হৃৎপিণ্ডের ২৪ ঘন্টার হল্টার মনিটর টেস্ট

এই পরীক্ষার নাম খুব বেশি শুনতে পাওয়া যায়না। কিন্তু জানেন কি, এটি আসলে আমাদের অতি পরিচিত ইসিজি পরীক্ষাই। স্বাভাবিক ইসিজির সাথে এর তফাৎ কি? সারা দিন ও রাত ব্যাপী এই ইসিজি করা হয়। ২৪ ঘন্টা কেন? সাধারনভাবে কয়েক মিনিটের ইসিজি'তে যখন রোগীর হার্টের অসুস্থতার তেমন কোনো কারন খুঁজে পাওয়া যায়না, তখন এই ২৪ ঘন্টার ইসিজি অর্থাৎ হল্টার মনিটর টেস্ট করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কারন খুঁজে পাওয়া যায়না অথচ দেখা যায় যে রোগী ঝিমিয়ে পড়ছে, জ্ঞান হারাচ্ছে, তার রক্তচাপ কমে যাচ্ছে, শরীরে গ্লানির রেশ থাকছে অনেকক্ষণ এবং/অথবা হৃৎপিণ্ডের গতি অস্বাভাবিক হারে বেশি, সেইসব ক্ষেত্রে সাভাবিক ইসিজি'তে যা ধরা পড়েনা সেইসব অনেক সময়ে ধরা পড়ে এই ২৪ ঘন্টার ইসিজি'তে। ধরুন রোগী যখন ডাক্তারের কাছে গেল তখন তার হৃৎপিণ্ড ঠিকমতোই কাজ করছিল, তাই ইসিজি'তে ধরাই পড়লোনা কিছু, কিন্তু রোগী যেহেতু ২৪ ঘন্টা ধরে ইসিজি মেশিনে শুয়ে থাকতে পারবেনা এবং ডাক্তারও একটিই রোগীর সাথে সারাদিন বসে কাটাতে পারবেনা, তাই এই ২৪ ঘন্টা ব্যাপী ইসিজির ব্যবস্থা।

স্বাভাবিক ইসিজির মতোই এক্ষেত্রেও রোগীর শরীরে ৮ - ১২'টি তার লাগিয়ে দেওয়া হয় যাতে থাকে ইলেক্ট্রোড এবং এইগুলির মাধ্যমে হৃদয়ের তড়িৎ সিগন্যালগুলিকে লিপিবদ্ধ করা হয়। কোমরে বেঁধে দেওয়া হয় ছোট্ট একটি যন্ত্র যেটা আসলে ক্যাসেট ওয়াকম্যান। তার ভিতরে থাকে একটি ৯০ মিনিটের টেপ যুক্ত একটি ক্যাসেট, কিন্তু, এই ক্যাসেট টেপ করে এতোই ধীর গতিতে যাতে এই ৯০ মিনিট ক্ষমতাবিশিষ্ট ক্যাসেট পুরো ২৪ ঘন্টা চলে। এই ২৪ ঘন্টা ধরে ওই ৮-১২'টি তারের মাধ্যমে রোগীর হার্টের বিভিন্ন সিগন্যাল এই যন্ত্রে রেকর্ডিং হবে। ক্লিনিকে গিয়ে এই যন্ত্র শরীরে লাগিয়ে নিয়ে রোগী তার বাড়িতে ফিরে আসতে পারবে। একটি দিন গোসল করা যাবেনা বড় কোনো ভারী কাজ না করার কথাই বলেন ডাক্তাররা। এছাড়া সমস্ত স্বাভাবিক অভ্যাস বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া থাকে। ডাক্তার অবশ্য বিভিন্ন পরিস্থিতিতে রোগীর হার্টের গতিবিধি জানার জন্য বিশেষ কিছু পরামর্শ দিতে পারেন যেমন এই ২৪ ঘন্টায় যেন স্বাভাবিক গতিতে ৫০০ মিটারের মতো হাঁটা হয়, ২'তলা কিম্বা ৩'তলা পর্যন্ত সিঁড়ি বেয়ে ওঠা/নামা করা হয় ইত্যাদি। অর্থাৎ, শরীরের উপরে সামান্য চাপ পড়লে রোগীর হৃৎপিণ্ড কিভাবে তাতে রিয়্যাক্ট করে সেটা জানার জন্য।

২৪ ঘন্টা পরে ক্লিনিকে গেলেই সেখানকার ল্যাব এসিস্টেন্টরা যন্ত্রটি খুলে নেবেন এবং ক্যাসেট বসানো হবে মেশিনে, প্রসেসিংয়ের জন্য। বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে এইভাবেই যন্ত্রের সাহায্যে বের হয়ে আসবে গত ২৪ ঘন্টার বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ঘুমে ও জাগরণে রোগীর হৃৎপিণ্ড কতোখানি গতিশীল ছিল, তাতে কি কি অস্বাভাবিকতা দেখা গেলো ইত্যাদি। এই পরীক্ষায় একেবারেই নেই কোনো কষ্ট, শুধু খেয়াল রাখতে হবে যেন শরীরে লাগানো কোনো তার খুলে না যায়, এই ব্যাপারেই একটুখানি সাবধানতার অবলম্বন প্রয়োজন পড়ে।

24 hours holter monitoring

*** কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার ২৪ ঘন্টার বেশিও এই পরীক্ষা চালাতে পারেন। আমি ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত এই পরীক্ষা হতে দেখেছি। *** ইভেন্ট মনিটর হচ্ছে এর আরেকটি টেস্ট, এই ক্ষেত্রে মেশিন সারাক্ষণ চলতে থাকেনা, রোগী যখন যখন তার শরীরে অসুবিধা টের পাবেন তখনই তিনি এই মেশিন চালাতে/থামাতে পারবেন।

Level 0

আমি রিয়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 96 টি টিউন ও 362 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

জীবনের সব ভুল, যদি ফুল হয়ে যায়... জীবনের সব কালো, যদি আলো হয়ে যায়...


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level 0

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

Level New

Australia তে cricket খেলায় দেখেছেন player দের instant heartbeat মাপা হচ্ছে, খেলার মাঠেই,কিছু জানেন এ ব্যাপারে? কেমনে???

    আমি ওই জিনিসটা কাছে থেকে দেখিনি তাই সঠিকভাবে বলতেও পারবোনা ওরা কি ব্যবহার করছেন, তবে আন্দাজ করছি যে ওটা Instant ECG ডিভাইস।

কিছু কিছু জায়গায় হল্টার মেশিন নিয়ে বাসায় আসতে দেয় না। যেমন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ (সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পাশে) থেকে আনতে দেয় না। এজন্য রোগীকে ভর্তি করে রাখে … আবার ক্লিনিকগুলো আনতে দেয় (আপনার টিউনে যেমন বলেছেন তেমন)।

    রোগীকে ভর্তি করে রেখে পরীক্ষা করার ব্যাপারটাও ঘটে তবে সেটা নিতান্তই বানিজ্যিক লাভের প্রত্যাশায়। এক দিনের বেড ভাড়া পাওয়া যায়! অনেক সংস্থা সেইটুকু ছাড়তে চায়না।