ভালভাবে জানার জন্য ভিডিও টি দেখুন ঃ এখানে
রহস্যে আবৃত ইস্টার দীপ যেন এক অচেনা ভূবন। ৯২২ সালের ইস্টারসানডের দিন, এক ওলন্দাজ অভিযাত্রী দল প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ভাসতে ভাসতে একটি দ্বীপে এসে উপস্থিত হলেন। যে দ্বীপের চারদিকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য দানব আকৃতির মূর্তি। অকল্পনীয় বিশাল দানব আকৃতির মূর্তিরা যেন তাদের,দিকে তাকিয়ে রয়েছে। দ্বীপের এই সব মূর্তিগুলো দেখে ওলন্দাজ অভিযাত্রী দলের সবাইতো অবাক! সবার কৌতুহলে সেই ওলন্দাজ অভিযাত্রী দলের ক্যাপ্টেন অ্যাডমিরান জ্যাকব রগেভিন সিদ্ধান্ত নিলেন এই দ্বীপেই জাহাজের নোঙর ফেলবেন। তাঁর যেই কথা সেই কাজ। তৎক্ষনাৎ সবাই জাহাজেই অবস্থান করলেন। এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা প্রায়। দ্বীপের চারদিক জুড়ে নেমেছে অন্ধকার। ফলে সবাই সারারাত ভয়ে কাঠ হয়ে দ্বীপের দিকে তাকিয়ে রইলেন-কখন ভোর হবে, চারদিক আলো করে সূর্য উঠবে পুরো দ্বপি জুড়ে।সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভয় অবশ্য ভেদে গেলো সবার। যখন দেখলো তারা, নিশ্চল মূর্তিগুলো সত্যিই মূর্তি। অভিযাত্রী দল লক্ষ্য করলেন, বিশাল বিশাল পাথরের মূর্তিগুলো সারা দ্বীপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ফলে উৎসাহের সন্দে সবাই জাহাজ থেকে নেমে পড়লেন। দ্বীপের মানুষ জনের সঙ্গেও দেখা হল সবার।
কিন্তু বিস্ময়ের বিষয়-অভিযাত্রী দল তথ্য নিয়ে জানতে পারলেন-দ্বীপের মানুষেরা এই মূর্তিগুলো গড়েনি।তারা জানেও না, কেবা কারা এই মূর্তিগুলো গড়েছিলো। তবে এই
মূর্তিগুলোকে দেবতা মনে করে দ্বীপবাসীরা নিয়মিত পুজো দেয়। ফলে দ্বীপে ছুড়িয়ে থাকা এই মূর্তিগুলো সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে পুরো ওলন্দাজ অভিযাত্রী দলের আরো কৌতুহল বেড়ে গেলো। সেই দিনটি ছিল ইস্টারসানডে। তাই কৌতুহল বশেই ক্যাপ্টেন রগেভিন এই দ্বীপের নামকরণ করলেন ইস্টার আইল্যান্ড। নিজের জার্নালে তিনি ইস্টার আইল্যান্ডের এক অদ্ভুত দৃশ্যের কথা লেখেন। তা হল-বিস্ময়কর রকমের বড়
পাথরগুলো উপকূল বরাবর দাঁড় করানো ছিল।ইস্টার আইল্যান্ডের মূর্তিগুলো সবই তৈরি হয়েছে বিশাল পাথর কুঁদে বা কেটে। কিন্তু গবেষকদের প্রশ্ন হল এই দ্বীপ বাসীরা সেই কৌশল শিখলো কি করে? আর পাথরগুলোই তারা বয়ে আনলো কিভাবে এবং কোথা থেকে?
এ ব্যাপারে দ্বীপবাসীদের কেউ কিছু জানেনা। অথচ যুগ যুগ ধরে এই মূর্তিগুলো ইস্টারদ্বীপেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ফলে এ বিষয়টি নিয়ে অভিযাত্রী দলের সকলেই অবাক হলেন। এরপর ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীতে এই রহস্যের কথা ছড়িয়ে পড়লো। ইস্টার আইল্যান্ড নিয়ে শুরু হল গবেষণা।
বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিত্ব থর হেয়ারডাল প্রচুর গবেষণা ও খনন কার্যের পর তথ্য দিলেন ৩৮০ খৃষ্টাব্দে পেরু থেকে কিছু মানুষ এসে এই দ্বীপে বসবাস শুরু করেন। তারা তৈরী করেছিলো রাস্তা, মন্দির, মানমন্দির ও সুরঙ্গ পথ। ১২৮০ খৃষ্টাব্দে পেরু থেকেই অন্য লোকজন এসে দ্বীপটি দখল করে নেন। ধারণা করা হয়, তারাই এই মূর্তিগুলো গড়েন। মূর্তিগুলোর কান লম্বা।রেডিও কার্বন পরীক্ষার সাহায্যে থর হেয়ারডাল এসব তথ্য পৌঁছালেও বহু গবেষক এর বিরোধিতা করেন।তাদের মতে, এক অতি প্রাচীন, অথচ উন্নত সভ্যতার চিহ্ন এগুলো।হয়তো সেই সভ্যতা প্রকৃতির খেয়ালে কোন কালে প্রশান্ত মহাসাগরের অতলে তলিয়ে গেছে। তবে কিছু কিছু গবেষক এ ব্যাপারে তথ্য দিয়েছেন ভিন্ন ভাবে।এরই মধ্যেই আবার এই একই দ্বীপের আবিষ্কৃত হল কিছু কাঠের বোর্ড, যার ওপর লেখা আছে আশ্চর্য সব লিপি যার পাঠোদ্ধার করতে দ্বীপের মানুষেরা তো বটেই, বড়ো বড়ো পন্ডিতরা পড়তে ও অক্ষম হলেন। এগুলোর নাম দেয়া হল রং গোরগো।
১৮০০ শতাব্দীতে মূর্তিগুলো মাটিতে পড়ে যায়। এর কিছুকাল পরেই প্রত্নতত্ত্ববিদগ মূর্তিগুলো সমন্বন্ধে অনুসন্ধান শুরু করেন। অনুসন্ধানীদের মতে ইস্টার আইল্যান্ডের উপকূলবর্তী অঞ্চলের সীমানায় এই প্রতিমূর্তিগুলো স্থাপিত। এদের উচ্চতা প্রায় তিনফুট থেকে ছত্রিশ ফুট পর্যন্ত। এদের ওজন প্রায় কুড়ি টন। এই রকম এক
হাজারেরও বেশী মূর্তি এযাবৎ আবিষ্কৃত হয়েছে। তাছাড়া আরো আছে,পাথুরে তৈরী আটশতটি মস্তুক। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় মস্তকটির উচ্চতা বত্রিশ ফুট এবং ওজন নব্বইটন। তাছাড়া অধিকাংশ মূর্তিই তেরো থেকে ষোলো ফুট লম্বা ছিল। কোন কোনটির ওজন ছিল প্রায় পঁচাশিটন। ধারণা করা হয় মূর্তিগুলো খাঁড়া করতে প্রত্নতত্ত্ববিদদরা ক্রেন ব্যবহার করতে হয়েছে। কিন্তু এও সত্য যে প্রাচীন দ্বীপবাসীদের কোন ক্রেন ছিল না। এমনকি তাদের কোন চাকাও ছিল না।
তাহলে প্রশ্ন জাগে মনে, মূর্তিগুলো কিভাবে এলো উপকূলে। কোন কোন বিশেস্নষকের
মতে মূর্তিগুলোকে আগ্নেয়গিরির ডাল থেকে নামানোর জন্য দ্বীপ বাসীরা আখের তৈরী মোটা দড়ি ব্যবহার করতো।অনুমান করা হয় যে, তখন সেই দ্বীপের জনসংখ্যা ছিল প্রায় দুই হাজার। লক্ষ্যনীয়, কতগুলি মূর্তির চোখ আবার সম্পূর্ণ তৈরী ছিলনা। এজন্য তাদের বলা হয় অন্ধমূর্তি। ইস্টার আইল্যান্ডে এরকম মূর্তি রয়েছে প্রায় একশতটি। যদিও এগুলোর চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ছিল ছয়শতটির ও বেশি লম্বা কানওয়ালা মূর্তি।
অবশেষে বলতেই হয়, প্রশান্ত মহাসাগরের ইস্টার আইল্যান্ড সত্যিই রহস্যময়।
তাহলে এত ভারী জিনিষ কি দিয়ে টেনে আনা হল?
কিছূ মূর্তির মাথায় টুপি আর এই টুপি গুলো পরে বানানো।আর খুবই কাঁচা হাতের কাজ।
যারা মূর্তি বানিয়েছে তারা আরো উন্নত ছিল।আর মূর্তির মাথায় টুপি পরানোর দরকার হল কেন?তাহলে কি অনেক উন্নত কেউ ছিল আমাদের মাঝে কারা তারা? ইস্টার দ্বীপের আদিবাসীদের পুরাণে বলে আকাশ থেকে দেবতারা নেমে এসেছিল পৃথিবীতে। তারা ছিল অভিশপ্ত। পরে তাদের আকাশ দেবতা রথে করে স্বর্গে ফিরিয়ে নেন। একটু কল্পনা করি কোন কারণে একদল অতি উন্নত ভিনগ্রহবাসী আটকা পড়ে ইস্টার দ্বীপে।তারা এই মূর্তি গুলো বানিয়েছিল যাতে তাদের অন্য সঙ্গীরা এই মূর্তি দেখে তাদের উদ্ধার করতে পারে।তারপর অনেকদিন পরে কেউ তাদের উদ্ধার করে।ফলে অনেক মূর্তি অসমাপ্ত পাওয়া গেছে।আর স্থানীয় রূপকথার সাথেও মিলে যাই। তাহলে কি সত্যি ইস্টার দ্বীপে কোন ভিনগ্রহের প্রাণীর আগমন ঘটেছিল। নাকি অন্যকিছূ,অনেক রহস্যের মত এই রহস্যের কোন সমাধান নেই।ইস্টার দ্বীপের মূর্তিগুলোকে বলা হয় নেভল অব দ্য ওয়ার্ল্ড। ইস্টার দ্বীপ এখন একটা দারুণ পর্যটনকেন্দ্র।স্থানটিকে বিশ্বের অন্যতম ‘হেরিটেজ সাইট’ হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে।ইস্টার দ্বীপে সারা বছরই গরম থাকে। আছড়ে পড়ে পাগলাটে বানিজ্য বায়ূ। দ্বীপটি এক সময় উদ্ভিদশূন্য হয়ে পড়েছিল। এখন অবশ্য দ্বীপটিতে বিস্তর ঘাস, আলু, আখ, টারো নামে এক ধরনের শিকড়, তামাক আর ক্রান্তিয় ফল জন্মায়। দ্বীপটির পানির অন্যতম উৎস আগ্নেয় হ্রদের বৃষ্টিজল। ইস্টার দ্বীপটি সৃষ্ট হয়েছে আগ্নেয় শিলা দ্বারা।এখন অবশ্য জায়গাটি ঘাস রয়েছে। উপকূলে আছে আগ্নেয় গুহা। আর লাভার সুড়ঙ। সৈকতে আছে প্রবাল।দ্বীপজুড়ে সামুদ্রিক পাখির অভয়ারণ্য।
আমি আজিজুল হক মিলন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 7 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।