সুত্র - কম্পিউটার জগৎ
সৌজন্যে- http://www.amrabangali.webs.com
আজকের হট কেক ই-মেইল পোর্টাল ‘হটমেইল’ এর জনক হচ্ছেন সাব্বির ভাটিয়া। জন্ম ভারতের ব্যাঙ্গালোরে। মা-বাবার আশা পূরণ করতে ১৯৮৮ সালে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে গেলেন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে। ১৯ বছরের ভাটিয়া যখন সেই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর লসএঞ্জেলস এয়ারপোর্টে পা রাখলেন তখন তার পকেটে ছিল মাত্র ২৫০ ডলার। পুরো আমেরিকায়ই ছিল তার অপরিচিত জায়গা। এমন কেউ নেই যে তাকে সাহায্য করতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ভাটিয়া যোগ দিলেন স্টিভ জবসের অ্যাপল এ। এখানকার অফিসের ই-মেইল ব্যবসা ভাটিয়াকে হতাশ করে। কারণ ই-মেইল করা গেলেও এতে কোনো প্রাইভেসি থাকতো না। কিভাবে এটিকে বিনামূল্যে এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারর উপযোগী করা যায় সেটি নিয়েই ভাবনাচিন্তা শুরু করেন ভাটিয়া আর তার কলিগ জ্যাক স্মিথ। তাদের মিলিত ভাবনাই ইন্টারনেটে এক বিপ্লব ঘটায়, যার নাম হটমেইল।
জাভাসফটের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেটে তার ব্যক্তিগত ডাটাবেজ তৈরি করতে পারে। যেখানে তারা তাদের ব্যক্তিগত তথ্যাদি, ছবি ইত্যাদি রাখতে পারে এবং যে কোনো স্থানের যে কোনো কম্পিউটার থেকে সেগুলো আবার দেখতে পারে। এ নিয়েই ভাটিয়া প্রথমে কাজ শুরু করেন। এ অবস্থায় তার বন্ধু স্মিথ তাকে প্রস্তাব দেয় এ জাভাসফটের সঙ্গে ই-মেইল যোগ করার। ফলে এটিই সর্বপ্রথম ওয়েব পেজ ভিত্তিক ই-মেইল যেটি পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে চেক করা যাবে।
তাদের স্বপ্নকে বাস-বায়িত করতে ভাটিয়া এবং স্মিথ দুজনই অ্যাপল কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রিমোন্ট অঞ্চলে একটি ছোট অফিস গড়ে তুলেন। সেখানে ১৫ জনকে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়।
সে বছরে জুনের মাঝামাঝি এসে তাদের অর্থাভাব দেখা দেয়। ফলে টাকার জন্য তারা ব্যাংক থেকে ধার নেন ১,০০,০০০ ইউএস ডলার।
৪ জুলাই ১৯৯৬ সালে আমেরিকার বিজয় দিবসে ভাটিয়া এবং স্মিথ তাদের নতুন কোম্পানির উদ্বোধন ঘোষণা করেন। যার নাম ছিল হটমেইল। তারা নিশ্চিত ছিলেন যে তাদের ফ্রি ই-মেইল টুলটি কম সময়েই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করবে। তাদের কোম্পানির উদ্ধোধনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য আমেরিকার বিজয় দিবসকে বেছে নেন তারা।
ওই সময়ে যাদেরই কম্পিউটার ছিল তাদেরই একটি করে ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ছিল। কিন' এ হটমেইলের ফলে যার কম্পিউটার নেই সেও একটি ই-মেইল অ্যাকাউন্টের মালিক হতে পারল এবং যে কোনো স'ান থেকে তার মেইল চেক করতে পারতো।
হটমেইলের প্রথম সদস্য ভাটিয়া নিজে। তিনি এবং স্মিথ উদ্বোধনের পরপরই তাদের বন্ধুদের মেইল করেন। এভাবে প্রথম ঘণ্টাতেই দেখা যায় হটমেইলের সদস্য সংখ্যা ১০০-তে এসে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় ঘণ্টায় সেটি গিয়ে দাঁড়ায় ২০০। তৃতীয় ঘণ্টায় ২৫০। ওই সময়ে যারা হটমেইলের সদস্য হয়েছিলেন তাদের মধ্যে শতকরা ৮০ জনই জানান, তারা হটমেইলের সন্ধান পেয়েছেন বন্ধুদের কাছ থেকে।
এ ফ্রি মেইল বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য নতুন উৎসবের সৃষ্টি করে। যার ফলে হটমেইল কোম্পানির আয়ও বাড়তে থাকে দ্রুতগতিতে। হটমেইল ধীরে ধীরে তার সদস্যদের বিভিন্ন রকমের সংবাদ এবং অন্যান্য ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞপ্তি পাঠাতে থাকে। এভাবে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের খবরাখবর পাঠানোর জন্য হটমেইল কোম্পানির দ্বারস' হয়। ফলে হটমেইল কোম্পানি খুব দ্রুতই ব্যবসায়িকভাবে সফল হতে শুরু করে।
হটমেইলের এ দ্রুত প্রচার ও প্রসার ভাটিয়াকে উদ্বিগ্ন করে তোলে এটির নিরাপত্তার ব্যাপারে। কারণ ওই সময় পর্যন- তাদের কর্মী ছিল মাত্র ২৫ জন, যা হটমেইলকে হ্যাকিং এর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য পর্যাপ্ত ছিল না।
এদিকে হটমেইলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা মাইক্রোসফটেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। যার ফলে ১৯৯৭-এর শেষ দিকে মাইক্রোসফট হটমেইলের স্বত্ব তাদের কাছে বিক্রি করার প্রস্তাব পাঠায়। তারা দশ মিলিয়ন ডলার মূল্য নির্ধারণ করে এর জন্য। কিন' এ প্রস-াব ভাটিয়া নাকচ করে দেন।
এক সপ্তাহ পর মাইক্রোসফট আবার নতুন প্রস্তাব নিয়ে আসে। এভাবে দুই মাস চলতে থাকে। কিন' ভাটিয়া তার সিদ্ধানে- অটল থাকেন। পরে মাইক্রোসফট ভাটিয়াকে রেডমন্ডে বিল গেটসের সঙ্গে দেখা করার আমন্ত্রণ জানায়। ভাটিয়া বিল গেটসের সঙ্গে দেখা করেন। বিল গেটস অতি সাধারণভাবেই তার সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে চিন্তা-ভাবনা করে একটি মূল্য জানাতে বলেন।
হটমেইলের মূল্য কতো হলে ভাটিয়া সেটি বিক্রি করতে পারেন এ জন্যই তিনি সবার মধ্যে একটি জরিপ চালান। ডগ কালিয়ম নামে একজন ভাটিয়ার সঙ্গে এই বলে বাজি ধরেন, তিনি ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি দিয়ে যদি মাইক্রোসফটের কাছে তার হটমেইল কোম্পানি বিক্রি করতে পারেন তবে তিনি ভাটিয়ার একটি মুর্তি তার বাসার সামনে তৈরি করে দেবেন ব্রোঞ্জ দিয়ে।
ভাটিয়া মাইক্রোসফটের কাছে অর্ধেক বিলিয়ন ডলার দাবি করেন। এটি শুনে মাইক্রোসফট এ প্রস্তাবকে হেসেই উড়িয়ে দেন। কিনা ভাটিয়া তার সিদ্ধানে- অনড়। মাইক্রোসফটও হাল ছেড়ে না দিয়ে ভাটিয়াকে একের পর এক প্রস্তাব দিতে থাকেন। অবশেষে ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে ভাটিয়া ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে বিল গেটসের কাছে তার হটমেইল কোম্পানিটি হস্তান্তর করেন।
শেষের কথা
ডগ কার্লিস তার বাজির কথা মতো স্থাপত্য বানানোর জন্য লসএঞ্জেলস থেকে এক আর্কিটেক্টকে ঠিক করেন। কিনা ভাটিয়া তাকে বারণ করেন। কারণ তার মা তাকে বলেন, ভারতে কেবল মাহাত্মা গান্ধীই এতো সম্মান পাওয়ার যোগ্য।
মাইক্রোসফটের সাবডিভিশন হটমেইল কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা হিসেবে ভাটিয়া তার চাকরি করতে থাকেন।
হটমেইলের বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় ১.২ বিলিয়ন। প্রতিদিনই এর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হটমেইলের ক্রমোন্নতি দেখে স্টিভ জারভেটসন নামে একজন ভাটিয়াকে পরে বলেন, এক বিলিয়ন ডলারও হয়তো বা এটি বিক্রির জন্য যথেষ্ট ছিল না।
হটমেইলের এ সৃষ্টিকর্তা সাব্বির ভাটিয়া ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে মাইক্রোসফটের চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন একটি ওয়েবসাইট শুরু করেন। তার এই নতুন উদ্যোগের লক্ষ্য সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষের মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক স্থাপন করা।
আমি ridhoy। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 14 টি টিউন ও 25 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
তথ্যটির জন্য ধন্যবাদ, আচ্ছা সাব্বির ভাটিয়া বর্তমানে যে প্রজেক্ট এ কাজ করেন সেটা কি বলতে পারেন? জানা থাকলে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ