একবার ভাবুনতো, একই ফোনে জিএসএম ও সিডিএমএ সুবিধা থাকলে কেমন হয়? সেইসাথে যদি থাকে ফোরজি, স্ন্যাপড্রাগন চিপসেট, অক্টাকোর প্রসেসর, ২ গিগাবাইট র্যাম আর ৮৮ ডিগ্রী ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ভিউসম্পন্ন ৮ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা তাহলে তো কথাই নেই ! এমন সব সুবিধা নিয়ে ওয়ালটনের Primo V সিরিজের নতুন ফোন Primo V2; ১৫,৯৯০ টাকা মূল্যের এই ফোনের আরও আছে ৩,০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি, ১৩ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা, ফুল এইচডি ডিসপ্লেসহ আকর্ষণীয় বিভিন্ন ফিচার।
পাঠকের মনে হয়তো Primo V2 এর পারফরম্যান্স নিয়ে নানা প্রশ্ন উঁকি দেওয়া শুরু করেছে। আপনাদের সামনে Walton Primo V2 এর Hands-on Review তুলে ধরতে আমার আজকের এই টিউন।
ফোনের রিভিউ শুরু করার আগে একনজরে এই ফোনের কনফিগারেশন দেখে নিন-
আনবক্সিং:
Primo V2 এর বক্সটি বেশ দারুণ, এই ফোন কেনার পর যা যা পাবেন –
ডিসপ্লেঃ
এতে আছে ৫ ইঞ্চি কোয়ান্টাম শার্প পিউর ব্ল্যাক আইপিএস ডিসপ্লে, কর্নিং গরিলা গ্লাস ৩ যুক্ত এই ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন ১৯২০x১০৮০ পিক্সেল।
অপারেটিং সিস্টেমঃ
ওয়ালটনের ম্যাক্সিমাম ফোনে স্টক অ্যাড্রয়েড ব্যবহার করা হলেও Primo V2 এ কাস্টমাইজড LEWA OS ব্যবহৃত হয়েছে, যা অ্যান্ড্রয়েড ৫.০.২ ললিপপ নির্ভর।
ইউজার ইন্টারফেসঃ
কাস্টোমাইজড অপারেটিং সিস্টেম (LEWA OS) থাকায় এর ইউজার ইন্টারফেস কিছুটা আলাদা-
হোমস্ক্রীনঃ
অ্যাপ ড্রয়ারঃ
নোটিফিকেশন বারঃ
উল্লেখ্য, এই ফোনে বিভিন্ন ধরণের থিম ব্যবহারের সুযোগও আছে।
বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইনঃ
আকর্ষণীয় ডিজাইনের Primo V2 ফোনটি দেখলেই আপনি মুগ্ধ হবেন, সুন্দর এই ফোনটি হাতে নিলেই দারুণ একটা ফিলও হবে! এর একপার্শ্বের অংশে আছে ভলিউম কী ও পাওয়ার কী, আর ফোনটির সিম ট্রে ভেতরের দিকে। এই ফোনের উপরের অংশে আছে ৩.৫ মিলিমিটার অডিও পোর্ট আর নিচের দিকে ইউএসবি ২.০ পোর্ট, অন্যান্য ফোনের স্পিকার পেছনের দিকে থাকলেও এর স্পিকার ইউএসবি পোর্টের পাশে।
এই ফোনটি উচ্চতায় ১৩৮.৮ মিলিমিটার, প্রস্থে ৬৯.৬ মিলিমিটার আর এর পুরুত্ব ৮.৯ মিলিমিটার। Primo V2 ফোনটির ব্যাটারিসহ ওজন মাত্র ১৩০ গ্রাম। এর সামনের দিকে উপরের অংশে আছে ফ্রন্ট ক্যামেরা, সেন্সর আর নিচের দিকে আছে হোম/মেনু, অপশন ও ব্যাক – এই তিনটি বাটন।
সিপিউ ও জিপিউঃ
১.৫ গিগাহার্টজ গতির অক্টাকোর প্রসেসরের এই ফোনে স্ন্যাপড্রাগন ৬১৫ চিপসেটের সাথে আছে অ্যাড্রেনো ৪০৫ জিপিউ; ফলে এই ফোনে মাল্টিটাস্কিং, গেমিং প্রভৃতি বেশ স্মুথলি করা যায়।
স্টোরেজ ও র্যামঃ
১৬ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজের এই ফোনে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মাইক্রো-এসডি কার্ডও ব্যবহার করা যায়। এর ইন্টারনাল মেমোরীর প্রায় ১০ গিগাবাইট ব্যবহার করা যায়।
Primo V2 এর ২ গিগাবাইট র্যামের মধ্যে প্রথম বুট-আপের পর প্রায় ১.২ গিগাবাইট ফাঁকা থাকে -
গেমিং পারফরম্যান্সঃ
অক্টাকোর প্রসেসর, স্ন্যাপড্রাগন চিপসেট, অ্যাড্রেনো ৪০৫ জিপিউ আর ২ গিগাবাইট র্যাম থাকায় ওয়ালটন Primo V2 এ গ্র্যান্ড থেফট অটো, ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানস, ফিফা ১৬, মাইনক্র্যাফটসহ জনপ্রিয় বিভিন্ন গেম কোন ধরণের ল্যাগিং ছাড়াই খেলা গেছে। তবে টানা ১ ঘন্টার বেশি গেম খেললে এই ফোন কিছুটা গরম হয়, যদিও Snapdragon 615 চিপসেটের প্রায় সকল ফোনেই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
ক্যামেরাঃ
Primo V2 এর ১৩ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরায় সুন্দর ছবি তুলতে BSI সেন্সর ব্যবহৃত হয়েছে, এর পাশাপাশি আছে অটোফোকাস, এলইডি ফ্ল্যাশ সুবিধা। এর রিয়ার ও ফ্রন্ট উভয় ক্যামেরার অ্যাপার্চার f2.2
Primo V2 এর ক্যামেরা ইন্টারফেস ও সেটিংসঃ
Primo V2 এর ক্যামেরায় তোলা ছবিঃ
এই ফোনে ৮৮ ডিগ্রী ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ভিউসম্পন্ন ৮ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা থাকায় এতে সেলফিও বেশ ভালো আসে-
অডিও ও ভিডিওঃ
Primo V2 এর অডিও ইন্টারফেস যেমন দারুণ, তেমনি চমৎকার এর অডিও আউটপুটও। আর এর ৩.৫ মিলিমিটারের অডিও জ্যাকসম্পন্ন এই ফোনের সাথে যে হেডফোনটি দেওয়া হয় তার সাউন্ডও পছন্দসই। এছাড়া এতে কোয়ান্টাম শার্প পিউর ব্ল্যাক ডিসপ্লে ব্যবহৃত হওয়ায় এতে চমৎকারভাবে ভিডিও উপভোগ করা যায়।
ব্যাটারি:
এই ফোনে ৩,০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি থাকায় এর ব্যাটারি ব্যাকআপ ভালোই, একবার ফুল চার্জ দিয়ে আপনি টানা ৮ ঘন্টারও অধিক সময় ওয়েব ব্রাউজ কিংবা ৮-৯ ঘন্টা এইচডি ভিডিও উপভোগ করতে পারবেন; আর সাধারণ ব্যবহারে অনায়াসেই ১-১.৫ দিন চলে যাবে।
সেন্সর:
এই ফোনে প্রক্সিমিটি, লাইট, গাইরোস্কোপ, অ্যাক্সিলেরোমিটার ইত্যাদি সেন্সর আছে।
কানেক্টিভিটিঃ
ফোরজি সুবিধার Primo V2 এ আছে ২টি সিম ব্যবহারের সুবিধা, যার উভয় স্লটই মাইক্রো সিম সাপোর্টেড। এছাড়া এই ফোনে ব্লুটুথ ৪.০, ওয়াইফাই, জিপিএস নেভিগেশন, ওয়্যারলেস হটস্পট প্রভৃতি কানেক্টিভিটি সুবিধা রয়েছে।
বেঞ্চমার্কঃ
Primo V2 এর বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাইয়ের জন্য বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের জনপ্রিয় অ্যাপ AnTuTu বেছে নেওয়া হয়েছিলো, যেখানে এর স্কোর এসেছে ২৪,৮০৩
বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের আরেক অ্যাপ Nenamark এ Primo V2 এর স্কোর এসেছে ৫৩.৫
স্পেশাল ফিচারঃ
এই ফোনে স্পেশাল ফিচার হিসেবে রয়েছে মাল্টিপল নেটওয়ার্ক মুড, লেটার জেশ্চার, ইউনিফাইড স্টোরেজ প্রভৃতি।
OTA আপডেট সুবিধাঃ
ওয়ালটনের সমসাময়িক অন্যান্য ফোনের ন্যায় Primo V2 ফোনটিতেও OTA বা Over The Air আপডেট সুবিধা রয়েছে, যার ফলে পিসির সাথে সংযুক্ত করা ছাড়াই এর সফটওয়্যার আপডেট করা যাবে।
ওটিজিঃ
Primo V2 এ OTG (USB On The Go) সুবিধা থাকার কারণে এতে মাউস, কীবোর্ড, পেনড্রাইভ, এক্সটারনাল হার্ডডিস্কসহ বিভিন্ন ধরণের ইউএসবি ড্রাইভ ব্যবহার করা যায়।
দামঃ
এই ফোনের ফিচারের তুলনায় দাম খুব একটা বেশি নয়। অক্টাকোর প্রসেসর, স্ন্যাপড্রাগন চিপসেট, ৩,০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি, ২ গিগাবাইট র্যাম, OTA আপডেট সুবিধাসহ আকর্ষণীয় নানা ফিচারবিশিষ্ট Primo V2 স্মার্টফোনটির এর দাম মাত্র ১৫,৯৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
যেসকল কারণে পছন্দ হয়েছে Primo V2-
Primo V2 এর সীমাবদ্ধতাঃ
দারুণ সব ফিচারসম্পন্ন Primo V2 এ চোখে পড়ার মতো তেমন কোন সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়নি, তবে Snapdragon 615 চিপসেটের হিটিং ইস্যুজনিত কারণে এই ফোন কিছুটা গরম হয়।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তঃ
এলটিই সুবিধা, নান্দনিক ডিজাইন, কাস্টোমাইজড অপারেটিং সিস্টেম, চমৎকার রিয়ার ও ফ্রন্ট ক্যামেরা ইত্যাদি কারণে Walton Primo V2 বর্তমান বাজারে থাকা একই প্রাইস রেঞ্জের অন্যান্য ফোন থেকে এগিয়ে আছে। স্পেশালি এর সাশ্রয়ী দামের কারণে বাজেট ও স্পেসিফিকেশন বিবেচনায় Primo V2 কে এই রেঞ্জের শীর্ষ ফোনের তালিকায় স্থান দেওয়া যায়।
আজকের টিউন এপর্যন্তই। Primo V2 এর রিভিউ সম্পর্কে আপনাদের মূল্যবান টিউমেন্ট কিংবা প্রশ্ন জানানা টিউমেন্টে। সবার জীবন সুন্দর হোক।
আমি আরিফিন সৈকত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 76 টি টিউন ও 24 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে।
thanks vai…..onek sundor ekta post korechen