নরম্যান জে হল্টারের নামানুসারে যন্ত্রটির নামকরণ করা হয়েছে। হল্টার মনিটরকে চলমান ইসিজি মেশিন বলা যায়। সাধারণ ইসিজি পরীক্ষায় অনেক ক্ষেত্রে রোগীর সমস্যা সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। কারণ যে সময়ে রোগীর ইসিজি করা হয়েছে সে সময় হয়তো রোগীর হৃদপিন্ডে কোন অস্বাভাবিকতা ছিল না। কিন্তু রোগী ঠিকই চিকিৎসকের কাছে অভিযোগ করে চলেছেন।
এসব ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ধরে ইসিজি করার প্রয়োজন হয়। রোগীর শরীরে ব্যাটারীচালিত একটি বিশেষ যন্ত্র লাগিয়ে দেয়া হয় যা বিরতিহীনভাবে ইসিজি ডাটা রেকর্ড করতে থাকে। এই বিশেষ যন্ত্রটিই হচ্ছে হল্টার মনিটর। সাধারণভাবে অনেকসময় একে কেবল হল্টারও বলা হয়।
হৃদরোগের নতুন ওষুধ শুরু করার আগে কিংবা হার্ট এটাকের পরে রোগীর অবস্থা বুঝতেও এ পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে।
ইসিজি মেশিনের মতই হল্টার মনিটর রোগীর হৃদপিন্ডের বৈদ্যুতিক স্পন্দনগুলো রেকর্ড করে। যন্ত্রটির সাথে ৩ থেকে ৮টি ইলেকট্রোড থাকে। এই ইলেকট্রোডগুলো রোগীর বুকে লাগিয়ে দেয়া হয়। আর যন্ত্রটি কোমরে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। অবশ্য গলায় ঝুলানো হতে পারে কিংবা বুকেও লাগিয়ে দেয়া হতে পারে, এমনকি মেয়েদের অন্তর্বাসের সাথে লাগিয়ে দেয়া যায়।
যন্ত্রটি দক্ষ হাতে লাগাতে হয়। এ পরীক্ষার আগে বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হয় না। তবে যন্ত্রটি ভেজানো বারণ। সে কারণে ২৪ ঘন্টা বা ৪৮ ঘন্টা গোসল থেকে বিরত থাকতে হয়। কাজেই হল্টার মনিটর লাগানোর আগেই গোসল করে নেয়া যেতে পারে।
ইলেকট্রোডগুলো যাতে নড়ে না যায় সেজন্য অতিরিক্ত টেপও লাগিয়ে দেয়া হয়। ইলেকট্রোড লাগানোর সময় এলকোহল দিয়ে স্থানটি পরিস্কার করে নেয়া হয়। তাছাড়া কোন পুরুষের বুকে বেশি লোম থাকলে কিছুটা শেভ করে নেয়া দরকার হতে পারে।
পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে রোগীকে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে বলা হয়। বিশেষ করে ব্যায়াম বা যেসব কাজ করতে গিয়ে আগে অসুবিধা হওয়ার নজির আছে সেসব কাজ করতে বলা হয়। রোগী দিনের কোন সময়ে কোন কাজ করছে তারও একটি নোট রাখতে হয়। যাতে কি ধরনের কাজে হৃদপিন্ড কি আচরণ করে সেটা বোঝা যায়।
যন্ত্রটিতে রোগীর ব্যবহারের জন্য একটি বোতাম রাখা হয়। হঠাৎ অসুস্থতা বা এরকম ক্ষেত্রে রোগী বোতামটি চাপেন। পরে বিশ্লেষণের সময় চিকিৎসক ঐ জায়গাটি সহজে বের করতে পারেন।
৯০ মিনিট বা ১২০ মিনিটের একটি ক্যাসেটে পুরো ২৪ বা ৪৮ ঘন্টার ডাটা সংরক্ষণ করা হয়। এজন্য ক্যাসেটটিকে অত্যান্ত ধীরে ঘোরানো হয়। অবশ্য অধুনিক হল্টার মনিটরে ক্যাসেট থাকে না, ক্যাসেটের বদলে সেমিকন্ডাক্টর মেমরী বা ফ্লাশ মেমরীতে সব তথ্য রেকর্ড করা হয়।
পরে এসব তথ্য কম্পিউটারে বিশ্লেষণ করে রোগীর হৃদযন্ত্রে কোন অস্বাভাবিকতা আছে কিনা নির্ণয় করা হয়।
এটি ব্যথামুক্ত একটি পরীক্ষা, তবে রোগী ঘুমানোর সময় কিছুটা অস্বস্তিবোধ করতে পারেন। আর ইলেকট্রোড খোলার সময় যখন টেপ খুলে নেয়া হয়, তখন ব্যান্ডেজ খোলার মত কিছুটা অস্বস্তি হতে পারে।
সতর্কতা:
হল্টার মনিটর ব্যবহারের সময় বৈদ্যুতিক কম্বল ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হয়।
উচ্চ ভোল্টেজের তার রয়েছে কিংবা উচ্চ মাত্রার চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে এমন এলাকা এড়িয়ে চলতে হয়। মেটাল ডিটেক্টর দরজাও এড়িয়ে চলতে হয় পরীক্ষার সময়টাতে।
টেপের আঠার প্রতি রোগীর এলার্জি থাকলে সেটা আগেই চিকিৎসককে জানানো উচিত।
কোন কারণে ইলেকট্রোড যেকোন সময়ে খুলে যেতে পারে, চিকিৎসকের দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতিতে সেটা দ্রুত লাগিয়ে নেয়া উচিত।
সঠিক ফলাফল পেতে রোগীকে অবশ্যই স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যেতে হবে। কাজ না করে বসে থাকলে রোগ নির্ণয় সম্ভব নাও হতে পারে।
মানবদেহের আরও কিছু রোগের টেস্ট সম্পর্কে জানতে নিচে দেখুন:
* ইকোকার্ডিওগ্রাফি
* ইটিটি
* ইসিজি
* করোনারী এনজিওগ্রাফি
* ল্যাসিক
* শকওয়েভ লিথোট্রিপসি বা স্টোন ক্র্যাশ
* লাইপোসাকশন
* এন্ডোস্কপি ও অন্যান্য
* প্লাস্টিক সার্জারি ও কসমেটিক সার্জারি
আমি শাহীন শিমুল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 30 টি টিউন ও 3 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ধন্যবাদ সুন্দর টিউন।