প্রতিবাদ অন্যায়কে পরিবর্তন করার ভাষা।এর মাধ্যমে অর্জিত হয় নিজেদের অধিকার। প্রতিবাদের মাধ্যমে মুক্তি ঘটে পরাধীনতার, বিশৃঙ্খলার। পৃথিবীতে কিছু যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে এই প্রতিবাদের মাধ্যমেই। আসুন দুনিয়া কাঁপানো আরো কিছু প্রতিবাদ সম্পর্কে জেনেনিই:
(চিত্র: তিয়েনআনমেন স্কয়ারে ট্যাঙ্কের সামনে দাড়িয়ে এক বিক্ষোভকারী)
১৯৮৯ সালের জুন মাসে কমিউনিস্ট চীন কেঁপে উঠে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে। এর আগে ১৫ এপ্রিল নিহত হন চীনের সুশীল সমাজের অন্যতম অগ্রনায়ক ও সরকারবিরোধী বুদ্ধিজীবী হু ইয়াওবাং । তার মৃত্যুর পর থেকেই ছাত্র, জনতা ও পেশাজীবীরা প্রতিবাদ জানাতে থাকে বিভিন্ন ভাবে। জুন মাসে রাজধানী বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে এ বিক্ষোভের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এই সময়ে তিয়েনআনমেন স্কয়ারে জমায়েত হয়ে উদার নীতির আদর্শে উদ্ভাসিত প্রায় ১০ লাখ ছাত্র জনতা ও সাধারণ মানুষ চীন সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ জানায়। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে চীন সরকার সামরিক আইন জারি করে কঠোর দমননীতির আশ্রয় নেয়। অনুমান করা হয়, চীন সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রায় কয়েক হাজার প্রতিবাদী মানুষকে সে দিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে হয়েছিলো।
আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে উইকিপিডিয়ার এই লিংক থেকে ঘুরে আসতে পারেন: http://en.wikipedia.org/wiki/Tiananmen_Square_protests_of_1989
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে আলাদা হয়ে গিয়েছিলো জার্মানি। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির রাজনৈতিক ভিন্নতার প্রতীক বার্লিন দেয়াল নির্মিত হয়েছিলো ১৯৬১ সালে বার্লিনের মাঝখান দিয়ে। দেয়াল তুলে আলাদা করে দেওয়া হয়েছিলো সাধারণ জার্মানদের আশা আকাঙ্ক্ষাকে। রাজনৈতিক ভিন্নতার স্বীকার হয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে মুখ দেখাদেখি হয়েছিলো বন্ধ। আশির দশকের শেষ দিকে পূর্ব জার্মানি নিজেদের রাজনৈতিক নীতির উদারীকরণ শুরু করে। ১৯৮৯ সালে সমগ্র পূর্ব ইউরোপে যখন উদার নীতির জয়গান চলছে, ঠিক তখনই পূর্ব জার্মানি পশ্চিমের সঙ্গে সীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে বছরের ৯ নভেম্বর হাজার হাজার জার্মান বার্লিন দেয়ালের কাছে জড়ো হয়ে দেয়ালটি ভেঙ্গে ফেলতে উদ্যত হয়। তারা দেয়ালের ওপর উঠে নেচে-গেয়ে ২৮ বছরের বিচ্ছেদের প্রতিবাদ জানায়। ভেঙে ফেলে সেই বিচ্ছেদের সৌধ। পরের বছর ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে দুই জার্মানির মধুর মিলন ঘটে।
আরো বিস্তারিতের জন্য উইকিপিডিয়ার লিংক: http://en.wikipedia.org/wiki/Berlin_Wall
হোসনি মোবারক সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য মূল্য, অসীম বেকারত্ব মিসরীয়দের দারুণ হতাশার জন্ম দেয়। সেই হতাশার সর্বোচ্ছ বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারী। রাজধানী কায়রোর কেন্দ্রে অবস্থিত তাহরির স্কয়ারে জমায়েত হয় মোবারক বিরোধী লাখ লাখ জনতা। প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এই বিক্ষোভ। পরাজিত হন স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক। পরবর্তীতে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।
১৯৩০ সালের ১২ মার্চ ডান্ডি পদযাত্রা বা লবন সত্যাগ্রহ শুরু হয়। এই সত্যাগ্রহ ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। লবণ পদযাত্রা ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশদের একচেটিয়া লবণ নীতির বিরুদ্ধে একটি অহিংস করপ্রদান-বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলন। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা হয়। ১৯২০-২২ সালের অসহযোগ আন্দোলনের পর লবণ সত্যাগ্রহই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠিত ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন। ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস "পূর্ণ স্বরাজ" প্রস্তাব গ্রহণ করার অব্যবহিত পরেই এই সত্যাগ্রহের সূচনা ঘটে। মহাত্মা গান্ধী আমেদাবাদের কাছে তাঁর সবরমতী আশ্রম থেকে ডান্ডি পদযাত্রা শুরু করে ২৪ দিনে ২৪০ মাইল (৩৯০ কিলোমিটার) পথ পায়ে হেঁটে ডান্ডি গ্রামে এসে বিনা-করে সমুদ্রের জল থেকে লবণ প্রস্তুত করেন। বিরাট সংখ্যক ভারতীয় তাঁর সঙ্গে ডান্ডিতে আসেন। ১৯৩০ সালের ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৬টার সময় গান্ধীজি লবণ আইন ভেঙে প্রথম লবণ প্রস্তুত করেছিলেন। সেই সঙ্গে তাঁর লক্ষাধিক অনুগামীও লবণ আইন ভেঙে ভারতে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করলেন। এই আন্দোলনের ফলে ভারতের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে ব্রিটিশদের মনোভাব অনেকটাই বদলে যায়।
উইকিপিডিয়ার লিংক: http://en.wikipedia.org/wiki/Salt_March
এটি প্রথমআলো ব্লগে করা আমার পুরনো একটি টিউন। প্রথমআলো ব্লগে টিউনটির লিংক:
আমি Hasnat Riaz। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 16 টি টিউন ও 14 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
প্রাক্তন ছাত্র, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ