অনলাইনে যারা মোটামুটি সক্রীয় ইতিমধ্যে তারা হয়ত জেনে গেছেন খবরটা, পয়লা ডিসেম্বর থেকে আমাদের দেশে শুরু হচ্ছে এশিয়ার অন্যতম বড় তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী ই-এশিয়া। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলণ কেন্দ্রে বসবে তথ্যপ্রযুক্তিতে আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় এ আসর। মেলায় নানা রকম প্রদর্শণীর ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে ৩০ টির সেমিনার। সেমিনারগুলোর মধ্যে আকর্ষনীয় সেমিনার রয়েছে বেশ কয়েকটি। আর এগুলো নিয়ে ইতমধ্যে সর্বত্র আলোচনাও শুরু হয়েছে। আশার কথা হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেইসবুক আর ব্লগসাইটগুলোতে প্রচুর তথ্যপ্রযুক্তি সচেতন মানুষের আগ্রহ লক্ষ্য করছি এ সম্মেলণকে কেন্দ্র করে।
আরোও একটি আশার কথা হচ্ছে, ই-এশিয়ায় প্রযুক্তি প্রদর্শণী, সেমিনার এবং আলোচনায় যোগ দিতে ঢাকায় আসছেন আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তির নায়কেরা। আর বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে যারা কাজ করছেন, তারা সহ সাধারণ মানুষও তাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শোনার সুযোগ পাবেন। তবে প্রযুক্তিবিশ্বের যেসব নেতা আসছেন তাদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছেন শীর্ষ কম্পিউটার চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইনটেল এর ভাইস প্রেসিডেন্ট/ ইনটেল ওয়ার্ল্ড অ্যাহেড প্রকল্পের প্রধান জন ই ডেভিস এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্রিল্যান্স কাজ করার ওয়েবসাইট ওডেস্ক ডটকমের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাট কুপার। (আয়োজক বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল আসলে এ দুজনকেই ফোকাস করছে এখন। আর হাই প্রোফাইলিক কেউ আসছে কি না সে ব্যাপারে এখনও কিছু নিশ্চিত করেনি বিসিসি সংশ্লিষ্ঠরা)। তথ্যপ্রযুক্তির শীর্ষ এসব কর্ণধারদের বরণ করে নিতে ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ঢাকা। তাদের বক্তব্য শোনার জন্য ইতিমধ্যে শিক্ষার্থী এবং ফ্রিল্যান্সারদের কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিসিসি-র পক্ষ থেকে। (ফেইসবুক ইভেন্ট লিংক ১: মিট জন ডেভিস, লিংক ২: ফ্রিল্যান্সার সম্মেলন নিয়ে স্বপ্নের কথা লিখেছেন ফ্রিল্যান্সার আল-আমিন চৌধুরি)
জন ই ডেভিসের এই দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা আসছেন। এর আগেও একবার অভিজ্ঞতা রয়েছে উন্নয়নশীল দেশটির তথ্যপ্রযুক্তির সর্বশেষ অবস্থার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার, দেশটিতে একটি সেমিনারে অংশ নেয়ার। সেবার ইনটেলের ক্লাসমেট পিসি উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এলেও তেমন কারো সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পানিন। এবার ই-এশিয়ায় শীর্ষ কম্পিউটার চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে শিক্ষার্থীদের নানান কথা শোনাবেন তিনি, অন্তত আয়োজক কর্তৃপক্ষ তেমনটিই জানিয়েছেন।
১৯৭৭ সালে ইন্টেলে মান নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয় তার। ৯০ এর দশকে তিনি প্রতিষ্ঠানটির এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে তিনি চালু করেন ‘ইন্টেল ওয়ার্ল্ড অ্যাহেড প্রোগ্রাম’। সারা পৃথিবীর দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহায়তা করাই ইন্টেলের এই কার্যক্রমের প্রধান উদ্দেশ্য। ডেভিসের তত্ত্বাবধানেই কলম্বিয়ার কৃষকরা সর্বপ্রথম ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সুবিধা পায়। ব্রাজিলের আমাজন বনে টেলিচিকিৎসা চালু করা, গুয়েতেমালার শিশুদের জন্য স্বল্পমূল্যেও ক¤িপউটার বিতরণের মত কর্মযজ্ঞের গুরু হিসেবে তিনি অধিক পরিচিত। আর এতকিছুর সঙ্গে জড়িত হওয়ার সুবাদে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি ব্যাপক এবং বিশাল। সে অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কিছু শেয়ার করবেন তিনি।
ই-এশিয়া সম্মেলনের তৃতীয় দিনের একটি বিশেষ অধিবেশ ও মিট দ্য টেকনোলজি লিডার নামের একটি প্রোগ্রামে ডেভিস তার বেড়ে উঠার গল্প, ইন্টেলের জীবন, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নের স্বপ্নের কথা শোনাবেন। তাঁকে বাংলাদেশী তরুণদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
ই-এশিয়ায় অন্যান্য সেমিনার বা অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইতিমধ্যে তরুণদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক সেমিনারটি। প্রদর্শনীর শেষদিন বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিংয়ের নানা সম্ভাবনা, সমস্যা নিয়ে খোলাখুলি আলাপ-আলোচনা করবেন দেশ-বিদেশের আউটসোর্সিং বিশেষজ্ঞরা। তবে সেমিনারের মূল আকর্ষণ হিসাবে আসছেন ওডেস্কের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাট কুপার। সেমিনারটিতে তিনি মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। কেবল ওডেস্কের কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবেই নয়, ম্যাট কুপার এর আগেও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। জেপি মরগ্যান সিকিউরিটিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর অ্যাকোলো নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী হিসাবে কাজ শুরু করেন যেখানে ১ টি কর্মীর প্রতিষ্ঠানকে তিনি বিশ্বের বড় ৫০ টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় আনতে সক্ষম হয়। ওডেস্কে যোগ দেয়ার পর থেকেই তিনি ঝুকি ব্যবস্থাপনা, মার্কেটপ্লেস অপারেশনস এবং গ্রাহক সেবা বিভাগগুলো দেখাশোনা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভান্ডারবোল্ট ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। (যেহেতু তার সেমিনারে সবার অংশগ্রহণের সুযোগ আছে তাই বলবো দয়া করে কেউ মিস করবেন না, আমিও সেখানে থাকছি, ম্যাট কুপারের একটি ব্যাক্তিগত স্বাক্ষাতকার নেয়ার চেষ্টা করছি। সম্ভব হলে সেটি ব্লগে/ আমাদের পত্রিকায় পড়ার সুযোগ পাবেন অবশ্যই।)
ই-এশিয়া বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। সংশ্লিষ্ঠরা জানান, ই-এশিয়া সম্মেলনে ৩০টি দেশের ৯০ জন এবং বাংলাদেশের ৬০ জন বিশেষজ্ঞ অংশ নেবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০০ জন প্রতিনিধি যোগ দেবেন। বাংলাদেশ কম্পিউউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) এই আয়োজনে আইসিটি পণ্য ও সেবা প্রদর্শনী, ৩০টি সেমিনার এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক উপস্থাপনা তুলে ধরা হবে। সেমিনারগুলোর বেশিরভাগেই সবার প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত থাকবে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে নিবন্ধণ করতে হবে সেমিনারে অংশ নিতে।
তবে আপাতত ডেভিস আর ম্যাট কুপারকে বেশি ফোকাস করা হলেও একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিক্ষেত্রের আরোও অর্ধশত নেতাকে পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এটি আমাদের জন্য সুখবরই বটে। আমাদের দেশের শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ঠরা অনেক কিছুই শিখতে পারবেন, জানতে পারবেন। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় এখন। এমন সময় এ বিশ্বনেতাদের বাংলাদেশে আগমণ আমাদের জন্য বড় কিছু নিয়ে আসবে, তেমন প্রত্যাশাই করি। ইনটেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে জন ই ডেভিসের পক্ষে আমাদের জন্য যেমন অনেক কিছুই্ করার সুযোগ রয়েছে তেমনি ওডেস্কের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে ম্যাট কুপারও বাংলাদেশেী ফ্রিল্যান্সারদের অনেক কিছুই করতে পারেন। তবে আমাদের এতসব প্রত্যাশার কথা এখনই না জানিয়ে আপাতত তাদের স্বাগত জানাতে চাই। তারপর সবুজের মাটিকে নিয়ে কিছু ভাবার অনুরোধ জানাতে চাই। জন ই ডেভিস-ম্যাটকুপার, সবুজের দেশে আপনাদের স্বাগতম!
বি:দ্র: লেখাটি সর্বপ্রথম বিজ্ঞানপ্রযুক্তি ব্লগে প্রকাশিত...
আমি আল-আমিন কবির। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 15 টি টিউন ও 119 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
পেশা সাংবাদিকতা, কাজের ক্ষেত্র তথ্যপ্রযুক্তি। বর্তমানে দৈনিক কালের কন্ঠে কাজ করছি। ব্লগিংয়েও নিয়মিত।
ভাই মেট কুপার কবে আসছে । তারিখ টা বললে ভাল হত ।