দেশের বাজারে ক্রমাগতই আসছে নতুন সব স্মার্টফোন, চলছে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে অধিক ফিচারের ফোন আনার প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন, এবার তারা বাজারে এনেছে নান্দনিক ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের Primo S4! এই ফোনটি প্রথম দেখাতেই আপনাকে মুগ্ধ করবে। আর এর ডিসপ্লের নিরাপত্তা দিতে সামনের দিকে রয়েছে তৃতীয় প্রজন্মের গরিলা গ্লাস আর পেছনের দিকে ড্রাগনট্রেইল গ্লাস।
১.৭ গিগাহার্টজ অক্টাকোর প্রসেসরের এই ফোনটিতে স্মুথ পারফরম্যান্সের জন্য রয়েছে ২ গিগাবাইটের র্যাম, মালি-৪৫০ জিপিউ, আর ক্যামেরায় ভালো ছবি তুলতে রয়েছে BSI সেন্সরযুক্ত ১৩ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা। এর পাশাপাশি যারা সেলফি তুলতে ভালোবাসেন তাদের কথা মাথায় রেখে Primo S4 এ রয়েছে ফ্ল্যাশলাইটসমৃদ্ধ ৮ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা। ১৫,৯৯০ টাকা মূল্যের এই ফোনে অধিক স্টোরেজের জন্য রয়েছে ৩২ গিগাবাইটের রম। Primo S4 ফোনটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর অপশনাল ডুয়েল সিম ফিচার, অর্থাৎ এর ২টি সিম স্লটের একটিতে মাইক্রো সিম ব্যবহার করা যায় আর অপরটি ন্যানো সিম বা মাইক্রো এসডি কার্ড ব্যবহারের জন্য।
Primo S4 এর বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইন, ইউজার ইন্টারফেস, ব্যাটারি ব্যাকআপ, গেমিং পারফরম্যান্স, ক্যামেরায় তোলা ছবির মান, ব্যাটারি ব্যাকআপ প্রভৃতি বিশ্লেষণধর্মী তথ্য নিয়ে আমার আজকের টিউন Walton Primo Primo S4 এর Hands-on Review
রিভিউয়ের শুরুতে Primo Primo S4 স্মার্টফোনটির উল্লেখযোগ্য ফিচারসমুহ দেখে নিইঃ
আনবক্সিং:
Primo S4 স্মার্টফোনটি কিনলে আপনি পাচ্ছেন ১৫ মাসের ওয়ারেন্টি, এর সাথে থাকছে-
অপারেটিং সিস্টেম:
এই ফোনটিতে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যান্ড্রয়েডের আপডেটেড সংস্করণ অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪.২ কিটক্যাট ব্যবহার করা হয়েছে।
ডিসপ্লে:
৫ ইঞ্চির এইচডি আইপিএস ডিসপ্লের এই ফোনে পিউর ব্ল্যাক ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে, এর ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন হলো ১২৮০x৭২০ পিক্সেলের। আগেই বলেছি এর ডিসপ্লের নিরাপত্তায় রয়েছে ৩য় প্রজন্মের গরিলা গ্লাস।
ইউজার ইন্টারফেস:
চলুন Primo S4 এর ইউজার ইন্টারফেস দেখে নেওয়া যাক-
নোটিফিকেশন বার:
হোমস্ক্রীন:
অ্যাপ ড্রয়ার:
বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইন:
Primo S4 স্মার্টফোনটি বেশ আকর্ষণীয় ও নজরকাড়া ডিজাইনের। ফোনটির একপার্শ্বের অংশে রয়েছে ভলিউম কী ও মাইক্রো সিমস্লট ও অপরপার্শ্বে পাওয়ার কী ও ন্যানো সিম স্লট। হালকা গড়নের এই স্মার্টফোনটির ওজন মাত্র ১২৯ গ্রাম। এটি হাতে ধরলেই অন্যরকম এক ফিল হয়। এর উপরের অংশে রয়েছে ৩.৫ মিলিমিটার অডিও পোর্ট আর নিচের অংশে ইউএসবি ২.০ পোর্ট ও স্পীকার।
প্রিমো এস৪ স্মার্টফোনটির পেছনের দিকে উপরের অংশে আছে রিয়ার ক্যামেরার লেন্স, এছাড়া সম্মুখভাগে ফ্রন্ট ক্যামেরা, সেন্সর, স্পীকার প্রভৃতি তো রয়েছেই। এই ফোনে ৩ টি বাটন রয়েছে – হোম/মেনু, অপশন ও ব্যাক।
প্রসেসর, চিপসেট ও জিপিউ
১.৭ গিগাহার্টজের অক্টাকোর প্রসেসরের এই ফোনে মিডিয়াটেকের অক্টাকোর চিপসেট MT6592 ব্যবহৃত হয়েছে। দ্রুতগতির প্রসেসর থাকায় এই ফোনে মাল্টিটাস্কিং, এইচডি গেমিং প্রভৃতি বেশ স্মুথলি করা যায়।
আর এতে জিপিউ হিসেবে মালি-৪৫০ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে এই ফোনের গ্রাফিক্স কোয়ালিটি কিংবা গেমিং পারফরম্যান্স অন্যান্য সাধারণমানের জিপিউসমৃদ্ধ স্মার্টফোনের তুলনায় ভালো।
মেমোরী:
অধিক ধারণক্ষমতার জন্য Primo S4 স্মার্টফোনটিতে রয়েছে ৩২ গিগাবাইটের ইন্টারনাল মেমোরী, যা এই ফোনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। এর মধ্যে প্রায় ২৭ গিগাবাইট ব্যবহারযোগ্য। এছাড়া আপনি চাইলে এতে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত মেমোরী কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।
এই ফোনের মেমোরীর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এতে রয়েছে ইউনিফাইড স্টোরেজ সুবিধা, অর্থাৎ এর পুরো ইন্টারনাল মেমোরীই অ্যাপ ইন্সটলের জন্য ব্যবহার করা যাবে। ফলে যারা প্রচুর অ্যাপ ইন্সটল করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য এই ফোন হতে পারে বেশ পছন্দের।
স্মার্টফোনে স্মুথ পারফরম্যান্সের জন্য র্যাম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তাইতো ওয়ালটনের এই ফোনে ২ গিগাবাইটের র্যাম দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১৯৩০ মেগাবাইট ব্যবহারযোগ্য। অধিক র্যামের কারণে বেশ স্মুথলি নানা এইচডি গেম খেলা যায়।
মাল্টিমিডিয়া:
Primo S4 এ রয়েছে ৩.৫ মিলিমিটারের অডিও জ্যাক। এর সাথে দেওয়া হেডফোনটির সাউন্ড কোয়ালিটি যথেষ্ট কোয়ালিটিফুল, এর অডিও সাউন্ড কোয়ালিটিও দারুণ।
এছাড়া এর ডিসপ্লে কোয়ালিটি বেশ উন্নত হওয়ায় এতে দারুণভাবে ভিডিও উপভোগ করা যায়। উল্লেখ্য, Primo S4 স্মার্টফোনটিতে ১০৮০ পি ফুল এইচডি ভিডিও কোন ধরণের ল্যাগ ছাড়াই চলেছে।
ক্যামেরা পারফরম্যান্স:
Primo S4 এর ক্যামেরা পারফরম্যান্স চমৎকার, এতে ১৩ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। সুন্দর ছবি তুলতে এর ক্যামেরায় BSI সেন্সর ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া ক্যামেরায় অটোফোকাস, এলইডি ফ্ল্যাশ, স্মাইল ডিটেক্টর, প্যানোরোমা মোড, ফেস ডিটেকশন প্রভৃতি সুবিধাতো থাকছেই। এই ফোনের ক্যামেরা সেটিংস দেখে নেওয়া যাক-
এই ফোনের ক্যামেরায় তোলা কিছু ছবি-
এসবের পাশাপাশি সেলফি তোলা কিংবা ভিডিও কলিংয়ের জন্য আছে BSI সেন্সরযুক্ত ৮ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা। এর ফ্রন্ট ক্যামেরায় ফ্ল্যাশ থাকায় অন্ধকারেও অনায়াসে সেলফি তোলা সম্ভব।
Primo S4 এ তোলা সেলফি-
ব্যাটারি:
অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ক্ষেত্রে ব্যাটারি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তাইতো Primo S4 ফোনটিতে ২,২০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারী ব্যবহার করা হয়েছে। তবে অক্টাকোর প্রসেসরের এই ফোনে আরেকটু বেশি মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারী দিলে তা আরও ভালো হতো। এর ব্যাটারী ব্যাকআপ সন্তোষজনক। একবার ফুল চার্জ দিলে টানা ৫ ঘণ্টারও অধিক সময় নেট চালানো যায়। আর একবার ফুল চার্জে টানা ৫-৬ ঘন্টা এইচডি ভিডিও দেখা যায়।
কানেক্টিভিটি, সেন্সর ও অন্যান্য:
এই ফোনে রয়েছে ২টি সিম ব্যবহারের সুবিধা, যার একটি মাইক্রো সিম আর অন্যটি ন্যানো সিম। এতে ব্লুটুথ ৪.০, ওয়াইফাই, ওয়্যারলেস হটস্পট প্রভৃতি কানেক্টিভিটি সুবিধা রয়েছে। এছাড়া জিপিএস নেভিগেশন সুবিধাতো থাকছেই।
Primo S4 এ এক্সিলেরোমিটার, প্রক্সিমিটি, লাইট, ওরিয়েন্টেশন, ম্যাগনেটিক ফিল্ড প্রভৃতি সেন্সর রয়েছে।
ওয়ালটনের নতুন এই ফোনে OTG (USB On The Go) সুবিধা রয়েছে। ফলে ব্যবহারকারী এতে মাউস, কীবোর্ড, পেনড্রাইভ, এক্সটারনাল হার্ডডিস্কসহ বিভিন্ন ধরণের ইউএসবি ড্রাইভ ব্যবহার করতে পারবেন।
OTA আপডেট:
এই ফোনে OTA বা Over The Air আপডেট সুবিধা রয়েছে, যার ফলে পিসির সাথে সংযুক্ত করা ছাড়াই এর সফটওয়্যার আপডেট করা যাবে।
গেমিং পারফরম্যান্সঃ
Primo S4 স্মার্টফোনটিতে অক্টাকোর প্রসেসর ব্যবহৃত হওয়ায় ও এর র্যাম ২ গিগাবাইট থাকায় এতে বিভিন্ন ধরণের এইচডি গেম বেশ স্মুথলি খেলা যায়। এই ফোনে ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানস, ক্যান্ডি ক্র্যাশ সাগা, ডিড ট্রিগার ২, মডার্ন কমব্যাট ৪, টেম্পল রান ওজেড প্রভৃতি জনপ্রিয় গেম কোন ধরণের ল্যাগিং ছাড়াই খেলা গেছে।
স্পেশাল ফিচার:
এই ফোনে স্পেশাল ফিচার হিসেবে রয়েছে সফটওয়্যার লোক, ফ্লোটিং মাল্টি-উইন্ডো, স্মার্ট ওয়েক, ইউনিফাইড স্টোরেজ প্রভৃতি। Primo S4 এর একটি বিশেষ দিক হলো এর ফ্রন্ট ও রিয়ার উভয় ক্যামেরাতেই ফ্ল্যাশ রয়েছে।
বেঞ্চমার্ক:
Primo S4 এর বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাইয়ের জন্য বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের জনপ্রিয় অ্যাপ AnTuTu বেছে নেওয়া হয়েছিলো আর AnTuTu তে এর স্কোর এসেছে ৩৩,৩৩৮
বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের আরেক অ্যাপ NenaMark এ Primo S4 এর স্কোর এসেছে ৫৫.৫, যা মোটামুটি।
দাম:
ক্রেতাদের সাধ্যের কথা বিবেচনা করে বেশ উচ্চ কনফিগারেশনের Primo S4 স্মার্টফোনটির মূল্য ১৫,৯৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ। আপাতদৃষ্টিতে এই দাম কিছুটা বেশি মনে হলেও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী যৌক্তিক বলা যায়।
যেসব কারণে ভালো লেগেছে Primo S4:
Primo S4 এর দুর্বলতা:
বেশ উন্নত কনফিগারেশনের Primo S4 স্মার্টফোনটিতে ২,২০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারির ব্যবহার ব্যতীত আর তেমন কোন সীমাবদ্ধতা চোখে পড়েনি।
শেষ কথা:
অক্টাকোর প্রসেসরের Primo S4 বাজারে থাকা প্রায় একই কনফিগারেশন কিংবা একই মূল্যের অন্যান্য স্মার্টফোন থেকে বেশ এগিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে এর ফ্ল্যাশযুক্ত ৮ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরা সেলফি প্রেমীদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলবে বলে মনে হয়। এছাড়া এর ইন্টারনাল মেমোরী ৩২ গিগাবাইট হওয়ায় আপনি অধিক তথ্য স্টোর করতে পারবেন।
আপনি যদি তুলনামূলক বড় স্ক্রীনের স্মার্টফোন কিনতে চান, সেইসাথে চান উন্নত পারফরম্যান্স, তবে এই মুহূর্তে দেশের বাজারে Primo S4 অপেক্ষা কমমূল্যে এর কোন বিকল্প পাওয়া বেশ দুষ্কর।
Primo S4 নিয়ে আপনাদের মূল্যবান প্রশ্ন কিংবা টিউমেন্ট লিখতে পারেন টিউমেন্টের ঘরে। নতুন কোন টিউন নিয়ে আবারও হাজির হবো আপনাদের মাঝে। সবাই ভালো থাকুন।
আমি আরিফিন সৈকত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 76 টি টিউন ও 24 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে।
Mobile hang hola ke korban……………………..