সাশ্রয়ী দামে প্রয়োজনীয় সব ফিচারসম্পন্ন ফোনের কথা ভাবলেই প্রথমেই মনে আসে Walton Primo সিরিজের কথা। সাধ্যের মধ্যে যারা সুন্দর ডিজাইন, ভালো ক্যামেরা, লেটেস্ট ওএস এর ফোন কিনতে চান তাদের কাছে পছন্দসই হতে পারে ওয়ালটনের নতুন ফোন Primo GH4; মাত্র ৭,২৯০ টাকা মূল্যের এই ফোনটির ডিজাইন যেমন চমৎকার, তেমনি এতে আছে অ্যান্ড্রয়েড ৫.১ ললিপপ অপারেটিং সিস্টেম, ক্যামেরায় পছন্দসই ছবি তুলতে আছে BSI সেন্সরযুক্ত ৮ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা; ৩.২ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরার পাশাপাশি এই ফোনে আরও আছে কোয়াডকোর প্রসেসর ও ১ গিগাবাইট র্যাম।
Walton Primo GH4 এর বিল্ড কোয়ালিটি, ডিজাইন, ব্যাটারি ব্যাকআপ, গেমিং পারফরম্যান্স, বেঞ্চমার্ক স্কোর, ক্যামেরা পারফরম্যান্সসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার আজকের টিউন Walton Primo GH4 এর Hands-on Review
আনবক্সিং: Primo GH4 কিনলে আপনি এর সাথে যা যা পাচ্ছেন-
বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইন: আকর্ষণীয় ডিজাইনের Primo GH4 হাতে ধরলেই আপনি আলাদা একটা ফিল পাবেন। এর একপার্শ্বের অংশে আছে ভলিউম কী ও পাওয়ার কী, আর উপরের অংশে ৩.৫ মিলিমিটার অডিও পোর্ট ও চার্জার/ইউএসবি ২.০ পোর্ট।
১৪১ মিলিমিটার উচ্চতার Primo GH4 প্রস্থে ৭০.৫ মিলিমিটার আর পুরুত্বে মাত্র ৮ মিলিমিটার। ব্যাটারিসহ ১৩৫ গ্রাম ওজনের এই ফোনের পেছনের দিকে উপরের অংশে আছে রিয়ার ক্যামেরার লেন্স ও ফ্ল্যাশলাইট আর নিচের দিকে স্পীকার। আর সামনের দিকে আছে ফ্রন্ট ক্যামেরা ও সেন্সর।
ডিসপ্লে: ৫ ইঞ্চি আইপিএস ডিসপ্লেবিশিষ্ট এই ফোনের ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন কিছুটা কম - ৮৫৪x৪৮০ পিক্সেল।
ইউজার ইন্টারফেস:
নোটিফিকেশন বার:
হোমস্ক্রীন:
অ্যাপ ড্রয়ার:
ডায়ালপ্যাড:
অপারেটিং সিস্টেম: Primo GH4 এ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যান্ড্রয়েডের আপডেটেড সংস্করণ অ্যান্ড্রয়েড ৫.১ ললিপপ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া এতে OTA আপডেট থাকায় পরবর্তীতে আরও আপডেট পাওয়ার সুযোগ তো থাকছেই।
সিপিউ ও জিপিউ: এন্ট্রি লেভেলের বাজেট ফোন Walton Primo GH4 এ মিডিয়াটেকের চিপসেট ব্যবহৃত হয়েছে, আর ১.২ গিগাহার্টজ গতির কোয়াডকোর প্রসেসরসমৃদ্ধ এই ফোনে আছে মালি-৪০০ জিপিউ।
মেমোরী ও র্যাম: এই ফোনে ৮ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমোরীর পাশাপাশি আছে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মেমোরী কার্ড ব্যবহারের সুবিধা। আর এতে ইউনিফাইড স্টোরেজ সুবিধা থাকায় এর পুরো ইন্টারনাল মেমোরীই অ্যাপ ইন্সটলের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
আর এর ১ গিগাবাইট র্যামের মধ্যে কোন থার্ড পার্টি অ্যাপ ইন্সটল না করা অবস্থায় প্রায় অর্ধেক ফাঁকা থাকে।
গেমিং পারফরম্যান্স: কোয়াডকোর প্রসেসর ও ১ গিগাবাইট র্যাম থাকায় এই ফোনে বিভিন্ন ধরণের গেম বেশ স্মুথলি খেলা গেছে। এতে অ্যাসফাল্ট ৮, ফিফা ১৬, ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানস, টেম্পল রান ওজেড প্রভৃতি কোন ধরণের ল্যাগিং ছাড়াই খেলা গেছে।
ক্যামেরা: Primo GH4 স্মার্টফোনটিতে রয়েছে ৮ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা। এছাড়া ক্যামেরায় অটোফোকাস, এলইডি ফ্ল্যাশ প্রভৃতি সুবিধাতো থাকছেই।
দেখে নিন Primo GH4 এর ক্যামেরা সেটিংস–
Primo GH4 এর ক্যামেরায় তোলা ছবি-
সেলফি তুলতে চাইলে কিংবা ভিডিও কল করতে চাইলে আছে ৩.২ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা।
দেখুন Primo GH4 দিয়ে তোলা সেলফি-
মাল্টিমিডিয়া: ৩.৫ মিলিমিটারের অডিও জ্যাকবিশিষ্ট এই ফোনের সাথে যে হেডফোনটি দেওয়া হয় তার সাউন্ড কোয়ালিটি মোটামুটি মানের, এর অডিও সাউন্ড কোয়ালিটিও মন্দ নয়। আর এই ফোনে আইপিএস ডিসপ্লে ব্যবহৃত হওয়ায় এতে দারুণভাবে ভিডিও উপভোগ করা যায়। এই ফোনে ১০৮০ পি ফুল এইচডি ভিডিও কোন ধরণের ল্যাগ ছাড়াই চলে।
বেঞ্চমার্ক: কোন ডিভাইসের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য সাধারণত বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাই করা হয়ে থাকে। Primo GH4 এর বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাইয়ের জন্য বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের জনপ্রিয় অ্যাপ AnTuTu বেছে নেওয়া হয়েছিলো। AnTuTu তে এর স্কোর এসেছে ২১,৩৬৮; এন্ট্রি লেভেলের ফোনে যা উল্লেখযোগ্য।
বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের আরেক অ্যাপ Nenamark এ Primo GH4 এর স্কোর এসেছে ৬২.২
দেখুন Geekbench 3 এ Primo GH4 এর স্কোর-
ব্যাটারি: ২,১৫০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিবিশিষ্ট এই ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ মোটামুটি; ফুল চার্জ দেওয়ার পর টানা ২ ঘন্টা ইন্টারনেট ব্রাউজ আর এইচডি ভিডিও দেখার পর এর চার্জ ৭০% এ নেমে এসেছিলো।
কানেক্টিভিটি: এই ফোনে ব্লুটুথ ৪.০, ওয়াইফাই, ওয়্যারলেস হটস্পট প্রভৃতি কানেক্টিভিটি সুবিধা রয়েছে। এর পাশাপাশি আছে জিপিএস নেভিগেশন সুবিধা। আর ওয়ালটনের অধিকাংশ স্মার্টফোনের ন্যায় Primo GH4 এ-ও রয়েছে ২টি সিম ব্যবহারের সুবিধা। এর একটি সিম স্লট মাইক্রো-সিম সাপোর্টেড আর অন্যটি মিনি সিম সাপোর্টেড, এছাড়া এর উভয় সিমেই থ্রিজি সুবিধা উপভোগ করা যায়।
স্পেশাল ফিচার: প্রিমো জিএইচ৪ এর স্পেশাল ফিচারের মধ্যে নোটিফিকেশন লাইট, ইউনিফাইড স্টোরেজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
দামঃ দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ওয়ালটন বরাবরই ক্রেতাদের সাধ্যের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়। আর তাইতো সুন্দর ডিজাইন ও প্রয়োজনীয় সব ফিচারসংবলিত Primo GH4 এর মূল্য মাত্র ৭,২৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
একনজরে Primo GH4 এর উল্লেখযোগ্য ফিচারসমূহঃ
যেসব কারণে পছন্দ হয়েছে Primo GH4-
Primo GH4 এর সীমাবদ্ধতা:
এই ফোনের সীমাবদ্ধতা বলতে ওটিজি সাপোর্ট না থাকা। এর বাইরে এন্ট্রি লেভেলের এই ফোনে আর কোন সীমাবদ্ধতা চোখে পড়েনি।
শেষ কথাঃ
সাশ্রয়ী বাজেটে প্রয়োজনীয় নানা ফিচার সংবলিত স্মার্টফোন কিনতে চাইলে ওয়ালটনের Primo GH4 কে অবশ্যই এগিয়ে রাখতে হবে। তবে এই ফোনটিতে ওটিজি সাপোর্ট থাকলে ফোনটি পূর্ণতা পেতো।
আজকের টিউন এখানেই শেষ করছি, রিভিউ সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা থাকলে টিউমেন্টে জানান।
আমি আরিফিন সৈকত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 76 টি টিউন ও 24 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে।
সুন্দর রিভিউ! তবে একটি বিষয় জানার ছিল, এই ফোন তা কি খুব সহজেই গরম হয়ে যায়? গেম খেলার সময়?