অ্যান্ড্রয়েড নির্ভর স্মার্টফোনে স্মুথ পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে র্যাম, সেইসাথে যদি চিপসেট হয় ৬৪ বিটের তাহলে তো কথাই নেই ! বাজারে নতুন আসা চমৎকার ডিজাইন ও সাশ্রয়ী বাজেটের Walton Primo R4 এ স্মুথ পারফরম্যান্সের জন্য ২ গিগাবাইট র্যামের পাশাপাশি রয়েছে ৬৪ বিটের কোয়াডকোর প্রসেসর।
মাত্র ১১,২৯০ টাকা দামের এই ফোনে আরও আছে ৮ মেগাপিক্সেলের রেয়ার ক্যামেরা, ৫ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা, ডুয়েল সিম, ফোরজি সাপোর্ট, DTS সাউন্ড সিস্টেম ইত্যাদি। এছাড়া এতে থাকা Extreme Power Saving Mode সুবিধা ব্যবহার করে মাত্র ১০% চার্জ নিয়েও কয়েকঘন্টা ফোনটি চালাতে পারবেন।
টেকটিউনসের পাঠকদের জন্য Walton Primo R4 এর বিল্ড কোয়ালিটি, ব্যাটারি ব্যাকআপ, গেমিং পারফরম্যান্স, বেঞ্চমার্ক স্কোর, ক্যামেরা পারফরম্যান্সসহ নানা তথ্য নিয়ে আমার আজকের টিউন Walton Primo R4 এর Hands-on Review
প্রিমো R4 এর আনবক্সিং:
১১,২৯০ টাকা দিয়ে Walton Primo R4 কেনার পর আপনি এর সাথে যা যা পাবেন-
বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইনঃ
Walton Primo R4 এর উপরের অংশে আছে ৩.৫ মিলিমিটার অডিও পোর্ট আর নিচের অংশে ইউএসবি পোর্ট। আর ফোনটির ভলিউম কী ও পাওয়ার কী উভয়ই একপার্শ্বে দেওয়া হয়েছে। ১৪৩ মিলিমিটার উচ্চতার এই ফোনটি প্রস্থে ৭০.৩ মিলিমিটার আর এর পুরুত্ব মাত্র ৭.৯ মিলিমিটার। এই ফোনের ওজন ব্যাটারিসহ ১৩৬ গ্রাম। আকর্ষণীয় ডিজাইনের Primo R4 এর পেছনের দিকে উপরের অংশে আছে রিয়ার ক্যামেরার লেন্স ও ফ্ল্যাশলাইট আর নিচের দিকে স্পীকার।
ফোনটির সামনের দিকে আছে ফ্রন্ট ক্যামেরা, সেন্সর প্রভৃতি। ফোনটিতে হোম, অপশন ও ব্যাক – এই তিনটি বাটন রয়েছে।
ডিসপ্লে:
৫ ইঞ্চির আইপিএস ডিসপ্লেসংবলিত Walton Primo R4 এর ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন ১২৮০x৭২০ পিক্সেল।
অপারেটিং সিস্টেম:
Primo R4 ফোনটিতে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যান্ড্রয়েড ৫.০ ললিপপ কাস্টোমাইজ করে ব্যবহার করা হয়েছে।
ইউজার ইন্টারফেস:
ওয়ালটনের Primo R4 ফোনটিতে কাস্টোমাইজড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হওয়ায় এতে কোন আলাদা অ্যাপ ড্রয়ার নেই। চলুন তাহলে এই ফোনটির ইউজার ইন্টারফেস দেখে নেওয়া যাক-
এই ফোনে বিভিন্ন ধরণের থিম ব্যবহারের সুবিধাও বিদ্যমান:
চিপসেট, সিপিউ ও জিপিউ:
মিডিয়াটেকের ৬৪ বিট চিপসেট MT6735 বিশিষ্ট এই ফোনে ১.৩ গিগাহার্টজ কোয়াডকোর প্রসেসর আর মালি T720 জিপিউ ব্যবহৃত হয়েছে; ফলে এই ফোনে মাল্টিটাস্কিং, এইচডি গেমিং প্রভৃতি স্মুথলি করা যায়।
স্টোরেজ ও র্যাম:
১৬ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজের এই ফোনে আছে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মাইক্রো-এসডি কার্ড ব্যবহারের সুবিধা।
আর এর ২ গিগাবাইট র্যামের মধ্যে কোন থার্ড পার্টি অ্যাপ ইন্সটল না করা অবস্থায় প্রায় ১.১ গিগাবাইট ফাঁকা থাকে।
গেমিং পারফরম্যান্স:
কোয়াডকোর প্রসেসর ও মালি টি৭২০জিপিউসমৃদ্ধ Primo R4 এর গেমিং পারফরম্যান্স পছন্দসই। ৬৪বিট চিপসেট ও ২ গিগাবাইট র্যামবিশিষ্ট এই ফোনে বিভিন্ন ধরণের এইচডি গেম বেশ স্মুথলি খেলা যায়। এই ফোনে হিটম্যানঃস্নাইপার, অ্যাসফাল্ট ৮, কিংডম রাশ, হিরোস অব ৭১ সহ জনপ্রিয় নানা গেম কোন ধরণের ল্যাগিং ছাড়াই খেলা গেছে।
ক্যামেরা:
Primo R4 এ BSI সেন্সরযুক্ত ৮ মেগাপিক্সেলের রেয়ার ক্যামেরা রয়েছে। সেইসাথে আরও আছে অটোফোকাস, এলইডি ফ্ল্যাশ প্রভৃতি সুবিধা। এই ফোনের ক্যামেরায় ক্যামেরায় ফুল এইচডি ভিডিও রেকর্ড করা যায়।
দেখে নিন Primo R4 এর ক্যামেরা ইন্টারফেস ও সেটিংস–
Primo R4 এর ক্যামেরায় তোলা ছবিঃ
সেলফি তোলার জন্য আছে BSI সেন্সরযুক্ত ৫ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা, Primo R4 দিয়ে তোলা সেলফি-
মাল্টিমিডিয়া:
Primo R4 এ DTS মিউজিক সিস্টেম থাকার কারণে এর অডিও সাউন্ড কোয়ালিটি দারুণ। আর ৩.৫ মিলিমিটারের অডিও জ্যাকসম্পন্ন এই ফোনের সাথে যে হেডফোনটি দেওয়া হয় তার সাউন্ড কোয়ালিটিও মানানসই।
প্রিমো R4 এর Audio প্লেয়ারের সেটিংস ও ইন্টারফেস দেখে নেওয়া যাক-
এই ফোনে আরো আছে এফএম রেডিও, সে সাথে থাকছে এফএম রেডিও রেকর্ডার। ফলে আপনার পছন্দের কোন রেডিও প্রোগ্রাম রেকর্ডও করতে পারবেন।
কোয়াডকোর প্রসেসরের এই ফোনে ১০৮০পি ফুল এইচডি ভিডিও কোন ধরণের ল্যাগ ছাড়াই চলেছে।
বেঞ্চমার্ক:
Primo R4 এর বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাইয়ের জন্য বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের জনপ্রিয় অ্যাপ AnTuTu বেছে নেওয়া হয়েছিলো, যেখানে এর স্কোর এসেছে ৩০,৩৪৯ - এই রেঞ্জের ফোনে যা অভাবিত! অন্যদিকে GeekBench এ এর স্কোর এসেছে ৫৯৬ (সিঙ্গেল-কোর) ও ১৩৩৬ (মাল্টি-কোর) -
বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের আরেক অ্যাপ NenaMark এ Primo R4 এর স্কোর এসেছে ৬৪.৮
কানেক্টিভিটি:
এই ফোনের উভয় সিমে ফোরজি সুবিধার পাশাপাশি ব্লুটুথ ৪.০, ওয়াইফাই, ওয়্যারলেস হটস্পট, হটনট প্রভৃতি কানেক্টিভিটি সুবিধা রয়েছে। আরও আছে জিপিএস, এ-জিপিএস, ডিজিটাল কম্পাস প্রভৃতি সুবিধা।
আর এই ফোনে সেন্সর হিসেবে অ্যাক্সিলেরোমিটার, লাইট, প্রক্সিমিটি প্রভৃতি সেন্সর বিদ্যমান।
ওটিজি:
ওয়ালটনের নতুন এই ফোনে রয়েছে OTG (USB On The Go) সুবিধা। ফলে ব্যবহারকারী এতে মাউস, কীবোর্ড, পেনড্রাইভ, এক্সটারনাল হার্ডডিস্কসহ বিভিন্ন ধরণের ইউএসবি ড্রাইভ ব্যবহার করতে পারবেন।
OTA আপডেট সুবিধা:
এই ফোনে OTA বা Over The Air আপডেট সুবিধা রয়েছে, যার ফলে পিসির সাথে সংযুক্ত করা ছাড়াই এর সফটওয়্যার আপডেট করা যাবে।
ব্যাটারি:
Primo R4 ফোনটিতে ২,৪০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়েছে। ৫ ইঞ্চি ডিসপ্লের এই ফোনে ফুল চার্জ দিয়ে টানা ৩ ঘন্টা ইন্টারনেট ব্রাউজ ও এইচডি ভিডিও উপভোগ করার পর এর চার্জ ৫১% এ নেমে এসেছিলো। তবে স্বাভাবিক ব্যবহারে একদিন চালিয়ে নিতে পারবেন।
পাঠক হয়তো ইতোমধ্যেই জেনেছেন, এই ফোনে থাকা Extreme Power Saving Mode ব্যবহার করে মাত্র ১০% চার্জ নিয়েও কয়েকঘন্টা ফোনটি চালানো যায়।
স্পেশাল ফিচার:
এই ফোনের বিভিন্ন স্পেশাল ফিচারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- স্মার্ট জেশ্চার, হটনট, সাসপেন্ড বাটন ও মোবাইল সিকিউরিটি।
দাম:
ক্রেতাদের সাধ্যের কথা বিবেচনা করে চমৎকার ডিজাইন ও আকর্ষণীয় নানা ফিচারের Walton Primo R4 এর দাম মাত্র ১১,২৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
একনজরে Primo R4 এর উল্লেখযোগ্য ফিচারসমূহ-
যেসব কারণে ভালো লেগেছে Primo R4 এর-
Primo R4 এর সীমাবদ্ধতা:
Walton Primo R4 এ ২,৪০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারির ব্যবহার ছাড়া বলার মতো তেমন কোন সীমাবদ্ধতা খুঁজে পাইনি।
শেষ কথা:
সাশ্রয়ী বাজেটে চমৎকার ডিজাইন, উন্নত ক্যামেরা আর ফোরজি সাপোর্টেড ফোন কিনতে চাইলে বর্তমান বাজারে Walton Primo R4 কে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখতে হবে। বিশেষতঃ BSI সেন্সরযুক্ত ৫ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা আর OTA ও OTG সুবিধার কারণে ফোনটি থাকবে পছন্দের শীর্ষতালিকায়। তবে এর ব্যাটারিটা আরেকটু বেশি হলে কেনার আগে দু’বার ভাবতে হতোনা!
প্রিয় পাঠক, Primo R4 এর রিভিউ নিয়ে কোন জিজ্ঞাসা থাকলে টিউমেন্টে জানাতে পারেন। সেইসাথে আপনাদের মূল্যবান টিউমেন্ট জানাতেও ভুলবেননা; সবাই ভালো থাকুন।
আমি আরিফিন সৈকত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 76 টি টিউন ও 24 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে।
বালটন মোবাইল একবার যে কিনে সে আর দ্বিতীয়বার কিনে না। ক্রেতাদের সাধ্যের মাঝে কি ঘোড়ার ডিম দেয় তা PRIMO S2 চালায়া হারে হারে বুঝছি। এখনও জেলিবিন ই আছে আর সেটে ১০১ টা বাগ