ডারউইনবাদীদের দাবি অনুযায়ী বিবর্তন তত্ত্ব প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগতের বৈচিত্র্যকে ব্যাখ্যা করে – যদিও ব্যাখ্যা আর প্রমাণ এক জিনিস নয়। অথচ একটু গভীরভাবে ভেবে দেখলে দেখা যায় প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগতের বৈচিত্র্যই আসলে বিবর্তন তত্ত্বের জন্য নাইটমেয়ারস্বরূপ। কারণ প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত যত বেশী বৈচিত্র্যময় হবে, তত বেশী কল্পকাহিনীর আশ্রয় নিতে হবে সেই সব বৈচিত্র্যময়তাকে ব্যাখ্যার জন্য। প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত সরলরৈখিক হলেই বরং ডারউইনবাদীদের কিছু একটা বলার থাকতে পারতো। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। বাস্তবে প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত এত বেশী বৈচিত্র্যময় ও বিষমরৈখিক যে, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ তো দূরে থাক প্রতি পদে পদে কল্পকাহিনী ফাঁদা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। অথচ অসচেতন লোকজনকে বিজ্ঞানের নামে প্রায় প্রতি পদে পদে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। তবে "বৈচিত্র্য" বলতে যদি একই প্রজাতির মধ্যে পরিবেশগত কারণে সূক্ষ্ম কিছু পরিবর্তনকে বুঝানো হয় তাহলে কারোরই কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ডারউইনবাদীরা কথায় কথায় প্রকৃতি থেকে উদাহরণ দিলেও প্রকৃতিতে এত অদ্ভুত সুন্দর সুন্দর উদ্ভিদ ও প্রাণী থাকতে তাদের লেখাতে সহজে জীবন্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীর ছবি দেয়া হয় না! তাদের প্রবন্ধে ঘুরেফিরে কিছু জীবাশ্ম আর হাড়-হাড্ডি দিয়ে বানানো কিছু ছবি দেখানো হয় – বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আবার বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জ্যস্যতা বজায় রেখে নিজের মতো করে তৈরী করা কাল্পনিক ছবি।
যাহোক, বিবর্তন মানে হচ্ছে ক্রমবিকাশ তথা সময়ের সাথে কোনো কিছুর পরিবর্তন। ডারউইনবাদীদের দাবি অনুযায়ী পরিবেশ ও জীনগত পরিবর্তনের কারণে সরল একটি অণুজীব থেকে "এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন" এর মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে জটিল সব জীব-জন্তু তথা পুরো উদ্ভিদজগত ও প্রাণীজগত বিবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ সরল একটি অণুজীবের দেহে ধীরে ধীরে নতুন নতুন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ‘সংযোজিত’ হয়ে মিলিয়ন মিলিয়ন প্রকারের জটিল জীব-জন্তুর উদ্ভব হয়েছে। বিবর্তন তত্ত্ব সত্য হলে তা কিন্তু হতেই হবে। তাদের এই দাবি যে কতটা হাস্যকর আর অবাস্তব – তার পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা দিতে গেলে বিশাল এক বিশ্বকোষ হয়ে যাবে। তথাপি বেশ কিছু উদাহরণের সাহায্যে এই ধরণের কল্পকাহিনী-ভিত্তিক তত্ত্বের অসারতা তুলে ধরা হবে।
বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী যে অণুজীব থেকে বিবর্তন শুরু হওয়ার কথা বলা হয় সেই জীবের মাথা, ব্রেন, চুল, কান, নাক, চোখ, মুখ, জিহ্বা, হাত, পা, নখ, শিং, লেজ, পরিপাকতন্ত্র, প্রজননতন্ত্র, ও হৃৎপিণ্ড সহ কিছুই ছিল না। একেবারে প্রাথমিক অণুজীবের দেহে এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো আকস্মিকভাবে থাকার প্রশ্নও ওঠে না। অথচ প্রকৃতিতে শিং-বিহীন ও শিং-ওয়ালা উভয় প্রজাতিই দেখা যায়। প্রকৃতিতে যেহেতু শিং-বিহীন ও শিং-ওয়ালা উভয় প্রজাতিই আছে, এবং বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী এগুলোর উৎস যেহেতু এক, সেহেতু বিবর্তনের কোনো এক পর্যায়ে শিং-বিহীন প্রাণী থেকে শিং-ওয়ালা প্রাণী বিবর্তিত হতেই হবে। অন্যথায় বিবর্তন তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে কেনো ও কীভাবে শিং-বিহীন প্রজাতির মাথায় ধীরে ধীরে একদিন শিং গজানো শুরু করলো! এবার নিচের ছবিগুলো লক্ষ্য করুন এবং যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভেবে দেখুন।
শিং-বিহীন, শিং-ওয়ালা, লেজ-বিহীন, ও লেজ-ওয়ালা কিছু প্রাণী
সরল একটি অণুজীব থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হতে হতে একদিন হঠাৎ করে শিং আর লেজ গজানো শুরু করল! এমনকি শতভাগ ক্ষেত্রে ঠিক মাথার উপরে শিং আর পেছনের দিকে লেজ গজালো, শরীরের অন্য কোনো অংশে নয়! শিং ও লেজ বিহীন প্রজাতির দেহে শিং ও লেজ গজাতে হলে কিন্তু নতুন তথ্য লাগবে। সেই নতুন তথ্য কোথা থেকে আসবে? এভাবে বিবর্তিত হতে হতে ডারউইনবাদীদের মতো শিং-ও-লেজ বিহীন মানুষে এসে ঠেকলো! লেজ আর শিং এক সাথে গজিয়ে আবার এক সাথে বিলুপ্ত হয়েছিল কি-না, কে জানে!
বাস্তবতা হচ্ছে শিং-ও-লেজ বিহীন প্রাণী থেকে ধীরে ধীরে শিং-ও-লেজ ওয়ালা প্রাণী বিবর্তিত হওয়ার পক্ষে কোনোই প্রমাণ নেই। বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ও সাধারণ বোধ অনুযায়ী কিছু শিং-ও-লেজ বিহীন প্রাণীকে আলাদাভাবে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে রেখে দিলেও তাদের দেহে একদিন শিং-ও-লেজ গজানো শুরু করবে না। ডারউইনবাদীরা যদি মনে করেন তা সম্ভব তাহলে প্রমাণ করে দেখাতে হবে। তাছাড়া শুধু শিং-ও-লেজ গজালেই কিন্তু হবে না, সেই সাথে ধীরে ধীরে ভিন্ন প্রজাতিতে রূপান্তরিতও হতে হবে!
উপসংহার: শিং-বিহীন প্রাণী থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শিং-ওয়ালা প্রাণী বিবর্তিত হওয়ার পক্ষে যেহেতু কোনোই প্রমাণ নেই এবং বাস্তবেও এমন বিবর্তন সম্ভব নয় সেহেতু শিং-বিহীন ও শিং-ওয়ালা প্রাণীর আলাদা আলাদা উৎস থাকতে হবে। আর আলাদা আলাদা উৎস থাকতে হলে বিবর্তন তত্ত্বের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। লেজ-বিহীন ও লেজ-ওয়ালা প্রাণীর ক্ষেত্রেও একই যুক্তি প্রযোজ্য।
আমি এস. এম. রায়হান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 27 টি টিউন ও 123 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
নোট: আমার লেখাতে ‘ডারউইনবাদী’ বলতে মূলত তাদেরকেই বুঝানো হয় যারা বিবর্তন তত্ত্বকে সংশয়বাদীদের হাত থেকে ধর্মের মতো করে ডিফেন্ড করে, বিবর্তন তত্ত্বকে বিজ্ঞানের নামে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও ধর্মের বিরুদ্ধে প্রচার করে, বিবর্তন তত্ত্বের সত্যতা নিয়ে সংশয়কারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের ফতোয়া দেয়, এবং গালাগালি ও ব্যক্তি আক্রমণ থেকে শুরু করে দলবদ্ধ আক্রমণ পর্যন্ত করা হয়।
যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমার লেখার সমালোচনাকে স্বাগত জানানো হবে।