গেম খেলা কিংবা ভিডিও উপভোগের জন্য তরুণ প্রজন্মের নিকট ট্যাবের বেশ জনপ্রিয়তা। দেশীয় বাজারের ট্যাবের ক্রেতাদের হাতে কমদামে ট্যাব তুলে দিতে সম্প্রতি Walpad C মডেলের নতুন একটি ট্যাব বাজারে এনেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। মাত্র ৭,৯৯০ টাকা মূল্যের এই ট্যাবটিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় নানা ফিচার - অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪.২ কিটক্যাট অপারেটিং সিস্টেমের এই ট্যাবটিতে রয়েছে ৭ ইঞ্চির আইপিএস ডিসপ্লে, ১.৩ গিগাহার্টজের কোয়াডকোর প্রসেসর, ১ গিগাবাইটের র্যাম, ৩.২ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা ও ভিজিএ ফ্রন্ট ক্যামেরা প্রভৃতি।
এর আগেও টেকটিউনের পাঠকদের জন্য হ্যান্ডস-অন রিভিউ নিয়ে হাজির হয়েছিলাম, এরই ধারাবাহিকতায় ওয়ালটনের নতুন ট্যাব Walpad C এর ডিজাইন, ব্যাটারী ব্যাকআপ, গেমিং পারফরম্যান্স, বেঞ্চমার্ক স্কোর, ক্যামেরা পারফরম্যান্স প্রভৃতি বিশ্লেষণধর্মী তথ্য নিয়ে আজ থাকছে Walton Walpad C এর Exclusive Hands-on Review
প্রিয় পাঠক, রিভিউয়ের শুরুতে চলুন একনজরে Walpad C এর উল্লেখযোগ্য ফিচারসমূহ দেখে নিই -
এবারে তাহলে বিস্তারিত রিভিউয়ের দিকে যাওয়া যাক-
আনবক্সিং:
Walpad C ট্যাবটি কেনার পর আপনি এর সাথে যা যা পাচ্ছেন-
অপারেটিং সিস্টেমঃ
ওয়ালপ্যাড সি ট্যাবটিতে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪.২ কিটক্যাট ব্যবহার করা হয়েছে।
বিল্ড কোয়ালিটি ও ডিজাইনঃ
ডিজাইনের দিক থেকে Walpad C ট্যাবটি বেশ আকর্ষণীয়। মোটামুটি বিল্ড কোয়ালিটিসম্পন্ন এই ট্যাবটি উচ্চতায় ১৮৯.৫ মিলিমিটার আর প্রস্থে ১০৮.২ মিলিমিটার। আর এই ট্যাবটি মাত্র ৯ মিলিমিটার পুরু হওয়ায় এটি বেশ সাবলীলভাবেই হাতে নেওয়া যায়। হালকা গড়নের এই ট্যাবের ওজন মাত্র ২৬৫ গ্রাম (ব্যাটারিসহ)।
এর উপরেরর অংশে রয়েছে ৩.৫ মিলিমিটার অডিও পোর্ট ও ইউএসবি ২.০ পোর্ট। এছাড়া ট্যাবটির পাওয়ার কী ও ভলিউম কী একই পার্শ্বে দেওয়া হয়েছে।
ওয়ালপ্যাড সি এর পেছনের দিকে উপরের অংশে আছে রিয়ার ক্যামেরার লেন্স আর নিচের দিকে রয়েছে স্পীকার। এছাড়া সম্মুখভাগে ফ্রন্ট ক্যামেরা, সেন্সর, স্পীকার প্রভৃতি তো রয়েছেই। এই ট্যাবে হোম/মেনু, অপশন ও ব্যাক – এই তিনটি বাটন রয়েছে। এছাড়া ট্যাবটির পাশের অংশে রয়েছে মাইক্রো-এসডি কার্ড স্লট।
ডিসপ্লে ও ইউজার ইন্টারফেসঃ
এই ট্যাবটিতে ৭ ইঞ্চি আইপিএস ডিসপ্লে ব্যবহৃত হয়েছে আর এর ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন ১০২৪x৬০০ পিক্সেলের।
এবারে চলুন Walpad C এর ইউজার ইন্টারফেস দেখে নেওয়া যাক–
নোটিফিকেশন বারঃ
হোমস্ক্রীনঃ
অ্যাপ ড্রয়ারঃ
সিপিউ, চিপসেট ও জিপিউঃ
সিপিউ হিসেবে এতে রয়েছে ১.৩ গিগাহার্টজের কোয়াডকোর প্রসেসর। ফলে এই ট্যাবে মাল্টিটাস্কিং, এইচডি গেমিং প্রভৃতি বেশ স্মুথলি করা যায়।
Walpad C এ মিডিয়াটেকের কোয়াডকোর চিপসেট MT8382 ব্যবহৃত হয়েছে।
স্বল্পমূল্যের এই ট্যাবে মালি-৪০০ জিপিউ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে এই ফোনের গ্রাফিক্স কোয়ালিটি কিংবা গেমিং পারফরম্যান্স অন্যান্য সাধারণমানের জিপিউসমৃদ্ধ স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবের মতোই।
মেমোরীঃ
ওয়ালপ্যাড সি ট্যাবটিতে ৮ গিগাবাইটের ইন্টারনাল মেমোরী দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৫.৭৩ গিগাবাইট ব্যবহারযোগ্য। তবে আপনি চাইলে এতে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত এক্সটারনাল মেমোরী কার্ড ব্যবহার করে এর ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে নিতে পারবেন।
র্যাম:
ওয়ালটন তাদের এই ট্যাবে ১ গিগাবাইটের র্যাম ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে ৯৬৩ মেগাবাইট ব্যবহারযোগ্য।
ক্যামেরা:
Walpad C এ রয়েছে ৩.২ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা, ফলে গেমিং ও বড় পর্দায় ভিডিও উপভোগের পাশাপাশি এই ট্যাব দিয়ে টুকটাক ছবি তোলার কাজটিও সেরে নিতে পারবেন। নয়েজ ফ্রি ছবি তোলা নিশ্চিত করতে ওয়ালটন তাদের এই ট্যাবে CMOS সেন্সর ব্যবহার করেছে। এছাড়া এর ক্যামেরায় রয়েছে এলইডি ফ্ল্যাশ সুবিধা।
দেখুন Walpad C এর ক্যমেরা সেটিংস-
দেখুন এই ট্যাবের ক্যামেরায় তোলা ছবিঃ
এর পাশাপাশি ভিডিও কলিংয়ের জন্য আছে ভিজিএ ফ্রন্ট ক্যামেরা।
মাল্টিমিডিয়াঃ
Walpad C এ রয়েছে ৩.৫ মিলিমিটারের অডিও জ্যাক। এর সাথে যে হেডফোনটি দেওয়া হয় তার সাউন্ড কোয়ালিটি মোটামুটি মানের, এর অডিও সাউন্ড কোয়ালিটিও মন্দ নয়।
আর এই ট্যাবে ১০৮০ পি ফুল এইচডি ভিডিও কোন ধরণের ল্যাগ ছাড়াই চলেছে।
গেমিং পারফরম্যান্সঃ
তরুণ প্রজন্মের ট্যাব কেনার পেছনে গেমিংয়ের উদ্দেশ্যটাই মূখ্য ভূমিকা পালন করে। সেদিক বিবেচনায় কোয়াডকোর প্রসেসর ও ১ গিগাবাইট র্যামের এই ট্যাবের গেমিং পারফরম্যান্স মন্দ নয়। Walpad C ট্যাবটিতে বিভিন্ন ধরণের এইচডি গেম বেশ স্মুথলি খেলা যায়। এই ফোনে ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানস, অ্যাসফাল্ট ৮, ক্যান্ডি ক্র্যাশ সাগা, মডার্ন কমব্যাট ৪, টেম্পল রান ওজেড প্রভৃতি জনপ্রিয় গেম কোন ধরণের ল্যাগিং ছাড়াই খেলা গেছে।
কানেক্টিভিটিঃ
এই ফোনে ব্লুটুথ ৪.০, ওয়াইফাই, ওয়্যারলেস হটস্পট প্রভৃতি কানেক্টিভিটি সুবিধা রয়েছে। এছাড়া জিপিএস নেভিগেশন সুবিধাতো থাকছেই।
সিমঃ
ওয়ালটনের এই ট্যাবে রয়েছে ২টি সিম ব্যবহারের সুবিধা। আর হ্যাঁ, এর উভয় সিমেই কিন্তু থ্রিজি সুবিধা উপভোগ করা যায়।
ব্যাটারি:
৭ ইঞ্চি ডিসপ্লের Walpad C এ ২,৮৫০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। একবার ফুল চার্জ দিলে টানা ৪ ঘণ্টারও অধিক সময় ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যায়। এছাড়া একবার ফুল চার্জে টানা ৩.৫-৪ ঘন্টা এইচডি ভিডিও দেখা যায় কিংবা গেম খেলা যায়।
ওটিজিঃ
ওয়ালটনের নতুন ট্যাব Walpad C এ OTG (USB On The Go) সুবিধা রয়েছে। ফলে ব্যবহারকারী এতে মাউস, কীবোর্ড, পেনড্রাইভ, এক্সটারনাল হার্ডডিস্কসহ বিভিন্ন ধরণের ইউএসবি ড্রাইভ ব্যবহার করতে পারবেন।
OTA আপডেট সুবিধাঃ
ওয়ালটনের সমসাময়িক অন্যান্য ডিভাইসের ন্যায় এই ট্যাবেও OTA বা Over The Air আপডেট সুবিধা রয়েছে, যার ফলে পিসির সাথে সংযুক্ত করা ছাড়াই এর সফটওয়্যার আপডেট করা যাবে।
সেন্সরঃ
ওয়ালটনের নতুন এই ট্যাবে সেন্সর হিসেবে রয়েছে অ্যাক্সিলেরোমিটার (থ্রিডি)।
বেঞ্চমার্কঃ
কোন ডিভাইসের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য সাধারণত বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাই করা হয়ে থাকে। Walpad C এর বেঞ্চমার্ক স্কোর যাচাইয়ের জন্য বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের জনপ্রিয় অ্যাপ AnTuTu বেছে নেওয়া হয়েছিলো। AnTuTu তে এর স্কোর এসেছে ১৭,৮৫৬।
বেঞ্চমার্ক যাচাইয়ের আরেক অ্যাপ NenaMark এ Walpad C এর স্কোর এসেছে ৪৮.৭, এন্ট্রি লেভেলের ট্যাবে যা মন্দ নয়।
মূল্যঃ
প্রয়োজনীয় নানা কনফিগারেশনের Walpad C ট্যাবটির মূল্য ৭,৯৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ। স্পেসিফিকেশন বিবেচনায় এই মূল্য প্রত্যাশিত।
Walpad C এর ভালো লাগার দিকসমূহঃ
Walpad C এর সীমাবদ্ধতাঃ
মাত্র ২,৮৫০ মিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি এই ট্যাবের একটি সীমাবদ্ধতা; এছাড়া স্বল্পমূল্যের এই ট্যাবটির তেমন কোন সীমাবদ্ধতা চোখে পড়েনি।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তঃ
যারা স্বল্প বাজেটে প্রয়োজনীয় কনফিগারেশনের ট্যাব কিনতে চান, তাদের জন্য Walpad C হতে পারে আদর্শ পছন্দ। সাধারণ গেমিং আর বড় স্ক্রীনে ভিডিও দেখতে চাইলে বর্তমান বাজারে Walpad C নিঃসন্দেহে ট্যাব ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষতালিকায় থাকবে – এমন কথা অনায়াসেই বলা যায়।
Walpad C নিয়ে আপনাদের মূল্যবান প্রশ্ন কিংবা টিউমেন্ট লিখতে পারেন টিউমেন্টের ঘরে। নতুন কোন টিউন নিয়ে আবারও হাজির হবো আপনাদের মাঝে। সবাই ভালো থাকুন।
আমি আরিফিন সৈকত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 76 টি টিউন ও 24 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে।
Walton er set ekto gorom hoy jay, ar skype e caller por video dekha nia ektu problem hoy. eta te emon hoy naki ?