সেই তের বছর আগের কথা। প্রচলিত ধারা ভেঙ্গে মাইক্রসফট নিয়ে এল উইন্ডোজ। কম্পিউটার ব্যবহারে নতুন মাত্রার সংযোজন ঘটালো জিইউআই (গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস)। তুমুল ভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে উইন্ডোজ এবং তারই ধারাবাহিকতায় একের পর এক ভার্সন আসতে থাকে উইন্ডোজের। ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে গ্রাফিক্যাল রিপ্রেজেন্টেশান এবং সংযুক্ত হতে থাকে নতুন নতুন ফিচার। কোন কোন ভার্সান হয়ে উঠে তুমুল জনপ্রিয় আবার কোনটা ব্যর্থ হয় এ্যাডভান্সড ইউজারদের তৃপ্ত করতে। এভাবেই চলকে থাকে উইন্ডোজের যাত্রা। উইন্ডোজ 95 থকে উইন্ডোজ ভিসতা পর্যন্ত উইন্ডোজের চেহারা নিয়ে একটা টিউনও আছে আমাদের টেকটিউনসে। পড়তে চাইলে এখানে টোকা মারতে পারেন।উইন্ডোজ 98 এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং ব্যবসায়িক সফলতার পর মাইক্রোসফট তাদের কোয়ালিটি ধরে রাখতে ব্যার্থ হয় পরবর্তী কয়েকটি ভার্সনে। কিন্তু তাদের মুখে আবার বিজয়ের হাসি ফিরিয়ে আনে উইন্ডোজ এক্সপি। যা আমাদের অধিকাংশেরই একটি জনপ্রিয় ওএস।
কিন্তু ফিচার সমৃদ্ধ এবং জিআউইউ তে ব্যাপক পরিবর্তন আসা সত্বেও এক্সপির দাপটে তেমন একটা সফলতা পায়নি তাদের পরবর্তি ভার্সন উইন্ডোজ ভিসতা। সিকিউরিটি এবং নানান রকমের বারো ঝামেলায় জড়ানো এবং নানা অজুহাত আমি লেগে থাকতে দেখেছি ভিসতার গায়ে। যদিও বাস্তবে এতটা প্রকট বলে মনে হয়নি আমার। এইদিক দিয়ে আবার রব উঠে মাইক্রোসফট বন্ধ করে দিতে চলেছে উইন্ডোজ এক্সপি।
ফলে স্বাভাবিকতই জনমনে প্রশ্ন যাগে এর পরে কি? কি আনতে যাচ্ছে মাইক্রোসফট? এ ব্যাপারে কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়। এইরকমই চলতে চলতে একসময় থলের বেড়ালটা বেরিয়েই পরে!
মাইক্রোসফট অফিসিয়ালি ঘোষনা দেয় তাদের নতুন অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ 7! ব্যাস এই পর্যন্তই। আর কোন ইনফরমেশনই মাইক্রোসফট দেয়নি সে পর্যন্ত। এরপর বিভিন্ন ব্লগে 7 এর ওয়াল পেপার হাবিযাবি দেখা যেত। ভাবতাম 7 নিয়ে লেখা দরকার কিন্তু আবার থেমে যেতাম। আসলে কি নিয়ে লিখব? ম্যাটেরিয়াল ই তো হাতে নাই, প্রোডাক্সান এর কথা ভাবাটা বোকামি।
কিন্ত অবশেষে এই ব্যপারে তাদের নিরবতা ভাঙ্গল। কি কি পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে এই ভার্সনে তার উপর একটি মোটামুটি বিশদ বর্নণাও পাবলিকে রিলিজ করেছে তারা। তাই ভাবলাম বাংলা কোন ব্লগে অন্তত আমার মত হাজারো টিউনারদের জনপ্রিয় টেকটিউনসে ই প্রথম এই পরিবর্তন গুলো শেয়ার করা যাক।
এইবার এক এক করে দেখে নেয়া যাক কয়েকটি পরিবর্তন -
বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে টাস্কবারে। পুরোপুরি নতুন এক অভিজ্ঞতার সন্মুখীন হতে যাচ্ছে ইজাররা। টাস্কবারে বাটনগুলো তে টেক্সট ডিটেইল রিমুভ করে দেয়া হয়েছে। এই ডিটেইলের পরিবর্তে আপনারা ইনফরমেশানগুলো থাম্বনেইল অথবা বিগ আইকন হিসেবে দেখতে পারবেন। কোন এ্যাপ্লিকেশান রিস্টার্ট করা হলে আর অর্ডারে কোন রকম ওলটপালট হয়ে বিভ্রান্তিকর হয়ে উঠবে না ব্যাপারটা। উইন্ডোজের মধ্যকার নেভিগেশন কে উন্নীত করা হয়েছে দুই লেভেলে।
. কোন আইকনে এবার মাউসিং করা হলে ওই আইকনের অন্তর্ভূক্ত কিছু উইন্ডোর থাম্বনেইল শো করা হবে।
. সেই থাম্বনেইলে ক্লিক করলে সরাসরি উইন্ডোতে নিয়ে যাওয়া হবে ইউজারকে।
পরিবর্তন আসছে এর ড্রপ ডাউন লিষ্টেও। কোন আইকনে রাইট ক্লিক করা হলে যে লিষ্টটি আমরা দেখতে পাই, তার চেহারা পুরোপুরি পাল্টে ফেলা হচ্ছে 7 এ। মাইক্রোসফট একে নতুন নাম দিয়েছে "জাম্প লিষ্ট"। যার ব্যবহার আপনি পাবোন স্টার্ট মেনুতে ও।
এই জাম্প লিষ্ট আপনাকে কোন এ্যাপ্লিকেশানের নির্দিষ্ট ফিচারে কুইক এ্যাক্সেসিং এর সূযোগ করে দেবে। এ্যাপ্লিকেশানগুলো সিস্টেম এপিআই ব্যবহার করবে মোষ্ট রিসেন্টলি ইউজড এ্যপ্লিকেশানগুলোকে আলাদাভাবে ডিফাইন করার জন্যে। যা আরকটি জাম্প লিষ্ট তৈরি করবে এ্যাপ্লিকেশ (রিসেন্টলি) এবং ফাইলগুলো তে দ্রুত এ্যাক্সেস দেয়ার জন্যে। এখানে আরো একটি এপিআই ব্যবহার করা হয়েছে এ্যাপ্লিকেশানগুলোকে তাদের কাষ্টম এন্ট্রি এ্যাড করার জন্যে।
উইন্ডো ম্যানেজমেন্টে পরিবর্তন আসবেই সেটা ধারনা করা যাচ্ছিল। সাধারণত ইউজাররা একটি অথবা দুটি উইন্ডো একই সময়ে ব্যবহার করে থাকে। উইন্ডোজ 7 এ এই উইন্ডো অর্গানাইজিংকে করা হয়েছে আরো কুইক এবং সহজ। এইখান আপনি উইন্ডো কে স্ক্রিনের ম্যাক্সিমাম উচ্চতা পর্যন্ত করা হলে তা তা মাক্সিমাইজ হয়ে যাবে। ডানে বামে ড্র্যাগ করা হলে উইন্ডো সাইজ রিসাইজ হয়ে ৫০% এ নেমে আসবে। এতে করে একই মনিটরে দুটি উইন্ডো কে এ্যাডজাষ্ট করা সম্ভব বলে মনে করি।
সোজা কথায় বুঝিয়ে বলতে গেলে, এক উইন্ডো তে কাজ করার সময় আরেকটি উইন্ডোতে উঁকি দেয়া। এটা অনেকেই অনেক সময় করে থাকি। এই কাজটিকে আরো সহজ করে দেবে উইন্ডোজ ৭। আপনাকে শুধু মাউস পয়েন্টার কে আলতো করে বুলিয়ে যেতে হবে। ক্লিক করার কষ্ট করতে হবে না।
আবার চাইলে একটু ডেস্কটপও উঁকি মারতে পারবেন ফাঁকে ফাঁকে আরো সহজে।
আরো পরিবর্তন আনা হয়েছে এর টাস্কবারের সিস্টেম ট্রে তে। এই টাস্কবার আমাদের অনেক বিরক্ত করেছে। যখন তখন ইনফরমেশান ..... আপনার টাস্কবারে আনইউজ আইকন আছে ! সময়ে অসময়ে আরো নানান তানান নোটিফিকেশান! উইন্ডোজ সেভেনে এই টাস্কবারের একমাত্র ওউনার হলেন ইউজার। নিউ ট্রে আইকনগুলো বাই ডিফল্ট হিডেন এবং ইনভিজিবল করা থাকবে। এবং তখনই আপনার সামনে ভিজিবল হবে যখন কি না আপনি এক এ্যাকটিভ করবেন। এবং আইকনগুলোকে রাখা হয়েছে একই স্ট্রিম লাইনের আন্ডারে।
একে আমরা এক্সপ্লোরা নামেই চিনতাম। পরিবর্তন আনার জন্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা। এক্সপ্লরারের ইউজার ইনআরফেস। লাইব্রেরি নামক একটি নুতন কনসেপ্ট উন্মোচন করতে যাচ্ছে মাইক্রোসফট। সম্পূর্ণ ফাইল সিস্টেম অপটিমাইজিং এর ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনবে এই কনসেপ্ট। ফাইল সিস্টেম অর্গানাইজেশানে যুক্ত হবে এক নতুন মাত্রা।
এই ছিল আপাতত মাইক্রোসফটের প্রদর্শিত পরিবর্তন সমূহ। তবে এতে আমি সন্তুষ্ট নই। এখনও মনে হচ্ছে যে অনেক কিছুই অগোচরেই রয়ে গেছে। সিকিউরিটির ব্যাপারটাকে বরাবরের মত ঘোলাটে করে রাখল তারা।
তবে সাধারন একজন ইউজার হিসেবে আমার আশাবাদ হবে একটি সমৃদ্ধ অপারেটিং সিস্টেম যেখানে লাখো কোটি মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে।
আমি দুঃসাহসী টিনটিন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 200 টি টিউন ও 1531 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 34 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
মানুষ হিসেবে তেমন আহামরি কেউ নই আমি। সাটামাটা জীবনটাই বেশী ভালো লাগে। আবার মাঝে মাঝে একটু আউলা হতে মন চায়। ভালো লাগে নিজেকে টিনটিন ভাবতে .... তার মত দুঃসাহসী হতে মন চায় ..... কিন্তু ব্যক্তি জীবনে অনেকটা ভীতুই বটে ..... অনেক কিছুই হাতছাড়া হয়ে গেছে জীবনে এই কারনে ..... আবার...
উইন্ডোস 7 এই নামটা মাইক্রোসফট একদম পাকাপক্ত করে ফেলেছে.. মানে, আসছে ভার্সনের নাম ওরা উইন্ডোস 7 ই রাখবে.. লংহ্রন থেকে ভিস্তার মত হবে না..
Dear brother many many thanks for sharing advance information with every body. Please keep it up & share with us always. Best of luck.
নতুন আর এই তরতাজা খবরটা মাথায় ঢোকানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ। উইন্ডোজ 7 ভিস্তার মতই কিন্তু ঘসে মেজে ঠিক করা আরকী..