এইযে সেদিনই তো বুকে সাহসের পাথর বেধে টেকটিউনস এ একটি টিউন করলাম। কতশত ভয়, কতশত আকাঙ্ক্ষা, কতশত আনন্দ... ঠিক ৪-৫ লাইনের মধ্যে টিউনটা লিখেছিলাম। প্রথম কিনা, তাই হাজার হাজার শব্দের মেগা টিউন করার সাহস পাই নি। অপেক্ষায় ছিলাম টিউমেন্ট এর, পেলাম কয়েকটি। কেও ধন্যবাদ জানিয়েছে, কেও আরো ভাল করতে বলেছে কেওবা আবার ফালতু বলেছে। ধন্যবাদ গুলোকে অনুপ্রেরণা করে আর ফালতু গুলোকে উপেক্ষা করে টিউন করা চালিয়ে যাই। আর আজ আমার ১০০ তম টিউন হতে যাচ্ছে... টেকটিউনস এর ২৩তম সেঞ্চুরিয়ান আমি।
➡ সেঞ্চুরি উপলক্ষে গেট টুগেদার ইভেন্ট
ছোট থেকেই কম্পিউটার এর উপর প্রচন্ড নেশা ছিলো। বন্ধুর বাসা, আত্মীয়ের বাসা, এদিকে সেদিকে যেদিকেই কম্পিউটার দেখতাম দাড়িয়ে পরতাম পাশে আর দেখতাম। সুযোগ পেলে একটু টেপাটিপি ও করতাম...
এই কম্পিউটার এর জন্য অনেক বকা শুনেছি, অনেক কথা শুনেছি, অনেক মিথ্যে অপবাদ ও নিয়েছি। কিন্তু এই সামান্য বকা, কথা ও মিথ্যে অপবাদ তো আর আমার ভালবাসা শেষ করতে পারে না... আমি তো "কম্পিউটার লাভার"
মজার বিষয় এক সময় যারা আমাকে তাদের কম্পিউটার নষ্ট করেছি বলে বকাঝকা দিতো, তারাই আজ আমাকে ১০১ বার ফোন করে তাদের কম্পিউটার ঠিক করার জন্য ডাকে। যেই বন্ধুদের বাসায় গেম খেলার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতাম, তারা এখন আমার বাসায় আসে গেম খেলার জন্য।
তখন ক্লাস টু তে পড়ি। যখন প্রথম কম্পিউটার শিখি। আমাদের স্কুল এ প্র্যাক্টিকেল কম্পিউটার শেখাতো। কম্পিউটার অন করা, ওয়ার্ড এ টাইপ করা, বোল্ড করা, ইটালিক করা। সে সময় এর উপরই পাকা হয়ে গিয়েছিলাম। ক্লাস এ সব ছাত্র ছাত্রীদের চেয়ে কম্পিউটার ক্লাস এর জন্য আমার আগ্রহ ছিলো সবচেয়ে বেশি। আর সবার চেয়ে ভালো ও পারতাম। এরপর ওই স্কুল ছেড়ে দেই এবং কম্পিউটার এর সাথে বেশ অনেকদিন যোগাযোগ নেই। এর মধ্যে যেকোনো জায়গায় কম্পিউটার পেলেই একটু গুতাগুতি করতাম। ক্লাস ৪ এ পড়ি, তখন আব্বু বাসায় কম্পিউটার আনে। আমি তো দিশেহারা! তখন সারাদিন কম্পিউটার এ শুধু পেইন্ট করতাম। আর কিছুই পারতাম না। আমার তখন পরীক্ষা চলে, কম্পিউটার এ সময় নষ্ট করি বলে আব্বু কম্পিউটার এর সবকিছু খুলে অফিস চলে যায়। দুর্ভাগ্য ক্রমে সেদিনই আমার পরীক্ষা শেষ ছিলো। আমি স্কুল থেকে ফিরে কম্পিউটার চালু করতে গিয়ে দেখি সব খোলা! আমার তো কান্নাকাটি শুরু... আম্মু আব্বুকে ফোন দিয়ে বলে ওর আজকে পরীক্ষা শেষ, তুমি কম্পিউটার খুলে গেছ তাই কান্নাকাটি করতেছে। আব্বু বল্লো এসে ঠিক করে দিবে। কিন্তু আমার তো আর সয় না... শুরু করে দিলাম নিজে নিজেই, এই তার, ওই তার, কিবোর্ড, এটা-সেটা... বুঝতাম না কিছুই কিন্তু কিভাবে যেন নিজে নিজে সব ঠিকঠাক লাগিয়ে কম্পিউটার অন করে ফেলি! আম্মু আব্বু দুজনেই অবাক 😀
কম্পিউটার টা পরে আব্বু নিয়ে যায় অফিসে। আবারো আমার আর কম্পিউটার এর প্রেমে দীর্ঘ বিরতি। ক্লাস সিক্স এ মামা কম্পিউটার কিনে, ব্যাস! আবারো শুরু হলো আমাদের প্রেম। এইসময় গেম খেলে, এটা করে সেটা করে কম্পিউটার এর টুকটাক অনেক কিছু শিখে ফেলি। আমার আবার একটা খারাপ সভাব ছিলো। একটা গেম ঈমানের সাথে ১দিন খেলতাম, পরদিন সেটাকে হ্যাক করে, চিট দিয়ে, ট্রেইনার দিয়ে গেম এর বারটা বাজিয়ে দিতাম 😉 আমার এক বন্ধু ছিলো ও আমাকে কম্পিউটার এর বিভিন্ন ট্রিক শেখাতো আর আমি ওকে গেম এর ট্রিক শেখাতাম। এভাবে একজন আরেকজন কে শিখিয়ে অনেক কিছুই শিখলাম।
কম্পিউটার এ নেশা দেখা ক্লাস সেভেন এ আব্বু কম্পিউটার কিনে দেয়। আমার স্পষ্ট মনে আছে, সকাল ৬ টায় আমার ঘুম ভাঙত, রাত ১২ টায় ঘুমাতাম। এর মধ্যে খাবার এর জন্য সর্বোচ্চ ১ ঘন্টা ব্যয় করতাম। বাকী ১৭ ঘন্টা কম্পিউটার এ বসে থাকতাম। ওই যা হয় আরকি... কম্পিউটার এর পোকা হয়ে গেলাম 😉
কম্পিউটার এর সাথে দীর্ঘ ২ বছর প্রেম করার পর ২০১১ সালে এক নতুন রমনীর সাথে আমার পরিচয় হয়। তখন আমি ৯ এ উঠলাম মাত্র। 'টেকটিউনস' প্রথম দেখাতেই রমনীর প্রেমে পরে যাই... কি আর করার চলতে থাকে প্রেম...
এর মাঝে অনেক বিরতি, অনেক সময় অতিবাহিত হয়। রমনীকে উপহার ও দিতে থাকি। দেখতে দেখতে ৩ বছর হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন পরেই ৩ বছরে পা দিবো। আর এর মধ্যে ১০০ টি টিউন ও উপহার দেয়া হয়ে গেছে টেকটিউনস কে। আমি টেকটিউনস এর ২২ তম সেঞ্চুরিয়ান!
একটা সময় ইন্টারনেট মানেই বুঝতাম ফেসবুক। কিন্তু টেকটিউনস আমাকে ফেসবুক জগত থেকে বের করে প্রযুক্তি জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
গুগল থেকে কম্পিউটার এর বিভিন্ন টিপস ট্রিক্স সার্চ করতে করতেই টেকটিউনস এর দেখা পাই। টেকটিউনস এর মারাত্মক সব টিপস, ট্রিক্স, ইত্যাদির টিউন দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। আর মজার বিষয় সবই বাংলায়! বুঝতে কোন সমস্যা হয় না, হলেও টিউমেন্ট করে সমাধান নেয়া যায়।
টেকটিউনস থেকেই ওয়েব ডিজাইন, প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারি। জানতে পারি কিভাবে নিজের একটি ওয়েবসাইট করতে হয়, আরো জানি টেকনোলজি জগতের হিরো গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যাপেল ইত্যাদি সম্পর্কে। প্রযুক্তি জগত সম্পর্কে আমার ধারনাই পালটে যায়।
প্রথমে টেকটিউনস এ বিভিন্ন টিপস ও ট্রিক্স এর টিউন পড়তাম। কিভাবে উইন্ডোজ কে মোডিফাই করা যায়, কিভাবে পিসি ফাস্ট করা যায়, কিভাবে উইন্ডোজ এর বিভিন্ন সমস্যা দূর করে ইত্যাদি আরো কত কি! এভাবেই ধীরে ধীরে কম্পিউটার এর গীক হয়ে যাই। কম্পিউটার এর সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ইত্যাদি সম্পর্কে খুব ভালো ধারনা হয়ে যায়।
একসময় নজর যায় ওয়েবসাইট এর উপর। কিভাবে ফ্রীতে নিজের একটি ওয়েবসাইট করা যায়? টেকটিউনস থেকেই পেয়ে যাই ব্লগার এর খোজ, সাথে টিউটোরিয়াল ও! এখান থেকে শিখে ফেলি ব্লগার এর সবকিছু।
টেকটিউনস থেকে আরো যে গুরুত্তপুর্ন বিষয়টি শিখি তা হলো গুগল কে ব্যবহার করা। এরপর গুগল এর সাহায্য নিয়েই সব সমস্যার সমাধান করতে পারতাম। ধীরে ধীরে এসইও, প্রোগ্রামিং, হ্যাকিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ইত্যাদি অনেক কিছু সম্পর্কে জানি টেকটিউনস থেকে। অনেক কিছুই শিখি টেকটিউনস থেকে।
এক কথায় বলতে পারিঃ
বর্তমানে আমি যা, এর ৯০% কৃতিত্ব টেকটিউনস এর।
আসলে টেকটিউনস এর কৃতিত্ব বললে কিছুটা ভুল হবে। কৃতিত্ব টেকটিউনস এর শ্রদ্ধেয় সকল টিউনার দের! তারা টিউন করেছে বলেই আমি পড়তে পেরেছি, শিখতে পেরেছি। আমার অনেক প্রিয় টিউনার ছিলেন, যারা ব্যক্তিগত বা অন্যান্য সমস্যার কারণে আর টিউন করেননা।
আবার কিছু প্রিয় টিউনার আছেন যারা এখনো টিউন করেন। সবার নাম উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তবে যাদের নাম উল্লেখ না করলেই নয়ঃ
প্রবাসী, হাসান যোবায়ের (আল-ফাতাহ্), তাহের চৌধুরী সুমন, সাইফুল ইসলাম (পরী মডূ), জাকির হোসাইন, আলমাস ইথিক্যাল হ্যাকার, swordfish, আরিফুল ইসলাম শাওন, ডিজে আরিফ, ছাত্র ও শিক্ষক, নিশাচর নাইম, মাখন, Rubel Oro, MITHU, LuckyFM, শাকিল আরেফিন, দিহান
আরো অনেকের নাম হয়তো মনের ভুলে বাদ দিয়ে গেছি... তাই অগোচরে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
টেকটিউনস একটি ভার্চুয়াল ব্লগ হলেও রিয়েল লাইফ এ ও টেকটিউনস এর সাথে কিছু সৃতি রয়েছে। টেকটিউনস এর ২০১১ সালের ডিসেম্বর এ একটি আনফিসাল মিটাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেই মিটাপ এ যোগ দিয়েছিলাম। সেগুলোই সৃতি হয়ে রয়ে গেছে!
➡ বাম থেকেঃ রাকিবুল হাসান (আমি কম্পিউটার লাভার), নাম মনে নাই 😛 (সাইফুল ভাইয়ের মামা), সাইফুল ইসলাম (পরী মডু), মেহেদী হাসান আরিফ (দা লেজেন্ডারি ফাউন্ডার অফ টেকটিউনস!), জাকির হোসাইন (আমার প্রোগ্রামিং অনুপ্রেরণা ও প্রিয় টিউনার), হাসান জোবায়ের (গ্রাফিক্স মাস্টার, বস পাবলিক, প্রিয় টিউনার), আরিফ নিজামি (বস পাবলিক, প্রিয় টিউনার, টেকটিউনস টিউন্টারভিউ হোস্ট)
আমার ১০০তম টিউন উপলক্ষে একটি গেটটুগেদার করতে চাচ্ছি। অনলাইন কমিউনিটির সবাইকে নিয়ে কিছু আড্ডা, আলোচনা, গল্প স্বল্প হবে। আগামী ২০শে ডিসেম্বর ঢাকার ধানমন্ডির ৮/এ (রবীন্দ্রসরোবর) এ গেট টুগেদার করা হবে। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত, জেকেও আসতে পারবেন। টেকটিউনস এর সকল টিউনার, টিউমেন্টর, টিউজিটর, টিউডারদের আমি আমন্ত্রন জানাচ্ছি আমার ১০০ তম টিউন উপলক্ষে গেট টুগেদারে। আপনাদের সবাইকে আমার সাধ্যমত আপ্যায়ন করার চেষ্টা করবো।
➡ ফেসবুক ইভেন্টঃ https://www.facebook.com/events/518838601547819/
কম্পিউটার লাভার সেঞ্চুরি গেটটুগেদার!
স্থানঃ ধানমন্ডি 8/A রবীন্দ্র সরোবর।
সময়ঃ বিকাল ৪ টা।
দিনঃ ২০/১২/২০১৩ শুক্রবার।
যোগাযোগঃ 01687366957
২০১১ এর ফেব্রুয়ারি থেকে আছি টেকটিউনস এর সাথে... অনেক শিখেছি, অনেক শিখিয়েছি। অনেককে মনের অজান্তে কষ্ট দিয়েছি, অনককেই বা মনের অজান্তে খুশি করেছি। তবে আজও একটি কথা বলতে মন আনচান করে...
আমি প্রযুক্তির সুরে মেতে থাকি,
তাই টেকটিউনস কে ভালবাসি!
কম্পিউটার লাভার () রাকিবুল হাসান।
ইমেইলে পেয়ে যান আমার সকল টিউনের আপডেট! ক্লিক করুন এবং ইমেইল দিয়ে ভেরিফাই করুনঃ টেকটিউনস » কম্পিউটার লাভার
আমি কম্পিউটার লাভার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 101 টি টিউন ও 1258 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 20 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Also known as "Raiku Saiko". React.js & Javascript Developer. Former Wordpress Developer, Front-end Designer. Technology Addicted.
অনেক অনেক অভিনন্দন আপনাকে!