আমরা যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করি, তাদের প্রায় সবাই যে ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা দূর করতে পারি না তা হল ব্যাটারি বা পাওয়ার সেভিংস। আর কে না জানে ব্যাটারি খরচের পেছনে 'মূল আসামী' কে। ঠিক ধরেছেন, ডিসপ্লে। আমাদের শখের ফোনটির টি এফ টি, এল সি ডি, এল ই ডি যাই হোক না কেন, একে প্রয়োজনমত 'খাদ্য' যোগাতে চেয়ে বেচারা ব্যাটারির প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যেতে হয়। কিন্তু ডিসপ্লে না হলেও তো চলে না। এমন যদি কোন ব্যবস্থা স্ক্রীনে থাকে যার মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম ডিসপ্লে-নির্ভর কাজগুলো কম পাওয়ারের ডিসপ্লে ব্যবহার করে করা যাবে তাহলে ডিসপ্লের পেছনে অহেতুক ব্যাটারি বেশি খরচ হবে না। ঠিক এরকমই একটি প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটিয়েছে রাশান টেলিকম কোম্পানি ইয়োটা ডিভাইসেস লিমিটেড (Yota Devices Ltd)। তারা তাদের একটি প্রোটোটাইপ এনড্রয়েড ডিভাইসে এলসিডি ও ই-ইঙ্ক (E-Ink) প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটিয়ে দুই স্ক্রীনের ইয়োটাফোন আবিস্কার করেছে ও ইতোমধ্যে তা বাজারজাত শুরু করেছে।
যারা আমাজনের কিন্ডল বা অন্য কোন ই-ইঙ্ক-নির্ভর ই-বুক রিডার ব্যবহার করেছেন, তারা নিশ্চয়ই ই-ইঙ্কের '(প্রায়) অমরত্ব' উপভোগ করেছেন। আমার নিজের পুরনো কিন্ডলটির চার্জ থাকে প্রায় এক মাস। তাই আশা করা যায়, ব্যাটারি বাঁচানোর জন্য যে উদ্যোগটি ইয়োটাফোনের মাধ্যমে নেয়া হয়েছে, তা ভালই সফল হবে।
ইয়োটাফোন এর সামনের মূল স্ক্রীনের ডিসপ্লে এলসিডি যা অন্যন্য ডিসপ্লের মতই ব্যবহার না করলে একটি নির্দিষ্ট সময় পড়ে অফ হয়ে যায়, কিছু দেখতে হলে আপনাকে কোন একটি বাটন চেপে স্ক্রীন এক্টিভেট করতে হবে। অন্যদিকে ফোনটির পেছনের স্ক্রীনটি ই-ইঙ্ক-নির্ভর এবং ডিসপ্লেটিকে বলা হয় ই-পেপার ডিসপ্লে। এবং এই ডিসপ্লেটি কখনও অফ হয় না। ডিসপ্লে জ্বলজ্বল করে আপনাকে মোটেও বিরক্ত বা চিন্তিত করবে না। কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্য যেমনঃ নোটিস, এস এম এস, ই-মেল, মিসড কল, টুইট ঠিকই দেখাতে থাকবে। অনেকটা একটি প্রিন্টেড কাগজের মতই। আগেই বলেছি, ব্যাটারি বাঁচাতে ই-পেপার ডিসপ্লের কখনও অফ হতে হবে না। বরং এমনকি যখন সম্পূর্ণ ব্যাটারি নিঃশেষিত হয়ে যাবে, ডিসপ্লেতে ব্যাটারি শেষ চার্জ থাকা অবস্থার তথ্যগুলো দেখাতে থাকবে।
ইয়োটাফোন এর ই-পেপার ডিসপ্লেটি ই-ইঙ্কের যে কোন ডিভাইসের মতই প্রখর সূর্যালোকে পড়া যায় - যেটা আমরা অন্যন্য ডিসপ্লেতে করতে পারিনা। তাই ইয়োটাফোন কোন কিছু পড়ার জন্য খুবই আরামদায়ক।
ইয়োটাফোন এর ই-পেপার ডিসপ্লেতে আপনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নোটিফিকেশন ততক্ষণ পর্যন্ত দেখাতে থাকবে যতক্ষণ আপনার তা দরকার। আমাদের প্রচলিত ডিসপ্লের ফোনে হয়তো একটি মেসেজ বা কল অথবা অন্য কোন নোটিফিকেশন আসার কিছুক্ষন পড়ে স্ক্রীন অফ হয়ে যায়। যার কারনে আপনার সাময়িক অনুপস্থিতিতে (যেমন ওয়াশরুমে যাওয়া বা কিছুক্ষনের জন্য কোন কারনে ফোন থেকে আলাদা হয়ে পড়া) আসা একটি মেসেজ/নোটিফিকেশন আপনি হয়তো মিস করতে পারেন (অনেক ফোনে যদিও হালকা আলো জ্বালিয়ে এটা জানাতে থাকে)। অথবা এমনও হতে পারে যে উক্ত নোটিফিকেশনটি আসার পরেই আপনার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাবার কারনে আপনি তা দেখতেই পেলেন না। এই দুই ক্ষেত্রেই ইয়োটাফোন এর ই-পেপার ডিসপ্লে আপনার দারুন উপকারে আসবে। এভাবেই আপনি ব্যাটারির উপর কোন চাপ না দিয়ে, কোন মেসেজ, মিটিং রিমাইন্ডার, ফোনকল, ক্যালেন্ডার, আবহাওয়া ইত্যাদি তথ্য সবসময়ই দেখতে থাকবেন।
ইয়োটাফোন এর এই প্রযুক্তির কেন প্রয়োজন তা কোম্পানির সি ই ও কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, "স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা এই মুহূর্তে তাদের ফোনের দিকে তাকিয়ে কি দেখতে পাবেন? একটি কালো স্ক্রীন। ইপ্সিত তথ্য পেতে হলে তাদের ফোনটিকে হাতে নিতে হবে, এক্টিভেট করতে হবে, এবং অনেকসময় নির্দিষ্ট কোন এপ্লিকেশনে প্রবেশ করতে হতে পারে। এমনকি কোন কোন এপ্লিকেশন চালু করবার পরেও সেটি লোড হতে ও তথ্য দেখাতে আরও কিছু সময় ব্যয় হবে। এটা বড় বিরক্তিকর এবং অনেকাংশেই আমাদের বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে। আসলে, একজন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী দিনে অন্ততঃ ১৫০ বার নিজের ফোনটি উঠিয়ে চেক করেন, ঐ কালো স্ক্রীনের আড়ালে তিনি কোন কিছু মিস করলেন কিনা। আর কেন এই কালো স্ক্রীন। কারণ এলসিডি ডিসপ্লে ব্যাটারি থেকে প্রচুর শক্তি শোষণ করে। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, ইলেক্ট্রনিক পেপার ডিসপ্লে প্রযুক্তিই পারে তথ্যকে সহজলভ্য ও সর্বদা প্রদর্শিত রাখতে, তাই আমরা ডুয়েল ডিসপ্লেতে ই-ইঙ্কের এমন একটি ব্যবহার নিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম"
আসুন এবার দেখে নেই এক নজরে ইয়োটাফোন এর স্পেসিফিকেশনঃ
অপারেটিং সিস্টেমঃ এনড্রয়েড জেলি বিন ৪.২.২
সিপিইউঃ ডুয়েল কোর ১.৭ গিঃহাঃ ক্রেইট
আকৃতিঃ ১৩৩.৬ x ৬৭ x ৯.৯৯ মিঃমিঃ
ওজনঃ ১৪৬ গ্রাম
রঙঃ কাল ও সাদা
প্রধান স্ক্রীনঃ ৪.৩ ইঞ্চি ৭২০ x ১২৮০ এলসিডি, ১৬.৭ মিলিয়ন কালার, ক্যাপাসিটিভ মাল্টিটাচ
ব্যাকস্ক্রীনঃ ৪.৩ ইঞ্চি ৩৬০ x ৬৪০ ইপিডি, ১৬ গ্রে-স্কেল, জেসচার কন্ট্রোল এর জন্য ইপিডি'র নিচে একটি ক্যাপাসিটিভ টাচ এলাকা
নেটওয়ার্কঃ LTE 800/1800/2600 MHz, UMTS 900/1800/2100 MHz, GSM 900/1800/1900 MHz
ক্যামেরাঃ মেইনঃ ১৩ মেঃপিঃ এএফ, এলইডি ফ্ল্যাশ/ ফ্রন্ট ক্যামেরাঃ ১ মেঃ পিঃ
মেমোরিঃ ২ গিঃবাঃ র্যাম, ৩২ গিঃবাঃ eMMC
কানেক্টিভিটিঃ WiFi 802.11 a/b/g/n, BT v4.0, GPS w/A-GPS + Glonass
ভিডিওঃ 1080p 30fps; H.263, H.264 AVC, MPEG-4, WebM
অডিওঃ MP3, AAC, eAAC, eAAC+, AMR, MIDI, WAV
ব্যাটারিঃ 1800mAh
অন্যন্যঃ এক্সেলারোমিটার, কম্পাস, জাইরোস্কোপ, প্রক্সিমিটি সেন্সর, এম্বিয়েন্ট লাইট সেন্সর, এফ এম রেডিও, মাইক্র-সিম, ইয়োটাফোন এর জন্য আলাদা বিশেষ ইশারা (জেসচার) ও পেছনের ই-পেপার ডিসপ্লের জন্য বিশেষ Put2Back এপ্লিকেশন।
আর হ্যাঁ, ইয়োটাফোনে ব্যবহৃত হয়েছে বহুল আলোচিত বাঁকানো (কার্ভড) ডিসপ্লে।
আমি মোহাম্মদ ইউসুফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 96 টি টিউন ও 1053 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
এই প্রযুক্তির অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ লেখক কে।