ফ্রিল্যান্সিং শব্দটির সাথে পরিচিত নয় এমন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আজকাল স্বপ্নেও দেখা দুষ্কর। ছোটবেলায় লোকমুখে একটা কথা শুনতাম- “ঢাকায় টাকা ওড়ে”। ২০১১ সালে এসে এই ডিজিটাল যুগে এই প্রবাদবাক্যটা “মডিফাই” করার সময় এসেছে; এখন বলতে হচ্ছে “ইন্টারনেটে ডলার ওড়ে”।
হ্যাঁ বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট এখন সত্যিই অর্থ উপার্জনের একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইটের কল্যানে আজ বহু মানুষ “অনলাইনে” জীবিকা নির্বাহের নির্ভরযোগ্য অবলম্বন খুঁজে পেয়েছেন। আমাদের বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই; বাংলাদেশও বিশ্বের শীর্ষ ৩০টি আউটসোর্সিং গন্তব্যে স্থান পেয়েছে অনেক আগেই। বাংলা ব্লগগুলোতে ভিজিট করলেই এর প্রতিফলন দেখা যায়। শত শত আর্টিকেল লেখা হচ্ছে “অনলাইনে টাকা আয়ের উপায়” এর উপর। এর মধ্যে পিটিসি নামক “নাকের উপর মুলা ঝোলানো” পোস্টের পাশাপাশি এডসেন্স, ওডেস্ক, ফ্রিল্যন্সারের মত নিরাপদ/নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্মের টিপসও রয়েছে।
এগুলো যারা লিখে থাকেন তারা অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংএ সফল ব্যক্তিত্ব। তাদের ওডেস্ক প্রোফাইল বা এডসেন্স চেকের ছবি দেখে বয়স/পেশা নির্বিশেষে অনেকেই ঝাপিয়ে পড়ছেন অনলাইনে উড়ন্ত ডলার হস্তগত করার জন্যে। কিন্ত বিষয়টি যে এতটা সহজ নয় তা আমার চেয়ে আপনারাই অনেক ভাল বোঝেন।
অনলাইন ইনকামের একটা প্রচলিত বাক্য হচ্ছে “কিক ইওর বস (Kick Your Boss)” অর্থাৎ অফিসের বসকে “কিক” মেরে বাসায় বসেই লাখ লাখ টাকা আয়ের ধান্ধা। তবে আমার পরিচিতদের মধ্যে যারা এই কাজটি করেছেন তারা খুব একটা সুবিধা এখন পর্যন্ত করতে পারেননি, আপনারা যদি কেউ এই পদ্ধতিতে সফল হয়ে থাকেন তবে দয়া করে শেয়ার করুন।
আমার আজকের টিউনের মূল অংশ এখনও শুরু হয়নি। আসলে আমার উদ্দেশ্য ছিল খুব সিম্পল কিছু কথা বলা। “কিক ইওর বস” টাইপের সিদ্ধান্ত যদি কেউ নিতে চান, তবে দয়া করে তার আগে আপনার দক্ষতা এবং পারিপার্শিক অবস্থা খুব সিরিয়াসলি ভেবে দেখবেন।
বাংলা ব্লগে এবং ফেসবুকের কল্যানে দেখা যায় আমাদের দেশের ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া স্টুডেন্টদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। এদের মধ্যে অনেকেই অনলাইনে টাকা পয়সা আয়ের প্রতি বেশ আগ্রহী। মাইক্রোওয়ার্কাস, বিভিন্ন পিটিসি সাইট, এমনকি ওডেস্ক টাইপের প্ল্যাটফর্মেও এদের সরব উপস্থিতি। এটা হয়ত আমাদের আউটসোর্সিং ইমেজের জন্য প্লাস-পয়েন্ট, কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর দিকটি কি আমরা ভেবেছি কখোনো? ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, একজন ফ্রিল্যান্সার আসলে বাস্তবিক অর্থে মোটেই “ফ্রি” নয় যতক্ষণ পর্যন্ত সে জবে একটিভ আছে। আমাদের দেশের অনেক শিশু যেখানে প্রতিবছর স্রেফ ডায়রিয়ায় মারা যাচ্ছে, সেখানে আমরা বিড করছি আনেরিকান বায়ারের কুকুরে/বিড়ালের ফেসিয়াল টিপস লেখার জন্য। আমরা ইংরেজিতে ওদের জন্য অনেককিছু লিখে দিয়ে ফাইভ স্টার ফিডব্যাক ঠিকই আদায় করি কিন্তু আমদের দেশের শিশুগুলোরর প্রতি মায়েদের সচেতনতার জন্য টিপস লিখার আগ্রহ পাইনা। অন্যান্য বিষয় তো বাদই দিলাম। ওডেস্ক উইকের ডেডলাইন এবং ডলারের হাতছানি অনেকসময় খাওয়া-দাওয়া ভুলিয়ে দেয়। ক্লাস/পরীক্ষা থাকলে সে তো এক মহামারী অবস্থা!
আজ যে ছেলেটা নবম/দশম কিংবা উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশুনা করছে, দেশকে দেয়ার মত তার অনেক কিছুই সামনে রয়ে গেছে। ফ্রিল্যান্সিং এ অনেকেই যেসব ডাটা এন্ট্রি, পিটিসি, ওয়েব রিসার্স, ফোরাম পোস্টিং এর তুলনামুলক সহজ কাজগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করে করছে, সেগুলো বাস্তব জীবনে (উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কর্মক্ষত্রে) কোন কাজেই আসেনা। টাকা আয় করার সময় সামনে অনেক আছে, তাই এখনি এদিকে খুব বেশি সময় নষ্ট না করাই মঙ্গল বলে আমি মনে করি। এইচ.এস.সি হচ্ছে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একজন ছাত্রের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এখানে এসে যদি আমরা মেধার সঠিক ব্যবহার না করতে পারি, তবে উচ্চশিক্ষালাভ স্বপ্নই থেকে যাবে। এখানে হয়ত অনেকে বলে ফেলবে “আমরা সবকছু মেইনটেইন করেও জিপিএ ৫ পেতে পারি”।. কিন্তু ভাইয়া, জিপিএ ৫ই সবকিছু না। ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে এরকম অনেক ক্যন্ডিডেট পাওয়া যাবে। তো, এত মেধাবী হওয়ার পরও যদি বাপের কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করে প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়তে হয় তবে সেটা দুঃখজনক (প্রাইভেট ভার্সিটির ভাইয়েরা দয়াকরে কথাটা অন্যভাবে নেবেন না, এটা স্রেফ উদাহরণ) ।. তাই অন্তত এই জীবন গড়ার সময়ে দুই ডলারের আশায় ডাটা এন্ট্রি/ পিটিসি না করে দক্ষতা অর্জন করে এর চেয়ে অনেক অনেক ভাল অবস্থানে যাওয়া সম্ভব। ফ্রিল্যান্সিং করার সময় তো আর চলে যাচ্ছে না, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যাদের অনেক চড়া রেট, সেসব ফ্রিল্যন্সাররা কিন্তু তাদের দক্ষতা দিয়েই এগিয়ে গেছেন। আর দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রওয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায়না। উদাহরণস্বরুপ- আপনি সি.এস.ই এর ছাত্র হয়ে থাকলে ওয়েব বা এপ্লিকেশন ডেভলপমেন্ট আপনার কাছে ডালভাত মনে হবে তখন আর আপনাকে পিটিসির এডে ক্লিক করে এলার্টপের পিছনে ঘুরতে হবেনা। এখন আপনি যদি সেই পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরতে না পারেন, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। যার যার জীবনের হিসেব তার তার কাছে।
এই পোস্ট পড়ে আমাকে ফ্রিল্যান্সিং বিরোধী ভাবার কোন কারণ নেই। আমি শুধুমাত্র কিছু বাস্তব চিত্র এবং এর সম্ভাব্য সুদুরপ্রসারী প্রভাব নিয়ে বলতে চেয়েছি। কেউ কোন কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি সত্যই দুঃখিত। সবাইকে ধন্যবাদ, আল্লাহ আমাদের মঙ্গল করুন।
আমি আরাফাত বিন সুলতান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 11 টি টিউন ও 197 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
স্রেফ উদাহরণ দিয়েই তো প্রাইভেট ভার্সিটির ভাইদের বাস টা মারলেন
বাপের কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করে প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়তে হত না যদি সরকার আরও দু এক টা university বানাত ।
আপনার বাকি সকল কথার সাথে আমি একমত…
অনেক ধন্যবাদ এই tune টি করার জন্য , বর্তমান যুব সমাজের ডাটা এন্ট্রি, পিটিসি, ওয়েব রিসার্স, ফোরাম পোস্টিং etc সস্তা কাজের পিছনে সময় দেয়া বন্ধ করা উচিত , কারন এগুলোর কোন ভবিষত নাই ।