বাজারের নতুন ফোন আকর্ষণীয় ডিজাইনের Primo RX4 আনবক্সিং, বিল্ড কোয়ালিটি, ডিজাইন, ব্যাটারি ব্যাকআপ, ক্যামেরা পারফরম্যান্সসহ নানান তথ্য নিয়ে আমার আজকের টিউন Walton Primo RX4 Hands-on Review
এবারে তাহলে বিস্তারিত রিভিউয়ের দিকে যাওয়া যাক-
আনবক্সিং:
Primo RX4 ফোনটির প্যাকেজিং বেশ দারুণ, এর বক্সে রয়েছে –
ডিসপ্লে ও ইউজার ইন্টারফেস:
এই স্মার্টফোনটিতে রয়েছে ৫ ইঞ্চির এইচডি আইপিএস ডিসপ্লে অর্থাৎ এর ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন ১২৮০x৭২০ পিক্সেল। এই ফোনে পিউর ব্ল্যাক ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে আর এর ডিসপ্লের নিরাপত্তায় আছে গরিলা গ্লাস ৩
চলুন অ্যান্ড্রয়েডের আপডেটেড সংস্করণ অ্যান্ড্রয়েড ৫.১ ললিপপচালিত এই ফোনের ইউজার ইন্টারফেস দেখে নেওয়া যাক-
নোটিফিকেশন বার:
ডায়ালপ্যাড:
হোমস্ক্রীন:
অ্যাপ ড্রয়ার:
প্রসেসর ও জিপিউ:
১.৪ গিগাহার্টজের অক্টাকোর প্রসেসরের এই ফোনে মিডিয়াটেকের অক্টাকোর চিপসেট MT6592 আর জিপিউ হিসেবে মালি-৪৫০ ব্যবহৃত হয়েছে, দ্রুতগতির প্রসেসর থাকায় এই ফোনে মাল্টিটাস্কিং, এইচডি গেমিং প্রভৃতি বেশ স্মুথলি করা যায়।
বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইন:
Primo RX4 বেশ নজরকাড়া ডিজাইনের, এর একপার্শ্বের অংশে আছে ভলিউম কী ও পাওয়ার কী আর অপরপার্শ্বে মাইক্রো সিমকার্ড স্লট ও ন্যানো সিমকার্শ স্লট/মাইক্রো-এসডি কার্ড স্লট, আর উপরের দিকে আছে ৩.৫ মিলিমিটার অডিও পোর্ট ও নিচের দিকে ইউএসবি ২.০ পোর্ট।
Primo RX4 এর পেছনের দিকে আছে রিয়ার ক্যামেরার লেন্স ও ফ্ল্যাশলাইট আর নিচের দিকে স্পীকার। এছাড়া এই ফোনের সামনের দিকে আছে গরিলা গ্লাস ৩ আর পেছনের দিকে ড্রাগনট্রেইল গ্লাস। ৭.৩ মিলিমিটার পুরুত্বের এই ফোনটি উচ্চতায় ১৪২.৭ মিলিমিটার আর প্রস্থে ৭০.২ মিলিমিটার। হালকা গড়নের এই স্মার্টফোনটির ওজন মাত্র ১২৯ গ্রাম (ব্যাটারিসহ)।
অপারেটিং সিস্টেম:
এই ফোনে অ্যান্ড্রয়েড ৫.১ ললিপপ ওএস ব্যবহার করা হয়েছে।
মেমোরী:
Primo RX4 ১৬ গিগাবাইটের ইন্টারনাল মেমোরী দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে আপনি প্রায় ১২ গিগাবাইট ব্যবহার করতে পারবেন, এছাড়া এতে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মেমোরী কার্ড ব্যবহার করে এর মেমোরী বাড়িয়ে নেওয়া যাবে।
এই ফোনের মেমোরীর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এতে রয়েছে ইউনিফাইড স্টোরেজ সুবিধা, অর্থাৎ এর পুরো ইন্টারনাল মেমোরীই অ্যাপ ইন্সটলের জন্য ব্যবহার করা যাবে। ফলে যারা প্রচুর অ্যাপ ইন্সটল করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এই ফোন হতে পারে বেশ পছন্দের।
ওয়ালটনের এই ফোনে ২ গিগাবাইটের র্যাম দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১৯৩০ মেগাবাইট ব্যবহারযোগ্য। র্যাম অধিক হওয়ার কারণে এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অ্যাপস ইন্সটল করলেও র্যাম মোটামুটি অর্ধেক ফাঁকাই থাকে।
ক্যামেরা পারফরম্যান্স:
Primo RX4 স্মার্টফোনটিতে রয়েছে BSI সেন্সরযুক্ত ১৩ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা, আর এর ক্যামেরায় অটোফোকাস, এলইডি ফ্ল্যাশ, স্মাইল ডিটেক্টর, প্যানোরোমা মোড, ফেস ডিটেকশন প্রভৃতি সুবিধাও বিদ্যমান। এর ক্যামেরায় তোলা ছবির মান বেশ সন্তোষজনক।
দেখুন এর ক্যামেরা ইন্টারফেস-
দিনের আলোয় Primo RX4 এর ক্যামেরায় তোলা ছবিঃ
এসবের পাশাপাশি সেলফি তোলা কিংবা ভিডিও কলিংয়ের জন্য আছে ৫ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা। এই ফোনে তোলা সেলফি-
মাল্টিমিডিয়া:
Primo RX4 এ রয়েছে ৩.৫ মিলিমিটারের অডিও জ্যাক। এর সাথে যে হেডফোনটি দেওয়া হয় সেটি দেখতে যেমন চমৎকার তেমনি এর সাউন্ড কোয়ালিটিও দারুণ। এর অডিও সাউন্ড কোয়ালিটিও অনেক সুন্দর। এই ফোনে আরো আছে এফএম রেডিও, সে সাথে থাকছে এফএম রেডিও রেকর্ডার। ফলে আপনি আপনার পছন্দের কোন রেডিও প্রোগ্রাম অনায়াসেই রেকর্ড করতে পারবেন।
আর এই ফোনের ডিসপ্লে কোয়ালিটি বেশ উন্নত হওয়ায় এতে দারুণভাবে ভিডিও উপভোগ করা যায়। উল্লেখ্য, Primo RX4 স্মার্টফোনটিতে ১০৮০ পি ফুল এইচডি ভিডিও কোন ধরণের ল্যাগ ছাড়াই চলে।
কানেক্টিভিটি ও অন্যান্য:
এই ফোনে ব্লুটুথ ৪.০, ওয়াইফাই, ওয়্যারলেস হটস্পট, জিপিএস নেভিগেশন প্রভৃতি কানেক্টিভিটি সুবিধা রয়েছে। আর এতে এক্সিলেরোমিটার, প্রক্সিমিটি, লাইট, ওরিয়েন্টেশন, ম্যাগনেটিক ফিল্ড প্রভৃতি সেন্সর রয়েছে।
ওয়ালটনের অধিকাংশ স্মার্টফোনের মতো প্রিমো আরএক্স৪ এও আছে ২টি সিম ব্যবহারের সুবিধা, যার একটি মাইক্রো সিম আর অন্যটি ন্যানো সিম।
গেমিং পারফরম্যান্স:
এই ফোনে অক্টাকোর প্রসেসর ব্যবহৃত হওয়ায় ও এর র্যাম ২ গিগাবাইট থাকায় এতে বিভিন্ন ধরণের এইচডি গেম বেশ স্মুথলি খেলা যায়। এই ফোনে ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানস, টেম্পল রান ওজেড, ক্যান্ডি ক্র্যাশ সাগা, ডিড ট্রিগার ২, মডার্ন কমব্যাট ৪, প্রভৃতি জনপ্রিয় গেম কোন ধরণের ল্যাগিং ছাড়াই খেলা গেছে।
ব্যাটারি:
৫ইঞ্চি ডিসপ্লের Primo RX4 এ ২,৫০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারী ব্যবহার করা হয়েছে, এর ব্যাটারী ব্যাকআপ মোটামুটি। একবার ফুল চার্জ দিলে টানা ৫ ঘণ্টারও অধিক সময় নেট চালানো যায়। আর একবার ফুল চার্জে টানা ৫-৬ ঘন্টা এইচডি ভিডিও দেখা যায়।
স্পেশাল ফিচার:
এই ফোনে স্পেশাল ফিচার হিসেবে রয়েছে এন্টি-থেফট, ইউনিফাইড স্টোরেজ, নোটিফিকেসন লাইট প্রভৃতি।
OTA আপডেট:
এই ফোনে OTA বা Over The Air আপডেট সুবিধা রয়েছে, যার ফলে পিসির সাথে সংযুক্ত করা ছাড়াই এর সফটওয়্যার আপডেট করা যাবে।
বেঞ্চমার্ক:
কোন ডিভাইসের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য সাধারণত বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাই করা হয়ে থাকে। Primo RX4 এর বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাইয়ের জন্য বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের জনপ্রিয় অ্যাপ AnTuTu বেছে নেওয়া হয়েছিলো। AnTuTu তে এর স্কোর এসেছে ২৯,৮৭১
AnTuTu স্কোরের দিক থেকে HTC One, Xiaomi Redmi Note প্রভৃতির থেকে Primo RX4 এগিয়ে রয়েছে।
বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের আরেক অ্যাপ NenaMark এ Primo RX4 এর স্কোর এসেছে ৫০.৬
মূল্য:
বেশ উচ্চ কনফিগারেশনের Primo RX4 স্মার্টফোনটির মূল্য মাত্র ১৩,৯৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ, দেশীয় বাজারের ক্রেতাদের সাধ্যবিবেচনায় এই মূল্যকে যৌক্তিক বলতেই হয়।
একনজরে Primo RX4 স্মার্টফোনটির উল্লেখযোগ্য ফিচারগুলো হচ্ছে -
যেসব কারণে Primo RX4 আমার ভালো লেগেছে-
Primo RX4 এর সীমাবদ্ধতা:
OTG সাপোর্ট না থাকা এই ফোনের একটি সীমাবদ্ধতা, তাছাড়া অন্য কোন উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা চোখে পড়েনি।
শেষ কথা:
যারা মধ্যম বাজেটে সুন্দর ডিজাইন ও পারফরম্যান্সের স্মার্টফোন কিনতে চান তাদের জন্য Primo RX4 হতে পারে অন্যতম পছন্দের, তবে ফোনটিতে ওটিজি সুবিধা খুবই ভালো হতো।
আমি আরিফিন সৈকত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 76 টি টিউন ও 24 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে।
৪ দিন আগে ফোনটা আমি কিনেছি। ফোনটা সবদিকদিয়ে ভাল। কিন্তু smart gesture & double tap to sleep & woke feature টা নাই। থাকলে ভাল হতো।