একজন শৈল্য চিকিৎসকের পক্ষে প্রাপ্ত বয়স্ক রুগীদেরকে অপারশন করা যত সহজ, শিশুদের ক্ষেত্রে কিন্তু তত সহজ নয়। শিশুদের দৈহিক ও মানসিক গঠন বড়দের থেকে ভিন্ন। বিশেষ করে নবজাতক অর্থাৎ ৪ সপ্তাহের কম বয়সি শিশুদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থাকে অপরিণত এবং সেগুলি আকার প্রকারেও ভিন্ন। এমনকি শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা অপরিণত থাকার কারনে তাদের পক্ষে অপারেশনের ধকল সহ্য করাও কঠিন। এসব প্রতিকুলতা থাকা সত্তেও জীবন রক্ষার্থে কখনো কখনো তাদেরকে অপারেশনের টেবিলে যেতে হয়।
যে সব কারণে শিশুদের অস্ত্রপচারের প্রয়োজন হয় তার মধ্যে ‘জন্মগত ত্রুটি’ অন্যতম। যে সমস্ত জন্মগত ত্রুটি সারাতে শিশুদেরে অপারেশনের দরকার হয় তার মধ্যে ঠোঁট অথবা তালু কাটা, পরিপাকতন্ত্রের কোথাও পথ বন্ধ থাকা, পুরুষ শিশুর একশিরা এবং হার্নিয়া অন্যতম। আবার এমন কিছু অসুখ আছে যার জন্য প্রয়োজন হয় অতি জরুরী ভিত্তিক অপারেশন। যেমন, পরিপাকতন্ত্র বা শ্বাসতন্ত্রের বিশেষ কিছু বৈকল্য সহ এমন কিছু সংকট যে শিশুটির বেঁচে থাকাটাই ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে পড়েছে - সে ক্ষেত্রে জরুরী ভিত্তিক অপারেশনের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও রয়েছে হৃদযন্ত্রের এবং রক্ত নালীর নানা ধরনের জন্মগত বৈকল্য, যার চিকিৎসার জন্যও ‘অতি জরুরী’ অথবা ‘অতি জরুরী নয়’ এ দুই ধরনের অপারেশনের যে কোন একটির প্রয়োজন হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখানে দেখানো হয়েছে, ২০১০ সালে বাংলাদেশে শতকরা ৭ জন শিশু-মৃত্যুর জন্য জন্মগত ত্রুটিই দায়ী। অন্যান্ন দেশেও শতকরা প্রায় ৫ থেকে ১০ ভাগ শিশুদের মৃত্যু ঘটে থাকে জন্মগত ত্রুটির কারণে।
শিশুদের বেশ কয়েকটি টিউমার আছে যেখানে অপারেশন করা প্রয়োজন। যেমন উইল্মস টিউমার (Wilm’s tumor) যার উৎপত্তি শিশুদের কিডনিতে, হেমানজিওমা (Hemangioma) যার উতপত্তি রক্তনালীতে। এছাড়া লসিকা তন্ত্রের টিউমার যেমন লিম্ফ্যানজিয়োমা (Lymphangioma) এবং ভ্রুনো-কোষ থেকে উত্থিত টিউমার যেমন টেরাটোমা (Teratoma) সহ আরো কিছু টিউমার রয়েছে যেখানে শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। এদের মধ্যে কিছু টিউমার আছে যেগুলি অপা্রেশন, রেডিও থেরা্পি এবং কেমোথেরা্পি এই তিন ধরণের চিকিৎসার সমন্নয়ের মাধ্যমে সম্মপূর্ণ ভালো হয়ে যেতে পারে।
জন্মগত ত্রুটি এবং বিভিন্ন ধরণের টিউমার ছাড়াও শিশুদের আর যে সব কারণে শৈল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয় তার মধ্যে অ্যাপেনডিক্স অপারেশন, টনসিল অপারেশন এবং খতনা অন্যতম। বর্তমানে লেসার সার্জারী, ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারী, নিরাপদ অ্যানেস্থেসিয়া সহ অন্যান্ন আধুনিক ব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটায়, শিশুদের অপারেশন আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়ে এসেছে।
যেহেতু শিশুরা তাদের সমস্যার কথা ঠিক মত জানাতে পারেনা এবং অধিকাংশ অভিভাবকের শিশু স্বাস্থ্য জনিত সমস্যার ব্যাপারে তেমন অভিজ্ঞতা থাকেনা, তাই কখন একটি শিশুর অপারেশনের প্রয়োজন হবে তা অনুধাবন করা অবশ্যই একটি কঠিন কাজ। তাই অভিভাবকদের উচিৎ এই গুরুদায়িত্বটি নিজের হাতে না রেখে যথা সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসকের স্মরনাপন্য হওয়া।
আমি টোটেম ঠাকুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 2 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।