গতকাল রাতের বেলা ছিলো বুয়েটের চাঁন-রাত (বুধবার রাত),আজ ঈদ...এটা ট্রাডিশান হয়ে গেছে এখন। কিন্তু কালকে আমার সব কাছের বন্ধুগুলো হয় বাড়ি চলে গেছে,নয়তো ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায়। হলে শুধু আমি একাকী পরে আছি। এটা ভাবতে ভাবতেই কাল বেরিয়েছিলাম রাতের বেলা......একলা রাস্তায়,শীতের মাঝে। যখন রাস্তায় হাঁটছিলাম,মনে হচ্ছিলো এই পথে কত নাম না জানা প্রকৌশলী হেঁটে গেছে ছাত্রজীবণে। তারা আজ কোথায়? তারা কোথাকার ছিলো? তারা কাদেরই বা চোখের মণি ছিলো?...এসব ভাবতে ভাবতে হুট করে মনে হলো একজনের কথা......সেদিনও রাতের বেলা ২ টার দিকে রশিদ হল থেকে ফিরছিলাম,পথে একজনের সাথে দেখা। সে আমাকে চেনে না। আমি তাকে চিনি। সে আমার মনের কথা জানে না,কিন্তু আমি তার মনের কষ্টটা অনুভব করতে পারি।...হ্যাঁ,সেই ছেলেটা ছিলো সাফায়েত...আমাদের ব্যাচমেট। অসম্ভব ক্লান্তি,ভয়,চাপা কান্না যাকে আঘাত করছে অহরহ। কিন্তু সে কাউকে এটা মুখ ফুটে বলতে পারছে না,এটা আসলে পারা যায় না। আমার নিজের মা অনেক রোগে আক্রান্ত। ডায়বেটিস,ব্লাড প্রেশার,হার্টের প্রবলেম...আমি বুঝি নিজের মায়ের জন্যে কেমন লাগে আমার।
একটু ভাবতে পারেন কি আপনারা?
ছোট বেলায় স্বরে "অ" লিখা শিখেছি কার হাতটার মাঝে নিজের ছোট্ট হাতটা দিয়ে?
স্কুলের এই ছেলেটা,ওই মেয়েটা কি করেছে,কে স্যারের কাছে মার খেয়েছে...এসব আহলাদ করে কার কাছে বলতাম আমরা?
পরীক্ষার আগের রাতে টেনশানে ঘুম না এলে,মাথায় মমতা ভরে তেল মেখে দিতো কে,মনে পড়ে?
ঈদের জন্যে সবাই যখন নতুন কাপড় পেতাম,তখন বাজেটে টান পরলে,নিজের জমানো টাকাটা কে আগ বাড়িয়ে দিয়ে দিতো?...কে পুরোনো কাপড় পরে ঈদের সকালে সেমাই বানাতো?
জানেন কে সেই মানুষটা?
যখন দুষ্টামি করে হাত কেটে ফেলতাম,কে ভাত মেখে খাইয়ে দিতো,অনেক বড় হয়ে যাবার পরেও?
যখন ভার্সিটিতে আসার সুখ-স্বপ্নে বিভোর আপনি,
তখন সন্তানের চলে যাবার কষ্টে কোন মানুষটা নীরবে চোখের পানি ফেলতো?
হ্যাঁ,সেই মানুষটা মা...
মায়েরাই পারেন শুধু এইসব কষ্টগুলো করতে...
যার মা নেই,তাকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখবেন,আদরের কাঙ্গাল তারা কতখানি...
আজ যদি কারো মা না ফেরার দেশে চলে যায়,তাকে আর কেউ আদর করে কাছে ডাকবে না,তাকে কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ দেবে না...তাকে আর কেউ একটিবার বলবে না ,"সাবধানে থাকিস বাবা,ভালো হয়ে থাকবি...রোজ একবার করে আমাকে ফোন দিবি...অসুখ হলে একদম বাইরে বাইরে ঘুরবি না......
...আর বলতে পারছি না আমি,
আমাদের পূর্বপুরুষেরা যদি তাঁদের মা কে বাঁচাতে বুকের তাজা রক্ত হাসতে হাসতে দিয়ে যেতে পারেন,তবে কেনো আমরা পারবো না আমাদের বন্ধুর মাকে বাঁচিয়ে তুলতে?
আমাদের শহীদ যোদ্ধারা সফল হয়েছিলেন...আমরাও তো তাঁদেরই উত্তরসূরি...আমাদের যে পারতেই হবে...
কারণ,এটা কোন বন্ধুর মাকে বাঁচানোর চেষ্টা নয়,
এটা আমাদের নিজের মাকেই সবার মাঝে নতুন করে পাবার একটা সুযোগ...
ভাবুন তো,
সাফায়াতের আম্মু সুস্থ হয়ে গেছেন,উনাকে আমরা সবাই দেখতে গিয়েছি...একবার কল্পনা করুন তো,একটা সন্তানের সাফল্যে একজন মা কতটা খুশি হন...সেখানে এতগুলো সন্তানের সাফল্যে তিনি কিভাবে আবেগাপ্লুত হবেন...সেটা ভাবতেই আমার কেনো যেনো চোখের তারা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে...
আসুন না সবাই ক্যান্সারের মুখ থেকে মাকে যুদ্ধে বাঁচানোর এগিয়ে আসি...
...বুয়েটে একটি ফিল্ম ফেস্টিভাল হচ্ছে...৩ , ৪ ও ৫ ডিসেম্বর বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত...টিকেটের দাম খুব বেশি নয়,মাত্র ৫০টাকা.........এই প্রোগ্রামটা শুধুই ওনার রোগমুক্তির প্রচেষ্টার জন্যে...অনেক আন্তর্জাতিক মানের ফিল্ম এখানে দেখানে হবে। আশা করবো আপনারা আসবেন । সবার জন্যে উন্মুক্ত এই ফেস্টিভাল ।
আসুন না একদিন......
আমন্ত্রণ রইলো ।
(ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি , প্রযুক্তি বিষয়ক কোন পোস্ট না এটা । তারপরেও মানুষের জন্যই তো প্রযুক্তি, তাই না ? )
মা, আমার প্রিয় মা । ফেস্টিভালএ আস্তে পারব কি না জানি না । আসলে আসলাম, কিন্তু যদি না আস্তে পারি…… ফ্লেক্সির মাধ্যমে যদি পাঠান যায়, দয়া করে জানাবেন । মাকে খুব ভালোবাসি ।