স্মার্টফোনে স্মুথ পারফরম্যান্স পেতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো র্যাম, আর এজন্যই হাল আমলে সবাই চান বেশি র্যামের ফোন কিনতে। তাইতো দেশে বর্তমানে ২/৩ গিগাবাইট র্যামের প্রচুর ফোন পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু ৪ গিগাবাইট র্যামের ফোনের সংখ্যা বেশ কম। আআর আজকের টিউনে ওয়ালটনের ৪ গিগাবাইট র্যামের ফোন Walton Primo X4 Pro এর হ্যান্ডস-অন রিভিউ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
Primo X4 Pro এর নানা ফিচারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অ্যান্ড্রয়েড ৬.০ মার্শম্যালো, সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে, ৫০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি, অক্টাকোর প্রসেসর, ১৬ মেগাপিক্সেল রেয়ার ক্যামেরা, ১৩ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা। ২৮,৯৯০ টাকা মূল্যের এই ফোনে ৬৪ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজের পাশাপাশি ১২৮ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মেমোরী কার্ড ব্যবহার করা যায়।
একনজরে ওয়ালটন Primo X4 Pro এর উল্লেখযোগ্য ফিচারসমূহঃ
যেসব কারণে পছন্দ হয়েছে Primo X4 Pro-
Primo X4 Pro এর আনবক্সিং:
এই ফোন কিনলে এর সাথে যা যা পাবেন –
অপারেটিং সিস্টেমঃ
Primo X4 Pro এ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ৬.০ মার্শম্যালো, তবে এতে স্টক অ্যান্ড্রয়েড ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার না করে কাস্টোমাইজড ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়েছে।
ডিসপ্লেঃ
৫.৫ ইঞ্চি এই ফোনের ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন হচ্ছে ১৯২০x১০৮০ পিক্সেল। এই ডিভাইসের ডিসপ্লের নিরাপত্তায় চতুর্থ প্রজন্মের গরিলা গ্লাস সমৃদ্ধ ২.৫ডি কার্ভ গ্লাস ব্যবহৃত হয়েছে।
ইউজার ইন্টারফেসঃ
Primo X4 Pro ফোনটিতে কাস্টোমাইজড ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহৃত হওয়ায় এতে কোন আলাদা অ্যাপ ড্রয়ার নেই।
এছাড়া এই ফোনে নানা থিম ব্যবহার করে এর ইউজার ইন্টারফেসে ভিন্নতা আনা যায়।
বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইনঃ
বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইনের দিক থেকে Primo X4 Pro প্রিমিয়াম কোয়ালিটির; মেটাল বডি ও হালকা গড়নের কারণে এই ফোন দেখলেই আপনার ভালো লাগবে - এটা নিশ্চিত।
Primo X4 Pro এর সামনের অংশে আছে ফ্রন্ট ক্যামেরা আর পেছনের অংশে আছে রেয়ার ক্যামেরার লেন্স, এলইডি ফ্ল্যাশ ও ওয়ালটনের লোগো।
এর হোম বাটনটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার হিসেবে কাজ করে।
ফোনটির নিচের অংশে রয়েছে ইউএসবি ২.০ পোর্ট ও স্পিকার আর উপরের অংশে রয়েছে ৩.৫ মিলিমিটার অডিও পোর্ট; ফোনটির ভলিউম কী, পাওয়ার কী একই পার্শ্বে আর সিম ট্রে অন্যপার্শ্বে।
প্রসেসর ও জিপিউঃ
২ গিগাহার্টজ গতির অক্টাকোর প্রসেসরসমৃদ্ধ এই ফোনে মিডিয়াটেকের ৬৪ বিট চিপসেট MT6755 ও মালি টি-৮৬০ জিপিউ ব্যবহৃত হয়েছে।
স্টোরেজ ও র্যাম:
Primo X4 Pro এ ৬৪ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমোরীর পাশাপাশি ১২৮ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মাইক্রো-এসডি কার্ড ব্যবহার করা যায়। সেইসাথে OTG সাপোর্টের কারণে পেনড্রাইভ, হার্ডডিস্ক ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। এই ফোনের ৪ গিগাবাইট র্যামের মধ্যে বুটআপের পর প্রায় অর্ধেক ফাঁকা থাকে।
গেমিং পারফরম্যান্সঃ
৬৪ বিট চিপসেট, ২ গিগাহার্টজ গতির প্রসেসর আর ৪ গিগাবাইট র্যামের Primo X4 Pro এর গেমিং পারফরম্যান্স চমৎকার। এতে গ্র্যান্ড থেফট অটো, ফুটবল ম্যানেজার, অ্যাসফাল্ট ৮, নিড ফর স্পিডসহ জনপ্রিয় বিভিন্ন হাই-গ্রাফিক্সের গেম কোন ধরণের ল্যাগিং ছাড়াই খেলা গেছে।
ক্যামেরা পারফরম্যান্সঃ
১৬ মেগাপিক্সেল রেয়ার ক্যামেরার এই ফোনের ক্যামেরায় আছে ফেস ডিটেকশন, প্রফেশনাল ক্যামেরা মুড ও আলট্রা পিক্সেল মুড। চমৎকার ছবি তুলতে এর ক্যামেরায় BSI সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে, এর পাশাপাশি আছে অটোফোকাস, এলইডি ফ্ল্যাশ প্রভৃতি সুবিধা।
Primo X4 Pro এর ক্যামেরা ইন্টারফেস ও সেটিংসঃ
Waton Primo X4 Pro এর রেয়ার ক্যামেরায় তোলা কিছু ছবি-
১৩ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরায় তোলা সেলফি-
মাল্টিমিডিয়াঃ
Primo X4 Pro এর অডিও ইন্টারফেস যেমন দারুণ, তেমনি চমৎকার এর অডিও আউটপুটও। এতে DTS মিউজিক সিস্টেম থাকার কারণে এর অডিও সাউন্ড কোয়ালিটি দারুণ। সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে থাকায় দারুণভাবে ভিডিও উপভোগ করা যায়।
ব্যাটারি পারফরম্যান্সঃ
৫০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারি Primo X4 Pro এর অন্যতম আকর্ষণীয় দিক। এই ফোনে ৯০% চার্জ নিয়ে টানা ২ ঘন্টা গেম খেলার পর এর চার্জ ৭১% এ নেমে এসেছিলো; তবে রেগুলার ব্যবহারে খুব সহজেই ২ দিন চালিয়ে নেওয়া যায়।
পাশাপাশি Extreme Power Saving Mode ব্যবহার করে আপনি মাত্র ১০% চার্জ নিয়েও কয়েকঘন্টা ফোনটি চালাতে পারবেন।
বেঞ্চমার্কঃ
হাই-এন্ডের ফোন Primo X4 Pro এর বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাইয়ের জন্য বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের জনপ্রিয় অ্যাপ AnTuTu বেছে নেওয়া হয়েছিলো, যেখানে এর স্কোর এসেছে ৫১৯৭৬; অন্যদিকে GeekBench এ সিঙ্গেলকোর ও মাল্টিকোর এ এর স্কোর যথাক্রমে ৭০৭ ও ২৯১০
বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের আরেক অ্যাপ Nenamark এ Primo X4 Pro এর স্কোর এসেছে ৫৯.৪
স্পেশাল ফিচারঃ
এই ফোনে স্পেশাল ফিচার হিসেবে রয়েছে স্প্লিট স্ক্রিন, চাইল্ড মুড, স্মার্ট জেশ্চার, এয়ার জেশ্চার, সাসপেন্ড বাটন, সিস্টেম ম্যানেজার প্রভৃতি।
সেন্সর:
Primo X4 Pro এ ফিঙ্গারপ্রিন্ট, প্রক্সিমিটি, লাইট, গাইরোস্কোপ, অ্যাক্সিলেরোমিটার প্রভৃতি সেন্সর বিদ্যমান।
কানেক্টিভিটিঃ
ফোরজি সুবিধাসম্পন্ন Primo X4 Pro এ ইউএসবি ২.০, ব্লুটুথ ৪.০, ওয়াইফাই, ওয়্যারলেস হটস্পট প্রভৃতি কানেক্টিভিটি সুবিধা রয়েছে। সেইসাথে আরও আছে ওটিজি সুবিধা। ডুয়েল সিম সুবিধাসম্পন্ন এই ফোনের উভয় স্লটই মাইক্রো সিম সাপোর্টেড।
দামঃ
হাই-এন্ডের ফোন সাশ্রয়ী বাজেটে বাজারে আনায় ইতোমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে ওয়ালটন। এরই ধারাবাহিকতায় ৪ গিগাবাইট র্যাম, ১৬ মেগাপিক্সেলের রেয়ার ক্যামেরা, ১৩ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা, ৬৪ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ, ৫০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারিসহ চমৎকার সব ফিচারের Primo X4 Pro এর দাম নির্ধারিত হয়েছে মাত্র ২৮৯৯০ টাকা!
শেষ কথাঃ
চমৎকার ডিজাইন, দারুণ ক্যামেরা, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি, গিগাবাইট র্যাম, ও আকর্ষণীয় নানা ফিচার এবং সাশ্রয়ী দামের কারণে ৩০ হাজার টাকা বাজেটে Walton Primo X4 Pro কে তালিকার শুরুতেই রাখতে হবে। এই ফোনের ১৩ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা সেলফি-প্রেমীদের নিকট আলাদা কদর পাবে।
সুপ্রিয় কমিউনিটি, আজকের টিউন এখানেই শেষ করছি। Primo X4 Pro এর হ্যান্ডস-অন রিভিউ নিয়ে প্রশ্ন/টিউমেন্ট জানান টিউমেন্টে। সবার কল্যাণ কামনায় আল্লাহ্ হাফিজ।
আমি আরিফিন সৈকত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 76 টি টিউন ও 24 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে।
সুন্দর হয়েছে।