বাজারে আবারও কার্ভ ফোন ফিরে আসছে! পারবে কি জনপ্রিয় হতে?

টিউন বিভাগ রিভিউ
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন।  আজকের টিউনটি হতে যাচ্ছে কিছুটা বিশ্লেষণমূলক এবং কিছুটা প্রেডিকশন ধর্মী। কার্ভ ফোন নিয়ে আলোচনা করব, কেন ফোন গুলো বাজারে টিকে থাকতে পারে নি, কি সমস্যা ছিল ফোন গুলোতে, কেন ফোন কোম্পানি গুলো আবার কার্ভ ফোন নিয়ে আসছে? আবার বাজার দখন করতে পারবে কিনা ইত্যাদি দিক নিয়ে কথা হবে। চলুন শুরু করা যাক।

শুরু করতে চাই Samsung Galaxy Note 10 দিয়ে। ফোনটি আমার কাছে সব দিক থেকে ভাল লেগেছে কিন্তু খারাপ লাগার দিক হচ্ছে ফোনটি হচ্ছে কার্ভ ফোন। কার্ভ ফোন আমার কাছে কখনোই আমার কাছে ভাল লাগে নি এবং কারণ গুলোও আজকে বলব। যেহেতু আসছে প্রায় সকল অ্যান্ড্রয়েড ফোনের অন্যতম আকর্ষণ হতে চলেছে কার্ভ ফোন তো ভাবলাম এর বাজে দিক এবং সম্ভাবনা গুলো নিয়ে একটি টিউন লেখা যাক।

কেমন ছিল কার্ভ ফোনগুলো?

অ্যান্ড্রয়েড ফোন ফিচারে কার্ভ আইডিয়াটা একদমই বাজে ছিল। ফোন গুলো কখনোই ব্যবহারকারীকে সব দিক থেকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। বড় বড় বাজার গবেষকদের মতেও স্মার্ট-ফোন জগতে কার্ভ ফোন যথেষ্ট চমকপ্রদ কিছু ছিল না। ফোন গুলো দেখতে কিছু ব্যতিক্রম হলেও পারফর্মেন্স ছিল জঘন্য।

আমি যদি কার্ভ ফোনের প্রথম এবং প্রধান সমস্যার কথা বলি তাহলে সেটা হচ্ছে এর ভঙ্গুরতা। ফোন গুলোর গ্লাস পাশের দিকে বাঁকা হওয়াতে তা সহজেই ভেঙ্গে যেত এবং স্ক্রেস পড়ত।

কিছু কিছু ফোন যেগুলোর কার্ভ ছোট যেমন Samsung Note 10 এর কথাই ধরুন, সেসব ফোন গুলোকে পড়ে যাবার হাত থেকে বাচাতে আপনি হয়তো কেস ব্যবহার কারতে পারবেন কিন্তু যে সব ফোন বাজারে নতুন আসছে সেগুলোতে এটা করা একদম অসম্ভব। যদি Vivo Nex 3 এর কথা বলি, এই ফোনটির কার্ভ প্রায় ৯০° বাঁকানো, ফোনটিতে কেস ব্যবহার করলেও দুইপাশের কার্ভ গুলো খোলাই থাকে। সুতরাং একবার হাত থেকে পড়লে মনে হয় না কেস এটাকে ভাঙ্গা থেকে বাচাতে পারবে।

চলুন কার্ভ ফোন গুলোর কিছু অসুবিধা জেনে নেয়া যাক

অতিরিক্ত ভঙ্গুর ফোন

কার্ভ যেকোনো ফোন স্বাভাবিক ভাবেই অতিরিক্ত ভঙ্গুর হয়। গ্লাস গুলো বাঁকানো থকার কারণে সেই জায়গা খুবই বেশিই পাতলা থাকে এবং হাত থেকে পড়ে গেলে বা হালকা চাপেও ভেঙ্গে যেতে পারে ফোনের গ্লাস

কেস বা স্ক্রিন প্রটেকশন

বেশির ভাগ কার্ভ ফোন গুলোর মনের মত কেস পাওয়া যায় না। আমরা সাধারণত কেস ব্যবহার করি ফোন কে ভাঙ্গা থেকে বাচাতে কিন্তু কার্ভ ফোনগুলোর কেস, কার্ভের জায়গা গুলোকে ফাকা রাখে। ফোন গুলোর স্ক্রিন প্রটেক্টর পাওয়া খুবই দুষ্কর এবং সেটা পুরো স্ক্রিন কখনো ঢাকতে পারে না।

অকার্যকর ফিচার

কার্ভ ফোন গুলো স্ক্রিনের পাশে বাঁকা হওয়াতে স্বাভাবিক স্মার্ট-ফোন ফোনগুলোর স্ক্রিনের পাশের বিভিন্ন ফিচার ঠিক মত কাজ করে না। বিভিন্ন এপ ব্যবহারে দেখা দেয় জটিলতা।

ব্যবহারগত সমস্যা

বেশিরভাগ কার্ভ ফোনগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত গরম হয়ে যাবার অভিযোগ পাওয়া যায়। ফোন গুলোর গ্লাস, কার্ভ একসাথে গরম হয়ে যাওয়াতে এটি মাঝে মাঝে হাতে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে।

কার্ভ ফোন-কি নতুন উদ্ভাবন?

 

অনেকের ধারনা মতে স্মার্ট-ফোনের জগতে উদ্ভাবন চলতে থাকবে এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমেই নতুন নতুন প্রযুক্তি সেবা আমরা ব্যবহার করব। এখানে কার্ভ ফোনের আগমন খারাপ কিছু না। কিন্তু এখানে আমি বলতে চাই যে এটা নতুন এবং তেমন কোন কার্যকরী কোন উদ্ভাবনও নয়। একটু পেছনে তাকালে দেখতে পারবেন এই কার্ভ ফোন Samsung ২০১৪ সালে বাজারে নিয়ে আসে। প্রথম দিকে ফোন গুলো ডিজাইনের দিক থেকে ভাল সাড়া ফেলতে পারলেও কিছু দিন পর বাজে অভিজ্ঞতার জন্য ফোন গুলোর সেল নিচে নেমে যায়। তারমানে এটি ছিল আরো ৬ বছর আগের প্রযুক্তি।

Samsung যখন বুঝতে পারে এই ফোন ব্যবহারকারী নিচ্ছে না তখন এখান থেকে সরে আসে। আবার যখন কার্ভ ফোন বাজারে আসতে শুরু করেছে তারা এখানে বুদ্ধি মানের কাজ করে। Samsung তাদের ফোনগুলোর কার্ভ ছোট করে দেয় এবং বাজারে নিয়ে আসে Samsung Note 10। তদের নতুন Samsung Note 10 ফোন তাদের ইন্ডস্ট্রিকে এগিয়েও নিয়েছে  অতিরিক্ত কিছু ফিচারের কারনে।

কেন নতুন কার্ভ গুলো কিনবেন

বর্তমানে যেসব কোম্পানি আবার কার্ভ ফোন নিয়ে আশাকরি আমাদের ফোন গুলো মেটাল ফ্রেমের যেগুলো টাচ সেন্সেটিভ এবং গেসচারের জন্য দারুণ উপযুক্ত তারপরেও এই ফিচার গুলো কার্ভে দিয়ে প্রমোশন করা ক্রেতা আকর্ষণ করা ছাড়া আর কিছুই না।

কতটা সফল হতে পারে?

কিছু দিন আগে Asus এবং HTC এর কিছু ফোনে তারা মেটাল বডিতে বিভিন্ন গেসচার ফিচার দিয়েছিল কিন্তু ব্যবহারকারীদের অভিযোগ ছিল ফোন গুলো প্রায় আটকে যা এবং তখন সেই ফিচার আর কাজ করে না। আসলে বড় কার্ভ দেয়ার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ইউজে-বিলিটি প্রবলেম দূর হবার বদলে নতুন প্রবলেম তৈরি হবে। ধরুন আপনি কোন কার্ভ ফোনে প্লেস্টোর বা কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করছেন এই মুহূর্তে যদি কার্ভের দিকে টাচ করে স্ক্রল করার ট্রাই করুন সেটা কাজ করে না। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে ফোন স্ক্রিনের যে অংশ কার্ভে থাকে সেটা টাচ করলে কাজ করে না। যদিও Huawei তাদের ফোন গুলোতে একটা অপশন রেখেছে যেখানে আপনি চাইলে কার্ভ ছোট বড় করে নিতে পারবেন।

অনেক অভিজ্ঞ টেক ব্যক্তিত্ব ধারনা করছে ভবিষ্যতে হয়তো এই কার্ভের আকার আরও বড় হবে এমনি একটি ফোন সম্পূর্ণ স্ক্রিন হিসাবেও থাকতে পারে। বর্তমানে যেহেতু একেক কোম্পানি একেক সাইজের কার্ভ নিয়ে আসছে সেহেতু এপ ডেভেলপারদের ও তাদের মত করে এপ ডেভেলপ করতে হচ্ছে। আরেকটি মাজার বিষয়ে হচ্ছে কোম্পানি গুলো তাদের প্রমোশন বা শপ গুলোতে তাদের ফোন গুলোকে আকর্ষণীয় করে ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরে বাস্তব ক্ষেত্রে তা একই হয় না।  অনেক ইউজারের অভিযোগ ছিল ফোনগুলোতে ভিডিও কোয়ালিটি ততটা ভাল থাকে না যতটা দেখায়। ভিডিও বেশিরভাগ সময় রিফ্লেক্ট করতে দেখা যায়।

আবার পুনর্জাগরণের কারণ কি?

এখন প্রশ্ন আছে এত এত অসুবিধা থাকার পরেও কেন ৫ বছর আগের একটি প্রযুক্তির আবার পুনর্জাগরণ হচ্ছে। এর পেচনে দুইটি কারন আছে, প্রথমত তারা ১০০০ ইউরো দিয়ে এমন ফোনগুলো বিক্রি করতে পারবে এবং যেহেতু আজকার মানুষ বেশিরভাগ বেজেল ছাড়া ফোন পছন্দ করছে তাই হয়তো সবার এই ফোন গুলো পছন্দ হবে। তবে এগুলোকে আমি কখনই উদ্ভাবন বলব না আমি মনে করি ফোন গুলো নতুন করে ডিজাইন করলেই চমকপ্রদ বানালেই সব সময় সেগুলোকে উদ্ভাবন বলা যায় না।

উদ্ভাবণ কেমন হতে হয়

আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, কার্ভ ফোনগুলোতে কি নতুন কোন উদ্ভাবন নেই? আমি বলব, আছে। শাউমি দারুণ এক কার্ভ ফোন নিয়ে আসছে, । বলা যায় কার্ভ ফোনের ডিজাইনের দিকে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে কারণ ফোনটির চারপাশেই থাক স্ক্রিন। শাউমির গবেষকরা হয়তো আগেই আসছে ট্রেন্ডটা বুঝতে পেরেছিল এবং এমন এক দারুণ ফোন তৈরি করে। আশা করা যাচ্ছে ফোনটিতে গতানুগতিক কার্ভ ফোন গুলোর সমস্যা থাকবে না। তারপরেও এখন দেখার অপেক্ষা।

শেষ কথা

মানুষ সব সময় নতুন সন্ধান করে। বাজারে নতুন ফোন আসলে সেটা মানুষকে টানবেই কিন্তু যদি ব্যবহার করে মানুষ সন্তুষ্ট না হয় সেটা বেশি দিন টিকতে পারবেন না এটাই নিয়ম। নতুন কার্ভ ফোন গুলো বাজারে আসলেই বুঝা যাবে এটা কতটা কার্যকরী হতে পারে।

পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন। আমাদের সমসাময়িক যে সংকট চলছে এর থেকে রক্ষা পেতে সবাই সচেতন থাকবেন কারণ আপনার সচেতনতাই পারে আমাদের সবাইকে খারাপ অবস্থা থেকে বাচাতে। সবাই বাসায় থাকুন আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, আল্লাহ হা-ফেজ।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস