হ্যালো টিউনারবৃন্দ, কেমন আছেন সবাই? আবারও আপনাদের মাঝে হাজির হলাম নতুন একটি ফোনের রিভিউ নিয়ে। আমার আজকের টিউনটি ওয়ালটনের ৪ জিবি র্যামের ফোন Primo X4 নিয়ে। চার জিবি র্যামের কথা শুনে অনেকেই নিশ্চয়ই ভাবছেন এই ফোনের দাম নির্ঘাত ৩০ হাজার টাকার উপরে? কিন্তু না! বরাবরের মতোই সাধ্যের মধ্যে দাম রেখেছে ওয়ালটন। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর, অক্টাকোর প্রসেসর, ৪ গিগাবাইট র্যাম, ১৬ ও ১৩ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ইত্যাদি নানা ফিচারের এই ফোনের দাম মাত্র ২২৯০০ টাকা। যাই হোক, আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করছি Primo X4 এর হ্যান্ডস অন রিভিউ।
নতুন এই ফোনটি চলবে অ্যান্ড্রয়েড ৬.০ মার্শম্যালো অপারেটিং সিস্টেমে আর এতে আছে গরিলা গ্লাস ৪ সমৃদ্ধ ৫.৫ ইঞ্চি ডিসপ্লেবিশিষ্ট, ৩১৩০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারি, ৩২ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমোরীর ও ১২৮ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মেমোরী কার্ড ব্যবহারের সুবিধা। এছাড়া ইউএসবি টাইপ-সি, ফোরজি সুবিধা, ডিটিএস সাউন্ড সিস্টেম ইত্যাদি ফিচারও আছে।
আনবক্সিং:
Primo X4 কেনার পর আপনি এর সাথে যা যা পাবেন –
অপারেটিং সিস্টেমঃ
অ্যান্ড্রয়েড ৬.০ মার্শম্যালো ওএস এর Primo X4 এ কাস্টোমাইজড ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়েছে।
বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইনঃ
প্রিমিয়াম মেটাল বডি ও হালকা গড়নের কারণে Primo X4 অনায়াসেই আপনাকে মুগ্ধ করবে। Primo X4 এর নিচের অংশে রয়েছে ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট ও স্পিকার আর উপরের অংশে রয়েছে ৩.৫ মিলিমিটার অডিও পোর্ট; ফোনটির ভলিউম কী, পাওয়ার কী ও সিম ট্রে একই পার্শ্বে।
এর সামনের অংশে আছে ফ্রন্ট ক্যামেরা আর পেছনের অংশে আছে রেয়ার ক্যামেরার লেন্স, এলইডি ফ্ল্যাশ ও ওয়ালটনের লোগো।
১৫৩ মিলিমিটার উচ্চতা, ৭৫.৩ মিলিমিটার প্রস্থ ও ৭.৬ মিলিমিটার পুরুত্ববিশিষ্ট এই ফোনটির ব্যাটারিসহ ওজন মাত্র ১৫৯ গ্রাম। এর ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর দেওয়া হয়েছে হোম বাটনে।
ডিসপ্লেঃ
৫.৫ ইঞ্চি এই ফোনের ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন ১৯২০x১০৮০ পিক্সেল। ডিসপ্লে যেনো সহজে না ভাঙ্গে সেজন্য এতে গরিলা গ্লাস ৪ ব্যবহৃত হয়েছে।
ইউজার ইন্টারফেসঃ
Primo X4 ফোনটিতে কাস্টোমাইজড ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহৃত হওয়ায় এতে কোন আলাদা অ্যাপ ড্রয়ার নেই।
আপনি চাইলে এতে বিভিন্ন থিমও ডাউনলোড করতে পারবেন-
সিপিউ ও জিপিউঃ
১.৮ গিগাহার্টজ গতির অক্টাকোর প্রসেসরসমৃদ্ধ এই ফোনে মিডিয়াটেকের ৬৪ বিট চিপসেট MT6755 ব্যবহৃত হয়েছে। সিপিইউর সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই ফোনে মালি টি-৮৬০ জিপিউ ব্যবহৃত হয়েছে।
র্যাম ও মেমোরীঃ
Primo X4 এ ৩২ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমোরীর পাশাপাশি আছে ১২৮ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মাইক্রো-এসডি কার্ড ব্যবহার করা যায়। স্মুথ পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে র্যামের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এদিক থেকে Primo X4 অনন্য, কেনোনা এতে রয়েছে ৪ গিগাবাইট র্যাম, যার মধ্যে বুটআপের পর প্রায় ২.৬ গিগাবাইট ফাঁকা থাকে।
গেমিং পারফরম্যান্সঃ
৬৪ বিটের ১.৮ গিগাহার্টজ অক্টাকোর প্রসেসর ও ৪ গিগাবাইট র্যাম থাকায় Primo X4 এর গেমিং পারফরম্যান্স দারুণ। এই ফোনে ফুটবল ম্যানেজার, গ্র্যান্ড থেফট অটো, ডেড ট্রিগার ২, নিড ফর স্পিডসহ জনপ্রিয় বিভিন্ন এইচডি গেম বেশ স্মুথলি খেলা গেছে।
ক্যামেরা পারফরম্যান্সঃ
Primo X4 এর অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হলো এর ক্যামেরা! ১৬ মেগাপিক্সেল রেয়ার ক্যামেরার এই ফোনের ক্যামেরায় আছে ফেস ডিটেকশন, প্রফেশনাল ক্যামেরা মুড ও আলট্রা পিক্সেল মুড। সুন্দর ছবি তুলতে এর ক্যামেরায় BSI সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে, এর পাশাপাশি আছে অটোফোকাস, এলইডি ফ্ল্যাশ প্রভৃতি সুবিধা।
Primo X4 এর ক্যামেরা ইন্টারফেস ও সেটিংসঃ
দেখে নিন Primo X4 এর রেয়ার ক্যামেরায় তোলা চমৎকার কিছু ছবি-
১৩ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরার কারণে এই ফোন সেলফি-প্রেমীদের মাঝে আলাদা ক্রেজ তৈরিতে সক্ষম। Primo X4 এ তোলা সেলফি-
অডিও ও ভিডিওঃ
এতে DTS মিউজিক সিস্টেম থাকার কারণে এর অডিও সাউন্ড কোয়ালিটি দারুণ আর ৩.৫ মিলিমিটারের অডিও জ্যাকসম্পন্ন এই ফোনের সাথে যে হেডফোনটি দেওয়া হয় সেটি দেখতে যেমন দারুণ তেমন চমৎকার তার সাউন্ডও।
উন্নত গ্রাফিক্সের কারণে আপনার ভিডিও এক্সপেরিয়েন্সটাও হবে দারুণ।
এছাড়া এই ফোনে আপনি পাচ্ছেন ডিফল্ট ভিডিও এডিটর-
ব্যাটারি পারফরম্যান্সঃ
অক্টাকোর প্রসেসর ও ৫.৫ ইঞ্চি ডিসপ্লের এই ফোনে ৩১৩০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে। একবার ফুল চার্জে দিলে টানা প্রায় ৯ ঘন্টা ইন্টারনেট ব্রাউজ কিংবা প্রায় ৭ ঘন্টা এইচডি ভিডিও উপভোগ করতে পারবেন; আর সাধারণ ব্যবহারে অনায়াসেই ১ দিন পার হয়ে যাবে। তবে এতে থাকা Extreme Power Saving Mode ব্যবহার করে ব্যবহারকারী মাত্র ১০% চার্জ নিয়েও কয়েকঘন্টা অনায়াসেই ফোনটি চালাতে পারবেন।
বেঞ্চমার্কঃ
ফোনের পারফরম্যান্স যাচাই করতে বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের জনপ্রিয় অ্যাপ AnTuTu বেছে নিয়েছিলাম, যেখানে এর স্কোর এসেছে ৪৬৮৬৬; অন্যদিকে GFXBench এ সিঙ্গেলকোর ও মাল্টিকোর এ এর স্কোর যথাক্রমে ৭৪৫ ও ২৯২০
বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের আরেক অ্যাপ Nenamark এ Primo X4 এর স্কোর এসেছে ৬১.৬
কানেক্টিভিটিঃ
ফোরজি সুবিধাসম্পন্ন Primo X4 এ ইউএসবি টাইপ-সি, ব্লুটুথ ৪.০, ওয়াইফাই, ওয়্যারলেস হটস্পট প্রভৃতি কানেক্টিভিটি সুবিধা রয়েছে। সেইসাথে আরও আছে ওটিজি সুবিধা। ডুয়েল সিম সুবিধাসম্পন্ন এই ফোনের একটি স্লট মাইক্রো সিম আর অন্যটি ন্যানো সিম সাপোর্টেড।
সেন্সর:
এই ফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, প্রক্সিমিটি, লাইট, গাইরোস্কোপ, অ্যাক্সিলেরোমিটার প্রভৃতি সেন্সর বিদ্যমান। এছাড়া স্মার্ট ফ্লিপ কভারের জন্য আছে হল সেন্সর।
স্পেশাল ফিচারঃ
এই ফোনে স্পেশাল ফিচার হিসেবে রয়েছে এজ বার, চাইল্ড মুড, স্মার্ট জেশ্চার, এয়ার জেশ্চার, সাসপেন্ড বাটন, সিস্টেম ম্যানেজার প্রভৃতি।
দামঃ
ক্রেতাসাধারণের হাতে অপেক্ষাকৃত স্বল্পমূল্যে উন্নত স্মার্টফোন তুলে দিতে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ বরাবরই সচেষ্ট, আর তাইতো অত্যাধুনিক সব ফিচার ও স্পেসিফিকেশনের স্মার্টফোন Primo X4 এর দাম তারা নির্ধারণ করেছে মাত্র ২২৯৯০ টাকা! ৪ গিগাবাইট র্যাম, ১৬ মেগাপিক্সেলের রেয়ার ক্যামেরা, ১৩ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা, ৩২ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর প্রভৃতি বিষয়কে বিবেচনায় নিলে এই মূল্যকে যথেষ্ট সাশ্রয়ী বলতে হবে।
একনজরে Primo X4 এর উল্লেখযোগ্য ফিচারসমূহঃ
যেসব কারণে পছন্দ হয়েছে Primo X4-
শেষ কথাঃ
যারা ২৫ হাজার টাকা বাজেটের মধ্যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর, ৪ গিগাবাইট র্যাম, দারুণ ক্যামেরা ও লেটেস্ট ওএস চালিত ফোন কিনতে চান তাদের জন্য Walton Primo X4 হতে পারে শীর্ষ পছন্দের। এর হোম বাটনে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর আর মেটালিক ডিজাইনের কারণে সহজেই আপনার নজর কেড়ে নিতে সক্ষম। সেইসাথে সেলফি-প্রেমীদের নিকট এর আলাদা কদর তৈরী করতে আছে ১৩ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা।
মাত্র ২২,৯৯০ টাকার ফোনে ৪ গিগাবাইট র্যাম আর অক্টাকোর প্রসেসর! চমৎকার পারফরম্যান্সের জন্য Primo X4 এর থেকে ভালো ফোন এই বাজেটে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। রিভিউ সংক্রান্ত আপনাদের প্রশ্ন কিংবা টিউমেন্ট জানা টিউমেন্টে; দেখা হবে আবারও!
আমি আরিফিন সৈকত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 76 টি টিউন ও 24 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে।