[বড় বলে ভয় পাবেন না। পুরা পোস্ট পড়ার অনুরুধ রইল, ভালো লাগবেই!]
বাংলা মুভি নিয়ে রিভিউ আমি খুব কমই দেখেছি। আমি বাংলা ছবির প্রমোশন করছি বলে কেউ আমাকে দেশপ্রেমিক বলে আখ্যা দিবেন না যেন! কারন দেশপ্রেমের লেভেলটা আরো অনেক উপরে। যারা হিন্দি কিংবা ইংলিশ মুভি দেখে তাদেরকেও দেশদ্রুহি বলা উচিৎ না। বিনোদন সব জায়গায় পাওয়া যায় না আর বিনোদন পাওয়ার জন্য আপনি যেকোনো দেশের মুভি দেখতে পারেন কিংবা গান শুনতে পারেন কিন্তু বাংলাটা ছেড়ে দিয়ে নয়। 🙂
আগে আমি মনে করতাম বাংলা মুভির রিভিউ দেওয়ার মত কিছু নেই কিন্তু ইদানীং যে মুভিগুলো বের হচ্ছে তার মদ্ধে কিছু মুভি আছে যেগুলো নিয়ে কথা বলা যায় এবং মানুষকে সেগুলো দেখতে উৎসাহিত করা যায়।
দেশা মুভিটি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি, দুর্নীতি, অপরাধ, অপহরণ এসব বিষয় নিয়ে বানানো। ট্রেইলার দেখে আমার ভালো লেগেছে। আশা করি ছবিটি ভালোই হবে।
পরিচালকঃ সৈকত নাসির
প্রযোজকঃ আব্দুল আজিজ
অভিনয়েঃ মাহিয়া মাহি, শিপন মিত, তরিক আনম খান
গানঃ শফিক তুহিন, কিশোর
স্টুডিওঃ জাজ মাল্টিমিডিয়া
রিলিজঃ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪
পোস্টার দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে বাংলা মুভির সুদিন বেশি দূরে নেই 😛 আমি ব্যাক্তিগত ভাবে খুবই পছন্দ করেছি। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কিছুটা হলেও সফল ভাবে হয়েছে এই মুভিতে। ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল কিংবা দৃশ্যায়ন দেখে মনে হয়েছে গতানোগতিক বাংলাদেশী মুভি থেকে একটু আলাদা হবে এটা। যদিও কনসেপ্ট গুলো তামিল/পশ্চিম বঙ্গের ছবি থেকে নেওয়া।
আগামীকাল ছবিটি মুক্তি পাবে, সবাইকে হলে গিয়ে মুভিটি দেখার আমন্ত্রণ রইল। ট্রেইলার দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
হলে গিয়ে সিনেমা দেখার আমন্ত্রণ জানানোতে কেউ কেউ মনে করতে পারেন আমি পাগল কিংবা দেশা মুভির প্রমোশনের জন্য টাকা পাইসি 😛 এরকম চিন্তা করলে আপনাকে নিজের লেখাগুলো পড়ার জন্য বিনিত ভাবে অনুরুধ করছি।
আমার আগের লিখা গুলো যদি পড়ে থাকেন তাহলে বুঝবেন যে আমি একটু বেশিই জ্ঞানী কথা বলি। বেশীরভাগ সময় জ্ঞানী কথা ভালো লাগে না, শুনতে তিক্ত লাগে। যে কথা গুলো আগে বলেছি এবং এখন বলবো সব গুলো আমার ছোট মাথার ছোট চিন্তা ভাবনা। আপনাদেরকে জানিয়ে আমি নিজে জানতে চাই আসলে আমার চিন্তাগুলো কতোটুকু যুক্তিযুক্ত।
সাকিব খান অভিনয় পারে না, অভার এক্টিং করে এসব কথা ঠিক আর এটাও ঠিক যে বাংলাদেশে অরিজিনাল মুভি খুবই কম হয়। আমি বাণিজ্যিক ধারার মুভি গুলোর কথা বলছি। দর্শকরা (নামে মাত্র) পরিচালক, প্রযোজক আর অভিনয় শিল্পিদের দোষ দেয় কিন্তু কখনই চিন্তা করে না যে দর্শকদেরও দোষ আছে। আমার মতে সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের সাধারন মানুষের মাঝে। অতিতে (২০-২৫ বছর আগে) একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশে হিন্দি, ইংলিশ মুভি চলতো না। তখন বাংলা মুভি গুলোর কুয়ালিটি এখনকার মুভির মতোই ছিল। হিন্দি Sholay সিনেমার রিমেক দেখে বাঙালিরা কেঁদেছে কিন্তু কাউকে বলতে শুনিনি যে এটা নকল সিনেমা। (সেই যোগে আমার জন্ম হয়েছে এবং ছোট বেলা থেকেই মুভি পাগলা ছিলাম তাই কিছু কিছু মনে আছে 😛 ) Sholay দেখার পড়ে একবার আমার মনে হয়েছে যে মনে হয় অমিতাভ বাংলা সিনেমা থেকে নকল করেছে 😀 এখনকার যুগে আমরা বাংলা মুভি থেকে ভালো মানের মুভি পাই বলে বাংলা মুভি দেখি না। সিনেমা জগতের পতনের একমাত্র কারন হল আমরা বাংলা সিনেমা একেবারেই দেখা ছেড়ে দিয়েছি।
ভাই থামেন! আমি জানি আপনার মাথায় এখন একটা জ্ঞানের ডিব্বা লাফালফি করতেসে আর মনে মনে বলছেন যে আসছে এক দেশপ্রেমিক সংস্কৃতিমনা পাগলা 😛 আমি বলি বাংলা মুভি দেখলেও সংস্কৃতি রক্ষা হবে না কারন অনেক আগে থেকেই সংস্কৃতি মুভিতে নাই। এখন আর নতুন করে সেটা খুঁজে লাভ নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে কিছু সংস্কৃতির বলিদান দিতেই হবে! (রবীন্দ্রসঙ্গীতকে অধুনিক ভাবে বানিয়ে শোনার পক্ষে আমি-সংস্কৃতি নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করব)
যাই হোক-আপনার পকেটের টাকা দিয়ে একটা বাংলা মুভি দেখে হল থেকে বের হয়ে চিন্তা করেন যে টাকাটা জলে গেল! আজ থেকে চিন্তা করুন যে একটা টিকেটের টাকা আপনি বাংলা মুভির কল্যাণে দান করলেন! আর যে বিনোদন টুকু পেলেন সেটা ফ্রি! আপনার এই দানের প্রভাবে এমন সময় আসবে যখন আপনাকে সাবটাইটেল ব্যাবহার করে ইংলিশ মুভি দেখতে হবে না কারন সেই মানের ছবি তখন বাংলা ভাষায় নির্মাণ হবে।
উপরের লাইনটা পড়ে অনেক পাঠক এরকম একটা মন্তব্য করত "ভাই সপ্ন দেখতে থাকেন, হলিউড স্টাইলের বাংলা মুভি আপনি দেখতে পারবেন না, আপনার নাতি পুতিরা পারে কিনা সন্দেহ আছে"। বিভিন্ন ফোরামে লিখি আর পাঠকের মন্তব্য দেখি সেই অভিজ্ঞতা থেকে বললাম যে এই মন্তব্যটা আসবেই। কিন্তু যে ব্যাক্তির মনে এই কথাটা আসবে তাকে একবার ভেবে দেখা উচিৎ যে ১০০ বছর পরেও যদি বাংলা ছবি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে যায় তাহলে সেটা কাদের সাহায্যে যাবে। জেমস বন্ড কি আসবে আমাদেরকে সাহায্য করতে? নাহ, তাহলে কে করবে? আমাদের মত বাঙালিরাই করবে। তাই কেননা নাতি পুতির কথা চিন্তা না করে আমারা যেন হলিউড স্টাইলের মুভি বাংলায় দেখে যেতে পারি সে জন্য নিজের জায়গা থেকে যথাসম্ভব চেষ্টা করি। ছোট একটা কাজ সেটা হল বাসায় ইংলিশ এবং হিন্দি মুভি দেখার পাশাপাশি মাঝে মাঝে সিনেমা হলে গিয়ে বাংলা মুভি দেখা আর বন্ধুদের উৎসাহিত করা। আরেকটা কাজ যদি পারেন করবেন সেটা হল বাংলা মুভি গুলোর তথ্য ইন্টারনেটে দেওয়া যেমন IMDb, Wikipedia অনেক ভালো বাংলা মুভির কোন তথ্য এই সাইটগুলোতে নেই!
অনন্ত জলিলের মুভি দেখে মানুষ তাকে অনেক পচাইসে আবার এই কথাও বলেছে যে ব্যক্তি হিসেবে তিনি অনেক ভালো। আমরাই একবার পচাই পরে আবার ভালো বলি!! অনন্তের ছবির মান কতটুকু ভালো সেটা এখন থেকে ৫-৬ বছর আগের মুভিগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন। তার মুভিতে প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক হয়েছে কিন্তু যথাযত প্রয়োগ হয় নি। এটা নিয়ে এত হাসার কি আছে? হাসেন ভালো কথা সাথে এই টুকুও বলেন যে আশা করি ভবিষ্যতে ভালো হবে। সবসময় খারাপ দিকে তাকিয়ে থাকলে ভালো কখনই আপনার দিকে মুখ তুলে তাকাবে না! অনন্তের এই উদ্যোগের কারনেই আজ বাংলা মুভিতে একটু হলেও প্রযুক্তির ব্যাবহার পাওয়া যাচ্ছে।
গ্রামে একটা কথা আছে "হাতিকে দেখে গরু যতই চেষ্টা করুক না কেন হাতির মত এত বড় ইয়ে দিতে পারবে না" (ইয়ে মানে বুঝে নিয়েন 😛 ) হলিউড বলিউডের মুভি দেখে যদি আমারা আজকেই বাংলা মুভিকে সেই জায়গায় দেখতে চাই তাহলে হাতির মত ইয়ে পাওয়ায় আশায় গরুর আপ্রান চেষ্টার সাথে আমাদের চিন্তা ভাবনা মিলে যাবে। সময় দিতে হবে এবং খারাপ দিক গুলোর উন্নতি করার রাস্তা খুঁজার পাশাপাশি ভালো কাজের জন্য বাহবা দিতে হবে (এই জিনিসটা করতে কেন যে বাঙালি নারাজ এটা আমার বোধগম্য না)। ইংলিশ, হিন্দি ছবি আমিও দেখি কিন্তু সাথে বাংলা ছবিও দেখি। কিছু মানুষ আছে বাংলা ছবির নাম শুনলে মুখে একটা বিরক্তির ভাব আনে, ওই দলে আমি নেই। হিন্দি মুভি দেখি বলে আমি দেশদ্রুহি না, ভালো জিনিস যেকোনো দেশের হোক সেটা গ্রহন করা উচিত না হলে আমাদের দেশের ভালো জিনিস গুলোও অন্যদের চোখে পড়বে না!
শেষ কথা হল এই যে, আমার এসব কথা বলাকে কেউ দেশভক্তি মনে করবেন না যেন। এই মহান জিনিসটা নিয়ে আমরা অনেক প্যাঁচাল বাধাই, না বুঝেই একজনকে বলে দেই আপনিতো দেশপ্রেমিক না!! এসব বিষয় অন্তর থেকে আসে, জোড় করে পারবেন না! দেশপ্রেমের জায়গাটা উপরে রেখে চিন্তা করবেন আমার কথাগুলো। ২ টাকে মিক্স না করাই শ্রেয়। 🙂
অনেক কথা বললাম, ইচ্ছা করলে আর লিখতে পারতাম কিন্তু কেন জানি মনে হল এই টুকোই সবাই পরবে না, আর বেশি লিখলে আমায় ধরে মারতেও পারে জনগন 😛 কারন বেশি জ্ঞানি কথা বেশিক্ষণ শুনতে ভালো লাগে না 😛
আবারো বলছি, আপনার সব মতের সাথে আমার সব মত মিলবে না এটাই স্বাভাবিক তাই আমার যে কথা গুলো ভালো লেগেছে সেগুলো মাথায় রাখবেন আর যেগুলো ভালো লাগেনি ঠাণ্ডা মাথায় আমাকে বুঝিয়ে দিন। আপনার যুক্তি পছন্দ হলে আমি আমারটা ছেড়ে দেবো 🙂 বেশি বড় ভুল কিছু বলে ফেললে ভালো কথা গুলোর জন্য বাহবা দিন আর ভুলটা ধরিয়ে দিন। বামে দিয়ে চামে ঠ্যালা দিয়ে কটূক্তি না করলে খুশি হবো। বাংলা মুভি সম্পর্কে আপনার মতামত জানান।
পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই বাংলা মুভি দেখবেন আর ভালো না লাগলে আপনার সময় নষ্ট করার অপরাধে আমার প্রাপ্য দৌড়ানিটা পরিশোধ করে দিয়েন 😛
আমি সোহাগ মিয়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 82 টি টিউন ও 694 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 32 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমার নাম সোহাগ। টেকনোলজির প্রতি চরম আকর্ষণ থাকা সত্ত্বেও পড়েছি বিজনেস নিয়ে। একটু একটু গাইতেও পারি, মাঝে মাঝে গীটার বাজাই। এক কথায়, টেকনোলজির সাথে প্রেম করি আর গানকে বিয়ে করেছি :D । আমার ইউটিউব চ্যানেল। আমার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমার ব্লগে। আমার গাওয়া গানগুলো শুনতে ভিসিট করুন: গানের ইউটিউব...
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ কারন আপনি আমার মনের কথা গুলোই লিখে দিয়েছেন । আমি অনেকদিন ধরে এই বিষয়ে লিখব চিন্তা করছি কারন আমাদের দেশের মানুষ বাংলাদেশের ভালো ফিল্মকে উৎসাহ দেয় না । কেউ কেউ তো বাংলা ফিল্ম মানেই ঘৃণা করে । তাই এর আগে আমি বাংলা ফিল্মে সকলকে উৎসাহ দেয়ার জন্য এই পোস্টটা করেছিলাম – https://www.techtunes.io/news/tune-id/287338 । কিছুদিন আগে চিন্তা করেছিলাম আবার একটা টিউন লিখবো এই বিষয় নিয়ে কিন্তু আপনি আমার মনের কথাগুলো লিখে দিয়েছেন । তাই আপনাকে আবারো অসংখ্য ধন্যবাদ ।