বর্তমান সময়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক তথা সামগ্রিক উন্নয়নের মাপকাঠি হচ্ছে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই বিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্য চেষ্টা চলছে। আমরাও পিছিয়ে নেই, কিন্তু অগ্রগতির ধারা বেশ মন্থর। বিগত কয়েক বছরে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে, সবার মধ্যেই যথেষ্ঠ আগ্রহ তৈরি হয়েছে, কিন্তু নিজস্ব প্রযুক্তিকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোন একটা দেশে যদি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় দ্রুত অগ্রগতি চাওয়া হয়, তাহলে সেই প্রচেষ্টা শুরু হওয়া উচিৎ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ থেকে। আমরা যদি বিশ্বের অন্যান্য প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পন্ন দেশ সমূহের দিকে লক্ষ করি, তাহলে দেখা যাবে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহেই অনেক বড় বড় গবেষণা হচ্ছে,কিন্তু আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে এ ধরণের চর্চা নেই।আমরা এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহে সিলেবাস এবং পরীক্ষা নির্ভর কারিকুলামে আবদ্ধ।
আমাদের অর্জন
আশার কথা হচ্ছে ইন্টারনেট এবং তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং আমাদের দেশে এগুলোর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী এবং ব্যক্তিগত পর্যায় থেকেও ইন্টারনেট এবং তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা সমগ্র দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আর এরই প্রাথমিক ফলাফল হিসেবে আমরা ইতোমধ্যেই 3G এবং 4G ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছি, বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে ইন্টারনেট সহজ লভ্য করার জন্য Wi-Fi এর ব্যবহার বাড়ছে, গত বছরে বাংলাদেশে ব্যাক্তিগত উদ্দোগে অসংখ্য গুণগত ও মানসম্পন্ন তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বেশ কিছু ট্রেনিং সেন্টার গড়ে উঠেছে, এবং দেশ ব্যাপী বিভিন্ন সময়ে তথ্য প্রযুক্তি, অনলাইন আর্নিং, ই-কমার্স, ইমবেডেড সিস্টেম সহ বিভিন্ন বিষয়ে সেমিনার এবং ওয়ার্কসপের সংখ্যাও বাড়ছে।সোস্যাল নেটওয়ার্ক সমূহের মাধ্যমে গ্রুপ তৈরি করে তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক আগ্রহী ব্যাক্তিদের কার্যক্রম পরস্পরের সাথে বিনিময় করার উদ্দেশ্যে কমিউনিটি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।
এধরণের কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা ব্যাক্তিগতভাবে লাভবান হলেও দেশের সামগ্রিক অবস্থার তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না। এ সকল কার্যক্রম অবশ্যই তরুন সমাজকে উৎসাহিত করছে, কিন্তু দেশে শিক্ষিত ব্যাক্তিদের অনেক বড় অংশ এধরণের কার্যক্রম সম্পর্কে এখনো অবগত নন। আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ হচ্ছে, আমাদের দেশে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষিত সমাজের সিংহভাগই ইন্টারনেট এবং তথ্য প্রযুক্তির সাথে ভালভাবে সম্পৃক্ত নন। শুধুমাত্র যাদের এ বিষয়ে ব্যক্তিগত আগ্রহ আছে, তারাই বর্তমানে পরিচালিত উদ্দোগ, কার্যক্রম এবং কমিউনিটিতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে ব্যাক্তিগত উন্নয়নের চেষ্টা করছে।
প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ থেকেই প্রযুক্তি গবেষণায় উন্নয়ন প্রচেষ্টা শুরু হওয়া উচিৎ
বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে উন্নয়নের মূল ভূমিকা দেশের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষিত সমাজই পালন করে থাকে।আর শিক্ষিত সমাজের ভিত্তি হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ। তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ থেকেই শুরু হওয়া উচিৎ। বর্তমানে প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই সংস্কৃতি, বিতর্ক, ক্রিড়া, ভাষা শিক্ষার জন্য সারা বছর ধরেই কার্যক্রম পরিচালিত হয় কিন্তু বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে উন্নয়নের জন্য সেভাবে কোন কার্যক্রম পরিচালিত হয় না। কোন বিশেষ উপলক্ষকে সামনে রেখে মাঝে মাঝে কিছু কিছু খন্ডকালীন প্রচেষ্টা নেয়া হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
এমন অনেকেই আছেন, যারা ব্যাক্তিগত প্রচেষ্টায় অনেক দূর এগিয়েছেন, কিন্তু এটা করতে গিয়ে তাদেরকে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে এবং অনেক কিছু ত্যাগও করতে হয়েছে। কয়েক দিন আগে আমার ভার্সিটির এক স্যারের সাথে কথা বলছিলাম, “আমাদের এক বড় ভাই এখন একটা প্রতিষ্ঠানে ইমবেডেড সিস্টেম ডেভলপমেন্ট ইজ্ঞিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন, বেশ ভাল বেতনও পান।সকলের মুখে শুনেছি এবং আমি নিজেও যতদূর জানি, ভার্সিটিতে যখন তিনি পড়তেন বিভিন্ন ধরণের প্রজেক্ট নিয়ে সব সময় ব্যাস্ত থাকতেন, এর মধ্যে অনেক প্রফেশনাল প্রজেক্টও ছিলো।স্যারের কাছ থেকে জানতে পারলাম তার রেজাল্ট খুবই খারাপ।” যদিও উনার রেজাল্ট ভাল নয় কিন্তু তিনি তার অভিজ্ঞতা দিয়ে একটা ভাল প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। আবার উনার সহপাঠী অনেকেই আছেন যাদের রেজাল্ট ভাল হলেও অভিজ্ঞতা না থাকায় ভাল পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেননি।
আমাদের জন্য যে বিষয় সমূহ পর্যবেক্ষণীয়
প্রিয় পাঠক, একবার একটু চিন্তা করে দেখুন তো যদি আমাদের বড় ভাই, তার গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহায্য পেতেন, এবং বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রিত কোন গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত হয়ে কাজগুলো করতে পারতেন তাহলে কি যেকোন সমস্যা সহজে এবং স্বল্প সময়ে সমাধান হতে পারতেন না? তিনি কি তার লেখাপড়া করার জন্য সময় বাঁচিয়ে আর একটু ভাল রেজাল্ট করতে পারতেন না? অন্যদিকে যারা শুধুমাত্র লেখাপড়া করে ভাল রেজাল্ট করেছেন তারা ঐ গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত হয়ে প্রযুক্তিগত ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারতেন না?
আসুন একটু চেষ্টা করে দেখি
আমরা একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়বদ্ধতাকে এড়িয়ে যেতে পারি না। তাই আসুন আমরা যার যার অবস্থান থেকে চেষ্টা করি প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পন্ন একটা দেশ গড়তে। আপনি যদি একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাকে থাকেন তাহলে, আপনি পারেন
আজকেই চাড়া গাছটি রোপন করলে, আর কিছুটা পরিচর্যা করলে আগামীতে সেটা বড় হবেই। আর একবার কান্ডটা শক্ত হয়ে গেলে আর পরিচর্যার তেমন দরকার হয় না।তাই ফলের জন্য অপেক্ষা না করে, আগামি কালের জন্য রেখে না দিয়ে আজ থেকেই চেষ্টা করি। আসুন আমরা আমাদের দেশীয় প্রযুক্তিকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করি, উৎসাহিত করি সকল ভাল পদক্ষেপ এবং প্রচেষ্টাকে।উজ্জ্বল আগামি আমাদেরকে হাতছানি দিচ্ছে।সকলের জন্য শুভ কামনা রইল।
……………………………………………………………………………
এটা আমার নতুন বছরের প্রথম লেখা এবং আমার এই বছরের ভাবনা। আপনাদের সাথে বিনিময় করলাম। এ বিষয়ে আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
পোস্টটির মূল লেখক: টিউটোহোস্ট টিম সদস্য "অসিম কুমার"
পোস্টটি ইতোপূর্বে: এখানে প্রকাশিত
আমি টিউটোহোস্ট। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 162 টি টিউন ও 69 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
টিউটোহোস্ট বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ওয়েব হোস্টিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাস্ট্র এবং যুক্তরাজ্য ভিত্তিক দ্রুতগতির বেশ কিছু ওয়েব সারভারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়। আমরা এদেশে ২৪ ঘন্টা এবং বছরে ৩৬৫ দিন অনলাইন এবং ফোন সাপোর্টের ব্যবস্থা রেখেছি। বাংলেদশসহ অনেক দেশের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট আমাদের সারভার ব্যবহার করছে।