো আসতে যত কমই হোক কিছুটা সময় লাগবেই। সেই সময়টুকু পার হতে হতে সে ঘটনা কিন্ত অতীতে চলে গেছে। উদাহরণ একটু বৃহত্তর দৃষ্টিতে দেখলে আরো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। সুর্যের কথাই ধরা যাক। একন যদি কোনো কারণে সুর্যের বুকে বিরাট একটা বিস্ফোরণ ঘটে, তা দেখতে আমাদের আট মিনিট সময় ব্যয় করতে হবে। অর্থাৎ আমরা যেটা দেখছি সেটা অতীত হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের জন্য সেটা বর্তমান। এখেনে এক্ষেত্রে সুর্যের আমরা সুর্যের আচরণ জানতে পারছি কিন্তু অবস্থান জানতে পারছি না। এখন যদি সুর্যের অবস্থান নির্দিষ্ট করে জানতে হয় তবে আমাদের দুজন পর্যবেক্ষক দরকার হবে। একজন থাকবেন পৃথিবীতে আরেকজন থাকবেন সুর্যে। যিনি সুর্যে থাকবেন তিনি সুর্যের অবস্থানটা ঠিকভাবে মাপতে পারবেন, কিন্তু পৃথিবীতে সুর্যের ওই মহূর্তের অবস্থান জানা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ তার জন্য সেটা আট মিনিট অতীত হয়েছে। একটা কথা বলতে পারি আমরা সবসময় অতীতে বাস করছি। কিন্তু আমরা বর্তমানের কোনো ঘটনা যেটাকে জড় বলছি, সেটা মুলত আমাদের পূর্বঅভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান। আর অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে জড় হিসেবে তাকে আখ্যায়িত করা কঠিন। এখানে মস্তিষ্কের ওই অনুরণন শক্তিটা আসল। অতএব সময় ও স্থানকে বা জড়কে আমরা একই ক্যাটাগরিতে ফেলতে পারি।
অতীতের কথা একটু ভাবা যাক। অতীতকে যদি বাস্তবে খুঁজতে যান নিরাশ হতে হবে। কিন্তু অতীতকে অস্বীকার করার উপায় আছে? আর বর্তমান! আদৌ কি বর্তমানের কোনো অস্তিত্ব আছে। একট যুগকে আমাদের নিজেদের স্বার্থে বর্তমান বলে আখ্যায়িত করি। কিন্তু আরো সু্ক্ষ্ম দৃষ্টিতে যদি বিচার করা হয় তাহলে বর্তমানের অস্তিত্ব কি আছে? মুহূর্তের মধ্যে কোনা ঘটনা অতীত হয়ে যায়। যেটাকে আমরা মুহূর্ত বলছি তার দৈর্ঘ্যেই বা কতটুকু?—হিসাব করা যায় কি? আবার ভবিষ্যৎ, অতীতের মতো বাস্তব না হলেও তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আর সেই ভবিষ্যতের নীরিখে যদি জীবন-মৃত্যুকে বিচার করেন তাহলে সেটা দাঁড়ায়, আপনি জীবত অথবা মৃত। বর্তমানের কথাই ভাবুন (পরম বর্তমান নয়)—আপনি হয়তো গাড়ি নিয়ে কোথাও বেরিয়েছিন। পথিমধ্যে আপনার গাড়ির চাকা নষ্ট হয়ে গেল। আপনি দাঁড়িয়ে পড়লেন। কিন্তু আপনার কোনো স্বজন বাড়িতে বসে ভাবছেন আপনি গাড়িতে আছেন আর আপনার গাড়ি চলমান। এক্ষেত্রে দুটো ভিন্ন পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে দু’রকম ফলাফল পাওয়া গেলো। তেমনি জীবন-মৃত্যুর ক্ষেত্রেও একই ব্যক্তি কারো কাছে মৃত এবং অন্য ব্যক্তির কাছে জীবিত। তিনি হয়তো জানেনই না ওই ব্যক্তি মারা গেছে।
অসীম কালে ও স্থানে মৃত্যুই শেষ কথা হতে পারে না। আইনস্টানের উদ্ধৃতি থেকে বলা বলা যায়, সময় অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের মধ্যে পার্থক্য শুধু একগুঁয়ে বিভ্রমের। সময়ের বাইরে হিসাব করলে বা অসীম সময়ে হিসাব করলে মানুষের জীবন-মৃ্ত্যুর ফলাফল দাঁড়ায় সে জীবিত অথবা মৃত। অসীম মহবিশ্বের হিসাবে তুচ্ছাতিতুচ্ছ এক মানুষের জীবন-মৃত্যুর হিসাব অতি গৌণ। তবু মৃত্যুই শেস কথা নয়। এই মৃতের যে শক্তিটুকু ছিল তা হয়তো আরেকটা কোনো মহাবিশ্বে জীবন হিসেবে বিকশিত হচ্ছে।
সুত্র : Kasper Window
বন্ধুরা সময় পেলে আমার সাইটথেকে ঘুরে আসার নিমন্ত্রণ রইল।
আমি Aehtasham Aumee। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 5 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আসাম হইছে। অনেক কিছু জানতে পারলাম। অনেক ধন্যবাদ।