টেক দুনিয়ায় ঝড় তুলেছে বহুল আলোচিত ChatGPT। ওপেন এআই এর দুনিয়ায় সবথেকে শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো ChatGPT। ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর ChatGPT কে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় আর এরপর থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়। কেননা এটা এতোটাই চমৎকার ভাবে ডিজাইন করা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে এটি নির্দেশনা অনুযায়ী সাথে সাথে লেখালেখির সকল কাজ করে দিতে সক্ষম। বলা যায় বর্তমান ওপেন এআই এর জগতে রাজ করছে এই ChatGPT।
হয়তো ইতোমধ্যেই ChatGPT সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি এবং ব্যবহারও করেছি। বেশিরভাগ ইউজার ChatGPT এর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষন করেন। তবে ChatGPT এর অনেক নেগেটিভ রিভিউ-ও রয়েছে। তাই সহজ ভাষায় আজকে আমি ChatGPT এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলো ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
যারা এখনও ChatGPT এর ব্যবহার নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন তাদের জন্য আজকের লেখাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। টিউনটি পড়া শেষে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে ChatGPT আপনার জন্য উপযোগী কিনা৷ তাহলে চলুন ChatGPT এর সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
আসলে ChatGPT উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে এর ব্যবহার দিন দিন এতো বেশি বাড়ছে মূলত এর সুবিধার কারনেই। ChatGPT মানুষের প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত কাজকে অনেকটা সহজ করে দিয়েছে। অনেকে আবার গুগল এর সাথে ChatGPT কে তুলনা করতেও ছাড়েন নি। এখানে ChatGPT এর ১০ টি গুরুত্ব বা সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
এখন লেখালেখি নিয়ে আর কোনো প্রেশার নেই। ChatGPT এর মূল কাজই হলো লেখালেখি। আপনি আপনার চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো বিষয়বস্তু মাত্র কয়েক সেকেন্ডে লেখিয়ে নিতে পারবেন। আপনি কেমন লেখা চান, লেখার মধ্যে কী কী অন্তর্ভুক্ত থাকবে, লেখার গঠন কেমন হবে তা ChatGPT কে বলে দিলেই আপনার পছন্দ মতো একটি লেখা সাথে সাথে তৈরি করে দিতে পারবে ChatGPT।
গল্প, কবিতা, যে কোনো প্রেজেন্টেশন, অফিসের কাজের শিডিউল, সোস্যাল মিডিয়ায় পাবলিশ করার জন্য কনটেন্ট, ওয়েবসাইট এর জন্য উপযোগী আর্টিকেল সহ আপনি যা চাইবেন তাই লিখিয়ে নিতে পারবেন এর মাধ্যমে। তাহলে বুঝতেই পারছেন ChatGPT দিয়ে আমরা প্রথম যে সুবিধাটি পাচ্ছি তা হলো ফ্রীতে বিষয়বস্তু লিখিয়ে নেয়া।
ChatGPT এর সবথেকে বড় সুবিধা হলো এটি খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়। একটি ছোট বাচ্চাকে যদি দুএকবার শিখিয়ে দেয়া যায় তবে তারাও ChatGPT ব্যবহার করতে পারবে। হাতে থাকা মোবাইল ফোনটির মাধ্যমে গুগলে প্রবেশ করে ChatGPT লিখে সার্চ করলেই এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট সবার ওপরে চলে আসবে। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে জিমেইল দিয়ে একবার রেজিষ্ট্রেশন করে নিলেই কাজ শেষ।
এবার আপনি চ্যাট অপশনে যা লিখবেন তার ওপরে ভিত্তি করে ChatGPT আপনাকে উত্তর দিবে। আপনি যা লিখতে বলবেন তা-ই লিখে দিবে। চাইলে ChatGPT এর App ডাউনলোড করেও এটি ব্যবহার করতে পারবেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন ChatGPT ব্যবহার করা আহামরি কঠিন কিছু না। এজন্য আপনার ল্যাপটপ বা কম্পিউটারেরও কোনো প্রয়োজন নেই।
ChatGPT কে পড়াশোনা বিষয়ক কোনো প্রশ্ন করা হলে এটি সাথে সাথে উত্তর দিতে পারে। বাড়িতে পড়তে বসলে মাঝে মাঝে অনেক বিষয় শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে না। আর অভিজ্ঞ কেউ না থাকলে তখন বিষয়টি বুঝিয়ে দিতেও পারে না। এক্ষেত্রে ChatGPT কে বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশনা দিলে বিষয়টি খুব দ্রুত ব্যাখ্যা করতে পারবে ChatGPT।
আবার স্কুল কলেজের অ্যাসাইনমেন্ট লেখা, রচনা লেখা, আবেদনপত্র লেখা থেকে শুরু করে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর সাজিয়ে লিখে দিতে পারবে ChatGPT। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বিষয়ক যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে পারবে ChatGPT এর সাহায্য নিয়ে। তাই এটি পুরোপুরি ভাবে পড়াশোনায় সহায়ক।
একটা বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে, পরিকল্পনা করে লেখাটি সাজাতে আমাদের অনেক সময় লেগে যায়। তারপরও লেখার স্ট্রাকচার অনেক সময় সঠিক হয় না। আর একসাথে অনেক কাজের চাপ থাকলে তো যথাসময়ে লিখে শেষ করা একপ্রকার অসম্ভব বলে মনে হয়। এক্ষেত্রে আপনার সময় বাঁচাতে পারবে ChatGPT।
যে কোনো বিষয়বস্তু মাত্র কয়েক সেকেন্ডে সঠিক স্ট্রাকচারে লিখে দেবে ChatGPT। এজন্য এটিকে কয়েক ঘন্টা বসে ভাবতে হবে না। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে না। ফলে যে কাজটি আপনি একদিন বসে করতেন তা করে ফেলতে পারবেন কয়েক সেকেন্ডে। অর্থাৎ আপনার অনেকটা সময় বাঁচিয়ে দিচ্ছে ChatGPT।
ChatGPT এতো এতো কাজ করলেও এগুলো কিন্তু সে নিজে নিজে করতে পারে না। ChatGPT কে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়া হয়। ChatGPT কে যতো ভালোভাবে পরিচালনা করা যাবে এটি ততোই গ্রহনযোগ্য আউটপুট দিতে পারবে। আর এজন্য বিভিন্ন কোম্পানি এখন ChatGPT এক্সপার্ট হায়ার করছে।
আবার ChatGPT এর ব্যবহারের ওপরে বিভিন্ন কোর্স তৈরি হচ্ছে। সেই কোর্স করাচ্ছেন আরেকজন ChatGPT এক্সপার্ট। এভাবে ChatGPT কে কেন্দ্র করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত প্রাকটিস চলছে কীভাবে ChatGPT কে আরও নতুন নতুন আঙ্গিকে কাজে লাগানো যায়।
ধরুন আপনি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন। এই ওয়েবসাইট এর জন্য একজন এক্সপার্ট এর মাধ্যমে উপযুক্ত কোডিং করিয়ে নিচ্ছেন। তার বিনিময়ে আপনাকে পারিশ্রমিক তো দিতেই হবে। কিন্তু এই কাজটুকু আপনি ChatGPT কে দিয়ে একদম ফ্রি তে করিয়ে নিতে পারবেন।
আপনি যদি চান একটি পড়াশোনা বিষয়ক ওয়েবসাইট তৈরি করবেন তাহলে ইংরেজিতে নির্দেশনা দিন যে 'পড়াশোনা বিষয়ক ওয়েবসাইট এর জন্য কোডিং করে দিন'। সাথে সাথে ChatGPT একটি চমৎকার ওয়েবসাইট কোডিং তৈরি করে দেবে। যদিও খুব এডভান্স লেভেলের ওয়েব কোডিং আউটপুট হিসেবে পাবেন না। কিন্তু একটি সাধারণ ওয়েবসাইট তো তৈরি করা যেতেই পারে।
আপনি ChatGPT কে দিয়ে যে লেখাটি লিখিয়ে নিবেন সেটি যে কোনো ভাষায় লিখিয়ে নিতে পারবেন। অর্থাৎ ChatGPT আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোনো ভাষায় আউটপুট দিতে পারবে। তবে আপনাকে নির্দেশনা দিতে হবে ইংরেজিতে। নির্দেশনা দেয়ার সময়ই উল্লেখ করে দিতে হবে যে আপনি কোন ভাষায় আউটপুট চাচ্ছেন।
যেমন ধরুন আপনি বাংলায় ৫ টি ফুলের নাম জানতে চাইছেন। এখন নির্দেশনাটি হবে এমন 'Write Five Flowers Name in Bengali'। এক্ষেত্রে ChatGPT সাথে সাথে বাংলায় আউটপুট দেয়া শুরু করবে। এভাবে আপনি যে ভাষায় আউটপুট চান তা শুধু উল্লেখ করে দিতে হবে। তখন ChatGPT সরাসরি আপনার কাঙ্খিত ভাষায় নির্দেশনা অনুযায়ী লেখা আউটপুট করবে।
এভাবে যে কোনো ভাষায় খুব সহজেই ChatGPT কে দিয়ে লিখিয়ে নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন নির্দেশনা কিন্তু আপনাকে ইংরেজিতেই দিতে হবে।
ChatGPT কখনও কোনো বিষয় বা ব্যক্তির পক্ষপাতিত্ব করে ফলাফল প্রদর্শন করবে না। ChatGPT যেহেতু একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তাই এটি নিজে নিজে কোনো দল বা গোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলে না। আপনার প্রশ্ন অনুযায়ী এটি নিজের বুদ্ধিমত্তা খাঁটিয়ে সঠিক ফলাফল প্রদান করবে। এখানে ChatGPT এর কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ বা উদ্যেশ্য থাকবে না।
অন্যদিকে যে কোনো ওয়েবসাইট বা সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম এর তথ্য তৈরি করে একজন মানুষ। তার নিজস্ব কোনো স্বার্থ বা ব্যক্তিগত উদ্যেশ্যের প্রভাব তার লেখায় ফুটে উঠতে পারে। ফলে ঐ তথ্যটি একপাক্ষিক হওয়ার সম্ভাবন থাকে। এই পক্ষপাতিত্বের কোনো সম্ভাবনা ChatGPT এর লেখার মধ্যে থাকবে না।
ChatGPT কে কোনো বাস্তব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য দিয়ে নির্দেশনা দেয়ার প্রয়োজন হয় না। অনেক সময় সরাসরি বাস্তব তথ্য দিয়ে নির্দেশনা দিলে ChatGPT সেটা গ্রহনও করে না। ChatGPT কে নির্দেশনা দিতে হবে কোনো কাল্পনিক উদাহরণ দিয়ে।
যেমন ধরুন আমি যদি নির্দেশনা দেই, "প্রাণ কোম্পানি তাদের ফ্রুটিকা নামক পণ্যটির জন্য বিজ্ঞাপণ দিবে, সেজন্য একটি স্ক্রিপ্ট লিখে দিন"। সরাসরি প্রতিষ্ঠান ও পণ্যের নাম উল্লেখ করে নির্দেশনা দিলে তা গ্রহনযোগ্য হবে না। এক্ষেত্রে নির্দেশনাটি দিতে হবে এভাবে, " X কোম্পানি তাদের Y নামক একটি পণ্যের জন্য বিজ্ঞাপণ দিবে, সেজন্য একটি স্ক্রিপ্ট লিখে দিন"। এক্ষেত্রে নির্দেশনাটি গ্রহনযোগ্য হবে।
অর্থা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত তথ্য সরাসরি প্রদান না করেই ChatGPT কে দিয়ে কাজ করানো যাবে। অর্থাৎ আপনার তথ্যের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকছে।
অনেকের মোবাইল এর স্টোরেজ খুব কম হওয়ায় অতিরিক্ত App ডাইনলোড করা সম্ভব হয় না। তাদের জন্য সুখবর হলো, ChatGPT ব্যবহারের জন্য কোনো আলাদা App ডাইনলোড না করলেও হবে। যদিও ChatGPT এর App রয়েছে, কিন্তু আপনি চাইলে সরাসরি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেও ChatGPT ব্যবহার করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে আপনার আলাদা করে কোনো App ডাউনলোড করার ঝামেলা পোহাতে হবে না। ফলে মোবাইলের স্টোরেজ নিয়েও টেনশনের কিছু নেই।
আশাকরি ChatGPT ব্যবহারের সুবিধা গুলো ইতোমধ্যে বুঝতে পেরেছেন। আসলে ChatGPT এর আরও অনেক অনেক সুবিধা রয়েছে। ব্যবহার করতে করতে আপনি নিজেই সুবিধাগুলো উপলব্ধি করতে পারবেন। এতো এতো সুবিধা একদম ফ্রি তে পাওয়া গেলে তা হাতছাড়া করতে চায় কে?
ChatGPT এর হাজারো সুবিধার মধ্যে কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এখানে ধারাবাহিক ভাবে ChatGPT এর ১০ টি অসুবিধা সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।
মানুষ নিজে যখন কোনো বিষয়বস্তু লেখে তখন সে তার লেখার মধ্যে বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। কিন্তু ওপেন এআই ঐ সকল তথ্যের ভিত্তিতে লেখাটি সম্পন্ন করে যা তাকে সরবরাহ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ChatGPT এর নিজস্ব কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ফলে তার লেখার মধ্যে অনেক কৃত্রিমতা লক্ষ করা যায়।
ধরুন আপনি কোনো একটি বিষয় স্বচক্ষে দেখলেন এবং সেই বিষয়ে একটা আর্টিকেল লিখলেন। অন্যদিকে আপনি একটি বিষয় সম্পর্কে শুনলেন বা বইয়ে পড়লেন এবং সেই বিষয়েও একটি আর্টিকেল লিখলেন। এক্ষেত্রে কোন আর্টিকেলটি বেশি আকর্ষণীয় হবে? নিশ্চয়ই আপনি বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে যেটি লিখেছেন সেই আর্টিকেলটি সবথেকে বেশি গ্রহনযোগ্য হবে। ঠিক তেমনই হিউম্যান রিটেন লেখাগুলো ChatGPT এর থেকে বেশি গ্রহনযোগ্য হবে।
সুতরাং ChatGPT এর লেখায় বাস্তব অভিজ্ঞতার টাচ পাবেন না। এটি ChatGPT এর সবথেকে বড় অসুবিধা।
মানুষের মস্তিষ্কের একটি অংশ সব সময় আরাম খুঁজতে থাকে। সে যখনই ব্রেইনকে রিল্যাক্স রাখার একটি অপশন খুঁজে পায় তখন সেটির ওপর অত্যাধিক ভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ঠিক এই বিষয়টি ঘটেছে ChatGPT এর বেলায়ও। যেখানে ChatGPT কে দিয়ে কাজ করালে মানসিক পরিশ্রম কম হয় সেখানে নিজের ব্রেইনকে কেন প্রেশার দেয়া হবে? এই চিন্তা ভাবনা থেকে পুরো একটি জেনারেশন অলসতার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
কিন্তু মানুষের ব্রেইনকে যতো বেশি কাজে লাগানো যাবে ততোই এটি প্রোডাক্টিভ হবে। নতুন নতুন সৃজনশীলতা বেড়িয়ে আসতে থাকবে। ChatGPT অনেকাংশে এই সম্ভাবনাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
প্রায়ই দেখা যায় ChatGPT এর প্রদর্শিত তথ্য শতভাগ নির্ভুল না। ChatGPT মূলত ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা সাজিয়ে গুছিয়ে একটি নির্দেশনার আউটপুট তৈরি করে। আর ইন্টারনেট এর সব তথ্য গ্রহনযোগ্য হয় না এটি আমরা সকলেই কমবেশি জানি। কোন তথ্যটি গ্রহনযোগ্য আর কোনটি গ্রহনযোগ্য না মানুষ সেটা খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারে। কিন্তু ChatGPT যেহেতু একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তাই এটি খুব সহজে ভুল তথ্য ও সঠিক তথ্যের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করতে পারে না।
তাই ChatGPT এর প্রদর্শিত তথ্যের ওপর চোখ বন্ধ করে নির্ভর করা যাবে না। আর ভুল তথ্য প্রদর্শন করা ChatGPT এর অনেক বড় একটি অসুবিধা বা প্রতিবন্ধকতা।
আপনি ChatGPT এর সাহায্যে কী কাজ করছেন, কী তথ্য সংগ্রহ করছেন, কোন বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন এটির গোপনীয়তার কোনো নিশ্চয়তা ChatGPT দেয় না। অর্থাৎ আপনার কার্যকলাপ যে কোনো ভাবে লিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই যে কোনো সেনসেটিভ বিষয়ে ChatGPT কে তথ্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার ব্যক্তিগত তথ্য কোনোভাবেই ChatGPT কে প্রদান করবেন না।
যেহেতু ChatGPT এর কোনো সিকিউরিটি নিশ্চয়তা নেই তাই এর মাধ্যমে কাজ করাটা একটু ঝুকিপূর্ণ বলেই মনে হয়। তাই এমন কোনো বিষয় নিয়ে ChatGPT এর সাথে কাজ করবেন না যে বিষয়টি পুরোপুরি গোপনীয়। অর্থাৎ যে বিষয় সম্পর্কে আপনি তথ্য প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক।
মানুষ তার মস্তিষ্ক দিয়ে ঠিক ভুল বিবেচনা করতে পারে। কোন তথ্যটি প্রচার করলে সামাজিক ভারসাম্য বজায় থাকবে আর কোন তথ্যটি প্রচার করলে সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হবে এই সবকিছুই বুঝতে পারে মানুষের বিবেক। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা কোনো ওয়েবসাইটে তথ্য পাবলিশ করার আগে মানুষ তথ্যটি নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে।
কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ ChatGPT নিজের বিবেক দিয়ে কোনো কাজ করতে পারে না। তাই তথ্যের সঠিক প্রচারের ক্ষেত্রে এর প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। নৈতিক দিক বিবেচনায় না রেখেই ChatGPT একটি বিষয়বস্তু লিখে ফেলতে পারে। তাই ChatGPT দিয়ে লিখে নেয়া বিষয়বস্তুটি হিউম্যান টাচ না দিয়ে কোনো ভাবেই সরাসরি ব্যবহার করা উচিত না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা ChatGPT এর ব্যবহারের ফলে মানুষের কর্মসংস্থান অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। যেখানে সাধারণ কোনো বিষয়বস্তু লেখার জন্য আগে একটি প্রতিষ্ঠান কনটেন্ট রাইটার হায়ার করতে সেখানে এই কাজগুলো এখন ChatGPT ফ্রি তে করে দিচ্ছে। এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কোডিং করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এদিক থেকে অনেক ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের কাজ দিন দিন কমে যাচ্ছে।
অফিসিয়াল অনেক কাজ এখন ChatGPT এর সাহায্যে করা হচ্ছে। এভাবে ভার্চুয়াল সেক্টরের অনেক কাজ যা আগে মানুষ করতো তা এখন ChatGPT করছে। ফলে দিন দিন মানুষের কাজের ক্ষেত্র কমে যাচ্ছে।
ChatGPT যতোই শক্তিশালী হোক না কেন মানুষের ব্রেইন এর সাথে কখনোই এর তুলনা করা সম্ভব না। কারণ ChatGPT নিজেই মানুষের ব্রেইন এর সাহায্যে প্রস্তুত। আর বাস্তব জীবনে অনেক জটিল জটিল সমস্যার দেখা মিলতে থাকে প্রতিনিয়ত। এই জটিল সমস্যা গুলো বেশিরভাগ সময়ই ChatGPT সমাধান করতে পারে না। এটা ChatGPT এর সবথেকে বড় একটি সীমাবদ্ধতা।
ChatGPT ঠিক ততোটুকু সার্ভিস দিতে পারবে যতোটুকু এর মধ্যে ইনপুট করে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে সকল সমস্যা ও এর সমাধান ChatGPT তে নেই তার সমাধান কখনোই ChatGPT দিতে পারবে না। বিশেষ করে মানুষের ব্রইন এর সাথে টেক্কা দিয়ে পেড়ে ওটা তো ChatGPT এর পক্ষে কখনোই সম্ভব না।
মানুষ কোনো ছোটখাটো সমস্যায় পড়লেও একটি সমাধান বা থিউরিতে কাজ না হলে চট কর অন্য একটি সমাধান খুঁজতে থাকে। আর খুব সহজেই যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে। কিন্তু ChatGPT বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে পারে না। নতুন নতুন আইডিয়া জেনারেট করতে পারে না। সেক্ষেত্রে এটা বলা যেতেই পারে যে ChatGPT এর উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা নেই।
সময়ের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে এটি নিজেকে আপডেট করতে পারে না। মানব মস্তিষ্ক দিন দিন পরিবর্তনশীল। অন্যদিকে ChatGPT পুরোনো থিওরি ফলো করেই সকল সমস্যা সমাধান করে আসছে।
আপনি ChatGPT App ডাউনলোড করে রাখেন কিংবা ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে ব্যবহার করেন না কেন ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া এটি ব্যবহার করতে পারবেন না। ChatGPT কে কোনো নির্দিশনা দিয়ে তার থেকে উত্তর পাওয়ার জন্য আগে আপনার ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ করে নিতে হবে। দেখা যায় প্রায়ই মোবাইলে ডাটা প্যাক থাকে না আবার বিদ্যুৎ না থাকলে ব্রডব্যান্ড সার্ভিস-ও বন্ধ থাকে। ঠিক ঐ মুহূর্তে ChatGPT ব্যবহার করতে চাইলেও আপনি তা পারবেন না। ChatGPT ব্যবহার এর ক্ষেত্রে এটি একটি প্রতিবন্ধকতা বলা চলে।
ChatGPT দিয়ে লেখা বিষয়বস্তু আপনি খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারবেন। কেননা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে লেখা বিষয়বস্তু তো কৃত্রিম-ই হবে। লেখায় মাধুর্যতা বা সৌন্দর্য একদমই কম থাকে। বিশেষ করে ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় বিষয়বস্তু লেখার নির্দেশনা দিলে আউটপুটে অনেক যান্ত্রিকতা লক্ষ করা যায়। অনেকটা মেশিন ট্রান্সলেশন এর মতো মনে হয়।
এক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়বস্তুকে পুনরায় এডিট করে পাঠকের কাছে গ্রহনযোগ্য করে তুলতে হয়। ChatGPT এর লেখাগুলো যেহেতু সরাসরি ব্যবহারযোগ্য না তাই এটি একটি বড় ধরনের নেগেটিভ পয়েন্ট বলা চলে।
এতোক্ষণ আমরা ChatGPT এর সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে জানতে পারলাম। আসলে ভালো খারাপ মিলিয়েই একটা বিষয়ের অস্তিত্ব। তাই ভালোর পাশাপাশি খারাপকেও সমান ভাবে মেনে নিতে হয়। তাই ChatGPT এর হাজারো সুবিধা ভোগ করতে চাইলে এর খারাপ দিকগুলোকে তো অবশ্যই মেনে নিতে হবে। আশাকরি আপনার দৈনন্দিন জীবনের কাজে সহজ করতে ChatGPT অনেকটা ভূমিকা রাখতে পারবে। ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।