দেশের বাজারে ওয়ালটনের অধিকাংশ ফোন এন্ট্রি ও মিড লেভেলের হলেও প্রতি বছর তারা ফ্ল্যাগশিপ ফোনের সাথে ক্রেতাদের পরিচয় করিয়ে দেয়, এবছরের ফ্ল্যাগশিপ ফোন হলো Primo ZX2 ; হাই-এন্ডের এই ফোনটি মূলতঃ একটি ফ্যাবলেট, যার ডিসপ্লের আকার ৬ ইঞ্চি। টপ লেভেলের এই ডিভাইসের প্রায় সবগুলো ফিচারই নজরকাড়া। চলতি বছরের ভালো স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবার আগে আলোচনায় আসে তাহলো ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর, Primo ZX2 এ ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের পাশাপাশি আছে ৩ গিগাবাইট র্যাম, ৬৪ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমোরীর সাথে ১২৮ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মেমোরী কার্ড ব্যবহারের সুবিধা, ডিটিএস সাউন্ড সিস্টেম, হাইফাই মিউজিক প্রভৃতি দারুণ সব ফিচার।
৩৫,৯৯০ টাকা মূল্যের এই ফোনে আরও আছে ৬৪ বিটের অক্টাকোর প্রসেসর ও ৩,৫০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের নন-রিমুভ্যাবল লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি। এই ফোনের একটি বিশেষত্ব হলো এতে আছে Extreme Power Saving Mode, এই সুবিধার ফলে আপনি মাত্র ১০% চার্জ নিয়েও কয়েকঘন্টা ফোনটি চালাতে পারবেন। এর ২৪ মেগাপিক্সেল রেয়ার ক্যামেরা ও ১৩ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরার কথা আলাদাভাবে উল্লেখ না করলেই নয়! সেইসাথে এর ক্যামেরায় আছে অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন, প্রফেশনাল ক্যামেরা মুড ও আলট্রা পিক্সেল মুড।
ওয়ালটনের ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন Primo ZX2 এর Exclusive Hands-on Review নিয়েই আমার আজকের টিউন।
বিস্তারিত রিভিউ শুরু করবো ফোনটির আনবক্সিং দিয়ে-
Primo ZX2 কেনার পর আপনি এর সুদৃশ্য বক্সে পাবেন –
বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইনঃ
ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস বললেই চোখের সামনে চমৎকার ডিজাইন ও উন্নত বিল্ড কোয়ালিটিসম্পন্ন ফোনের কথা চোখের সামনে ভেসে ওঠে, Primo ZX2 ও এর ব্যতিক্রম নয়! প্রিমিয়াম মেটালিক ডিজাইনের এই ফ্যাবলেটের উপরের অংশে আছে ৩.৫ মিলিমিটার অডিও পোর্ট আর নিচের দিকে ইউএসবি ২.০ পোর্ট; এর সাথে পেছনের অংশে আছে রেয়ার ক্যামেরার লেন্স, ডুয়েল টোন এলইডি ফ্ল্যাশ, তার নিচে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর আর নিচের দিকে স্পীকার। ফোনটির ভলিউম কী ও পাওয়ার কী একইপার্শ্বে।
১৬৪ মিলিমিটার উচ্চতা, ৮২.৩ মিলিমিটার প্রস্থ ও ৯.৬ মিলিমিটার পুরুত্ববিশিষ্ট এই ফোনের সামনের দিকে উপরের অংশে আছে ফ্রন্ট ক্যামেরা, সেন্সর প্রভৃতি, আর নিচের দিকে আছে হোম, অপশন ও ব্যাক – এই তিনটি বাটন। Primo ZX2 ফোনটির ব্যাটারিসহ ওজন মাত্র ২১০ গ্রাম।
ডিসপ্লেঃ
৬ ইঞ্চি সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লেসংবলিত এই ফোনের ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন ২৫৬০x১৪৪০ পিক্সেল। আর এর ডিসপ্লের পিক্সেল ডেনসিটি ৪৯২ পিপিআই। এই ফোনে চতুর্থ প্রজন্মের গরিলা গ্লাস ব্যবহৃত হয়েছে।
অপারেটিং সিস্টেম ও ইউজার ইন্টারফেসঃ
অ্যান্ড্রয়েড ৫.১ ললিপপ ওএস নির্ভর Primo ZX2 এ স্টক ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার না করে Amigo 3.1 নামের এক বিশেষ ধরণের ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়েছে।
Primo ZX2 ফোনটিতে কাস্টোমাইজড ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহৃত হওয়ায় এটি সচরাচর অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ইউজার ইন্টারফেস থেকে ভিন্ন; এতে কোন আলাদা অ্যাপ ড্রয়ার নেই।
এতে বিভিন্ন ধরণের থিম ডাউনলোড করে ব্যবহার করার সুবিধাও রয়েছে-
সিপিউ ও জিপিউঃ
২.০ গিগাহার্টজ গতির অক্টাকোর প্রসেসরসমৃদ্ধ এই ফোনে মিডিয়াটেকের ৬৪ বিট চিপসেট MT6795 আর PowerVR G6200 জিপিউ ব্যবহৃত হয়েছে। উচ্চ গতির প্রসেসরের পাশাপাশি উন্নত চিপসেট ও জিপিউ থাকার কারণে এতে মাল্টিটাস্কিং, এইচডি গেমিং প্রভৃতি বেশ স্মুথলি করা যায়।
স্টোরেজ ও র্যামঃ
Primo ZX2 এর ৬৪ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজের মধ্যে প্রায় ৫৩ গিগাবাইট ব্যবহারযোগ্য, পাশাপাশি এই ফোনে ১২৮ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মাইক্রো-এসডি কার্ড ব্যবহার করা যায়।
আর এই ফোনের ৩ গিগাবাইট র্যামের মধ্যে প্রায় ১.২ গিগাবাইট সিস্টেম কর্তৃক ব্যবহৃত হয়, র্যাম অধিক হওয়ার কারণে প্রচুর পরিমাণ অ্যাপ ইন্সটল ও রানিং থাকার পরেও প্রায় এক-চতুর্থাংশ র্যাম ফাঁকা থাকে।
ক্যামেরা পারফরম্যান্সঃ
Primo ZX2 এর সবথেকে আকর্ষণীয় দিক হলো এর ২৪ মেগাপিক্সেলের রেয়ার ক্যামেরা, চমৎকার ছবি তুলতে এই ফোনের ক্যামেরায় আছে অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন, প্রফেশনাল ক্যামেরা মুড ও আলট্রা পিক্সেল মুড। সুন্দর ছবি তুলতে এর ক্যামেরায় BSI সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে, এর পাশাপাশি আছে অটোফোকাস, ডুয়েল টোন এলইডি ফ্ল্যাশ প্রভৃতি সুবিধা।
প্রিয় পাঠক, দেখে নিন এই ফোনের এর ক্যামেরা ইন্টারফেস ও সেটিংসঃ
Primo ZX2 এর ২৪ মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় তোলা কিছু ছবি-
আপনি কি সেলফি তুলতে ভালোবাসেন? তাহলে এই ফোনের ১৩ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা বিশেষভাবে আপনার নজর কাড়বে। আসুন দেখে নিই Primo ZX2 এ তোলা সেলফি-
মাল্টিমিডিয়াঃ
Primo ZX2 এ DTS মিউজিক সিস্টেম ও হাইফাই মিউজিক থাকার কারণে এর অডিও সাউন্ড কোয়ালিটি দারুণ আর ৩.৫ মিলিমিটারের অডিও জ্যাকসম্পন্ন এই ফোনের সাথে যে হেডফোনটি দেওয়া হয় সেটি দেখতে যেমন দারুণ তেমন চমৎকার তার সাউন্ডও।
২কে রেজোল্যুশন ও সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে সংবলিত এই ফোনে ফোর-কে ভিডিও প্লেব্যাকের সুবিধা থাকায় আপনার ভিডিও এক্সপেরিয়েন্সটাও হবে বেশ চমৎকার।
গেমিং পারফরম্যান্সঃ
৬৪ বিট চিপসেট, উচ্চগতির প্রসেসর ও ৩ গিগাবাইট র্যাম থাকায় এই ফোনে জনপ্রিয় নানা গেম বেশ স্মুথলি খেলা যায়। এই ফোনে গ্র্যান্ড থেফট অটো, ডেড ট্রিগার ২, অ্যাসফাল্ট ৮, ফিফা ১৬ প্রভৃতি জনপ্রিয় গেম কোন ধরণের ল্যাগিং ছাড়াই খেলা গেছে।
বেঞ্চমার্কঃ
হাই-এন্ডের ফোন Primo ZX2 এর বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাইয়ের জন্য বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের জনপ্রিয় অ্যাপ AnTuTu বেছে নেওয়া হয়েছিলো, যেখানে এর স্কোর এসেছে ৫৩,৩২০; অন্যদিকে GFXBench এ সিঙ্গেলকোর ও মাল্টিকোর এ এর স্কোর যথাক্রমে ৮৮৭ ও ৩৭৭৬
বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের আরেক অ্যাপ Nenamark এ Primo ZX2 এর স্কোর এসেছে ৫৬.৪
কানেক্টিভিটিঃ
ফোরজি সুবিধাসম্পন্ন Primo ZX2 এ ব্লুটুথ ৪.০, ওয়াইফাই, ওয়্যারলেস হটস্পট প্রভৃতি কানেক্টিভিটি সুবিধা রয়েছে। সেইসাথে আরও আছে এনএফসি সুবিধা। ডুয়েল সিম সুবিধাসম্পন্ন এই ফোনের উভয় স্লটই মাইক্রো সিম ও ফোরজি সাপোর্টেড।
সেন্সর:
Primo ZX2 ফোনটিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, প্রক্সিমিটি, লাইট, গাইরোস্কোপ, অ্যাক্সিলেরোমিটার প্রভৃতি সেন্সর বিদ্যমান।
ব্যাটারি লাইফ:
অ্যান্ড্রয়েড ফোনের রিভিউয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যাটারি লাইফ। অক্টাকোর প্রসেসর ও ৬ ইঞ্চি ডিসপ্লের এই ফোনে ৩,৫০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের নন-রিমুভ্যাবল লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে, এর ব্যাটারি ব্যাকআপকে সন্তোষজনক বলা যায়। একবার ফুল চার্জে আপনি টানা ৮ ঘন্টারও অধিক সময় ওয়েব ব্রাউজ কিংবা ৮-৯ ঘন্টা এইচডি ভিডিও উপভোগ করতে পারবেন; আর সাধারণ ব্যবহারে অনায়াসেই ১ দিন চলে যায়।
ও হ্যাঁ, এই ফোনে থাকা Extreme Power Saving Mode ব্যবহার করে আপনি মাত্র ১০% চার্জ নিয়েও কয়েকঘন্টা ফোনটি চালাতে পারবেন।
OTA আপডেট সুবিধাঃ
ওয়ালটনের সমসাময়িক অন্যান্য ফোনের ন্যায় Primo ZX2 ফোনটিতেও OTA বা Over The Air আপডেট সুবিধা রয়েছে, যার ফলে পিসির সাথে সংযুক্ত করা ছাড়াই এর সফটওয়্যার আপডেট করা যাবে।
স্পেশাল ফিচারঃ
এই ফোনে স্পেশাল ফিচার হিসেবে রয়েছে স্মার্ট জেশ্চার, এয়ার জেশ্চার, সাসপেন্ড বাটন, নোটিফিকেশন লাইট প্রভৃতি।
মূল্যঃ
দেশীয় বাজারের ক্রেতাদের সাধ্যের কথা বিবেচনায় এনে অধিক ফিচারের ফোন অপেক্ষাকৃত স্বল্পমূল্যে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে ওয়ালটন বরাবরই সচেষ্ট। ফলে অত্যাধুনিক সব ফিচার ও স্পেসিফিকেশনের ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন Primo ZX2 এর দাম তারা নির্ধারণ করেছে ৩৫,৯৯০ টাকা ! আপাতদৃষ্টিতে এই মূল্য খানিকটা বেশি মনে হলেও এর ২কে রেজোল্যুশনের ৬ ইঞ্চি ডিসপ্লে, মেটালিক ডিজাইন, ২৪ মেগাপিক্সেলের রেয়ার ক্যামেরা, ১৩ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা, ৬৪ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরসহ আকর্ষণীয় নানা ফিচার বিবেচনায় নিলে এই মূল্য নির্ধারণ হয়তো অযৌক্তিক মনে হবেনা।
একনজরে ওয়ালটন Primo ZX2 এর ফিচারসমূহঃ
Primo ZX2 এর ভালো লাগার দিকসমূহঃ
Primo ZX2 এর সীমাবদ্ধতাঃ
ওয়ালটনের ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস Primo ZX2 এ তেমন কোন সীমাবদ্ধতা খুঁজে পাইনি, তবে এর র্যাম ৪ গিগাবাইট হলে পারফেক্ট হতো বলে আমার মনে হয়।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তঃ
যারা হাই-এন্ডের স্মার্টফোন কিনতে চান তারা কেনার পূর্বে একবার ওয়ালটনের ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন Walton Primo ZX2 দেখে নিতে পারেন। মোবাইল দিয়েই চমৎকার ফটোগ্রাফি করতে চাইলে দারুণ ক্যামেরার প্রিমো জেডএক্স২ থাকতে পারে আপনার পছন্দের তালিকায়। সেইসাথে এর ১৩ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা সেলফি-প্রেমীদের নিকট পেতে পারে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা। বড় ডিসপ্লে ও উচ্চ রেজোল্যুশনের স্মার্টফোনের খোঁজ করলে ৬ ইঞ্চি ডিসপ্লেসংবলিত Primo ZX2 অন্যদের থেকে এগিয়েই থাকবে।
আজ এপর্যন্তই। নতুন কোন টিউন নিয়ে আবারও হাজির হবো আপনাদের সামনে। সবাই ভালো থাকুন।
আমি আরিফিন সৈকত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 76 টি টিউন ও 24 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে।
দাম কমার অপেক্ষায় আছি