*** “দৃষ্টিতে শুষ্ক কংক্রীট আর নি:স্বাসে জান্তব সীসা নিয়ে আপনাদেরকে সামান্য কল্পরস দেবার প্রচেষ্টা মাত্র। জানিনা সফলতা কতটুকু”।***
আমাদের গাঁয়ের গৌরব বিজ্ঞানী “জতের” জশ নাম ডাক তারই উদ্ভাবিত ইন্টারনেটের কল্যাণে পাড়া-গাঁ এর গন্ডি পেরিয়ে শহর পর্যন্ত পৌঁচেছে । এই অজ পাড়া-গাঁয়ে ইন্টারনেট কী বস্তু আমরা জানতাম না। GPRS, EDGE, 3G, 4G, WAP, WEB, HTTP আরো কত শত দাঁত ভাঙ্গা শব্দ। সব তো ঐ তার কাছ থেকেই শেখা। এসব শব্দ উচ্চারন করা কী আর যার তার কম্ম! শক্ত দাঁত থাকা চাই, নইলে বিপদ। আমাদের গণিতের স্যারের তো দুটো দাঁত গেছে। জতে ইন্টারনেটে সারাদিন কী সব ঘেঁটে ঘেঁটে কত কিছু নিয়ে নাকি স্টাডি করে। কত কিছুই নাকি শেখা যায় ঐ ইন্টারনেটে, কত জ্ঞান বিজ্ঞান নাকি লুকায়িত আছে তাতে।
আমরা বাপু পাড়া-গাঁয়ের সাধারন ছেলে, এত্ত কিছু মাথায় ঢোকে না। শুধু ভাবি জতের হাতে NOKIA-1100 আমার হাতেও NOKIA-1100, আমি তা দিয়ে পাড়ি আম, আর সে তাতে আবিষ্কার করেছে ইন্টারনেট। দিব্যি সারাদিন তাতে নেট চালায়, তাও আবার টাকা লাগে না। হ্যাকিং না ফ্যাকিং কী জানি করছে। PD Proxy, হ্যান্ডেলার ব্রাউজার কী কী সব বলে মাঝে মাঝে। কিন্তু এগুলোর কিছুই বুঝিনা। শুধু তাই না, সে তো এই মোবাইল দিয়ে যে ছবি তোলে তা নাকি ৯৯৯.৯৯ পেটা পিক্সেল এর। ওকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলুম-
“আচ্ছা দোস্ত জতে, মেগা পিক্সেল শুনেছি পেটা পিক্সেল আবার কী?”
জতে যা বলল তার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝিনি , শুধু হ্যাঁ হ্যাঁ করে গিয়েছিলুম মান-সম্মানের খাতিরে। সে বলেছিল-
“১০০০ মেগা পিক্সেলে ১ গিগা পিক্সেল, ১০০০ গিগা পিক্সেলে ১ টেরা পিক্সেল, ১০০০ টেরা পিক্সেলে পেটা পিক্সেল। তাইলে ১০ টু দি পাওয়ার ১৫ পিক্সেল সমান ১ পেটা পিক্সেল। কী বোঝা গেছে”
আমি মাথা নেড়েছিলুম,”হ্যাঁ”। যদিও বুঝেছিলুম ঐ ১৬ টা শূন্যের মতই।
গণিত ক্লাস বরাবরই আমাকে ক্লাসের দরজার কাছে কান ধোরে করতে হয়, নয়তো নীল ডাউন হয়ে। ক্লাসের মেয়েরা চোখ পিটপিট করে আমার এই দশার দিকে তাকিয়ে ঠোটে মধুর হাসি নিয়ে একে অপরের কাছে কী যে বলে তা জানিনা। জতে কে বলেছিলুম ঘটনা, সে এমন এক যন্ত্র আমাকে আবিষ্কার করে দিয়েছে যেটা দিয়ে ওদের কথা আমি স্পষ্ট শুনতে পাই, আর সারা ক্লাস কান ধরে হোক আর নীল ডাউন হোক আর টেবিলের নিচে মাথা দিয়ে হোক, মজা-মজায় থাকি!!!!।
যাই হোক, জতে কিন্তু আমার ঘনিষ্ট বন্ধু। বন্ধুত্বের খাতিরেই সে আমাকে তার এসিস্টেন্ট রেখেছে। যদিও আমার কাছে এসব জিনিস-পত্তর আর আকাশের তারা গোনা একই। জতে তার বাবা-মার দেয়া নাম নয়। বাবা-মা না থাকায় তার নাম নিয়েও কারো মাথা ব্যাথা নেই। সবাই ডাকে ঐ “জতে”। তার আর আমার বন্ধুত্বের মান রাখতে যেয়েই তার নাম হয়েছে জতে। ঘটনাটা খুলেই বলি—
জতে আর আমি সারাদিন এক সাথে। ক্লাসেও একই সাথে সেই শেষ বেঞ্চিতে বসা, শুধু মাত্র গণিত ক্লাস বাদ দিয়ে। একদিন গণিত ক্লাসে জতে বরাবরের মত সারকে তারই আবিষ্কার করা একটা নতুন গণিত শেখাচ্ছে, আর আমি দরজার কাছে দুই কান ধরে এক পা তুলে দাঁড়িয়ে আছি। না-না- স্যারের কান নয় আমার নিজের দুই কান। এমন সময় স্যার বলে উঠল-
“বুঝলি বল্টু জলে আর তেলে কখনো মিশ খায়না”।
স্যারের খাস চামচা বল্টু বলল-
“জ্বি স্যাঁর , ঠিঁক বলেছেন স্যাঁর। ঐ যে জতে আর তার বন্ধু স্যাঁর সারাদিন যেমন একলগে স্যাঁর তার পরও মিশ খায়না স্যাঁর, স্যাঁর।”
কথাটা জতের খুব লেগেছিল। সে বলেছিল-
“জলে আর তেলে যে মিশ খায় তা আমি দেখিয়ে দেব।”
আর যায় কোথায়, শুরু হল তার জল আর তেলের গবেষনা। দিন নাই রাত নাই প্রতিটি মুহূর্ত গবেষনা। অবশেষে স্কুলের সব টিচার আর ছাত্রদের সামনে স্বচক্ষে জতে দেখিয়ে দিল জলে আর তেলে কী ভাবে একে অপরের সাথে মিশখেয়ে গেল। তখন তো সবার চোখে চমক। সবার চমক ভাঙ্গল যখন জতে জল আর তেলের মিশ্রণটি হাতের তালুতে নিয়ে বল্টুর সদ্য ন্যাড়া করা মাথায় মালিশ করে আচমকা চটাশ করে একটি চাটি বসিয়ে দিল। আহ! শব্দটা যা হয়েছিল না, এখনও কানে বাজে। আর সে শব্দে আমাদের হেড মাস্টারমসায়ও তার চকচকে টাকে হাত বুলিয়েছিলেন মনের অজান্তে, আমার দিব্যি মনে আছে।
তারপর থেকে নিজের নাম সে রেখে দিলে “জতে”। গানিতিক ব্যাক্ষা সে এমন দাঁড় করিয়েছে-
“জল= জ+ল ; তেল= তে+ল ; সুতরাং, জ+ল=তে+ল ; অতএব, উভয় পক্ষ থেকে ল বাদ দিলে থাকে, জ+তে অর্থাৎ= “জতে””। আমার বন্ধু “জতে”।
এবার আসল ঘটনায় আসি, যে কারনে আজ আপনাদের কাছে আমার লিখতে বসা। একদা জতে আর আমি তার সদ্য আবিষ্কৃত “নীল কাঁচের 5D (পঞ্চ-মাত্রীক) Sunglass with LiFi Supported” (বিশেষ চশমা) চোখে দিয়ে পুকুর পারে বসে ঘাটের দিকে তাকিয়ে ফিলিংস নিচ্ছি। এমন সময় আমাদের পাশে একটি বাচ্চাওয়ালা রাগান্নিত মুরগী কঁক কঁক কঁক কঁক করে ডেকে উঠল। তার বাচ্চাগুলো পুকুরের মধ্যে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে। মুরগীর মালিক মুরগী দিয়ে হাঁসের ডিম ফুটিয়েছে। আর মুরগী সেগুলোকে নিজের বাচ্চা মনে করে সাথে নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে। হঠাত জতের মাথায় কী হল বলল –
“চল দোস্ত হাটে যাব। ”
বললাম- “এখন-ই ?”
ও বলল- “হ্যাঁ”
হাটে গেলাম, জতে মোটা সোটা দেখে একটা মোরগ আর একটা হাঁস কিনল। আর ফেরার সময় বলল –
“দোস্ত তোর দুই মাস ছুটি, সামনে পরীক্ষা তুই ভাল করে পড়াশোনা কর”
দুমাস পরে জতের ল্যাবরেটরিতে এসে আমার দুচোখ আলু হয়ে গেল। এ জাতের পক্ষী শ্রেণী যে আমি জীবনে কখনোই দেখিনি। মুরগীর মত ঠোঁট, হাঁসের মত পা, পাখার অর্ধেক হাঁসের মত আর অর্ধেক মুরগীর মত। অজব এ প্রাণির ডাক আরো আজব । নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারলাম না। ডাকে – “কু-কু-রুক-প্যাক-প্যাক-কুক-প্যাক-কুক”। জতে এগুলোর নাম দিয়েছে “মুহাঁস”। এবার বুঝলাম মোরগ আর হাঁসের কাহিনী, “মু্রগী-হাঁস”।
জতের অবিষ্কারের এ কাহিনী আপনারা বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আমার উপর দায়িত্ব বর্তেছে এর মুহাঁসগুলির সার্বক্ষনিক দেখাশোনার জন্য একজন চাকুরিজীবি নিয়োগ দেয়া। তো আপনারা যদি কেউ এ চাকুরির জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন তবে আজই যোগাযোগ করুন এই নম্বরে –
“০১৫+০১৭+০১৯+০১৬+০১৮-০০০১০০০” । এইটা কিন্তু বিজ্ঞানী জতের নম্বর, তার নিজের আবিষ্কৃত ।
আমি sarowar_eee। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 37 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
হা : হা;